আমিও এখনো তাদের মতো শব্দটি বলতে পারি না। আমাদের কোথায় বসাবে তা ঠিক করতে পারে না, চেয়ার টুল বেঞ্চ নিয়ে টানাটানি করতে থাকে, যদিও বসার দরকার আমাদের ছিলো না। একদিন আমরা বসবো, চড়বো, চেয়ার বেঞ্চের ওপর নয়, আরো কোমল সুখকর জিনিশের ওপর।
আমি বলি, ‘মহাশয়েরা, আপনারা কেমন আছেন, তা দেখতে এলাম; ভালো আছে সবাই?’
একেকজন ভয়ে ভয়ে বলে, ‘সেইটা আমাগো ভাইগ্য, আপনেরা আমাগো বাড়িতে আসবেন, কোনদিন চিন্তাও করতে পারি নাই, আপনাগো পায়ের ধুলায় আমগো বাড়ি পবিত্র হইল।‘
আমাদের অনেকের জামার ভেতর থেকে নানা রকমের শান্তিপ্রদ জিনিস উঁকি দিচ্ছিলো–দু-একটা পিস্তল, দু-একটা কাটা রাইফেল, দু-চারটি ক্ষুর, কয়েকটি এম-১৬, আর বেশি না।
আমি বলি, ‘আপনাদের ভোটার তালিকা দিতে এলাম, যাতে ভোট দিতে আপনাদের কষ্ট না হয়।’
একেকজন বলে, ‘আপনেরা কষ্ট কইর্যা আসছেন, কি দিয়া যে আপনাগো আপ্যায়ন করি। একটু চা দেই।’
দু-চারটি মালাউন বউ মেয়ে দেখার ইচ্ছে আমাদের সবারই ছিলো। আগে থেকে দেখে রাখলে পরে কাজ দেবে।
আমি বলি, ‘তালিকায় ২৫ নম্বরে আছেন শ্ৰীমতি পদ্মাবতী দেবী, তার সঙ্গে কি একটু কথা বলতে পারি?’
পদ্মাবতী দেবী আমাদের সামনে আসেন, আমরা দেখি বেশ ভালো!
আমি বলি, ‘আপনার পিতার নাম কৃষ্ণচন্দ্ৰ দাস?’
পদ্মাবতী দেবী। খুবই লজ্জা পান, তার লজ্জা পাওয়াটা দেখার মতো, কিন্তু তখনও ভালো করে দেখার সময় আসে নি।
তিনি সলজ্জভাবে বলেন, ‘অইটা ভুল অইছে, অইটা আমার স্বামীর নাম।’
আমি জানি পিতার জায়গায় স্বামী, আর স্বামীর জায়গায় পিতার নাম বসানো আমাদের নির্বাচন কমিশনের একটি বড়ো কৃতিত্ব। তারা আজো পিতা আর স্বামীর পার্থক্য বোঝে না; তবে দল বোঝে, দালালি বোঝে, ক্ষমতা বোঝে, আর কারা ক্ষমতায় আসবে, তাও বোঝে।
আমি বলি, ‘এই জন্যে আমরা ক্ষমা চাই, মাফ ক’রে দেবেন। আপনারা ভোট দেবেন কোন দলকে?’
পদ্মাবতী দেবী চালাক মাল, বলেন, ‘আপনাগো দলরেই দিমু।’
আমি বলি, ‘তাহলে তো আপনার ভোট পেয়েই গেলাম, কষ্ট করে আর আপনার ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই।’
পদ্মাবতী দেবী বলেন, ‘হুজুর, অনেক কষ্ট থিকা বাচাই দিলেন, লাইনে দাড়াইতে দাড়াইতে মাজা বেদনা অইয়া যায়; তার উপর আমার এইখন আট মাস চলতেছে, হাডতেই পারি না।’
আমার এক জিহাদি হতাশ হয়, পদ্মাবতীকে তার পছন্দ হয়েছিলো, কিন্তু মাগিটা আট মাস বাঁধিয়ে বসেছে, আট মাসের পেটের ওপর চড়তে পারবে কি না বুঝতে পারে না; আরেক জিহাদি খুশি হয়, আট মাসের পেটের ওপর চড়তে কেমন লাগে, তা সে দেখতে চায়। দেখার সময় আসতে আসতে পদ্মাবতীর সাড়ে আট মাস হয়ে যাবে। এটা এক সুন্দর জিনিশ: কেউ খালি পেট পছন্দ করে, কেউ ভরা পেট পছন্দ করে; আল্লার দুনিয়ায় বৈচিত্র্যের শেষ নেই।
মালাউনদের পাড়ায় আগে আমি বেশি যাই নি। ইস্কুলে পড়ার সময় স্যারের বাড়িতে যেতাম প্ৰাইভেট পড়তে, স্যারকে দেখার আগে তার মেয়ে ছবিকে দেখতাম, স্যারের আগে ছবিই আসতো ছবির মতো হয়ে, একটা সুগন্ধ পেতাম, গাঁদা আর বলকুলের মেশানো গন্ধ, যা কোনো মুছলমান মেয়েকে দেখলে পেতাম না; নানাবাড়ি যাওয়ার সময় দেখতাম পুকুরপাড়ে স্নান করার আগে গোয়ালবাড়ির শাদা শাদা মেয়ে ও মেয়েলোকগুলো শাড়ি হাঁটু পর্যন্ত তুলে চড়াচড় ক’রে প্রস্রাব করছে; আমি অদ্ভুত একটা গন্ধ পেতাম। কিন্তু মালাউনদের বাড়িতে বেশি যাই নি, এবারই আমার সৌভাগ্য হলো মালাউনগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের।
আমরা পাড়ায় পাড়ায় যাই, যেতে আমাদের ভালো লাগে।
আসার আগে বলি, ‘দেখেন ভোটের দিন গোলমাল হতে পারে, খুনটুনও হয়ে যেতে পারে; আপনারা ভোট দিতে যাবেন কি যাবেন না, ওই দিন বাড়ি থেকেই বের হবেন কি হবেন না, তা একটু ভেবে দেখবেন; জানেনই তো এবার আমরা পাশ করবো, আপনাগো দালালরা পারবে না।’
তারা বলে, ‘সেই কতা আমরা জানি, তাগো আর ভোট দিমু না, ভোত দিতেই যামু না, ভোট দিলে আপনাগোই দিমু, আমরা তাগো ভোট দিমু। ক্যান, আমরা কি তাগো বান্দা গোলাম?’
তবে মালাউনদের বিশ্বাস করা যায় না, ওরা চিরকাল বেঈমান; আমরা শুধু ওদের কথার ওপর চলতে পারি না।
ভালো ক’রেই বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি, তারাও বুঝতে পেরেছে।
শুধু এভাবে বোঝালে ও বুঝলেই চলবে না; বোঝানোর জন্যে দু-একটি উদাহরণও ওদের চোখের সামনে থাকা ভালো; মানুষ কখনো কথায় বোঝে না, উদাহরণে সহজে বোঝে, এমনভাবে বোঝে যে আর ভোলে না। আমরা আগেই ঠিক ক’রে রেখেছি গোপালচন্দ্রের বাড়িটা, হারামজাদাটা পয়সা করেছে, সালাম দেয় না দেয়ার মতো, মালপানিও দেয় না, আবার দালালদের পার্টি করে।
ওর বাড়িটা ঠিক ক’রে রেখেছি, বেশি কিছু নয়, সন্ধ্যার পর আমাদের কয়েক জিহাদি ও মেইন পার্টির কয়েক খিলজি যাবে, এদিকে ওদিকে কয়েক গ্যালন পেট্রোল ছড়াবে, আর কয়েকটি ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে ছুঁড়ে দিয়ে আসবে। তাতে কাজ হবে, কাজ হয়ও; ওই সন্ধ্যায় গোপালচন্দ্রের বাড়িটা একটু দাউদাউ ক’রে ওঠে, তখন আমরা কয়েকজন অসি সাহেবের সঙ্গে একটু ব্ল্যাক লেবেল একটু সিভাস রিগ্যাল টেস্ট করছিলাম।
অসি বাঞ্চতটা পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলো
অসি বাঞ্চতটা পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলো, আমি দশ হাজার দিয়েছিলাম; এখন ওই বহিনফাকার বাঞ্চতটা আমার পেছনে ঘোরে, ওর চাকুরিটা আর নেই; আমি পঞ্চাশ লাখ চেয়েছি, ও বিশ লাখ দিতে চায়। হারামজাদার চাকুরিটা ফিরিয়ে দেবো, যদি পঞ্চাশ লাখ দেয়; মাদারচোতটা দেবে, বাঞ্চতটা কয়েক বছরে কয়েক কোটি জমিয়েছে; উত্তরায় বাড়ি করেছে। দু-নম্বর বউয়ের নামে।