রহমত আলি ভিস্তি বলেন, বলেন ভাইজান, আপনের কথা বলেন।
রুস্তম আলি বলেন, দ্যাশটা হারামজাদা ইন্ডিয়ার দালালগো হাতে চইল্যা যাইবো আবার এইটা ত আপনেরাও চান না, আমরাও চাই না। অগো হাতে গেলেই দ্যাশটা তিনদিনেই বেইচ্যা দিব, দ্যাশে একটাও মুসলমান থাকবো না। আমরা ইসলামের জইন্যে বড়োই চিন্তিত।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, না, ভাইজান; এইটা মুসলমানের দ্যাশ, মুসলমানের হাতেই থাকতে হইবো, নাইলে দ্যাশটা কাফের হইয়া যাইবো।
রুস্তম আলি বলেন, ভাইজান, আমরা আইজ আছি কাইল নাই, আমাগো থাকন না থাকন কথা না, কথা হইলো ইসলাম থাকতে হইবো। ইসলাম থাকলেই আমরা থাকুম। ইসলামের জন্যেইতো আমাগো মহান ন্যাতা আপনেগো জ্যাল থিকা বাইর করে আনছিলেন, দলরে দাঁড়াইতে দিছিলেন।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, হ, ভাইজান, পলিটিক্স ত করি ইসলামের লিগা, নিজের লিগা করি না; আর আপনেগো মহান ন্যাতা আমাগোও মহান ন্যাতা।
রুস্তম আলি বলেন, ভাইজান, তাইলে আইজ বৈকালে আসেন আমরা বসি।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, ভাইজান, আপনের কথা ফ্যালন যায় না, তয় বৈকালে দলের মজলিশ আছে, আর বসনের সময় আরো পাইবো।
রুস্তম আলি বলেন, ভাইজান, মনে হয় আমাগো উপর আপনে বেজার হইয়া আছেন। বেজার হইয়েন না, আমরা মাফ চাই, ভাইজান।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, ভাইজান, আমি বেজার না, তয় আমাগো আমির সাহেবের সাথে কথা না কইয়া বসতে পারি না, বোঝতেই পারছেন।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আইজ রাইতেই আবার ফোন করুম, ভাইজান।
রুস্তম আলি পন্টু রাখার সাথে সাথেই আবার সেলুলার বেজে ওঠে মওলানা রহমত আলি ভিস্তির। এ-ফোনটির জন্যেই মনে মনে অপেক্ষা করছিলেন ভিস্তি সাহেব, পেয়ে তিনি শান্তি পান।
এখন সেলুলার চলছে জনগণমন গণতান্ত্রিক রাজবংশের অন্যতম চাচা মোহাম্মদ রজ্জব আলির সাথে।
মোহাম্মদ রজ্জব আলি বলেন, মওলানা সাহেব, আমাদের মইধ্যে আগে থিকাই ত কথা হয়ে আছে, এখন আমাদের একবার বসন লাগবো। শোনতাছি শক্তিয়ালারা নানা রকম কন্সপিরেছি করতাছে। আমাগো এক লগে থাকতে হইব, আন্দোলনে আমরা যেমুন একলগে আছিলাম।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, ভাইজান, আপনেগো মহাজননেত্রীর লগে কি সেই সম্পর্কে কথা হইছে, অই যে আমরা ষাইটটা সিট চাইছিলাম? অই কটা সিট আমাগো লাগবো, ভাইজান।
রজ্জব আলি বলেন, তা হইছে মওলানা সাহেব, তবে একসঙ্গে বইস্যা সব ঠিক করুম, সিট ত স্র্যাটেজির ব্যাপার, দ্যাখতে হইব তাতে আপনাগো কী লাব আর আমাগো কী লাব। খালি বেশি সিট লইলেই ত কাম হইব না।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, অইবার অরা আমাগো পঞ্চাশটা সিট দিছিলো, এইবার আরো বেশি দিতে চায়।
রজ্জব আলি বলেন, মওলানা সাহেব, এইবার আপনাগো নিজেগো অবস্থা অ্যামনেই ভাল, তবু একটা মিলমিশ করন যাইব। আর মওলানা সাহেব, আপনে ত পলিটিশিয়ান, তিন বচ্ছর আমাগো লগে থাইক্যা আপনাগো কতো উপকার হইছে ভাইব্যা দেখেন।
এখন আমরা আর আপনেগো রাজাকার কই না।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, হ, ইনশাল্লা, আমাদের অবস্থা আগের হইতে অনেক ভাল, এইবার আমরা নিজেরাই পঞ্চাশটা সিট পামু; আমাগো ছাড়া কারো চলবো না। দ্যাশে ইসলামের অবস্থা আগের থিকা অনেক ভাল।
রজ্জব আলি বলেন, এই জন্যেই তো আপনেগো এই বচ্ছর এভো দাম, আমরা ক্ষমতায় যাইতে পারলে আপনেগো অবস্থা আরো ভাল কইরা দিমু। আর ভাই, ইসলামের লিগা আমরাও জান দিয়া দিতেছি।
তারা ঠিক করেন পরের দিন তারা বসবেন।
রাজনীতিবিদরা, আমাদের রাজাবাদশারা, মহান মানুষ, তারা আমাদের প্রভু; তাঁরা যা বোঝেন তা তো আমরা বুঝি না; তারা যেখানে দরকার সেখানে বসতে পারেন, তাদের গায়ে ময়লা লাগে না; সব কিছু মনে রাখলে তাদের চলে না। আমরা জনগণরা মূর্খ মানুষ, আমাদের মাথায় ঘিলু কম, হয়তোবা একেবারেই নেই, তাই আমরাও অনেক কিছু মনে রাখতে পারি না; কিন্তু অনেক কিছু আমাদের মনে থাকে, আবার মনে থাকলেও আমরা তা ভুলে থাকি। মনে থাকলে কী হবে? আমাদের করার কী আছে? যেমন সালেহার কথা আমরা ভুলে গেছি, আবার সালেহার কথা আমাদের মনেও আছে। এখন তার কথা মনে পড়ছে, যখন আমাদের রাজারা একে অন্যের সাথে মিলেমিশে বসছেন, সালেহাকে ভুলে গেছেন–দেশে সালেহা নামের কেউ ছিলো না।
ভোরে রহমত আলি ভিস্তি সাহেব যখন নামাজ পড়ছিলেন, তখন সালেহা একটি বঠি নিয়ে তার পেছনে এসে দাঁড়ায়; এবং যখন কোপ দিতে উদ্যত হয়, ভিস্তি সাহেবের বিবি অই সালেহা কী করতাছছ, অই সালেহা কী করতাছছ বলে চিৎকার করে সালেহাকে জড়িয়ে ধরে।
সালেহা কেঁদে ওঠে, আমি এই জানোয়ারডারে জব করুম, আমি এই জানোয়ারডারে জব করুম। জানোয়ারডা রাইত ভইর্যা আমার দ্যাহডারে আস্ত রাখে নাই।
ভিস্তি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ান; এবং চড় দিয়ে সালেহাকে মেঝেতে ফেলে দেন।
তার বিবি বলে, হুজুর, মাইয়াডারে আইজই বাইড়তে পাঠাইয়া দেন।
ভিস্তি সাহেব বলেন, হ, আইজ রাইতেই পাঠামু।
সন্ধ্যার পর ভিস্তি সাহেবের বাড়ির সামনে একটি আর্মির জিপ এসে থামে। জিপের পেছন থেকে নেমে আসেন ভিস্তি সাহেব ও পবিত্র পাকিস্থান আর্মির কয়েকজন খাঁটি জওয়ান।
তারা সালেহাকে চেপে ধরে জিপে উঠোয়, সালেহা নড়তে ও চিৎকার করতে পারে না। পাকিস্থান জিন্দাবাদ বলে তারা গলি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে যায়।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো