আমাদের আজকের দিনটির নাম দিয়েছি। আমরা ‘ওমর দিবস’, আগামী কালের নাম ‘আলি দিবস’। দুটি পবিত্র দিবস। ওমর দিবসে আমরা ভৈরবের নাম বদলে রাখবো ‘ওমরপুর’, আলি দিবসে শ্যামসিদ্ধির নাম বদলে রাখবো ‘আলিগঞ্জ’, বদলে দেবো সব কিছু।
দিবস দুটির আর জায়গা দুটির নাম আমার মাথা থেকে বেরোয় নি।
বেরিয়েছে আমার দু-নম্বর মোঃ হাফিজুদিনের মগজ থেকে; আমি ক্রমশ ওর সম্পর্কে একটু একটু সাবধান হচ্ছি, খুনে আর নামকরণে ওর অলৌকিক প্রতিভা রয়েছে, যা আমাকে মুগ্ধ ও ভীত করে। ওর সম্ভবত কোনো জিনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, যেটি খুবই শক্তিশালী, যেটি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে; ওর দিকে তাকালে আমার মনে হয়ে একটি অসম্ভব সম্ভব হয়ে আছে। একদিন ও আমাদের ওসামা বিন লাদেন হয়ে উঠতে পারে, তখন ও আমাকে কানা মোল্লা উমর করে রাখবে না, আমাকে কাফের বলে আমার মাথায় কয়েকটি বুলেট ঢুকোবে।
আমাকে সাবধান হ’তে হবে।
আমি অবশ্য সাবধান, সাম্যবাদ ও সর্বহার করে করে আমাকে সাবধান হতে হয়েছে; এখন জামাঈ জিহাদে ইছলাম করতে এসে আমাকে আরো সাবধান হতে হচ্ছে। হোলি টেরর আনহোলি টেরারের থেকে ভয়ঙ্কর।
জিহাদি হাফিজুদিনটা একটু বেতমিজ, মুখে চমৎকার চাপদাড়ি, স্বাস্থ্যটাও ভালো; একাই দু-তিনটি দোকান ভাঙতে পারে, কয়েকটিতে আগুন লাগাতে পারে, গুলি চালাতে পারে, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’ বলে ছুরি ঢুকোতে পারে; ফিরে এসে একটির পর একটি এক্সএক্সএক্স দেখতে পারে, সবই ইন্ডিয়ান, বড়ো দুধ আর বড়ো মাজা ওর পছন্দ, চাকরানিটাকে ডেকে এনে ঘন্টাখানেক ধীরে অরাল-অ্যানাল-ভ্যাজাইনাল করতে পারে, তারপর উঠে গিয়েই মধুর স্বরে ওয়াজ করতে পারে, ফতোয়া দিতে পারে।
ও একটি সাংঘাতিক প্রতিভা, আমি তার প্রতিভায় মুগ্ধ ও সন্ত্রস্ত।
‘ওমর দিবস’-এ আমরা কী করবো, সেটা আমি আলোচনা করি।
আলোচনা করতে বাধ্য হই, মোঃ হাফিজুদিনের সঙ্গে–আগের সন্ধ্যায় মাগরেবের নামাজটা সোরে, একটা এক্সএক্সএক্স দেখতে দেখতে, একটু ব্ল্যাক লেবেল একটু সিভাস রিগ্যাল খেতে খেতে। এই কাজটাও মোঃ হাফিজুদ্দিন পারে বেশ, আমাকে সহজেই ছাড়িয়ে যায়, ঢাকাঢািক ক’রে পানি ছাড়াই গিলে ফেলে, তখন ওকে অলৌকিক মনে হয়; ওর দাড়ি আর সুরমামাখ্যা চোখ দেখে এটা কেউ বুঝবে না, আমিই অনেক সময় বুঝতে পারি না।
দাড়ি অবশ্য আমিও রেখেছি, তবে আমার দাড়িটা ওর দাড়ির মতো কিছুতেই লম্বা হচ্ছে না, তাই মাঝেমাঝে আমি দাড়িগুলো টানি; এটা আমাকে একটা হীনম্মন্যতা বোধ দেয়, কিন্তু আমি এটা ওকে বুঝতে দিই না।
হাফিজুদ্দিন বলে, ‘কাউলকা দুই চাইরড লাশ ফেলতে অইব, মালাউনগো পাঁচ সাতটা দোকানো আগুন লাগাইতে হইব, ওগো দালালগো দোকান ঘরবাড়ি পুড়তে হইব, আর বিরিজটার পুব দিকটা চুরমার কইর্যা ফ্যালতে হইব।‘
আমি একটু চমকে উঠি ব্রিজটার কথা শুনে।
ব্রিজটা সব সময়ই আমাকে বিস্মিত করেছে, অনেকদিন মনে হয়েছে ওটির ওপর আমি শুয়ে থাকি, শুয়ে নদী দেখি; নিজেকেই আমার ব্রিজ মনে হয়েছে। এতো বড়ো একটি ব্রিজ কাফেররা কীভাবে বানিয়েছে, সেটা ভেবেও আমি অবাক হয়েছি। একটি দোয়া পড়ে কি আমরা এমন একটি ব্রিজ বানাতে পারি না? হজরত মুসাকে আমার মনে পড়ে, তবে তাঁর রাস্তাটি ছিলো ক্ষণস্থায়ী, আর ওইটা ছিলো ইহুদিদের জন্যে, তাই রাস্তাটিকে আমি একটি অপচয় মনে করি।
আমি বলি, ‘খুন তিন চারটা করলেও ক্ষতি নেই, সারা বাজারে আগুন লাগালেও ক্ষতি নেই, তাতেই আমাদের জিহাদ সফল হবে, আমরা ইছলামের দিকে পাক স্তানের দিকে বেশি এগিয়ে যাবো, আমাদের দলের শক্তি বাড়বে, তবে ব্রিজটা চুরমার করা ঠিক হবে না, মানুষের অসুবিধা হবে।’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘মাইনষের কথা ভাবনের সময় এইটা না, এইটা আসল কামের সময়, পাকিস্থান ভাঙ্গনের জইন্যে যেমন এই বিরিজ ভাঙছিল, আবর পাকিস্থান বানানের জইন্য এই বিরিজ ভাঙতে হইব।’
ব্রিজটার জন্যে আমার মায়া লাগে; আমি বলি, ‘ব্রিজ ভাঙার সময় পরেও পাবো, আগামীকালই দরকার নেই।’
মোঃ হাফিজুদিন হুইস্কির গেলাশে একটি বড়ো চুমুক দিয়ে, এক্সএক্সএক্স ছবিটার একটি দৃশ্য রিওয়াইন্ড করে, বলে, ‘হুজুর, জিহাদি জোশে আপনার দিল আইজও ভাইর্যা ওঠে নাই। তয় আপনের কতার ওপর কতা নাই, কয়ড ডিনামাইট মাডির নিচে জমা কইর্যা রাকাছি, পরে কামে লাগাম, ইনশাল্লা।’
আমি বলি, ‘মোঃ হাফিজুদিন ব্রিজটা তুমি ভাঙতে চাও, তা খুবই উত্তম। তারপর কি একটি দোয়া পড়ে ওটি বানাতে পারবে?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন খুব বিব্রত হয়, বলে, ‘হুজুর, এমুন দোয়া অহনও পাই নাই।’
আমি বলি, ‘এমন দোয়া কি নেই?’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘হুজুর, আল্লার কিতাবে নিচই আছে, তয় অইডা খুঁইজ্যা দোকতে অইব।’
আমি বলি, ‘এখনো খোঁজো নি কেনো?’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘অহন থিকা খুজুম, হুজুর।’
আমি বলি, ‘এতো দেরি করলে কেনো?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন বলে, ‘দোয়াডা খোজনের কতা মনে আছিল না, হুজুর।’
আমি বলি, ‘কোন কোন দোকানে আগুন লাগাতে চাও?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন বলে, ‘গোডা দশেকের কমে হইব না; কয়ড়া মালাউনগো দোকানে আর কয়ড়া মালাউনগো দালালগো দোকানে; মালাউনগো আর তাগো দালালগো বাইচা থাকতে দিমুনা।’