এতেই বোঝা যায় আমার স্তানটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, আমার কর্মকাণ্ড কতোটা সুদূরপ্রসারী, কতোটা সম্ভাবনাময়। তিনি মনে করেন। এখান থেকেই শুরু হবে নতুন ইছলামের, নতুন পাক স্থানের, পাক জমিন সাদ বাদের।
তিনি বললেন, ‘মনে কইরো তোমরা হইলা ইছলামের আনসার, ইছলামের রাজাকার, তোমরা হইলা আল্লার তালেবান, এইখন আমরিকার ইবলিশ ইহুদিরা আপগানিস্থান দখল করছে, তয় আমরা মরি নাই, জিহাদ আমাগো চালাই যাইতে হইব, আমরা এই দ্যাশে আপগানিস্থান হাছিল করুম, এইডা হইব আল্লার দ্যাশ। সারা দুনিয়াই হইব আল্লার রাইজ্য।‘
দু-নম্বর নেতা, আলহজ মওলানা রহিমুদিন রছুলপুরি, বললেন, ‘আই চ্যাডের না সোনার বাংলা গানডাও বন্দ করতে অইব, অইডা শোনলে আমার কইলজা থিকা খুন বাইর হয়, মালাউনদের গান অইডা, অইডারে বদলাইতে হইব, সেইখানে আল্লার রহমতে আবর আসব ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’।
পাক সার জমিন গানটা আমি ইস্কুলে গেয়েছি, এই লাইনটাই মনে আছে আমার, এর পরে কী আছে বা নেই, তা আমার মনে নেই; আমার সঙ্গে যারা নওজোয়ান জিহাদি তারা এই গান শোনেই নি। তারা এদিক ওদিক তাকায়, ব্যাপারটি বুঝতে পারে না।
এক নওজোয়ান জিহাদি জানতে চায়, ‘হুজুর, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ কী, এইডা কি আল্লাপাকের বাণী?’
রহিমুদিন রছুলপুরি একটু অবাক হন, জিহাদিরা আসল কথাটিই জানে না!
তিনি বলেন, ‘এইডা হইল দুনিয়ার সেরা সঙ্গীত, কোরানহাদিছের পরই এইডা, এইডা আমাগো পাকিস্থানের কওমিসঙ্গীত, এইডা আমরা ১৯৭১-এ হারাই ফেলছি, এইডা আমাগো ফিরাই আনতে হইব, আবার দ্যাশটারে পাকিস্থান বানাইতে হইব, হুকুমতে ইছলাম করতে হইব। তোমাগো লিগা আমি ১,০০০ পাক সার জমিনের ক্যাছেট লইয়া আইছি, আমাগো পাকিস্তানের মুরুব্বিরা দিছে, আরো দিব, তোমরা সব্বাই ফজরে জহুরে এশার পর অই ক্যাছেট বাজাইয়া শোনবা, দ্যাকবা তোমাগো মইদ্যে জোশ জাইগ্যা ওঠতেছে। ওই ক্যাছেট শোনালে ছওয়াব হইব।’
মওলানা নিয়ামত আলি বললেন, ‘এইর লিগা খুন করতে অইব, আমাগো পেয়ারা রচুলুল্লাও (দঃ) খুন করতে কইছেন, উতরিবের ইহুদিগো তিনি খুন না করলে ইছলাম টিকত না, উতরিব মদিনাতুন্নবি হইত না, ইছলামের জইন্য এইখন আমাগো দ্যাশের ইহুদিদিগকে খুন করতে হইব।’
জিহাদি মোঃ পিয়ার আলি জিজ্ঞেস করলো, ‘হুজুর, আমাগো দ্যাশে ত ইহুদি নাই, ইহুদি কই পাম, ইহুদি দেখতে কোমুন?’
রহিমুদ্দিন রছুলপুরি দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, ‘নাউজুবিল্লা, আস্তাগফেরুল্লা, পোলাপানরা অখনও খাডি মুছলমান অয় নাই, এলেম শিখে নাই, দ্বিন শিখে নাই, ইহুদি চিনে নাই; ইছলামের এক নম্বর শক্ৰ হইল অই ইহুদিরা, শুরু থিকাই তারা আমাগো শত্রু।‘
মওলানা নিয়ামত আলি একটি পান মুখে দিতে দিতে, চিলমচিতে থো থো করে পিক ফেলতে ফেলতে বললেন, ‘হজরত রছুলপুরি ছাহেব, আপনে অল্পেতেই বেচইন হইয়া যান, আপনের মতন হইলে আমাদের পেয়ার রছুলুল্লাও (দঃ) ইছলাম কায়েম করিতে পারিতেন না; এইরা পোলাপান, এইগো বুঝাইত হইব দ্যাশে ইহুদি কারা।‘
আমরা একদল পোলাপান ইছলাম আর পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের জন্য জান দিতে প্ৰস্তুত, আমি অবশ্য পোলাপানের পর্যায়ে পড়ি না। আমার অঞ্চলের হাফেজিয়া ফোরকানিয়া ও নানা রকম মাদ্ৰাছার–দারছই নিজামি কওমি মাদ্ৰাছা, সাধারণ মাদ্ৰাছার তালেবানে আমার ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম পাটি’ পরিপূর্ণ। তারা আমার সৈনিক, তারা জিহাদের জন্যে তৈরি।
এক নওজোয়ান জিহাদি জিজ্ঞেস করলো, ‘হুজুর, আমাগো বুজাই দ্যান এই দ্যাশে ইহুদি কারা, তারা দ্যাকতে কোমুন?’
আলহজ মওলানা করিম আলি ইছলামপুরি বললেন, ‘বাজানরা, বুজলা না? আমাগো দ্যাশে ইহুদি হইছে মুরতাদরা, কয়েকটা কবি, ল্যাখ্যক আর বুদ্ধিজীবীরা, ওই ইবলিশগুলি, আর মালাউনরা, আর মালাউনগো দালাল পার্টির ইবলিশরা; অগো আগে শ্যাষ করতে হইব, তাইলেই আমরা আরব পাক সার জমিন সাদ বাদ আর ইছলাম ফিইর্যা পাইব, তার আগে আমরা থামুম না।’
‘মনে রাইখ্য তাগো দয়া করন যাইব না, পেয়ারা রাছুলুল্লা (দঃ) নিজের চাচা আবু লাহাব আবদুল উজ্জারেও মাফ করেন নাই; এইখনও আমরা সালাতে বলি, ‘আবু লাহাবের দুই হস্ত ধ্বংস হউক, এবং ধ্বংস হউক সে নিজেও—তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিও ওয়া তাব্বা।’
তাঁরা এক এক করে দীক্ষা দিতে লাগলেন।
দীক্ষার ব্যাপারটি আমি বেশ জানি, বারবার আমি দীক্ষিত হয়েছি, দীক্ষা মাদকের থেকেও শক্তিশালী; দীক্ষা দিতে হ’লে একই কথা বারবার শোনাতে হয়, মাথা ধুয়েমুছে সেখানে দীক্ষা ঢুকিয়ে দিতে হয়, যাতে অন্য কিছু আর সেখানে ঢুকতে না পারে।
‘বোজলা, ইছলামের নামে খুন করলে পাপ নাই, আর ইহা খুন না, ইহা হইল কাফের সরাইয়া আল্লার রাইজ্য স্থাপন; তাইলে জান্নতুল ফেরদাউছ পাওয়া যাইব, যেইখানে হুরদের লগে দিনরাইত ছহবত করতে পারবো। ইছলামের জইন্য একেকটা কাফের মারবা একেকটা হুর পাইবা, সোভানাল্লা।’
‘মুরতাদগো খুন করলে জান্নতুন ফেরদাউছ পাইবাম সেইখানে হুরদের সঙ্গে শরাবন তহুরা খাইয়া রাইত দিন কাটাইবা, সেইখানে ছহবত আর ছহবত করবা, দুনিয়ার ছহবতের থিকা অই ছহবত ৭০ কোটি গুণ মিঠা, সোভানাল্লা।’
‘সেইখানে তোমাগো জইন্য আছে গেলমান, কচি পোলা, তাগোও তোমরা পাইবা, কচি পোলার স্বাদের কোন তুলনা নাই, সোভানাল্লা।’