রাশেদের মনে হচ্ছে সে ক্রমশ দোজখে ঢুকছে, তাকে কেউ পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, নরকের শেষে সে কোনো স্বর্গে গিয়ে পৌঁছোবে না, যে-দিকেই পা বাড়াচ্ছে। সে-দিকেই পাকে পাকে প্রসারিত হচ্ছে দোজখ; মহাজগত নয়, রাশেদের মনে হচ্ছে, . দোজখই অনন্ত ও সম্প্রসারণশীল; আর দোজখের পাকে পাকে কোটি কোটি নগ্ন পুরুষ, যারা আর পুরুষ নয়, যারা এক সময় পুরুষ ছিলো; তাদের লুঙ্গি খুলে পড়েছে, তাদের সম্মুখভাগে উদ্যত বা ঝুলন্ত প্রত্যঙ্গ নেই, ওই প্রত্যঙ্গগুলো কেটে নেয়া হয়েছে, কেটে নেয়ার পর শূন্যস্থান পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে লবণ দিয়ে। প্রত্যঙ্গহীন পুরুষেরা তাকে। ঘিরে ধরছে, আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠছে তাকে দেখে। আর কোনো দিকে দেখার মতো কিছু নেই, দেখার মতো হচ্ছে ওই একদা-পুরুষদের লবণপূর্ণ গহ্বর, রাশেদের চোখ। গিয়ে বারবার পড়ছে ওই পুরুষদের প্রত্যঙ্গহীন গহ্বরে। তারা একদিন ওই প্রত্যঙ্গকেই দেবতা বলে মানতো, ওই প্রত্যঙ্গই ছিলো তাদের পতাকা, আজ তাদের ওই প্রত্যঙ্গ নেই। নেই বলে তারা লজ্জা পাচ্ছে না, গৌরব বোধ করছে; তারা চিৎকার করে বলছে, আমাদেরও একদিন ওই প্রত্যঙ্গ ছিলো, ওই প্রত্যঙ্গের জ্বালা আমরা সহ্য করতে পারি নি; আমরা জ্বালা থেকে এখন মুক্তি পেয়েছি। রাশেদ জানতে চায় তারা কী করে হারিয়েছে ওই প্রত্যঙ্গ। লিঙ্গঅণ্ডহীন পুরুষেরা চিৎকার করে বলতে থাকে, যুগে যুগে। আমরা লিঙ্গঅণ্ডহীন হয়েছি, আমাদের পিতামহদেরও লিঙ্গঅণ্ড ছিলো না, পিতাদেরও লিঙ্গঅণ্ড ছিলো না, তাদের পিতামহদেরও লিঙ্গঅণ্ড ছিলো না, পিতাদেরও লিঙ্গঅণ্ড ছিলো না, আমাদের পুত্রদেরও লিঙ্গঅণ্ড থাকবে না, পৌত্রদেরও লিঙ্গঅণ্ড থাকবে না, তাদের পুত্রদেরও লিঙ্গঅণ্ড থাকবে না, পৌত্রদেরও লিঙ্গঅণ্ড থাকবে না। যুগে যুগে বিদেশি প্রভুরা এসেছে, আমাদের শিশ্ন কেটে নিয়েছে; আমাদের ভেতর থেকেও কখনো কখনো কেউ। কেউ প্রভু হয়েছে, তারাও কেটে নিয়েছে আমাদের শিশ্ন; শিশ্নের বিনিময়ে আমরা। পেয়েছি ভবন, অন্ন, শকট, শিরোপা। রাশেদ দোজখের প্রথম পাকের মাঝভাগে দেখতে পায় এক নারী শুকনো শাপলা পাতায় একটি লাশ ঢেকে কাঁদছে, লাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, লাশের মুখে শুকিয়ে আছে সবুজ ঘাস নদীর রেখা বাঁশবন জোনাকি। ওই নারী বিচার চায়, আর ওই লিঙ্গহীন পুরুষেরাও বিচার চায়; তারা ওই নারীর সাথে সুর মিলিয়ে বিলাপ করছে থেকে থেকে। রাশেদ দোজখের প্রথম পাক পেরিয়ে দ্বিতীয় পাকে প্রবেশ করে, তার মাঝভাগে দেখতে পায় আরেক নারীকে, সেও একটি লাশ সামনে নিয়ে কাঁদছে, লাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত, রাশেদ লাশের মুখে একটি বন্দুকের ছবি আঁকা দেখতে পায়; ওই নারীও বিচার চায়। তার সাথে সুর মিলিয়ে বিচার চাইছে, বিলাপ করছে দ্বিতীয় পাকের একদা-পুরুষেরা। রাশেদ দোজখের তৃতীয় পাকে প্রবেশ করে দেখতে পায় ঝলমল করছে একটি শয়তান, সে দেবতা হয়ে উঠেছে কোটি কোটি লিঙ্গঅণ্ডহীন একদা-পুরুষের, তারা স্তব করছে ঝলমলে শয়তানের, বলছে, তুমি উজ্জ্বল তুমি আলোকিত তুমি চিরন্তন তুমি আমাদের প্রভু, তোমাকে আমরা সব দিয়েছি, শিশ্ন দিয়েছি, অণ্ড দিয়েছি, নারী দিয়েছি, তুমি আমাদের আশ্রয় দিয়ো। চতুর্থ পাকে নামার। পর রাশেদ আর কোনো লিঙ্গঅণ্ডহীন পুরুষও দেখতে পায় না, দেখতে পায় পালে পালে অদ্ভুত কিম্ভুত পশু, যাদের প্রত্যেকের তিনটি করে মুণ্ড, একটি মুণ্ড শুয়োরের, আরেকটি মুণ্ড নেকড়ের, আরেকটি মুণ্ড এমন এক কুৎসিত পশুর, যার নাম রাশেদ জানে না। তিনমুণ্ড বিকট পশুদের মুখ থেকে রক্ত ঝরছে, তবু রক্তের জন্যে পাগল হয়ে ছুটছে তিনমুণ্ডরা, বিকট চিৎকার করছে, তাতে দোজখ কেঁপে উঠছে বারবার। তিনমুণ্ডদের মাথায় রক্তের রেখায় আঁকা রয়েছে চানতারা; রাশেদের কাছে বাল্যকাল থেকে চানতারা পবিত্র, সে শুয়োরদের কপালে চানতারা দেখে শিউরে ওঠে। তিনমুণ্ডা তার দিকে ছুটে আসতে থাকে, রাশেদ চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু তার কণ্ঠ থেকে কোনো শব্দ বেরোয় না।
রাশেদ দোজখে ঢোকার আগে একবার ভেবেছিলো আবার যাবে সে ওই বিখ্যাত। ঝরনাধারার কাছে, সেখান থেকে অন্তত এক ফোঁটা জল মেগে এনে চিত্তটাকে দিনরাত ধুয়েমুছে চলবে, তা আর হলো না; মনে হতে লাগলো তার জন্যে পবিত্র জল কোথাও নেই। সে বাসার দিকে পা বাড়ালো, এবং যখন বাসা থেকে একটু দূরের মসজিদটির। কাছে পৌঁছোলো তখন সূর্য অনেকটা আকাশে উঠে গেছে। মসজিদের প্রাঙ্গণে বহু। লোকের ভিড় দেখে রাশেদ দাঁড়ালো। কেউ কি আজ ভোরে মারা গেছে? যে-লোকটি মারা গেছে সে কি খুব পাপী ছিলো, তাই কি এই ভিড়? পাপীদের নিয়ে আজকাল দারুণ কাণ্ড হচ্ছে জানাজায় জানাজায়, ইমামসাবরা পাপীর পাপের প্রকৃতি ও পরিমাণ কম্পিউটারের মতো এক নির্দেশে বের করে ফেলছেন, পাপমোচনের জন্যে দু-তিন লাখ টাকা জরিমানা করছেন; নইলে পাপী পায়ে দলা তেলাপোকার মতো শোচনীয়ভাবে। পড়ে থাকছে। তেমন কিছু হয়তো ঘটেছে। রাশেদ, কয়েক দিন আগে, একটা জানাজায় গিয়ে এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছিলো। ইমামসাব দারুণ ফিটফাট, মাথায় কী একটা ঝোলানো, পা পর্যন্ত ধবধবে পাঞ্জাবি, নাকি অন্য কোনো নাম আছে ওই বস্ত্রটার, তিনি পাপীর পাপের হিশেব করে চলছেন, মনে হচ্ছে বেহেস্ত-দোজখের সাথে তার সরাসরি টেলিফোন সংযোগ রয়েছে, দোজখের কম্পিউটারে তিনি পাপ মেপে তাকে টাকায় রূপান্তরিত করছেন, কয়েক লাখের নিচে কথা বলছেন না। তাঁর কথা শুনে মৃত। পাপীটির বড়ো পুত্রটি অসহায়ভাবে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে, সে লাখ টাকা কখনো। দেখে নি, পাপী পিতার লাশ নিয়ে সে কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। শুধু ভাবছে আজ থেকে সে নামাজটা ধরে ফেলবে নিজের ছেলেটাকে বাঁচাতে। রাশেদ ইমামসাবের বাহাদুরি দেখে একটু বিরক্ত হয়েই বলে ফেলেছিলো, পাপের হিশেব আল্লার ওপর ছেড়ে দিন, আপনার কাজ জানাজা পড়ানো, জানাজা পড়ান। কয়েকজন বুড়ো সাথে সাথে সমর্থন করেছিলো রাশেদকে, আর তখন ইমামসাব তার কম্পিউটার বন্ধ করে নামাজ পড়াতে শুরু করেছিলেন। তেমন কিছু কি আজ ঘটেছে? রাশেদ এ-ইমামকে দু-একবার। দেখেছে, তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়স হবে, এমন ভাব করেন যে তিনি মক্কামদিনাজেদ্দা রিয়াদফেরত তো বটেই, সম্ভবত দারুন্নাইম জান্নাতুল মাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস–ফেরতও। রাশেদের সন্দেহ হয় তার ঠিকানা জাহিম হাবিয়া জাহান্নামও হতে পারে একদিন; তাঁর সম্পর্কে শোনা গেছে ভোরের আজান দেয়ার কাজটি তিনি ক্যাসেট বাজিয়েই করে থাকেন, যদিও তার প্রমাণ মেলে নি। ধর্মের এ-আধুনিকীকরণে রাশেদের অবশ্য আপত্তি নেই। কিন্তু এমন উত্তেজনা কেনো চারপাশে? পুলিশও দেখা। যাচ্ছে। তাহলে কি ইমামসাব শহিদদিবসে শহিদদের গালি দিয়ে কোনো ফতোয়া প্রচার করে গোলমাল বাঁধিয়ে তুলেছেন? রাশেদ প্রাঙ্গণে ঢুকে একটি চেনা যুবকের পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনাটি জানতে চায়। যুবকটি রাশেদকে যে-ঘটনাটি বলে তাতে রাশেদ শিউরে ওঠে না, কিছুক্ষণ আগে সে দোজখ ভ্রমণ করে এসেছে বলে এখন সে সবই সহ্য করতে পারে। পাশের বস্তির একটি বালিকা, ১০, ইমামসাবের কাছে প্রত্যেক ভোরে সবক নিতে আসে, আজো এসেছিলো; ইমামসাব তাকে ভেতরে টেনে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। বালিকার চিৎকার কেউ শুনতে পায় নি, তবে দেরি হওয়ায় তার রিকশাঅলা পিতা তাকে ডাকতে এসে দেখতে পায় তার কন্যাটি রক্তের বন্যার মধ্যে পড়ে আছে। সে চিৎকার করে কন্যার বুকের ওপর পড়ে নাম ধরে ডাকতে থাকে, কিন্তু কন্যা সাড়া দেয় না। ইমামসাবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাশেদ কোনো উত্তেজনা বোধ করে না, সে ক্রমপ্রসারিত নরকের ওপর পা ফেলে ফেলে প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা। করতে থাকে।
