জনগণের কী আছে দেখা ছাড়া, তারা তো দেখার জন্যেই জনগণ হয়েছে, পামরজনতা হয়েছে; তাদের তো দেখতেই হবে–একবার এদের, আরেকবার তাদের, আরেকবার ওদের। কিন্তু জনগণ থাকবে জনগণ।
মহাজননেত্রী বলেন, আল্লার রহমতে কি এইবার আমাদের অবস্থা আগের থিকা ভাল না? কি মনে হইতেছে আপনেগো, কতোখানি আগাইলেন?
তিনি সকলের মুখের দিকে তাকান; মুখগুলো দেখে তার ভালোই মনে হয়।
রাজপুরুষ আবদুর রহমান বলেন, আমরা ত যা করনের কিছুই বাকি রাখতেছি না, এখন সব আল্লা আর জনগণের হাতে, আল্লায় যদি মুখ তুইল্যা চায়, জনগণ যদি মুখ তুইল্যা চায় তাইলে আমরা পাওয়ারে আসবো।
মহাজননেত্রী জিজ্ঞেস করেন, যেইগুলির সঙ্গে প্যাক্ট করতেছি সেইগুলি আবার বিট্রে করবো না ত?
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, বিট্রে করনের পসিবিলিটি ত সব সময়ই আছে, আমাগো দ্যাশে বিট্রে করনই অনেকটা পলিটিক্স, তবে এইবার বিট্রে কইর্যা তাগো কোনো সুবিধা হইবো না।
মহাজননেত্রী জিজ্ঞেস করেন, মনোয়ার হোসেন মোল্লারে আপনাদের কি মনে হয়, সে কি শক্তির উৎসআলাগো সঙ্গে হাত মিলাইতে পারে?
রজ্জব আলি বলেন, তার কোনো উপায় নাই, তাগো ন্যাতারে যারা চাইর পাঁচ বছর আটকাইয়া রাখছে তাগো লগে মনোয়ার হোসেন মোল্লার যাওনের উপায় নাই, খালি আমরা পাওয়ারে আসলেই ওগো ন্যাতার বাইরে আসনের একটা উপায় হইতে পারে এইটা সে বোঝে।
কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, আমরা পাওয়ারে আসলে মনোয়ার হোসেন মোল্লারে প্রথম দিনেই মিনিস্টার করুম, এইটা ত তারে আপনে নিজেই বইল্যাই দিছেন, শক্তির উৎসআলারা তারে মন্ত্রী করবো না। তারে যারা মন্ত্রী করবো তাগো সঙ্গে সে থাকবোই। আমরা ছাড়া তার মন্ত্রী হওনের উপায় নাই।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, মনোয়ার হোসেন মোল্লা সঙ্গে আমার সব সময়ই কথা হয়, মহাজননেত্রীর সঙ্গেও হয়, তারে আর অবিশ্বাস করতে পারি না। অবশ্য পলিটিক্সে বিশ্বাস বইল্যা কোনো কথা নাই, এইটা বুঝি আমরা জিতলে সে আমাগো সঙ্গেই থাকবো।
মহাজননেত্রী বলেন, এইবার জিততেই হইবো, চাচা।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, এইবার না জিতলে বোঝতে হইবো আল্লাতাল্লা আমাগো ছাইরা দিছে, জনগণ আমাগো ছাইরা দিছে; বঙ্গভবন আমাগো লিগা নাই।
তিনি বড়ো একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, সারা ঘর শীতে জমে উঠতে চায়।
মহাজননেত্রী কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে থেকে বলেন, খোজাবংশের জননেতার স্ত্রী গুলবদন বেগমরে ধইরা রাখতে পারা যাইবো তো?
রাজপুরুষ আবদুল হাইয়ের দায়িত্ব হচ্ছে ওই ডাইনিকে ধরে রাখা; ডাইনিকে ধরে রাখতে রাখতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন আবদুল হাই, মাথা প্রায় খারাপ হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার।
আবদুল হাই বলেন, অই মাইয়ালোকটার উপর তার স্বামীই ভরসা করতে পারে না, অন্যের কথা না বলাই ভাল। আমি তারে ধইরা রাখনের চ্যাষ্টা চালাই যাইতেছি। এইটা ত সবাই জানে তাগো জননেতা স্ত্রীরে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করে বেগম মর্জিনা আবদুল্লা আর মনোয়াররে। তার স্বামী যেদিকে যাইবো অই মাইয়ালোকটা তার উল্টা দিকে যাইব।
মহাজননেত্রী জানতে চান, রাজাকারবংশের খবর কি?
রজ্জব আলি বলেন, অরা আমাগো লগেই আছে, তবে গোপনে গোপনে অগো দুই একজন উৎসআলাগো লগেও প্যাক্ট করনের চ্যাষ্টা করতেছে। আসলে অগো ওই দিকেই ত টান বেশি, ঠেইক্যা আমাগো লগে আন্দোলন করছে।
মহাজননেত্রী জানতে চান, অরা কি এইবার আগের থিকাও বেশি সিট পাইবো মন হয়?
আবদুর রহমান বলেন, পবিত্র ইসলাম ধর্ম যেমন কইর্যা আবার জাইগ্যা ওঠছে, দ্যাশ ভইর্যা যত মসজিদ ওঠতেছে, রোজা নামাজ পড়া হইতেছে, তাতে ত মনে হয় অগো অবস্থা আগের থিকা ভালই হইবো। অরা তাই ভাবে।
মহাজননেত্রী বলেন, আমরাও ত ইসলামের কিছু বাকি রাখি নাই, বিসমিল্লা আলহামদুলিল্লা আমরাও ত কম বলতেছি না, আমরাও ত নামাজ রোজা করতেছি, কয়দিন আগে ওমরা কইর্যা আসলাম, আবার ওমরা করতে যাবো। মুসলমান ভাইরা কি এইটা খেয়াল করতেছে না?
হাজেরা আলি বলেন, আমাদের অসুবিধা হইছে আমরা মাথায় কাপড় দিলে নামাজ পড়লে হজে গেলে ইন্টেলেকচুয়াল ভাইরা বলে আমরা ফ্যানাটিক হইয়া যাইতেছি, রিএকশনারি হইয়া যাইতেছি, আবার মাথায় কাপড় না দিলে নামাজ না পড়লে হজে না গেলে জনগণ কয় আমরা কাফের। এই দুইটারে মিলাইতে আমাদের জান শ্যাষ হইয়া যাইতেছে।
মহাজননেত্রী বলেন, ইন্টেলেকচুয়ালগো কথা ছাইরা দ্যান, দ্যাশ তাগো চিনে না, তাগো কথা শোনে না, ইন্টেলেকচুয়ালগো কথায় বাক্সে ভোট পড়ে না। তারা যা কয় কউক, তারা আমাগো লগেই থাকবো, তাগো যাওনের জায়গা নাই। শহীদ মিনার ঘুইরা তাগো এইখানে আসতে হবেই।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, শক্তির উত্সআলার যদি আবার আসে, তাইলে দ্যাশে থাকন যাইবো না; পাওয়ারে আইসাই আমাগো জ্যালে ঢুকাইবো, জামিনও পাওন যাইবো না।
এইরূপ আরো আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।
শক্তির উৎসবাদী রাজবংশ তীব্র চেষ্টা করে চলছে রাজাকার রাজবংশকে সাথে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে খোজারাজবংশের রাজপুরুষদের নিজেদের দলে ভাগিয়ে আনতে। বেশ কয়েকটি এসে গেছে, তাদের ভাগাতে হয় নি, এমনিই আইসা গেছে বলে আমরা শোনতেছি, তবে সেইগুলির পায়ের নিচে কাদা ছাড়া মাটি নেই; উৎসবাদীরা খুবই উদ্বিগ্ন, তাদের পায়ের নিচেও তারা পিছল পিছল বোধ করছে। মহাদেশনেত্রী শুনতে পাচ্ছি ঘুমাতে পারছেন না, তাঁর কাছেও কেউ যেতে পারছে না; তিনি আদেশ দিয়ে দিয়েছেন রাজপুরুষদের যেভাবেই হোক পাওয়ারে যাওয়ার ব্যবস্থা করার। অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু ও অন্যান্য রাজপুরুষেরা খেটে খেটে আর গোপন গোপন আলাপে বসতে বসতে পাগল হয়ে যাইতেছেন। অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বেশ কয়েকবার মহাদেশনেত্রীর সাথে বৈঠকে বসার আবেদন জানিয়েছেন, মহাদেশনেত্রী সময় দিতে পারেন নি; অবেশেষে সাত দিন পর মহাদেশনেত্রী একদিন বৈঠকে আসার সময় দিতে পারেন। আমরা লোকের মুখে শুনতে পাই সেইখানে নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো