এক ক্যাডার বলে, অগো আর হলে ওটতে দিমু না, একবার বাইর করছি ত করছিই, ওটতে চাইলে লাছ পরবো।
চছ শিকদার বলেন, শুনতে পাইছি অরা এইবার আমাগো ভোটব্যাংক হিন্দুভাইগো বাড়ি থিকা বাইর হইতে দিবো না, এইবার ট্যাকা পয়সা দিয়া তাগো আটকাইয়া রাখবো, তাতে না পারলে কাটারাইফেলের ভয় দেখাইবো। তোমাগো কাম হইবো তাগো ঠিক মতো পলিং ইস্টিশনে লইয়া যাওন। তাগো বুঝাইতে হইবো তোমরা আছো, হিন্দুভাইগো কোনো ভয় নাই। একটা ভোটও নষ্ট করন যাইবো না; একটা ভোটের দাম কোটি টাকা।
জঝ আহমদ বলেন, সাবধানে কাজ করবা; অগো দল থিকা যেই ক্যাডাররা আসছে তাদের উপর চোখ রাখবা; য্যান্ স্যাবোটেজ না করতে পারে।
কয়েক ঘণ্টা ধরে এরকম আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক আলোচনা হয়; তারা নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন।
একটা দেশে কতগুলো গণতান্ত্রিক রাজবংশ আছে, তা দেখেই বোঝা যায় ওই দ্যাশে পলিটিক্স আর ড্যামোক্রেসির কন্ডিশন কতোখানি সুপারফাইন। আমরা মূর্খ মানুষ, ইতর মানুষ, গরিব জনগণ, চড়ালের চাঁড়াল, বেশি কিছু জানি না, তবে এই কথাটা আমাদের মনে হইতেছে।
যেই দ্যাশে যতো বেশি রাজবংশ সেই দ্যাশে ততো বেশি ড্যামোক্রেসি। এই কথাটাও আমাদের মনে হইতেছে। এই কথাটা আগে অন্য কোনো মানুষজনের মনে হয়েছে কি না আমরা জানি না; তবে আমাদের মনে হচ্ছে।
যেই দ্যাশে রাজবংশগুলি যতো বেশি একে অন্যরে পুঙ্গির ভাই হৌরের পো সমন্ধির পুত আর আর প্রিয় আদরের নামে ডাকে, সেই দ্যাশে গণতন্ত্র তত বেশি বিশুদ্ধ ততো বেশি পারফেক্ট।
আমাগো দ্যাশে ড্যামোক্রেসি যেমন বেশি তেমনি পারফেক্ট।
আমাদের দেশে খালি চারখানা রাজবংশ নাই; দেশে আরো অনেক ছেঁড়াফাড়া ভাঙাচোরা চ্যাপ্টা ছ্যাচালাগা কানা আতুর লুলা ধ্বজভঙ্গ রাজবংশ আছে।
দেশ ছোটো হইতে পারে, কিন্তু রাজবংশের অভাব নাই। দ্যাশ গরিব হইতে পারে, কিন্তু ড্যামোক্রেসির ঘাটতি নেই।
সেই সব রাজবংশের কথা বলা হয় নাই।
আমরা গরিব মানুষ, সাধারণ জনগণ, ইতর সাধারণ, দিন আনি দিন খাই, কোনো কোনো দিন আনতে পারি না খাইতেও পাই না, আমাদের গায়েগতরে গোস্ত নাই, মাথায় ঘিলু নাই; কতো রাজবংশের নাম মুখস্থ রাখবো? কত রাজপুরুষের নাম মাথায় রাখুম? রাজপুরুষরা তো চারদিকে পায়খানার পোকার মতো কিলবিল করেন। এমন হইতে পারে তাগো কথা একেবারেই মনেই আসে নাই, আবার এমনও হতে পারে যে তাদের কথা খুবই মনে পড়ছে, মিনিটের জন্যেও ভুলি নাই, কিন্তু বলনের দরকার বোধ করি নাই। বলে কী লাভ, সময় নষ্ট হইতো। আমাগো চোখে ওইগুলি আজকাল পকেটমাইর ছিচকা চোরের সমান হয়ে গেছে, আমরা দেশের মানুষজন ওইগুলিরে আর গণায় ধরি না।
ওইগুলি টিকে আছে মাঝেমইধ্যে ছোটোখাটো চুরিচামারি ছিনতাই করার জইন্যে। দেশে একটু আধটু চুরিচামারি ছিনতাই না থাকলে কোনো মজা থাকে না। ওইগুলি আমাদের মনে মজা দেয়।
অনেকগুলি রাজবংশ আছে, যেগুলির অফিসই নাই, ওই বংশের রাজপুরুষ তার বেডরুমে বসেই স্ত্রী (একবচনবিহুবচন) আর দুই চারজন গোমস্তা নিয়ে বংশ চালান। ব্যবসা মন্দ হয় না।
অনেকগুলি রাজবংশ আছে, যেগুলির অফিসে কবর, আর কবরে মাজার তৈরি হয়েছে। দেশে কবর মাজারের দাম অনেক। কবর আর মাজার দেখলে লোকজন দাঁড়ায়, জিয়ারত করে, দুইচারটা পয়সা দেয়। ওই রাজবংশগুলির রাজপুরুষেরা কবরে মাজারে দাঁড়িয়ে দোয়াদরুদ পড়েন। ব্যবসা মন্দ হয় না।
মহান আল্লাতাল্লার রাজত্ব স্থাপনের জন্যে এখন দ্যাশে তিন চাইর শো রাজবংশ আছে। আল্লাতাল্লা আর তোক পাইল না। তাগো কাম শুক্রুবারে শুক্রুবারে শহরগুলিরে ময়লা করা। তাগো পায়খানা প্যাশাব কুলুপে শহর ভইর্যা যায়। মনে হয় আল্লাতাল্লাও তাগো চায় না। আমরা তো চাই-ই না।
এই আলমক্কিমদিনি আলবাগদাদি আলতেহেরানি রাজবংশগুলির ইবনে সৌদ ইবনে ফয়সল ইবনে পুটিমারা ইবনে কুচিয়ামারা বায়েতুল্লা রুহুল্লাদের প্রত্যেকের জীবন জবজবে ইতিহাসে ভরা, তাতে পরিচ্ছেদের পর পরিচ্ছেদ, তাতে অনেক চুরিচামারি বাটপারি, বলে শেষ করা যায় না; মানুষরে ঠকাইতে ঠকাইতে তারা আল্লারেও ঠকাইতেছেন বলে মনে হচ্ছে। আমরা মানুষরা ঠকি, তিনিও যে ঠকেন এইটাই আমাদের কেমন কেমন ধান্ধা ধান্ধা লাগে।
ইবনে পুঁটিমারা রাজবংশের কথাই একটু বলি।
এই মহারাজ একদা এক শহরে এক অফিসে এক রকমের পিয়ন আছিলেন। স্বভাবটা তাঁর ভালো ছিলো না–এগো স্বভাব কোনোদিনই ভালো না; সিকি আধুলির ওপর তার চোখ পড়ে থাকতো; একবার পিয়ন সাহেব অফিসের দশ হাজার টাকা (দশ হাজার! এখন মাসে আয় তাঁর দশ কোটি) মেরে পুঁটিমারা পালিয়ে যান, তারপর তারে গুতিয়ে গুতিয়ে জেলে ঢুকোনো হয়। জেল থেকে বেরোনোর দশ বারো বছর পর তিনি ইবনে পুঁটিমারারূপে দেখা দেন।
সমস্ত প্রশংসা তারই প্রাপ্য।
এই মক্কিমদিনি তেহেরানি বাগদাদি পলিটিশিয়ানদের চলতি নাম পির (আমরা শুনতে পাই এই বিরাট কথাটার আসল অর্থ নাকি বুড়া; তাহলে কেমন হইলো?); তারা ইহকাল পরকাল সবকাল জুড়ে পলিটিক্স করেন, পরকাল দেখিয়ে ইহকালে পাজেরো টাওয়ার নারী আর আর জিনিশ করেন। পুঁটিমারা এখন এক প্রকাণ্ড পির, তার মেষ আছে কয়েক লাখ। মেষ আর কি, আমরাই; মেষ আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কী। আমাগো কোটি কোটি ভেড়ার দ্যাশে কয়েক লাখ অবশ্য বেশি না, তবে শুনতে বেশি লাগে। মেষেরও বুদ্ধিবিচার আছে, আমাগো নাই; যদি থাকতো তাহলে কি ওই পিয়নের পাল্লায় পড়ি? পাজেরো হাঁকাই তাঁর বাড়ির দিকে? না, তিনি আর পিয়ন নন; তিনি ইবনে পুঁটিমারা, আলমব্ধি পলিটিশিয়ান।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো