তাঁদের ভাঙাচোরা রাজবংশেরও বেঠক বসে, নদীতে পড়লে কি আমরা শ্মশানের পোড়া চলা ধরে ভাসতে চাই না? তাদের বৈঠকে প্রধান হচ্ছেন মনোয়ার হোসেন মোল্লা; এইটা বৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় ও অশ্রদ্ধেয় শাহ আলম চৌধুরীর জন্যে বিশেষ কষ্টের, কিন্তু তিনি এখনও কষ্ট করে এই কষ্ট সহ্য করে চলছেন।
মনোয়ার মোল্লা বলেন, এইবার ইলেকশনে আমাগো একটাই প্রিন্সিপাল, সেইটা হচ্ছে সারভাইভের প্রিন্সিপাল। আমরা সারভাইভ করতে পারি যদি আমাগো মহাজননেতা সারভাইভ করেন, তিনি থাকলেই আমরা আছি। এইটা সব সময় মনে রাখতে হবে, ভোললে চলবো না। এইটা আমাগো বাচনের প্রিন্সিপাল।
মনোয়ার মোল্লাকে বেশ প্রফুল্ল দেখায়; মনে হয় তারা সারভাইভ না করলেও তিনি সারভাইভ করবেন। তিনি খুব ফিট আছেন, এমন ফিট আছেন ইংরেজিতে যাকে আমরা ফিটেস্ট বলি।
শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ন্যাতা সারভাইভ করুক এইটা ত আমরা সবাই চাই, তার সারভাইভ করা দরকার, কিন্তু কথা হচ্ছে আমাগো নিজেগোও সারভাইভ করতে হইবো। সেই কথাও ভাবতে হইবো আমাগো।
মর্জিনা আবদুল্লা একটু বিষণ্ণ ও রাগান্বিত হয়ে ওঠেন।
মর্জিনা আবদুল্লা বলেন, মহাজননেতা না থাকলে আমরা কে? আমাদের কে ভ্যালু দেয়? তিনি যখন রাজা আছিলেন তখন আমাদের অবস্থা কেমন ছিলো, আর এখন কেমন। তিনি বাচলেই আমরা বাচবো এইটা মনে রাখতে হবে। আমাদের এই ধরনের কথা বলা বেইমানি।
ইমাজউদ্দিন ঝন্টু বলেন, এইটা কোনো তর্কের সাবজেক্ট না, মহাজননেতাকে লইয়া ডিবেট চলে না, তিনি সব ডিবেটের উর্ধে, তবে তারে ছাড়ানের জইন্যে যাদের সঙ্গে প্যাক্ট করবো দেখতে হইবো তারা আমাগো কয়জনরে মন্ত্রী করবো।
মনোয়ার মোল্লা বলেন, সেইটা ডিপেন্ড করে আমরা ইলেকশনে কেমন করি, কয়টা সিট পাই, বারগেইন করার মতো পাওয়ার আমাগো থাকে কিনা? পলিটিক্সে বারগেইন করার জইন্যে স্ট্রেংথ লাগে আমরা জানি।
ব্যারিস্টার শাহেদ মিয়া বেশ দেরি করে এসেছেন, তাঁকে বেশ চঞ্চল দেখাচ্ছে।
শাহেদ মিয়া বলেন, তাইলে কি আমরা জনগণবংশরেই সাপোর্ট করতে যাচ্ছি। এইটা আবার একটু ভাইব্যা দেখা উচিৎ।
মনোয়ার মোল্লা বলেন, লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত এইটা আমরা ভাববো, এইবার তাগোই পসিবিলিটি বেশি পাওয়ারে যাওয়ার, সেইজইন্যে তাগো সঙ্গে আইজও আছি, লাস্ট মোমেন্ট কি হবে তা আল্লায় জানে।
শাহেদ মিয়া বলেন, ম্যাডাম গুলবদন বেগমের পছন্দ অন্য রকম, তিনি শক্তির উ ৎসআলাদেরই প্রেফার করেন।
মর্জিনা আবদুল্লা এইবার পুরোপুরি রেগে ওঠেন, পারলে তিনি ব্যারিস্টারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তেন, অন্তত সবগুলো নখ তাঁর দুই গালে ঢুকিয়ে দিতেন।
