দখল তারা অবশ্য আগেই করেছে।
কিন্তু তাদের মুখে একটা গভীর কষ্টের দাগ দেখতে পাই; তারা কাউকে কতল করতে পারে নি, এবং তার থেকেও মারাত্মক হচ্ছে যে ছহবত করার মতো কোনো হুর গ্রামে নেই। তারা ভেবেছিলো হুর পাবে, নিঃশব্দে হুরদের সঙ্গে ছহবত করবে, যেমন করেছিলো শান্তির ঠাণ্ডা আগুনের কালে।
আমি বলি, ‘ছহবত করার মতো কোনো মালাউন স্থার আজ তোমরা পাবে না, আজ তোমরা ছহবত থেকে বিরত থাকবে। বেশি ছহবতে ধাতু ক্ষয় হয়। ধাতু অতিশয় মূল্যবান, দশ সের ঘি খেলে এক ফোঁটা ধাতু উৎপন্ন হয় তোমরা বীৰ্য ধারণ করো, ছহবতের সুযোগ তোমরা পাবে, শান্তির ঠাণ্ডা আগুন দেশ ভরে জুলছে, তোমরা বীৰ্যবান হও, তোমরা শিগগিরই গনিমতের মাল পাবে, শান্তির ঠাণ্ডা আগুন তোমরাও জ্বালাবে।’
আওয়াজ উঠতে থাকে, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’, ‘শ্যামসিদ্ধির মঠ ধ্বংস হলো, ধ্বংস হলো’, ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ’, ‘মালাউন ও দালালদের কতল করো’, ‘জালেহিদের কতল করো’, ‘মুরতাদদের কতল করো’।
আমি বলি, ‘মাদ্রাছা-ই-মদিনাতুন্নবিতে তোমাদের জন্য সুআহারের ব্যবস্থা আছে, তোমরা দু-দলে ভাগ হও, প্ৰথম দু-দল দ্রুত আহার করে এসো, দু-দল পাহারায় থাকো, পরে দু-দল গিয়ে দ্রুত আহার করে এসো, এবং আলিগঞ্জে নিজেদের দখল কায়েম করবে, যাতে মালাউন ও মালাউনদের দালালরা ফিরে আসতে না পারে, ইনশাল্লা তারা ফিরতে পারবে না, আলহামদুলিল্লা।’
তারা আওয়াজ তুলতে থাকে ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিকার, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’, ‘শ্যামসিদ্ধির মঠ ধ্বংস হলো, ধ্বংস হলো’, ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ’, ‘মুরতাদদের কতল করো’, মালাউন ও দালালদের কতল করো’, ‘জাহেলিদের কতল করো’।
আমি এক বিশাল উচ্চ শূন্যতার দিকে তাকিয়ে থাকি; আর একটি বালক এটি দেখার জন্যে দৌড়ে আসবে না; দেখি পাখিগুলোও আর নেই, রঙ নেই, সুর নেই, এমন কি তাদের ক্রন্দন নেই।
মোঃ আবু লাদেন ও বডিগার্ডদের নিয়ে অনেক দূরে গিয়ে আমি ওই শূন্যতার দিকে তাকিয়ে থাকি; একটি দীর্ঘশ্বাস আমি বুকে চেপে রাখি।
মোঃ আবু লাদেন জিজ্ঞেস করে, ‘হুজুর, ওইহানে কি আল আকসা উঠব?’
আমি বলি, ‘ইনশাল্লা, উঠবে।‘
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘তরাতরি উড়াইলে ভাল আইব, হুজুর।’
আমি বলি, ‘কেনো?’
মোঃ আবু লাদেন বলে, মালাউনগো দালালরা ঘুদি আবার পাওয়ারে আহে, তাইলে মশকিল অইব, এই ঘরবাড়িগুলি ছাইর্যা দিতে অইব।
আমি বলি, ‘ইনশাল্লা, তারা আর দুই শো বছরে পাওয়ারে আসবে না, আল্লা তাদের পাওয়ারে আসতে দেবে না, তারা অভিশপ্ত।’
আমার বডিগার্ডদের ও প্রথম দু-দল নিয়ে আমি মাদ্ৰাছা-ই-মদিনাতুন্নবিতে ফিরে আসি; ফেরার সময় আমি একবার পেছনের দিকে তাকাই; একটি অতি উচ্চ শূন্যতা দেখতে পাই। এর পর, আমার মনে হয়, ওখানে শুধু আমি শূন্যতাই দেখবো, কোনো পূর্ণতা দেখবো না; কোনো রঙের ও কাকলির ওড়াউড়ি দেখবো না; একটি বালক আর ব্যাকুল হয়ে এক মাইল দৌড়ে এসে উচ্চতা দেখার জন্যে দূরের সড়কে দাঁড়াবে না।
আমার মনে হয় একটি মহাউচ্চ শূন্যতা আমার পিছে পিছে আসছে, নিশ্বাস ফেলছে আমার পেছনে, আমাকে ঠাণ্ডা হাত বাড়িয়ে ধরছে।
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, সিলেট, যশোর, লণ্ডন, হেলসিংকি, বার্লিন, লস এঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক, সিডনি, ইসলামাবাদ, দুবাই, রিয়াদ, জেদ্দা, কাতার, করাচি, টরেণ্টো, মাইজদি, টাঙ্গাইল, ময়মনসিং, রাজশাহী, তেঁতুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, পাঁচবিবি, ঘাটাইল পাগল হয়ে আছে, তারা শুনছে ‘ক্যানট বি রিচ্ড্ নাউ, প্লিজ কল লেটার’; কিন্তু আমি কি লেটার তাদের রিচ করতে দেবো?
গোলাপ-ই-সাহারায় ঢুকে বিছানার ওপর আমি মোবাইলগুলো ছুঁড়ে দিই, একটি ছুটে নিচে প’ড়ে যায়; একটিকেও আমার অন্য করতে ইচ্ছে করে না। সব মোবাইল যদি মঠটির মতো ধ্বংস হয়ে যেতো আমি শান্তি পেতাম। কিন্তু শান্তি কোথায়? আমার জন্যে কি আর শান্তি আছে?
আমার মোবাইল বন্ধ, দুনিয়া নিশ্চয়ই পাগল হয়ে আছে।
আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি মোঃ আবু লাদেনকে নিয়ে পাগলের মতো আমার গোলাপ-ই-সাহারায় ঢোকে।
আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘হুজুর, আপনেরে ফোন করতে করতে পাগল অইয়া গেছি, আসনের পথে পথে ফোন করছি, ফোনের পর ফোন করছি, ধরেন নাই দেইখ্যা ডরে কাপতে আছিলাম।‘
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘ডর কেনো?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘কি জানি কি অয়, বলন তা যায় না। মালাউন আর মালাউনগো দালালরা যুদি কিছু কইরা থাকে?’
আমি বলি, ‘এখন তাদের সে-সাহস নেই।’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘আলহামদুলিল্লা, হুজুর মোবাইলগুলি অন করেন, নেতারা নিশ্চয়ই আপনেরে চাইতেছে, না পাইলে অনেকের হার্টের রোগ বাইর্যা যাইব, ডায়াবেটিস দেহা দিব, পেশাব বাইর্যা যাইব।‘
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘হুজুর অহনও আহার করেন নাই।’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘এই লাদেন ভাই, হুজুরের লিগা তরাতরি আহার লইয়া আসেন, একলগে আমরা আহার করি।’
আমার সামনে মেঝের ওপর কোরবান আলি ব্যাপারি একটি বেশ বড়ো বস্তা রেখেছে, আমি জানি ওর ভেতরে কী আছে। আমি ওদিকে আবার তাকাই।