তার নাম পাক স্তান; তার গান পাক সার জমিন সাদ বাদ।
ভয়ে আমি চিৎকার ক’রে উঠি, আমার শরীর ঘামে ভিজে গেছে। বাইরে আমার বডিগার্ডরাও আমার চিৎকার শুনতে পায়।
একজন নক ক’রে বলে, ‘হুজুর, কি অইছে আপনের?’
আমি বলি, ‘আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি ও মোঃ আবু লাদেনকে খবর দাও, তাদের আসতে বলো।’
আমি মুখহাত ধুয়ে নতুন পাজামাপাঞ্জাবি পরি, বিভীষিকা কাটিয়ে উঠি।
কোরবান আলি ব্যাপারি এসে বলে, ‘হুজুর, আপনের ডাকের লিগাই পাগলের মতন ওয়েট করছিলাম, আপনের লগে একটু ড্রিংক কইর্যা ধইন্য হইয়া তারপর ঢাকা যামু, আটটার মইদ্যে যাইতে অইব।‘
আমি মোঃ আবু লাদেনকে বলি, ‘মোঃ আবু লাদেন, তিনটি গেলাশে হুইস্কি ঢালো, বেশি ক’রে ঢালো, খুব বেশি ক’রে।’
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘ঢালি, হুজুর।’
সে এখন বেশ ঢালিতে শিখেছে, ঠাণ্ডা পানিও ঠিক মতো মেশাতে শিখেছে।
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হুজুরের লগে ড্রিংক করনের সুকই আলাদা, অনেকের লগে করছি, সোনারগাঁও করছি, ব্যাংকক করছি, দুবাই করছি, সিঙ্গাপুর করছি, নিউ ইয়র্ক করছি, আটলান্টিক ছিটিতে তাজমহল কেছিনোয় করছি, এমুন কি সৈদি আরবের ফাইভ স্টারেও করছি, তায় হুজুরের লগে ড্রিংক করলে মনে অয় জান্নাতে বইস্যা খাইতে আছি; আর আইজ ত আমাগো ভিকটরি ডে, দিলডা সুকে ভইরা আছে, হেইডা ছেরিবেরেট করনের সুকই আলাদা।’
আমি বলি, ‘বেগম লায়লাতুন কদর কেমন আছেন?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হে আবার কেমুনি থাকিব? প্যাড উচা কইর্যা চিৎ অইয়া হুইয়া রইছে, তার ত অই বিজিনেছ।’
আমি বলি, ‘আপনি তাঁকে বিজি রাখলে তিনি আর কী করবেন?’
তিনি বলেন, ‘আল্লায় বীজ দিছেন, মাডিতে বীজ পরলে চারা ত অইবই; আর আমি ভিজা মাডিতে বীজ বোনতেই পছন্দ করি।‘
আমি বলি, ‘আর আপনার গার্মেন্টসের সুন্দরীরা?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘তাগো লিগাই তা টিকা আছি; হেরা শিলাই পছন্দ করে, কচি জিনিশ ত, মাজেমইদ্যে শিলাই করি। বিবিরে দিয়া ত অহন কাম আয় না। তয় আলহামদুলিল্লা, হের প্যাড থিকা খালি পোলা বাইর অয়, একটা মাইয়া বাইর হয় না, সোভানাল্লা।‘
আমি বলি, ‘আপনার বুড়ো ছেলে মুহাইমেন বিন কোরবান কেমন আছে?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘অই শালার পুত অখন আমার থিকাও ভাল আছে, মাসে গার্মেন্টসের ৩০টা মাইয়ার প্যাট বানায়, একবার ব্যাংকক না গেলে তার সুক অয় না, তয় আল্লারছুলরে ভোলে নাই, এজতেমায় যায়, হজে যায়, আর বিজিনেছ বোঝে ভাল, সোনা আইন্যাই মাসে কয়েক কোটি বানায়। অর বাড়িতে কাস্টমসের কর্তারা পইরা থাকে, অরো ‘ছার’ কয়।’
আমি বলি, ‘তাকে নিয়ে আপনি গর্ব করতে পারেন।‘
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হ, শালার পুতরে দেখাইয়াই একদিন আমার চলতে অইব, অখন অর ৩০টা মাইয়ার প্যাট ছাপের কাম আমার করতে অয়।’
আমি বলি, ‘আপনার দুই নম্বর ছেলে জিল্লুর বিন কোরবান?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হে ত অল্প বয়সেই পাইক্কা গ্যাছে, প্যাট বানান হেও শিখছে, মাসে মাসেই বানায়।’
আমি বলি, ‘বেশ তো।’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘ওই শালার পো আবর কয় ডিগ্রি ওপরে, গার্মেণ্টেসের দুইটা মাইয়ারে আমি টার্গেট কইর্যা রাকছিলাম, তার আগে হে নিয়া প্যাট বানাইছে। কাম করে না, মাসে মাসে দশ লাক নেয়। অখন একটা মডেলরে প্যাট বানাইছে, অর থিকা ১০ বছরের বড়, কয় তারে বিয়া করব।’
আমি বলি, ‘সে বেশ সৎ মনে হয়।’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘বিয়া করনের কি দরকার? প্যাট ত আর কত বানাইবা, সব গুনিয়ে বিয়া করতে পারব?’
আমি বলি, ‘একবার করে দেখুক না।’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘মডেলডার আগের ঘরের আবার একটা মাইয়া আছে, হেরেও আনতে অইব।’
আমি বলি, ‘ধর্মকর্মে মতি আছে তো?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘মাসাল্লা, সেইতে মন আছে, সালাত ভোলে না, এস্তেমা ভোলে না।’
আমি বলি, ‘আপনার বড়ো বিবি?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হে ত আর আমার বিবি না, তারে ত তালাক দিছি। হুনি হেও আহন মাসে মাসে ব্যাংকক সিঙ্গাপুর যায়, হে মডান অইয়া গেছে, বোরকা হিজাব ছাইর্যা দিছে, কাস্টমসের একটা কালেক্টর না কি তার পাটনার আর বয়ফ্রেণ্ড।‘
আমি বলি, ‘আপনার কেমন লাগে?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘মনে আইলে একটু খারাপ লাগে। আমার এক সোমের বিবি অন্যের লগে হুইছে ভাবলে আমি তিনডার লগে হুই।’
কোরবান আলি ব্যাপারি ঢকঢক ক’রে তিন গেলাশ কয়েক মিনিটে শেষ ক’রে দেয়, আরো দুই গেলাশ নিয়ে বসে।
মোঃ আবু লাদেনকে জিজ্ঞেস করি, ‘ব্ল্যাক লেবেল কেমন লাগছে?’
সে বলে, ‘হুজুর, এইডার তুলনা নাই, নাছারারা যে কি জিনিশ বানায়, কি কিতাব পইর্যা যে নাছারারা এই জিনিশ বানায়!’
সেও কয়েক গেলাশ শেষ করেছে, একটু কাঁপছে।
আমি বলি, ‘ওই বস্তায় পাঁচটি বোতল আছে, তুমি নিয়ে যেও।’
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘আপনের রহমতের কতা কোন দিন ভুলুম না, হুজুর, আপনের পায়ে পইরা থাকুম।’
রাত আটটা বেজে এসেছে, পাজেরোও গেছে, আমি জানি এখনই কণকলতা আসবে, সে দেরি করবে না।
বোরখা পরে কণকলতা এসে ঢোকে, এসে পায়ে সালাম করে, তার মুখ ঢাকা। আমি জানি সে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলো, চুমো খেতে চেয়েছিলো; কিন্তু এদের দেখে মুখ ঢেকেছে।
মোঃ আবু লাদেন ও আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারির সঙ্গে কণকলতার পরিচয় করিয়ে দিই: বলি, ‘আমার বিবিজান।’