আমি বলেছিলাম, ‘চাক্কু মেরে ফেলতে হবে না, তাতে ঘরবাড়ি নোংরা হবে, লাশের গন্ধ বেরোবে, একবারে খুনের থেকে ওদের চিরকালের জন্যে খুন করতে হবে, যাতে ওরা দেশে না থাকে, আর থাকলেও যেনো না থাকে।’
ওরা ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘সেইডা কেমনে করুম, হুজুর?’
আমি বলেছিলাম, ‘হাত দিয়ে দ্যাখো তোমাদের দুই রানের মাঝখানে কী আছে? কী ঝুলছে।‘
তারা হাত দিয়ে দৃঢ় দণ্ড অনুভব করে শরম পায়; সেটি ঝুলছিলো না, দাঁড়িয়ে ছিলো কুতুবমিনারের মতো।
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘কী আছে ওখানে?’
ওরা বলে, ‘হুজুর, আমাগো লিঙ্গ।’
আমি বলি, ‘ওটি লিঙ্গ নয়, পিস্তল, এম-১৬। ওইটা খোদার দেয়া পিস্তল, এম-১৬। ওইটা চালাতে হবে – মালাউন মেয়েগুলোর পেটে মমিন মুছলমান ঢুকিয়ে দিতে হবে, জিহাদের এইটাই নিয়ম। আর মালাউনদের ঘরভরা সোনাদানা, কলসিভরা টাকা, ওইগুলো নিয়ে আসতে হবে।’
ওরা আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলো, ‘আল্লাহু আকবর, নারায়ে তকবির।’
আমি জানতাম ওদের পিস্তল ও এম-১৬ দৃঢ় ও সদাসক্রিয়, কিন্তু জিহাদিদের পিস্তল ও এম-১৬ যে এতো দৃঢ়, ও সদাপ্রস্তুত, এবং পৌনপুনিক কুয়ৎসম্পন্ন – অটোমেটিক, একটা আমার জানা ছিলো না। মালাউনপল্লীতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মালাউনরা বুঝতে পারে আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ ছড়াতে এসেছি। তারা একবারও চিৎকার করে না, অতো ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া ছাড়া আর কিছু সম্ভব ছিলো না; কেউ হাতে একটি সরকি বা দাও নিয়েও আসে না, তারা জমে গিয়ে বাঁচতে চায়; তারা আমাদের ঠাণ্ডা শান্তির আগুনে নিঃশব্দে পুড়ে যেতে থাকে। আমাদের হাতে অবশ্য লোহার পিস্তল, চাইনিজ রাইফেল ছিলো, এম-১৬ ছিলো; ওগুলো হাতে না থাকলে চামড়ার পিস্তল কেউ ব্যবহার করতে দেয় না।
আমার জিহাদিরা ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়, ওদের মাথায় একটু ঘিলু কম, ওরা যতোটা কাজ করে, তারচেয়ে বেশি গোলমাল করে, যদিও গোলমালেও বেশ কাজ হয়; আমি ওদের নিরস্ত করি। আমি ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ পছন্দ করি; দাউদাউ করার দরকার না হ’লে দাউদাউ করে শক্তি খরচ করতে চাই না।
বাহুর শক্তি খরচের কিছু নাই, কিছু অতিশয় মূল্যবান ধাতু খরচ করতে হবে। ধাতু ক্ষয় করবো মালাউনদের জন্যে এটা আমাদের দয়া, এক বিন্দু ধাতু প্রচুর সুখাদ্যের ফল, বহু পুষ্টিতে এক বিন্দু ধাতু উৎপন্ন হয়, তা বড়োই পবিত্র, বড়োই সৃষ্টিশীল। সে-মহান জিনিশ আমরা ওদের দান করবো, এটা আমাদের মেহেরবানি, এর জন্যে ওদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু ইহুদি ও মালাউনরা কবে কৃতজ্ঞ থেকেছে, শুকরিয়া জানিয়েছে?
