কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘আলহামদুলিল্লা।’
আমি বলি, ‘বিবিজান, তোমার মুখটি দেখতে দাও।’
কণকলতা মুখ থেকে ঢাকনা সরাতেই একটি পূর্ণিমার চাঁদ দেখা দেয়।
কোরবান আলি ব্যাপারি দিল থেকে বলে ওঠে, ‘সোভানাল্লা, আলহামদুলিল্লা, মারহাবা, মাশাল্লা, আল্লায় হুজুররে বেহেশতের নারী দান করছেন, যে আল্লার কাম করে আল্লা তারে উপযুক্ত পুরুস্কার দেয়।’
আমি বলি, ‘আপনি ঢাকা যাবেন না?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হ, সময় অইয়া গেছে, চলেন আবু লাদেন ভাই, আমরা যাই, হুজুর বিবির লগে একটু মহব্বত করেন; জিহাদের পর হুজুরের একটু মহব্বত দরকার।’
সবুজের মাঝখানে একটি লাল টকটকে সূর্য উঠছে (শেষ)
তারা চলে গেলে কণকলতা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেতে খেতে বলে, ‘হুজুর, আইজ আমার সুখের সীমা নাই, আপনে আমারে বিবিজান বলছেন।’
আমি বলি, ‘কণকলতা, তুমি আমার বউ, বউমণি।’
কণকলতা হঠাৎ আমার পায়ে পড়ে একই সঙ্গে সালাম ও নমস্কার করে।
আমি বলি, ‘তুমি এ কী করছো?’
কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আমি আপনার বউ, শুধু চুমো খেলে আমার মন ভারতো না, ওখানে পড়ে মন ভরে উঠলো, আপনার ঠোঁটে চুমো খেয়ে যে-সুখ পেয়েছি পায়ে চুমো খেয়ে তার থেকে বেশি সুখ পেলাম।’
আমি বলি, ‘কেনো?’
কণকলতা বলে, ‘এতো দিন ভাবতাম আমি হুজুরের রাতের জিনিশ, আজ দেখলাম আমি হুজুরের হৃদয়ের, আমার সুখের শেষ নেই। আমি আমার সুখ প্রকাশ করলাম।‘
আমি বলি, ‘কণকলতা, তুমি এ কোন ভাষা বলছো?’
কণকলতা বলে, ‘হুজুর, এ-ভাষা বলতেই আমি ভালোবাসি, যেমন হুজুরকে ভালোবাসি, তবে গ্রামের ভাষাও আমার ভালো লাগে।‘
আমি বলি, ‘আমি আর হুজুর নই।’
কণকলতা বলে, ‘তাহলে কী?’
আমি বলি, ‘তোমার পতিমণি।‘
আমি কণকলতার দিকে, তাঁতের সুগন্ধি রঙিন শাড়ির দিকে, চিবুকের দিকে, চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি, যেনো এই প্রথম আমি তাকে দেখলাম, প্রথম বিস্ময় দেখলাম; যেনো আমি স্বপ্ন দেখছি, আমার দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে, চারদিকের আগুন ও রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেছে। পাখিগুলোর রঙ আমি দেখতে পাই কণকলতার শাড়িতে, কলকাকলি শুনতে পাই মুখমণ্ডলে।
আমি তাকিয়ে থাকি, তাকে জড়িয়ে ধরি না, চুমো খাই না।
কণকলতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার কী হয়েছে, পতিমণি?’
আমি বলি, ‘কিছু তো হয় নি।’
কণকলতা বলে, ‘হয়েছে। তুমি শুধু আমাকে দেখছো; জড়িয়ে ধরছো না, চুমো খাচ্ছো না, আর…’
আমি বলি, ‘এখানে আমরা আর আমাদের জড়িয়ে ধরবো না, চুমো খাবো না, এখানে আমরা আর নগ্ন হবে না, সঙ্গম করবো না।’
কণকলতা বলে, ‘তাহলে কোথায়?’
আমি বলি, ‘তা আমি ঠিক জানি না; তবে এখানে নয়, এই নরকে নয়।’
কণকলতা বলে, ‘কেনো?’
আমি বলি, ‘এই নরক আমাকে ময়লা করে ফেলেছে, দূষিত ক’রে ফেলেছে, এই নরকে আমি বাঁচবো না; আমি হয়তো বাঁচবো না, তারা হয়তো আমাকে বাঁচতে দেবে না, তবে এই নরকে আর নয়।’
কণকলতা বলে, ‘তুমি বাঁচবে, আমিও বাঁচবো, তুমি না বাঁচলে আমিও বাঁচবো না, পতিমণি। আমাকে জড়িয়ে ধরো, ভালোবাসো।’
আমি জড়িয়ে ধ’রে তার কপালে চুমো খাই; কণকলতা আমার বাহুতে স্বৰ্ণলতার মতো জড়িয়ে থাকে, কোমলতার সুগন্ধে আমি ভ’রে উঠি।
আমি বলি, ‘এখান থেকে আমরা চলে যাবো।’
কণকলতা বলে, ‘কখন, পতিমণি?’
আমি বলি, ‘কিছুক্ষণ পরেই।’
আমার সম্পদ কম নয়, সম্পদে আমি ভ’রে উঠেছিলাম, আর শূন্য হয়ে উঠছিলাম; এগুলো কি আমি নেবো?
আলমারিতে বান্ডিলে তিরিশ লাখ টাকা আছে, এটা খুবই দরকার, জানি না কোথায় থাকবে; ড্রয়ারে বিশ বার সোনা আছে, এগুলোও আমার দরকার, জানি না কীভাবে বাঁচবো; তিনটি মোবাইল আছে–এগুলোও দরকার; আর আছে ১০ বোতল ব্ল্যাক লেবেল, ৮ বোতল সিভাস রিগ্যাল, ৩ কার্টন কিংফিশার, ৫ কার্টন টাইগার, ৫০০ ক্যাসেট পাক জমিন সাদ বাদ, হিতাচি সিডি প্লেয়ার, এলজি ফ্ল্যাট টিভি, আমার এগুলোর কোনো দরকার নেই; আর আছে এক সময়ের বান্ধবতম প্ৰিয়তমারা–৩টি পিস্তল, ৫টি রিভলবার, ৮টি কাটা রাইফেল, ২০টি এক্সএক্সএক্স, রাশিরাশি সালোয়ার পাজামাপাঞ্জাবি, আরো কতো কী।
এগুলো আমি নেবো?
আমি সিডি প্লেয়ারে সাদ বাদ ক্যাসেটটি একবার চালাই, একটু শোনার পরই লাথি মেরে প্লেয়ারটিকে চুরমার করে ফেলি; লাথি মেরে মেরে আরো কয়েকটি ক্যাসেট চুরমার করি। আমার মনে হয় আগুন নিভে যাচ্ছে, রক্তপাত থেমে যাচ্ছে। এসব আমি নেবো না; কিন্তু কিছু কি নেবো না? আমি সুটকেসে টাকাগুলো রাখি, সোনার বারগুলো রাখি, মোবাইলগুলো কণকলতার হাতে দিই। কয়েকটি ব্যাগে ভরি ব্ল্যাক লেবেল, প্ৰায় ৫০০ ক্যাসেট পাক জমিন সাদ বাদ, এক্সএক্সএক্স, পিস্তল, রিভলবার, কাটা রাইফেল।
কণকলতাকে বলি, ‘চলে যাই।’
কণকলতা বলে, ‘চলো।’
তখন মধ্যরাত; আমি বডিগার্ডদের ডাকি; বলি জিনিশপত্ৰ পাজেরোতে তুলে দিতে, তারা তুলে দেয়। আমি ঘরে তালা লাগাই। ড্রাইভার চলে গেছে, আমিই চালাবো।
আমি ড্রাইভারের সিটে বসি, কণকলতা বসে আমার বাঁ পাশে।
এক বডিগার্ড জিজ্ঞেস করে, ‘হুজুর, আমরা উডুম?’
আমি বলি, ‘না, তোমাদের লাগবে না।’
আমি গাড়ি স্টার্ট দিই; কণকলতাকে বলি তার বোরখা খুলে ফেলতে।
আমি চালাতে থাকি, কণকলতার তাঁতের শাড়ি ও শরীরের সুগন্ধ পাই, বহু দিন পর আমি অমল বাতাসে নিশ্বাস নিই। গাড়িটি ব্রিজে উঠতেই নদীতে ছুড়ে ফেলে দিই ব্ল্যাক লেবেলের সিভাস রিগ্যালের বোতলগুলো, পাক জমিন সাদ বাদের ক্যাসেটগুলো, এক্সএক্সএক্সগুলো, পিস্তল, রিভলবার, কাটা রাইফেলগুলো।