মর্জিনা আবদুল্লা বলেন, তার পছন্দে অপছন্দে কিছু যায় আসে না, শি ইজ নট ইন দি পার্টি, শি ইজ নট আওয়ার ডিসিশন মেকার। তার নামও তোলবেন না, মহাজননেতা বলে দিয়েছেন সে আর নেই, শি ইজ জিরো।
মনোয়ার মোল্লা বলেন, এইবার পঞ্চাশটা সিট যদি পাই তাইলেই আমরা দরাদরি করতে পারবো।
শাহেদ মিয়া জিজ্ঞেস করেন, আমাদের কয়জনরে তারা মিনিস্টার করবো এইটা ক্লিয়ার করে নিতে হবে, আমরা কয়েকজনে মিনিস্টার হতে চাই। আমরা তাদের সাপোর্ট দিবো মিনিস্টার করলে, আদারওয়াইজ নট।
মনোয়ার মোল্লা হেসে বলেন, শাহেদভাই মিনিস্টার ত কম হইলেন না, সব মিনিস্ট্রিতেই আপনে বসছেন, সব মিনিস্ট্রর চেয়ারেই আপনের দাগ লাইগ্যা আছে, ভবিষ্যতেও লাগবো, দেখতে হইবো এইবারও আপনারে মিনিস্টার করন যায় কি না, তবে ইলেকশনে আপনারে পাশ করতে হবে।
শাহেদ মিয়া রেগে উঠতে গিয়ে গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করেন।
মর্জিনা আবদুল্লা বলেন, আমাদের মহাজননেতা ইজ এ ম্যান অফ প্রিন্সিপাল, তিনি তার নীতিতে চিরকাল ঠিক থাকেন, এই জইন্যেই তিনি এখন ওইখানে আছেন, নীতি থিকা মহাজননেতা কখনো সইরা যান না, এইবারও যাইবেন না; তিনি যা বলে দিয়েছেন, তাই আমাদের করতে হবে। আমাদের প্রধান কাজ তারে বাইর করে আনা, তাহলে একটা দুইটা না সব মিনিস্টার আমরাই হবে।
মর্জিনা আবদুল্লার কথায় ও ওষ্ঠে অভিজ্ঞতাজাত নিশ্চয়তা ফুটে ওঠে।
শাহেদ মিয়া উঠে দাঁড়ান, বেরোতে বেরোতে বলেন, আমি যাই, আমার কাম আছে, আপনেরা তারে বাইর করে আনেন, দেখেন পারেন কিনা।
মনোয়ার মোল্লা বলেন, ব্যারিস্টার দল ছাড়নের চেষ্টা করছে মাসখানেক ধইর্যাই, আইজ বুঝি ছাইরা গেলো। তাতে আমাগো লস নাই, ব্যারিস্টার এইবার পাশ করতে পারবো না, আমি খবর নিয়া দেখছি।
ইমাজউদ্দিন ঝন্টু বলেন, আরো কয়জন বাইর হওনের জইন্যে পা বাড়াইয়া আছে, তারা আইজকাইল দিনরাইত উৎসআলাগো লগে ওঠে বসে।
শাহ আলম চৌধুরী বলেন, পলিটিশিয়ানগো নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে হয়, নিজের ফিউচার ঠিক মতন দেইখ্যা সেই মতন কাম করতে যে পারে, সেই খাঁটি পলিটিশিয়ান শাহেদ মিয়া খাঁটি পলিটিশিয়ান, তারে দোষ দিতে পারি না।
তিনি কথাটি বলে গম্ভীর হয়ে চুপ করে থাকেন;তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় তিনিও নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন।
আমরা কয়েক দিন ধরে দেশ জুড়ে বাঘের গায়ের গন্ধ পাইতে শুরু করছি।
দিনাজপুর না গাইবান্ধা না কাউখালির না কিশোরগঞ্জের এক চাষাভাই এই গন্ধটা প্রথম পায়। শেষ রাতে উঠে হালটের পাশে পাটক্ষেতে হাগতে বসে সে বাঘের গন্ধ পেয়ে হাগা চেপে দৌড়ে ঘরে ফিরে এসে বউরে ঠেলা দিতে দিতে বলে, অই, ওট ওট, বাগ আইছে, অই, ওট।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো