ভিস্তি সাহেবের বিবি জিজ্ঞেস করে, হুজুর, সালেহারে কই পাঠাইলেন?
ভিস্তি সাহেব বলেন, ছেমরিরে চিরকালের লিগা বাড়িতে পাঠাইলাম।
ভিস্তি সাহেবের বিবি কেঁদে ওঠে, হুজুর, আমারেও পাঠাইয়া দেন।
এসব কথা আমরা ভুলি কী করে, আর মনে করে রাখিই কী করে? সকালে উঠে আমাদের ক্ষেতে যেতে হয়, দুপুরেও বাড়িতে ফিরতে পারি না, ক্ষেতের আলে বসেই শানকিতে করে দুটা ভাত খাই; আমাদের মুদিদোকানটা খুলে বসতে হয়, খরিদ্দারের আশায় বসেই থাকি; কলে কাজ করতে গিয়ে আমাদের গেটেই বসে থাকতে হয়, সারাদিন আর সময় পাই না; সারা রাত আমরা নদীতে মাছ খুঁজি, পাই না; আর অফিসে গিয়ে অফিস পালিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গামছাটা লুঙ্গিটা বেচতে হয়; আর কাজকাম না পেয়ে আমাদের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়, গাড়ির নিচে পড়তে ইচ্ছে হয়। আমাদের রক্ত জ্বলতে জ্বলতে ঘোলা হয়ে গেছে। এসব কথা আমাদের মনে রাখার মতো ম
রাজাকার রাজবংশে, আমরা জনগণরা শুনতে পাই, চলছে দারুণ উত্তেজনা; এবং আমরা মনে মনে ভয় পেতে থাকি।
দাড়ি আর চুলে রাজাকার রাজপুরুষেরা নতুন কলপ লাগিয়েছেন, কাঁচাপাকা দাড়ি হয়ে উঠেছে ঝলমলে কালো আর মেহেদি রঙের, সুরমা দিয়েছেন চোখে, নতুন পাজামা আস্কান টুপি আর চোস্ত পাজামায় সেজেছেন, শরীর থেকে আতরের খুশবু ঝরঝর ঝরছে। মনে হচ্ছে তিন আর চার নম্বর বিবিকে ঘরে তুলতে যাচ্ছেন, শাদিমোবারকের আবহাওয়া তাদের চারদিকে। ওই রাজপুরুষদের চোখ সব সময়ই ছুরির মতো ঝকঝক করে, মনে হয় চোখের ভেতর কয়েকটা জল্লাদ বসে ছুরি শানাচ্ছে, নতুন সুরমায় আরো ঝকঝক করছে, এখনি কারো বুকে ঢুকে লাল হয়ে উঠতে পারলে আরো ঝকঝক করতো। ধর্মে তারা দেশ ভরে ফেলেছেন, এতো ইসলাম দেশে আগে কখনো ছিলো না, এটা তাদের সাফল্য; দেশে আর কয়েকটা কাফের আর মুরতাদ মাত্র বাকি, ওইগুলোকে দমিয়ে দিতে খুন করে ফেলতে পারলে আসবে তাদের রাজত্ব। তাঁদের সাফল্য অশেষ, এক সময়ের কুখ্যাত ঘৃণিত রাজাকার থেকে তারা হয়ে উঠেছেন। মূল্যবান শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদ, সবই আল্লার দান; এখন ওই মুক্তিযোদ্ধাগুলো তাঁদের পায়ের নিচে বসতে পারলে ধন্য হয়। ভুল বলা হয়ে গেলো, দেশে আর মুক্তিযোদ্ধা কই?
তাদের বড়ো বড়ো আমিরওমরাহরা, আলখাল্লা নেতারা, অধ্যাপক, মওলানারা আর মৌলভিরা পাজেরো হাঁকিয়ে আসেন, ওই যানবাহনটি কাফেররা তৈরি করেছে, তবে ওইটিকে তারা ধর্মে দীক্ষিত করে নিয়েছেন। তাঁদের হাতে সেলুলার; আস্কানের নিচে কী আছে তা আমরা জনগণ বুঝতে পারছি না। নিশ্চয়ই যা থাকার তা-ই আছে।
মাগরেবের পর রাজাকার রাজবংশের মজলিশে শুরা বসে। এই রাজবংশের রাজপুরুষেরা সব সময়ই সাবধান, সশস্ত্র প্রহরী ছাড়া তারা চলেন না, কার্যালয়ের চারদিকে পাহারায় রাখেন সশস্ত্র ধার্মিক প্রহরীদের, মোমেনিন সালেহিনদের, যারা হাত আর পায়ের রগ কাটতে পারে চোখের পলকে, গলা কাটতে সময় নেয় আধ মিনিট। প্রহরীরা আজ আরো সাবধান।
রাজাকার রাজবংশের আমির প্রথম আল্লা ও রসুলকে ধন্যবাদ জানান।
আমির সাহেব বলেন, বিসমিল্লাহের রহমানের রাহিম, আল্লার রহমতে আমাদের অবস্থা বছরের পর পর উত্তম হইতেছে, আমাদের নেতা আবু আলা মওদুদি সাহেবের নির্দেশিত পথে আমরা অনেক দূর আগাইয়া গিয়াছি; অরা আমার নাগরিকত্ব কাড়িয়া নিয়াছিলো, আল্লায় তা আমাকে ফিরাইয়া দিয়াছেন। কাফেররা এইভাবেই মমিন মোসলমানের উপর অত্যাচার করে, কিন্তু আল্লার রহমতে মমিনের জয় হইবেই, অদের উপর গজব নাজিল হইবে।
সবাই বলেন, আলহামদুলিল্লা।
আমির সাহেব বলেন, আল্লার ইসলামে ড্যামোক্র্যাসি নাই ইলেকশন নাই ভোটার নাই এসেম্বলি নাই পার্লামেন্ট নাই, এইগুলি সব ইহুদি আর খ্রিস্টান কাফেররা তৈরি করেছে, আমরাও ড্যামোক্র্যাসি আর ইলেকশনে বিশ্বাস করি না, আল্লা তা নিষেধ করে দিয়াছেন, ইসলামে আছেন এক আল্লা, আল্লার আইন, আর আল্লার শাসন। আল্লার শাসনই সর্বশ্রেষ্ঠ।
সবাই গভীর স্বরে বলে ওঠেন, আলহামদুলিল্লা।
আমির সাহেব বলেন, আল্লার রহমতে আমরা একদিন অবশ্যই কায়েম করব আল্লার শাসন; তবে এখনও তা দূরে আছে, তাই আমরা কাফেরদের ড্যামোক্র্যাসি আর ইলেকশন মানিয়া আল্লার পথে কাজ করিতেছি।
তারা সবাই বলেন, আল্লার নিশ্চয়ই আমাদের মাফ করিবেন।
আমির সাহেব বলেন, আল্লার শাসন যখন হইব তখন দ্যাশে আর পলিটিকেল পার্টি থাকব না, পলিটিক্স থাকব না, ড্যামোক্র্যাসি আর ইলেকশন থাকব না, আল্লার বই। ছাড়া আর কোনো বই থাকব না, তখন কাফেরদের স্কুল কলেজ ইনভারসিটি থাকব না, দ্বীনের শিক্ষা ছাড়া আর কোনো শিক্ষা থাকব না।
সবাই বলে ওঠেন, আলহামদুলিল্লা।
আমির সাহেব বলেন, কিন্তু এইবারও আমাদের ইলেকশনে যাইতে হবে, আল্লার শাসনের পথ তৈরি করিতে হবে। দ্যাশে এখন আমাদের অবস্থা আগের হইতে ভাল, আমাদের তারা আর রাজাকার বলে না। আপনাদের একটা কথা আমি জানাইতে চাই আমারে মুরুব্বিরা কয়টা ইঙ্গিত দিয়াছেন।
সবাই বলে, ইঙ্গিতের কথা আপনে আমাদের বলেন, হুজুর।
আমির সাহেব বলেন, আমাদের মুরুব্বিরা ইলেকশনের জইন্যে আমাদের দশলাখ ডলার দান করিবেন। তাঁরা ইঙ্গিত দিয়াছেন তারা দেশে এইবার ক্ষমতার বদল চান, আমাদের সেইভাবে কাজ করিতে হইবে। এইবার আমাদের নায়েবে আমির মওলানা রহমত আলি ভিস্তি সাহেব আপনাদের সব বলিবেন।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো