নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানীরা তাদের পাহাড়ের সমান তথ্যের, এইভাবে সেইভাবে চিকাৎ করে উপস্থাপিত উপাত্তের, ওপরে নিচে ডানে বায়ে কোণাকোণি কম্পিউটারকৃত স্তম্ভ ও সারির, যে-ব্যাখ্যা দেন, তাতে আমরা জনগণরা ভয় পেয়ে যাই। আমাদের মনে হইতে থাকে তারা আমাদের মনের কথা বলতেছেন।
তাঁদের স্তম্ভ আর সারিগুলো সরলভাবে আমরা নিচে তুলে ধরছি :
নোংরা | বেশি নোংরা | অতিশয় নোংরা | |
আমাদের রাজনীতিবিদদের আকৃতি (পেট ইত্যাদি) | ৮০.২% | ৭০.৪% | ৫০.৭% |
মুখের গঠন | ৮৫.৫% | ৭২.৩% | ৬৫.৩% |
মুখভঙ্গি (বক্তৃতার সময়) | ৯০.৫% | ৭৬.৮% | ৭৭.৫% |
হাঁটার ভঙ্গি | ৮৯% | ৮৭.৮% | ৭৮% |
থুতু ফেলা (বক্তৃতার সময়) | ৯৫% | ৮৮.৬% | ৭৯.৬% |
বক্তৃতা (কমপক্ষে ৩৪০ জনের জনসভায়) | ৯৯.৯৯% | ৮৯.৯% | ৮০.৬% |
ভাষা (সব সময়) | ৯৮.৮৮% | ৯২.৬% | ৮৫.৬% |
দ্রষ্টব্য : ৪০, ৬৯০জন ভোটারের মত বিশ্লেষিত হয়েছে।
ওপরে সামান্য একটু নমুনা দেয়া হলো মাত্র।
তাঁরা পাঁচ বছর আগের সাথে পাঁচ বছর পরের এই অবস্থার ফালাফালা ছিড়াফাড়া তুলনা করেন, রাজবংশগুলোর মহাদেশনেত্রী মহাজননেত্রী রাজপুরুষ এবং আর যা যা যা আছে, তা তা তা তুলনা করে দেখান এই বছরের ইলেকশন হচ্ছে অসুন্দরের সাথে অসুন্দরের, নোংরার সাথে নোংরার, আবর্জনার সাথে আবর্জনার, কুৎসিতের সাথে কুৎসিতের কম্পিটিশন। তারা দেখান পাঁচ বছর আগে তাঁদের চোখেমুখে সৌন্দর্য ছিলো, ঠোঁটে গ্রীবায় হাসিতে উদ্যত ও উদ্ধত মুষ্টিতে সৌন্দর্য ছিলো; বছরের পর বছর একটা লোমশ দৈত্যের সাথে লড়াই করে তাঁরা সৌন্দর্য অর্জন করেছিলেন; কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁদের সেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে, পচে গেছে। তাঁদের নিজেদের মুখে এসে ভর করেছে দৈত্যের মুখের অসৌন্দর্য, বেহায়া বেহায়া ভাব তাদের মুখ জুড়ে, পচন বেয়ে বেয়ে পড়ছে তাদের অবয়বে। তাদের কারো মুখে নির্মল হাসি নেই, তাদের হাসি এখন উঁচু চোয়ালের বিকৃতি মাত্র; তাঁদের প্রত্যেকের চিবুক ভেঙে পড়েছে, গাল থেবড়ে পড়েছে, গলকম্বল ঘেঁড়া ছালার মতো ঝুলে পড়েছে, চোখের নিচে বস্তির ঘরের ধুলকালি জমেছে; তাদের হঠাৎ দেখলে সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে যায়, তাদের ছোটা ছোটো দৈত্য মনে হয়। নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানীরা দেখান মহাদেশনেত্রী মহাজননেত্রী রাজপুরুষরা অব্যবস্থিত (শব্দটির অর্থ বুঝতে আমাদের রাজপুরুষদের পাঁচ দিন সময় লাগে) হয়ে পড়েছেন; পাজেরো থেকে নামতে তাদের জামাকাপড়শাড়িসায়া পাজেরোর দরোজায় আটকে যাচ্ছে, উঠতে গিয়েও আটকে যাচ্ছে, মঞ্চেও আটকে যাচ্ছে। তাদের ভাষাও বদলে গেছে, গলগল করে ঝরছে তাদের মুখ থেকে অপভাষা, বলা যেতে পারে তারা একটি অভিনব রাজনৈতিক অবহট্ঠ রাষ্ট্রভাষা জন্ম দিয়েছেন, যা ৮৫০ সালের পর এই প্রথম ঘটলো; তারা এবার কথা বলার থেকে চিৎকার বেশি করেন, নিজেদের কর্মসূচির থেকে অন্যের নিন্দে বেশি করেন; তাঁদের ভাষায় চলতি বাঙলা অশ্লীল শব্দ ১০%, আঞ্চলিক অশ্লীল শব্দ ২৮%, ইংরেজি অশ্লীল শব্দ ১৭%, আরবিফার্সি গালাগাল ১৫%। তাঁরা দেখান যে আমাদের রাজপুরুষদের বক্তৃতায় কোনো বক্তব্য নেই, সেগুলো নিরর্থক চিৎকার।
নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেন এবারের নির্বাচন হবে কদর্যের সাথে কদর্যের প্রতিযোগিতা, লোভের সাথে লোভের প্রতিযোগিতা; আর জনগণকে ভোট দিতে হবে ওই কদর্যের বাক্সে ওই লোভের বাক্সে।
আমরা জনগণরা ভয় পেয়ে যাই, ডরে কাঁপতে থাকি।
এদিকে আবার কতকগুলো আজেবাজে সমাজবিরোধী গাঁজাখোর মাদকসেবী বিকারগ্রস্ত বেকার, যারা এমএ এমএসসি এমএজি এমবিবিএস ইঞ্জিনিয়ারিং আর আর হাবিজাবি পাশ করেও বছরের পর বেকার পড়ে আছে (বেকার থাকবে না ক্যান এইসব না পইড়া সৌদি গিয়া চাকর থাকলেই পারতো, মুসলমান ভাইগো গুতা খাইলেই পারতো, সোয়াব হইতে), তারা একটা কাগজ ছাপিয়ে দিয়েছে। বেকাররা সৌন্দর্যের কী বোঝে, তাই তারা সৌন্দর্য নিয়ে মাথা ঘামায় নি; তারা পুরোনো কালের টোলের পণ্ডিতদের মতো রাজপুরুষদের নীতি আদর্শ সততা অসততা শিক্ষা অশিক্ষা এই সব অপলিটিকেল ব্যাপার সম্পর্কে জনগণের মত নিয়ে গবেষণা করে ফলাফল আমাগো মতো গরিব জনগণরে জানাই দিয়েছে। আজকাল গবেষণায় বড়োই ছকাছকি, বড়োই স্তম্ভান্তম্ভি; দেখতে পাই আমাগো বেকাররাও হনুলুলু না গিয়াও ওই সবে কম যায় না। তয় এইসব শিক্ষা অশিক্ষা সততা অসততা নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিক হয় নাই, শত হইলেও তারা রাজপুরুষ, তারাই ছিলো তারাই থাকবো; শিক্ষা না থাকলেও তাঁরা শিক্ষিত, মানতে হইবো; সততা না থাকলেও তারা সৎ, এইটা মেনে লইতে হইবো। এমন কোন দেশ আছে, যেখানে পলিটিক্সের জন্যে শিইক্ষ্যা দরকার হয়? পটেটো শব্দের বানান, করতে পারে, এমন কয়টা প্রেছিডেন্ট ভাইছপ্রেডিডেন্ট আছে আমরিকায়? দুনিয়ায় এমন কোন রাষ্ট্র আছে, যেখানে পলিটিক্সের জইন্যে সৎ হইতে হয়? এইগুলি তো পুরানো কালের পণ্ডিতগো কথা। বেকার বাজানরাও অনেকগুলো স্তম্ভ আর সারি ছেপে দিয়েছে; সেইগুলিরে আবার ভাজাভাজা করে ব্যাখ্যাও করেছে। তাদের স্তম্ভ আর সারিতে এই রকম জিনিশ পাওয়া যায় :
আমাদের রাজনীতিবিদগণ | নারীদের মতে | পুরুষদের মতে | ছাত্রদের মতে |
অশিক্ষিত | ৯০.২% | ৮৮.৪% | ৯৯.৯% |
মিথ্যেবাদী | ৯৫.৭% | ৮৬.৩% | ৯৯.৯% |
কপট বা ভণ্ড | ৯৭.৫% | ৮৬.৮% | ৯৯.৫% |
ঘুষখোর | ৯৭% | ৯৬.৬% | ৯৯.৬% |
অনৈতিক | ৯৭.৯৯% | ৭৮.৯% | ৯৯.৬% |
ক্যাডারদের গডফাদার | ৭০.৮৮% | ৭৩.৬% | ৯০.৬% |
ধর্মভিনেতা | ৯৯.৯% | ৯৭.২% | ১০০% |
দ্রষ্টব্য : ৩৩,৪২৬ জন ভোটারের মত বিশ্লেষিত।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো