মস্কোর ক্লিনিকে শ্যাষ ট্রিটমেন্ট করতে যান ওই রাজবংশের একনম্বর পুরুষ কমরেড আলি আহাম্মদ।
অ্যারোফ্লোট জাহাজে উঠেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন; ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন দেখেন যে এক অলি আউলিয়া তারে বলতেছেন তিরিশ বছর ধইর্যা আল্লারে না মাননের জইন্যেই তাঁর এই রোগ হইছে। এই রোগের নাম কাফেরি রোগ। আল্লারে না মানলে রোগ হইবোই। তার কাম হইবো মস্কো নাইম্যাই তোবা করন, আল্লার কাছে কান্দন; তাহলে তিনি মাফ কইরা দিবেন, তিনি বেঁচে যাবেন, ট্রিটমেন্ট লাগবে না, এইভাবেই ভালো হয়ে যাবেন।
ঘুম থেকে জেগে কমরেড আলি আহাম্মদ দোয়াদরুদ পড়তে থাকেন। তিরিশ বচ্ছরেও তিনি এইসব ভোলেন নাই।
মস্কোতে হাসপাতালে নেয়ার পর কমরেড আলি আহাম্মদ প্রথম যে-কথা বলেন, তা হচ্ছে, আমি তোবা করুম, মাফ চামু।
ডাক্তার তাকে কাটাছিড়ার জইন্যে নিতে চায়, কিন্তু তিনি বলেন, আমি তোবা করুম, মাফ চামু।
ডাক্তার কিছু বুঝতে পারে না; তার সঙ্গীরা খুব অবাক হন।
তাঁর এক সঙ্গী বলেন, কমরেড আলি আহাম্মদ ভাই, আপনের এখন অপারেশন দরকার; নাইলে বাচবেন না।
কমরেড আলি আহাম্মদ বলেন, আমি তোবা করুম। আল্লারে না মাইন্যা পাপ করছি, আমি মাফ চামু।
তাঁর সঙ্গী বলেন, কমরেড আলি আহাম্মদ ভাই, ক্লাসস্ট্রাগেল শ্যাষ হয় নাই, আপনাকে বাঁচতে হইবো, কার্ল মার্ক্স বলছেন আল্লা হচ্ছে গরিবগো জইন্যে তৈরি করা আফিম, ধনীরা ওইটা তৈরি কইর্যা গরিবগো খাওয়াইতেছে। আমরা গরিবগো একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
কমরেড আলি আহাম্মদ বলেন, আমি তোবা করুম, আল্লার কাছে মাফ চামু। আমারে আর ক্লাসস্ট্রাগল শুনাইও না, আমি তোবা করুম।
তিনি অপারেশন থিয়েটারে যেতে রাজি হন না।
কিন্তু কে তোবা করাইবো? একজন মওলানা দরকার তোবা করানোর জইন্যে। মস্কো শহর মওলানা কই? তবে একেবারে নাই, তা না; শহর ঘেঁটে একজন মওলানা নিয়ে আসা হয় তার জন্যে।
ওই মওলানার কাছে কমরেড আলি আহাম্মদ তোবা করেন। তোবা করনের পর তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)।
কমরেড আলি আহাম্মদ যখন অ্যারোফ্লেটে করে ফিরছিলেন তখন আমরা খবর পাই ওই দেশে আর সাম্যবাদ নাই; ওই দেশের রাজারা মাফ চেয়ে সাম্যবাদ ছেড়ে আবার। ধনীবাদ গ্রহণ করেছেন।
কমরেড আলি আহাম্মদের সঙ্গে ওই দ্যাশও তোবা করছে; মার্ক্স লেনিন স্ট্যালিনও তোবা করছে। জয়, ধনীদের জয়; দুনিয়ার ধনী এক হইছে।
শক্তির উৎসবাদীদের যখন আমরা ফালাই দিলাম, তখন আমরা যখন ঘরে ফিরে আসছিলাম, খুব একটা আন্দোলন করছি বলে যখন খুব সুখ পাইতেছিলাম, তখন শুনতে পাইলাম ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ডিফল্টার পাঁচ হাজার কোটি টাকার মালিক আবদুল মালেকের দালানে খুব গোলমাল হইতেছে।
গোলমাল হইতেছে হোক, তাতে আমাগো কি? এতো বড়ো একটা ফালানের ঘটনার পর ছোটোখাটো এক-আধটা গোলমাল তো হবেই।
খুব গোলমাল হইতেছে, বোমা ফাটতেছে, গুলি হইতেছে। ব্যাপারটা কি? আমরা কি একটু খবর লইতে পারি না? খবর লইয়া জানলাম মাও-সলিমদ্দি রাজবংশ অ্যাকশন করছে; ছোটোখাটো একটা বিপ্লব শুরু কইরা দিছে। আমরা খুশি হইলাম, আবদুল মালেকের শিক্ষা দরকার। ব্যাংক থিকা ট্যাকা নিয়া আর ফিরত দেয় নাই, খালি ট্যাকা বানাইতেছে।
পরে শুনলাম সলিমদ্দি আবদুল মালেককে সেলুলারে বলেছেন, অইটা কিছু না, ভয় পাইয়েন না।
মালেক বলেন, আমার ত ভয় লাগতেছে।
সলিমদ্দি বলেন, আপনের আরো বিপদ আছিলো, আরেক গ্রুপ আপনেরে সরাই দিতে চাইছিলো, আমি বাঁচাই দিলাম। ইউ আর নাউ ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট সেফ, ডোন্ট বি অ্যাফ্রেইড; উই আর উইথ ইউ।
মালেক বলেন, আমি আপনের কাছে গ্রেটফুল, আপনে আমারে বাঁচান, আপনের যা লাগবো আমি দিমু।
সলিমদ্দি বলেন, ক্লাসস্ট্রাগেলের জইন্যে উই নিড সাম মানি, আপনের পাঁচ হাজার কোটি আছে বইল্যা শোনতেছি, কোটি দশেক পাঁচটার মইধ্যে পাঠাই দেন। আপনের কোনো ভয় নাই।
মালেক বলেন, আমি নিজেই নিয়া আসতেছি।
সলিমদ্দি বলেন, একটা নতুন পাজেরোও আমাদের দরকার ক্লাসস্ট্রাগেলের জইন্যে, নতুন একটা নিশান পাজেরো নিয়ে আসবেন।
সলিমদ্দি এখন নিশান পাজেরোতে চড়ে ক্লাসস্ট্রাগেল করছেন। ক্লাসস্ট্রাগেল অনেকেই করতেছেন, তাদের উন্নতি হইতেছে।
এইবার সব দলের মুখেই রাহুর গ্রাসের দাগ; মনে হচ্ছে সকলের মুখই রাহু চুষে চুষে কালো করে দিয়েছে।
জনগণমন রাজবংশের মহাজননেত্রী খুবই চেষ্টা করছেন হাসি হাসি থাকতে, কিন্তু আমরা তার হাসির ভেতরে কী যেনো দেখতে পাই।
শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের মহাদেশনেত্রী হাসতেই ভুলে গেছেন, তাঁর বিউটিশিয়ানরা দেশে ফিরে গেছে বলে হয়তো, হাসতে গিয়ে তিনি রেগে উঠছেন।
রাজাকার রাজবংশের আলি গোলাম কোনো দিন হাসেন না, হাসলে তার ভেতরের হায়েনাটি বেরিয়ে পড়ে, তাই এইবারও হাসেন না।
খোজাগণতান্ত্রিক রাজবংশের মহাজননেতা খোঁয়াড়ে, তার হাসার কথা না; শুনি তিনি মাঝেমাঝে খোঁয়াড় ভিজিয়ে কাঁদেন, আল্লারে ডাকেন।
আমাদের রাজবংশগুলি সভার পর সভা করছে, বৈঠকের পর বৈঠক করছে, দেশের গরিব মানুষদের ঘুমাতে দিচ্ছে না।
মহাজননেত্রীর সাথে বৈঠকে বসেছেন জনগণমন রাজবংশের প্রধান পুরুষেরা আবদুর রহমান, কলিমউদ্দিন মৃধা, নিজামউদ্দিন আহমদ, রজ্জব আলি, আবদুল হাই, হাজেরা আলি। তাদের মুখে একই সাথে আশা ও উদ্বেগ থমকে আছে; শরীরে ক্লান্তিও প্রচুর, খুবই খাটছেন তাঁরা, দৌড়োদৌড়ি করছেন দেশ জুড়ে, থামার সময় পাচ্ছেন না, ঘুমানোর সময় পাচ্ছেন না। যেনো তারা সবাই দড়ির ওপর দিয়ে হাটছেন, আগেরবার হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, এইবার পার হতেই হবে, পা চেপে হাঁটছেন, নইলে পড়ে যাবেন গভীর অতল গিরিখাতে যেখানে বাঘ হায়েনার পাল অপেক্ষা করে আছে। দাঁতনখ খিঁচিয়ে, তলিয়ে যাবেন ভয়ঙ্কর খরস্রোতা নদীতে যেখানে বিকট হাঁ করে অপেক্ষা করে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে কুমির হাঙ্গর। জনগণ কি তাদের দিকে এইবার একটু মুখ তুলে চাইবে না? জনগণ, প্রিয় জনগণ, কি এতো নিষ্ঠুর হবে? মনে হচ্ছে এইবার জনগণ মুখ তুলে চাইবে, তারা ওইগুলিরে দেখেছে, অনেক বছর ধরে দেখেছে; এইবার কি একবারের জন্যেও দয়া করে তাঁদের দিকে চাইবে না?
চমৎকার খুব ভাল লাগলো