মহাদেশনেত্রী বেঠকে বসে চারদিকে তাকান; রাজপুরুষেরা তখন মাথা নিচু করে থাকেন; তাঁর সামনে মাথা উঁচু করে বসা রাজবংশে নেই।
অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, হে মাননীয়া মহাদেশনেত্রী, আমরা প্রায় সব কিছুই গোছই আনছি, আমরা পাওয়ারে যাবো।
মহাদেশনেত্রী গম্ভীরভাবে বলেন, পাওয়ারে যেতেই হইবে, আর কারও হাতে পাওয়ার দেওয়া যাবে না। অগো হাতে গেলে দ্যাশটারে অরা বেইচ্যা দিবে।
অবজেনারেল কেরামতউদ্দিন উত্তেজিত হয়ে উঠতে চান; তিনি বলেন, অরা অলরেডি কান্ট্রি সেল করার কন্সপিরেসি শুরু করেছে, উই মাস্ট ফয়েল দেয়ার। কন্সপিরেসি, জনগণরে এইটা জানাই দিতে হবে।
সোলায়মান হাওলাদার বলেন, জনগণ এইটা ভালোভাবেই জানে, এইজন্যেই জনগণ অগো এতো বছর চায় নাই, এই বছর অরা জনগণরে ব্লাফ দিতেছে, জনগণরে এইটা বুঝাই দিতে হবে।
মহাদেশনেত্রী জিজ্ঞেস করেন, কততখানি প্রসিড করলেন সেই কথা বলেন। পাওয়ার আমাদের, অরা পাওয়ারে বসবে সেইটা সহজ করবো না।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, অনেকখানি প্রসিড করছি ম্যাডাম, আমাগো কন্ডিশন দিন দিন ভাল হইতেছে, নানা রাজবংশের সঙ্গে প্যাক্ট হইতেছে। পাওয়ারে আমরা যাবই, সব ব্যবস্থা করে আনছি।
মহাদেশনেত্রী বলেন, সব কিছু স্পষ্ট করে বলেন।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, মওলানা রহমত আলি ভিস্তির সঙ্গে ভালোই কথা হইতেছে, অগো আমরা বুঝাইতে পারতেছি যে অরাও ইসলাম চায় আমরাও ইসলাম চাই, অরা আর আমরা একই, ভাইয়ে ভাইয়ে অবনিবনা হইতে পারে, তবে ভাই ভাইর থিকা দূরে যাইতে পারে না, আমাগো এক লগে থাকন দরকার; কাফেরগো লগে তাগো যাওন ঠিক না।
মহাদেশনেত্রী বলেন, তারে আমি নিজেই ফোন করছিলাম, পাই নাই; মনে হয় আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় না।
রেগে ওঠেন জেনারেল কেরামত, এইটা বেয়াদবি, এইটা টলারেট করা যায় না, তাকে শিক্ষা দিতে হবে। অগো উঠাইলো কারা, আমরা না থাকলে অরা থাকতো কই? দেশেই থাকতে পারতো না। অরা বেইমানি করতেছে।
রুস্তম আলি পল্ট বলেন, রহমত আলি ভিস্তি আইজকাইল বেয়াদবি করতেছে, তাকে শিখাই দিমু সময় আসুক; এখন সইজ্য করা ছাড়া উপায় নাই। পলিটিক্সে বেইমানি ত নতুন কিছু না, আর অরা ত দ্যাশের সঙ্গেই বেইমানি করেছিল।
ডঃ কদম রসুল বলেন, এইবার সবাই আল্লাতাল্লার নাম বেশি লইছে, এতে অগো মনে হচ্ছে অগোই ভোট দিবো। আমরাও অগো থিকা আল্লার নাম কম লই না, আমিও আমার কন্সটিটিয়েন্সিতে কয়টা ওয়াজ মাহফিল কইরা আসলাম, দুইটা মসজিদ তুইল্যা আসলাম। আল্লারসুল খালি অগো না।
মোহাম্মদ কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, পিপল অগো ফ্যানাটিক মনে করে, অগো চেহারা দেখলেই ভয় পায়, আমাদের মনে করে খাঁটি ইসলামি, পিপল ফ্যানাটিক পছন্দ করে না, ধার্মিক পছন্দ করে।
সোলায়মান হাওলাদার বলেন, খোজাবংশের একটা ফ্যাকশন আমাদের সঙ্গে আছে, সব সময়ই কথা হইতেছে, আর গুলবদন বেগম সাহেবার টান আমাদের দিকেই; আমার আগের ফ্রেইন্ডদের সাথেও কথা চলছে, মাও-লেনিনঅলাদের অনেকেই গোপনে আমাদের সঙ্গে থাকবে।
মহাদেশনেত্রী বলেন, আরও ভাল করে কাজ করেন, আমার কি করতে হবে বলেন, ম্যাজরিটি আসন আমাদের পাইতেই হবে, অগো পাওয়ার দেওয়া যায় না; অরা দেশটা বেইচা দিবে।
ব্যারিস্টার কুদরতে খুদা বলেন, ম্যাজরিটি আসন আমরাই পাবো, অরা যতই নাচুক পিপল অগো ভোট দিবে না। পিপল অগো চিনে, পিপল জানে দে আর ইন্ডিয়ান এজেন্ট, পিপল ভেরি মাচ ইন্ডিয়ার অ্যাগেইনস্টে।
তাঁরা অনেক সময় ধরে এইরূপ গণতান্ত্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা করেন, এবং নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
মহাগোলমাল হট্টগোল
আমরা জনগণরা শুনতে পাচ্ছি মহাগোলমাল হট্টগোল এমনকি মারামারি ছিড়াছিড়ি চলতেছে খোজারাজবংশে–এই বংশটা বুঝি টিকলো না দাঁড়াইতে পারলো না এই বংশটা বুঝি নির্বংশ হইলো; এই বংশে ভাঙনের চড়চড় ধপাশ ধুম ক্যারৎ ঠাশঠাশ নানা শব্দ হচ্ছে, ওই শব্দ চট্টগ্রাম রংপুর দিনাজপুর ঝালকাঠি রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। শুনতে পাই এই দল ভেঙেচুরে খানখান হয়ে পড়ছে ভেতর থেকে বাইরে; মহাজননেতার মহীয়সী স্ত্রী গুলবদন বেগম, বিশ্বাস করার মতো গুজব ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তাঘাটে, খোঁয়াড়ে গিয়ে মহাজননেতার সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছেন; এইভাবেই তিনি কম যাচ্ছিলেন, এখন যাওয়া বন্ধ; সত্য গুজব শুনছি মহাজননেতাই তাঁকে ধমক দিয়ে নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ নাকি বেগম মর্জিনা আবদুল্লার সাথে গুলবদন বেগম প্রায় চুলোচুলি শুরু করেছিলেন, গালে নখ লেগে অনেকখানি ছিঁড়ে গেছে বেগম মর্জিনার, যা মহাজননেতার মতো হৃদয়বান মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হয় নাই। মহাজননেতা আর তার স্ত্রী অনেক বছর ধরে ফ্যামিলি ভ্যালুজ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছিলেন, যেমন কমবেশি আমরা সবাই টিকিয়ে রাখার সাধ্যসাধনা করে যাচ্ছি, এখন বুঝি আর ওই ফ্যামিলি ভ্যালুজ টিকলো না। কিন্তু পলিটিক্সে এইটা খুবই দরকার। আমরা গোপনে আড়ালে আবডালে যাই করি না কেননা বাইরে আমাদের ফ্যামিলি ভ্যালুজ রক্ষা করা অত্যন্ত দরকার, সমাজসংসার এইটা চায়; ফ্যামিলি হচ্ছে আসল রাষ্ট্র, আর এইটাকে যদি চুনকাম করে না রাখি তাহলে বড়ো রাষ্ট্রকে কীভাবে বছরের পর বছর চুনকাম করবো? আমরা আমাদের গরিব মানুষের মনের কথা যতোটা জানি তাতে মনে হয় আমরা গরিবরা সম্ভবত বেগম মর্জিনা আবদুল্লার আর গুলবদন বেগম কাউকেই পছন্দ করি না; তাদের মধ্যে গোলমাল চুলোচুলি গাল কাটাকাটি হলে চারদিকের দুঃখের মধ্যেও বেশ একটা মজা পাই। ফ্যামিলি ভ্যালুজের চুলোচুলিতে আমরা মজা পেলেও মহাজননেতা যে মজা পাচ্ছেন না, তা আমরা বুঝতেই পারছি; খোয়াড়ের ভেতরেও তাকে হয়তো কুঁকড়ে থাকতে হচ্ছে। বাইরে তো আর যাই থাক সমাজ সংসার রাষ্ট্র আছে। তাই তিনি অভ্যাসমতো প্রায় একটি সামরিক নির্দেশ জারি করে ফেলেছেন–গুলবদন বেগমকে খোঁয়াড়ে দেখা করতে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে ভেতরের ভাঙার থেকেও মারাত্মক হচ্ছে তার রাজবংশ বাইরেও ভেঙে পড়ছে, অনেকেই রাজবংশ ছেড়ে যাওয়ার জন্যে নানা নীতিমালা তৈরি করছেন, অনেকখানি চলে গেছেন অনেকেই; মহাজননেতা আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন মনোয়ার হোসেন মোল্লা আর মর্জিনা আবদুল্লাকে, আমরা জনগণরা মনে করতেছি এই দুইজনকে নানা কারণেই বিশ্বাস করা যায় সব মানুষ সব সময় বেইমানি করতে পারে না; এই দুইজনেরই ভবিষ্যৎ আছে–মনোয়ার হোসেন মোল্লার গাড়িতে পতাকা ওড়ার ইশারা আছে, আর মর্জিনা আবদুল্লার ইশারা অত্যন্ত নিবিড় অন্তরঙ্গ।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো