আমাদের আরেকখানা রাজবংশের নাম হলো ‘জনগণমন গণতান্ত্রিক রাজবংশ বা দল’ : গণতান্ত্রিক রাজবংশ প্রতিষ্ঠার তৃতীয় সূত্রানুসারে এটি প্রতিষ্ঠিত। এই দলখানি বাঙালি, বাঙলা, বাঙলাদেশের নামে পাগল বলে এর নামখানি রাখা হয়েছে উর্দু ও ইংরেজি ভাষার বিবাহ ও বিবাহোত্তর কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে। এই রাজবংশখানি বিশ্বাস করেন তারাই এনেছেন দেশের স্বাধীনতা, তাই দেশ তখনই স্বাধীন যখন তারা ক্ষমতায় আছেন। এই রাজবংশ মনে করেন তারা যখন স্বৈরাচার করেন, তখন তা হচ্ছে গণতন্ত্র; আর অন্যরা যখন গণতন্ত্র করেন (অবশ্য করেন না), তখন তা হচ্ছে স্বৈরাচার। এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মনে করতেন দেশটা তার; আর এ-বংশের অনেকেই মনে করেন দেশটা তাদের। এই রাজবংশ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তাদের পায়ের নিচে আমরা মাথা দিয়ে রাখতাম; এই রাজবংশের তিনচারজন মহান রাজপুত্র ছিলেন, তাঁরা আমাদের যা করতে বলতেন আমরা তা-ই করতাম; ভাইয়ের মাথা এনে দিতে বললে ভাইয়ের মাথা এনে দিতাম। একরাতে কতকগুলো খুনি, একটা রাজা যাদের বলতেন সূর্যসন্তান, এই বংশটিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। মজার কথা হচ্ছে এই বংশেরই একজন নতুন রাজা হন, আর মন্ত্রী হন এ-বংশেরই অনেকে, যারা একদিন প্রতিষ্ঠাতার পায়ের ধুলো পেলে ধন্য হতেন। আমরা গরিব জনগণ কিছু বুঝতে না পেরে চুপ থাকি। এ-বংশ অনেক বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন, তাই এ-বংশ থেকে অনেক রাজপরুষই শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশে ও খোজাগণতান্ত্রিক রাজবংশে চলে গেছেন; অনেকে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন; এখন এ-বংশ নানা বংশ আর অবংশ থেকে রাজপুরুষ সংগ্রহ করছেন। এ-বংশের অন্যতম প্রধান সম্পদ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা, মঞ্চ আর টেলিভিশন যাদের খুব ভালো লাগে। এ-বংশ আগে ধর্মনিরপেক্ষতা নামে এক অদ্ভুত কথা বলতেন (আরো একটি অদ্ভুত কথা বলতেন, যে-কথাটির অর্থ তাঁরা জানতেন না, আমরাও জানি না, কথাটি হচ্ছে সমাজতন্ত্র), তবে মিলাদ পড়তে গিয়ে বলতেন ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়; এবং এখন এ-বংশের রাজপুরুষেরা খুবই ধার্মিক হয়ে উঠেছেন, দাড়ি ও টুপির চর্চায় মন দিয়েছেন, তসবি টিপছেন, মাসে মাসে ওমরা করছেন। এতে আমরা জনগণরা খুব খুশি হচ্ছি, দেশে আর ইসলামের অভাব থাকবে না। এই দলের প্রধানকে আমরা বলি মহাজননেত্রী।
আমাদের আরেকখানি রাজবংশের নাম হচ্ছে ‘খোজাগণতান্ত্রিক রাজবংশ বা দল’ : এটি একখানি অসামান্য বংশ, গণতান্ত্রিক রাজবংশ প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় সূত্রানুসারে এটি প্রতিষ্ঠিত; তবে এর জনক অমর না হওয়ায় তাঁর স্ত্রী মহাগণনেত্রী হয়ে উঠতে পারেন নি; হওয়ার তার সাধ ছিলো, কিন্তু সাধ পূরণ হয় নি; একদিন হয়তো হবে। আমরা মূর্খরা মনে করি ভাঁড় হওয়ার যার কথা ছিলো, ভাঁড়ামো করলে যিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর গোপাল ভাঁড়কে ছাড়িয়ে যেতেন, আমাদের কালচার সমৃদ্ধ হতো, তিনি হয়েছিলেন সেনাপতি; আর তিনি অন্য কিছু জন্ম দিতে না পেরে জন্ম দিয়েছিলেন এই রাজবংশটিকে। শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশের মতো এটিরও জন্ম হয়েছিলো ক্ষমতার প্রসবঘরে, এবং দেশের যতো রাজাকার (আল্লা তাদের ভেস্তে নসিব করুন), অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, মেজর, সুবাদার ও দফাদার, আমলা, কামলা, অধ্যাপক, অধ্যক্ষ, ডাক্তার, কবিরাজ, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকডাকাত, চোর, দোকানদার, চোরাকারবারি, শাদাবাজারি, কালোবাজারি, বাম ও ডান রাজবংশ থেকে গড়িয়ে আসা ইতর মেথর এটিকে পরিপূর্ণ করে তোলেন। বন্ধনির ভেতর এঁদের বিশেষ পরিচয় আর দিলাম না, এককথা বারবার বলতে মুখ ব্যথা হয়ে যায়; শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশে এদের পরিচয় দেয়া হয়েছে। এ-রাজবংশটি মুঘলদের মতো দীর্ঘকাল ধরে রাজত্ব করেন, এবং দেশকে ধর্মকর্ম পির মুর্শেদ দশরশি শাহেদাবাদী অকথ্যবাদী মিথ্যাবাদী ভাঁড়ে ভ’রে দেন। এ-রজবংশের মহাজননেতাকে আমরা ফেলে দিই, এবং তিনি অমর না হয়ে কয়েক বছর কারাগারে অবসর যাপন করেন। এ-বংশের মহাজননেতার আদর্শ প্রেমপিরিতি, আর দলের আদর্শ ইসলাম।
আমাদের আরেকখানি রাজবংশের নাম ‘রাজাকারতান্ত্রিক রাজবংশ বা দল’ : ইসলামের নামে দেশের প্রধান খুনিদের রাজবংশ এটি। এই বংশটি দিনরাত ছুরি শান দেন বলে এটিকে ছুরিশানদার রাজবংশও বলি আমরা। ১৯৭১-এ আল্লার নামে এ-রাজবংশ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন, আল্লার নামে তারা কাজ করেন পাকিস্থানের জল্লাদবংশরূপে, হাজার মানুষের গলা কাটেন, লাখ নারীকে ধর্ষণ করেন; এবং এখনো তাদের পেটের ভেতরে পাকিস্থান। হাতপায়ের রগ কাটতে তারা দক্ষ, আল্লা তাদের এ-অধিকার দিয়েছেন বলে তারা বিশ্বাস করেন ও বাস্তবায়ন করেন। গণতন্ত্র আর নির্বাচনে তারা বিশ্বাস করেন না, ইসলামে এইসব নেই, তারা বিশ্বাস করেন আল্লায় (এটা তাঁদের ছদ্মবেশ) ও খুনে; তবে উপায় না দেখে তারাও গণতন্ত্র ও নির্বাচনে অংশ নেন। টুপি ও দাড়ি তাদের ব্যবসায়ের প্রতীক। তারা লেখাপড়া জানেন না, আর পড়লে একখানা বই ছাড়া পড়েন না। এই রাজবংশের রাজপুত্ররা এখনো মনে করেন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, আর যদি না ঘোরে তাহলে সূর্যকে পৃথিবীর চারদিকে তারা ঘুরিয়ে ছাড়বেন, সূর্যের হাতপায়ের রগ কেটে দিয়ে।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো