কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘আইজ হুজুরের অনেক পেরাশানি গেছে, তাই মনে করলাম পাচ সাতটা ব্যালাক লেভেল আর ছিবাছ রেগাল লইয়া যাই। জিহাদের পর এই জিনিশ শরীলে কুয়াৎ আনে। আর হুজুরের লগে দিনটা ছেলিবেরেট করতে সুক পামু।‘
আমার বেশ ক্ষুধা লেগেছে, খেতে হবে; আমরা তিনজন খেতে বসি।
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হুজুর, আইজ আসনের সোম যা দ্যাকলাম, সোভানাল্লা, তাতে আমার দিল জুরাই গ্যাল, ঠাণ্ডা অইয়া গ্যাল দিলে আমি এত শান্তি আগে পাই নাই।‘
আমি বলি, ‘কেনো?’
আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হুজুর, মক্কা মদিনায় আমি তিনবার গেছি হজ করতে, দিল ঠাণ্ডা হইছে, তয় আইজ ঠাণ্ডা অইছে সব খিকা বেশি। আগে আসনের সোম পরথমই চোকে পরত কাফেরগো উচা মডটা, দেইক্যা দিলে আগুন লাইগ্যা যাইত, আইজ দেহি হেইডা নাই, দিল জুরাই গ্যাল, হুজুর আমাগো পাক স্তান, সাদ বাদ, আর ইছলামের দিকে হাজার মেইল আগাই দিলেন, আলহামদুলিল্লা, সোভানাল্লা।‘
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘হুজুর আমাগো পির আওলিয়াগো সমান, হুজুরের পায়ের নিচে আমি সারাজীবন পইর্যা থাকুম।‘
আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি ও মোঃ আবু লাদেন কয়েক কেজি গরুর গোস্ত আর ভাত শেষ করে ওঠে, আমি খেতে পারি না।
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘হুজুর ত কিছুই খাইলেন না।’
আমি বলি, ‘বেশ তো খেলাম।‘
খাওয়ার পর কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হুজুর, নতুন একটা বোতল ভাঙ্গি, একটু টেইস্ট কইর্যা দ্যাহেন।‘
মোঃ আবু লাদেনের চোখমুখও উজ্জ্বল দেখায়, সেও একটু টেস্ট করতে চায়; সে ভালো জিনিশের স্বাদ পেয়েছে।
আমি বলি, ‘কোরবান আলি ছাহেব, এখন টেস্ট করতে আমার ভালো লাগছে না, আমি একটু রেস্ট নোবো।’
তারা বলে, ‘আইচ্ছা হুজুর, আপনে রেস্ট নেন, আমরা অহন যাই; আমগো ডাকলেই আমরা আসুম।‘
আমার খুব রেস্ট নেয়া দরকার, যাতে আমি ওই শূন্য স্থানটিকে দেখতে না পাই; কিন্তু আমি দেখতে পাই শূন্য স্থানে আরেকটি মঠ উঠে দাঁড়িয়ে আছে, না কি আগের মঠটিই ওখানে দাঁড়িয়ে আছে? ওটি কি আসলে ভাঙা হয় নি, চুরমার হয় নি? তাহলে আমি ওটি দেখতে পাচ্ছি কেনো?
লাল নীল হলদে সবুজ পাখিগুলোকে আমি উড়তে দেখছি, তাদের অবিরাম কলকাকলি শুনছি, একটি বালক এক মাইল দূর থেকে এসে সড়কে দাঁড়িয়ে মঠটি দেখছে–এসব আমি দেখছি কেনো, শুনছি। কেনো? একবার কি আমি গিয়ে দেখে আসবো মঠটি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে কি না? ওটি কি চুরমার হওয়ার পর সেই পাখিটির মতো আবার জীবন লাভ করে মেঘ ভেদ করে আকাশের দিকে উঠছে, আর উঠছে?
মোবাইলগুলো অন করি নি, কিন্তু মনে হয় প্রত্যেকটি কাঁপছে।
এগুলো অন্ন করা দরকার, অন্তত একজনের জন্যে; তবে সে হয়তো ঢুকতে পারবে না, অন্যরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ঢুকে পড়বে।
‘তোমারে ফোনের পর ফোন করতেছি, পাইতেছিলাম না, তয় বোজতে পারছিলাম আল্লার রহমতে তুমি বিজয় কইর্যা চলতেছ, আলহামদুলিল্লা, তুমি আমাগো নকিব, তোমার পথেই দ্যাশ আগাইব।‘
‘তোমারে না পাইয়া অন্য সোর্স থিকা খবর নিছি, অছি জানাইছে আমাগো মিশন সাকসেকফুল হইছে, আলহামদুলিল্লা, তুমি ছাড়া এইডা আর কেও পারত না, আলহামদুলিল্লা।’
‘পাক সার জমিন সাদ বাদটা দুই একবার বাজাইছ নি?’
‘কংগ্ৰেচুলেশন্স, আওয়ার গ্রেট হিরো, আওয়ার কায়দ-এ-আজম, আই হ্যাভ বিন তিন ঘণ্টা ধইর্যা ট্রাই করছিলাম টু রিচ ইউ, আই হ্যাভ গ্যাদার্ড দি গ্রেট নিউজ ফ্রম দি ডিছি, দ্যাট ব্লাডি মঠ ইজ নো মোর দেয়ার। আলহামদুলিল্লা, কংগ্ৰেচুলেশন্স, লুকিং ফরোয়ার্ড টু সিইং ইউ ইন মাই প্যালেস।’
‘আই হ্যাভ অলরেডি ডিছাইডেড টু জয়েন জামাঈ জিহাদে ইছলাম, বাট অই শ্যাল কিপ মাই পোস্ট, এ মিনিস্টার কেন হেল্প দি পার্টি ইন মেনি ওয়েজ।’
‘আই হ্যাভ অলরেডি ডিছাইডেড টু বিন্ড এ হিল দেয়ার।’
‘ফোর ক্রোরস ফর আল আকসা হ্যাভ বিন স্যাংশন্ড।’
‘পাকিস্তান আর বেশি ফার না, অই ফিল ইট ইন মাই ব্লাড।’
‘অছি বলতেছি ছার…’
‘ইউএনও বলতেছি ছার…’
‘ডিসি বলতেছি ছার…’
‘এক্সিকিটিভ ইনজিনিয়ার বলতেছি ছার…’
‘ছিভিল ছারজন বলতেছি ছার…’
‘স্পিকিং ফ্রম মালয়েশিয়া…’
‘স্পিকিং ফ্রম ইন্দোনেশিয়া…’
‘স্পিকিং ফ্রম কালিফরনিয়া…’
‘ইসলামাবাদ থিকা বলতেছি…’
‘লন্ডন থিকা বলতেছি…’
স্পিকিং ফ্রম সুইডেন…’
‘রিয়াদ থিকা বলতেছি…’
‘করাচি থিকা বলতেছি…’
‘দিনাজপুর থিকা বলতেছি’ , ‘মাইজদি থিকা বলতেছি…’, ‘চরমনাই থিকা‘বলতেছি…’, ‘চাটগাও থিকা বলতেছি…’, ‘ছিলেট থিকা বলতেছি…’ ‘লালমনির হাট থিকা বলতেছি…’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘বলতেছি’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘স্পিকিং’, ‘মোবারকবাদ’, ‘কংগ্ৰেচুলেশন্স’, ‘মোবারকাবাদ’, ‘কংগ্ৰেচুলেশন্স’, ‘মারহাবা’, ‘মারহাবা’, ‘কংগ্ৰেচুলেশন্স’, ‘কংগ্ৰেচুলেশন্স’, ‘কংগ্ৰেচুলেশন্স’, …
ওই ফোনটি আর পাই না, ওটি নিশ্চয়ই ঢুকতে পারছে না। দুনিয়ায় এতো বড়ো বড়ো পাহাড় থাকলে কী করবে একটি ‘কণাকলতা’?
আমি ফোন করে বলি, ‘কণকলতা।’
আমি বলি, ‘না, ভালো নেই।‘
কণকলতা বলে, ‘কি অইছে, হুজুর, ভাল নাই কেন?’
আমি বলি, ‘আমি এক মহাশূন্যতা দেখতে পাচ্ছি, শূন্যতার মধ্যে ডুবে যাচ্ছি, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’