সীতারামপুর গ্রামটিকে আমরা প্ৰথম বেছে নিই।
এই নামটা কেনো যেনো আমার পছন্দ হয়, হয়তো ওই সীতা মেয়েটির জন্যে, মেয়েটিকে আমার প্রথম থেকেই পছন্দ। ওকে আমার খুব সেক্সি মনে হয়েছিলো, যখন ওর জন্মের গল্পটি প্রথম পড়েছিলাম। সে খুবই সেক্সি, একটি বইতে পড়েছিলাম, সে আসলে যোনির সিম্বল, আর রাম হচ্ছে শিশ্নের সিম্বল; তাই যোনি ও শিশ্নের গ্রামটিকেই আমি প্রথম বেছে নিই। প্রতিটি পাড়াকে আমরা ঘিরে ফেলি, যাতে কেউ পুকুরেও লাফ দিয়ে না পড়তে পারে, জঙ্গলে গিয়ে লুকোতে না পারে, পায়খানায় গিয়ে বসে থাকতে না পারে, এমনকি গলায় দড়িও দিতে না পারে। জিহাদিরা অতন্দ্র প্রহরী।
প্রতিটি পাড়ায় গেলেই প্রথম জরাজীর্ণ বুড়োর বেরিয়ে আসে।
আমরা জানতাম তারাই আসবে, আমরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুবতীরা বুকের কাপড় খুলে পাছা দুলিয়ে নাচতে নাচতে স্বাগতম জানানোর জন্যে আসবে না। তবে তাদের আসতে হবে, এটা তারাও জানে, তাদের পিতারাও জানে, ভাইয়েরা জানে, আর ভাঙাচোরা পতিদেবতারাও জানে। এটাও জানে দেবতার ওপরও দেবতা আছে; একদল দেবতার পরে আরেকদল দেবতা আসে, আকাশে আসে মাটিতেও আসে। তারা কি জানে না। আমরা নতুন দেবতা হয়ে দেখা দিয়েছি? আমাদের পুজো করা তাদের কর্তব্য? নতুন দেবতারা সব সময়ই একটু ক্রুদ্ধ হয়, আমরাও বেশ ক্রুদ্ধ; তবে আমাদের মেইন পার্টির খিলজিদের মতো অতো ক্রুদ্ধ নই, আমি হ’তে দিই না, আমরা এখনো মেইন পার্টি হই নি। ওরা পাঁচ বছর রক্ত খেতে পারে নি, এখন তাদের তাড়াতাড়ি গলাভরে রক্ত খাওয়া দরকার; আমরাও খাবো, এবং খাচ্ছি, তবে মেইন পার্টির খিলজিদের একটু বেশি খেতে দেবো, যাতে তারা অল্প সময়েই রক্তপায়ী আর নারীখোর বলে খ্যাতি অর্জন করে। তাদের খ্যাতিতে এখন দুনিয়া আহ্লাদিত ও উদ্বিগ্ন।
আমি কৌশল পছন্দ করি, কৌশল হচ্ছে আমার কাছে মালাউন যুবতীদের মতো, তাদের গন্ধের মতো, তাদের ঠোঁটের মতো।
অবশ্য আমি কৌশল শিখি আমাদের পাক ধর্মের ইতিহাস পড়ে; ওই সব কৌশলে আমি মুগ্ধ হই, হোলি টেরারে ওগুলো অতুলনীয়। কৌশল ছাড়া সফল হওয়া যায় না; সন্ধি করতে হয়, সময় বুঝে সন্ধি ভেঙে ফেলতে হয়; সময় বুঝে করুণাময় হ’তে হয়, সময় বুঝে হ’তে হয় বাঘ, একটু রক্ত খেতে হয়।
আমি বলি, ‘আপনারা কেমন আছেন?’
তারা বলে, ‘আল্লার দয়ায় ভালো আছি, হুজুর।’
আমি বলি, ‘আল্লার রহমতে আপনারা ভালো থাকেন, তাই আমরা চাই, আল্লাতালাও তাই চান। আপনাদের ভালো রাখার জন্যেই আমরা এসেছি।’