ওর দুই নম্বর বউট না কি টিকবে না, সে এখন একটা ঋণখেলাপির সঙ্গে ঘুমোতে ব্যাংকক যায়, উত্তরায় ঘুমিয়ে সে সুখ পায় না।
কাজ হয়েছিলো; একদিনের জন্যে আমরা মেইন পার্টির মহীয়সী লিডারেসের কথায় শান্তির কবুতর, পায়রা, ঘুঘু, চিল, শকুন, বাজ, কাক–যাই বলি না কেনো–হয়েছিলাম। আমরা দলে দলে শান্তির কবুতর, পায়রা, ঘুঘু, চিল, শকুন, বাজ, কাকরা অস্থিরভাবে আকাশে উড়ছিলাম।
একরাত, একদিন; ওটা আমাদের জন্যে সামান্য সময় ছিলো না, ছিলো হাজার বছরের সমান, এতো দীর্ঘ সময় ধরে শান্তিতে থাকা আর শাস্তিতে রাখা কতোটা কঠিন, ওই সময় আমরা ছাড়া আর কেউ বোঝে নি। শান্তি বড়োই ভারি ব্যাপার, যখন আমাদের ভেতরে বিজয়ের পবিত্র অগ্নিশিখা দাউদাউ করছিলো, তখন শান্তি দোজগের শান্তির মতো লাগছিলো।
পত্রিকাগুলো পরদিন আমাদের প্রশংসায় মেতে উঠেছিলো।
মেইন পাটির সঙ্গে আমরা ল্যান্ডস্লাইড করলেও নিজেদের শান্ত রেখেছি, অর্থাৎ মেইন পার্টির খিলজিরা শান্ত ঠাণ্ডা রয়েছে; এমনকি বিজয়োৎসবও করি নি, গণতন্ত্র একেই বলে। আমাদের মতো মহৎ আর কে? আমরা একরাতে একদিন মহত্ত্ব অর্জন করি, কৃতিত্বের বড়ো ভাগটাই মেইন পার্টির খিলজিরা নেয়, আমাদের হিশেবের মধ্যেই আনে না; কিন্তু আমরা যে মেইন পার্টির আসল ফোর্স, তারা তা বোঝে নি। তবে খিলজিরা ও আমরা বুঝতে পারি কতো দীর্ঘ হতে পারে একটি রাত ও একটি দিন, তা একশো বছরের সমান; তবে আমাদের সামনে তখন সহস্র ও একরাত, তার থেকেও বেশি।
প্ৰশংসাধন্য হওয়ার পর আমাদের আর কেউ নিন্দা করতে পারে নি; নিন্দা করার সাহস পায় নি। আমরা তখন শান্তিশৃঙ্খলার ফেরেশতা, আমাদের আগুনের ডানা থেকে ঝলকে ঝলকে শান্তি ঝ’রে পড়ছিলো।
কিন্তু বিজয়ের পর একরাত ও একদিন নিক্রিয় থাকা, শান্তিতে থাকা, শান্তিতে রাখা, আমাদের জন্যে হৃদয়বিদারক ছিলো। শাদি হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা ছহবত করতে পারছিলাম না, যদিও সব কিছু ছিলো টানটান। টানটান জিনিশ নিয়ে একরাত একদিন কাটানোর কষ্ট আমরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
তার পর দিন থেকে মেইন পার্টির নিষ্ঠাপরায়ণ, প্রচণ্ড, তীব্ৰ, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণাৰ্ত, দয়ালু, জনসেবক, মেধাবী, রাজপথের যোদ্ধা, কুয়ৎশীল নেতাকমীদের সঙ্গে আমরা জিহাদির দেশ জুড়ে শান্তির ঝড় বইয়ে দিয়েছিলাম।
ওটার নাম দিয়েছিলাম। আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’, সোভানাল্লা।
দেশ এমন শান্তির ঠাণ্ডা অগ্নি আগে কখনো দেখে নি, সোভানাল্লা।
আমরা, জিহাদিরা ও মেইন পার্টির ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বখতিয়ার খিলজিরা, মিলেমিশে কাজ করেছি, তখন দেশ আমাদের পায়ের নিচে, আমাদের আগুনের নিচে, আমাদের পিস্তলের নিচে, এবং সবচেয়ে যেটি শক্তিমান ও উদ্ধত পিস্তল–দেশ তখন আমাদের দীর্ঘ দৃঢ় উদ্যত শিশ্নের ছায়ার নিচে, সোনার বাঙলাকে আমার তখন আসল সোনার বাঙলা ক’রে তোলার জন্যে উত্তেজিত। আমাদের শিশ্ন বারবার দৃঢ় হচ্ছিলো, হুর ও উর্বশীদের জন্যে ব্যাকুল হচ্ছিলো; কিন্তু আমরা গণতন্ত্র মেনে নিয়েছিলাম–এক রাত ও একদিন।
জিহাদি ও খিলজি, এবং জিহাদি ও খিলজিতে ভাগ হয়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ি, সন্ধ্যার একটু পরেই।
আমি মালাউন পছন্দ করি, মহান আল্লাতালাই আমাকে এই অপূর্ব রুচিটি দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লা; ওদের গন্ধ আমার পছন্দ, ওদের ঠোঁট আমার পছন্দ; আমি বেছে নিই মালাউন পাড়াগুলো, এবং আমাকে দেয়া হয় মালাউন পাড়াগুলো, তবে সবগুলো নয়। আমার প্ৰিয় দোস্ত, বিখ্যাত খিলজি, মেইন পার্টির ছৈয়দ ছব্দর আলি বন্টু,–তার পছন্দ দুটিই, একই সঙ্গে মালাউন আর আগের মেইন পার্টির দালালদের পাড়াগুলো; সে মনে করে সব কিছু তার তলোয়ার ও শিশ্নের নিচে। এটাকে সে বাস্তবায়িত করেছে, ক’রে চলছে, তবে তার কপালে যে কী আছে, তা রাহমানির রাহিমই জানেন।
আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ দিয়ে মালাউন ও মালাউনদের দালালদের শান্ত শীতল নীরব নিথর করতে বেরিয়ে পড়ি।
আমাদের জিহাদিদের আগুন লাগাতে হয় না, আমরা ঘরে ঘরে ঢুকি, ওরা কাঁপতে থাকে; আমরা বেশি কিছু চাই না–একবারের জন্যে খুনটুন করার দরকার ছিলো না, দরকার ছিলো চিরকালের জন্যে খুন করা।
আমার দুই নম্বর, জিহাদি মোঃ হাফিজুদ্দিন, তালেবান হওয়ার জন্যে যে একবার আফগানিস্থানে গিয়েছিলো, সে বলেছিলো, ‘হুজুর, গোটা পঞ্চাশেক মালাউন ফালাই দিতে হইব।‘
আমি বলেছিলাম, ‘গোটা পঞ্চাশেক ফেলে কী হবে?’
জিহাদি মোঃ মুস্তাকিম জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘তাইলে হুজুর, কয়ড়া ফালামু?’
আমি বলেছিলাম, ‘দুটি বা দশটি নয়, সবগুলোকেই ফেলে দিতে হবে।’
ওরা ভয় পেয়ে আর্তনাদ করে উঠেছিলো, ‘হুজুর, সবগুলিরে। ফালামু?’
ওরা যে আর্তনাদ করতে পারে, এটা আমাকে বিস্মিত করেছিলো; ওদের মুখ দেখে আমার কখনো মনে হয় নি। ওরা এমন শব্দ করতে পারে। ওদের অশ্রুনালিতে কোনো অশ্রু আছে বলেও আমার মনে হয় নি।
আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, সবগুলোকে।’
ওরা বলেছিলো, ‘এক রাইতে সবগুলিরে। ফালাইতে পারুম?’
আমি বলেছিলাম, ‘এক রাত কেনো, আমাদের সহস্র রাত হয়েছে।’
ওরা এবার শান্ত হয়, বলে, ‘তাইলে ফালাইতে কষ্ট অইব না।’
আমি বলেছিলাম, কীভাবে ফেলবে?
ওরা বলছিলো, ‘হুজুর, খালি চাক্কু মারুম শিনার বাঁও দিকে, আর হলকুম দুই ভাগ কইর্যা ফালামু।’