গোলাপ-মেয়ের সাথে স্বর্গযাত্রা
দোজখ থেকে বেরোতে হবে, নইলে বাচবে না সে, বুঝতে পারছে রাশেদ, যেমন তার মতো অনেকে এর আগে এমনভাবে মরে গেছে, এখন মরছে, হয়তো বুঝতে পারছে না মরছে;-বারান্দায় একটি চঞ্চল চড়ইয়ের মুখের ওপর চোখ পড়লো রাশেদের, এক ঝলক রোদ গাছের পাতার সবুজের সাথে মিশে গ’লে এসে পড়েছে মুখটির ওপর, রাশেদ তার রূপের দিকে তাকিয়ে রইলো শিশুর মতো। মৃদু ইস্কুলে চলে গেছে, নইলে মৃদুকে নিয়ে চড়ুইয়ের মুখ দেখা যেতো, যে-মুখ সমাজ সভ্যতা রাষ্ট্রের থেকে অনেক। উজ্জ্বল আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তার। চড়ুইটিকে ডাকতে ইচ্ছে করছে, ডাক শুনে চড়ই যদি তার কাঁধে এসে বসতো, তার কাঁধটিকে মনে করতো একটা শাদা বেগুনের। ডাল, তাহলে সে ভুলে যেতে পারতো এইসব নোংরা সমাজ সভ্যতা রাষ্ট্র রাজনীতি। স্বৈরতন্ত্র গণতন্ত্র। যখন সে ঘর থেকে বেরোলো বুঝতে পারলো চড়ুইটি কৃপণ নয়, সে তাকে কিছু একটা দিয়ে গেছে, যা তার থেকে কেড়ে নিচ্ছে সমাজ রাষ্ট্র; সব কিছুর দিকে তার তাকাতে ইচ্ছে করছে, আদর করতে ইচ্ছে করছে সব কিছুকে। সামনের রিকশাটিকে ভালো লাগলো তার, রিকশাটির পেছনের অদ্ভুত, প্রায়-পরাবাস্তব, ছবিগুলো ভালো লাগলো, কলসি-কাঁখে মেয়েটিকে খুব ভালো লাগলো, তার স্তন দুটি কাঁখের কলসির থেকে বড়ো, ওই স্তন যার আছে সে কেনো পানি আনবে কলসি ভরে?-তার অলৌকিক স্তন দুটি আঁকার সময় শিল্পীর হৃদয় যে-সুখে ভরে গিয়েছিলো, সে-সুখ, রাশেদকে স্পর্শ করলো। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ঘরটিতে কোমলভাবে ঢুকলো রাশেদ, যাতে ঘরটি টেরও না পায় সে এসেছে; চেয়ারটিতে বসে ঘরটির দিকে তাকালো, আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে ঘরটিকে, কিন্তু নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে; কয়েক বছর ধরে সে বসছে ঘরটিতে, ঘরটির দিকে একবারও ভালোভাবে চেয়ে দেখে নি; মনে। হচ্ছে ঘরটির সঙ্গে যদি কখনো রাস্তা, বাজার, উদ্যান, বা রেলগাড়িতে তার দেখা হয়ে যায় সে ঘরটিকে চিনতে পারবে না। ঘরটি কি তাকে চিনতে পারবে? ঘরটিকে সে। যেমন উপেক্ষা করেছে ঘরটি কি তাকে তেমন উপেক্ষা করে নি? কী কী নিয়ে এটি ঘর হয়ে উঠেছে, যার ভেতর রাশেদ ঢুকছে বেরোচ্ছে কয়েক বছর ধরে? ঘরটিতে কটা। জানালা আছে? পাখা কটা আছে? আলমারি কটা আছে? টেবিল কটা আছে? চেয়ার কটা আছে? আর কী আছে? ঘরটি যদি তাকে এসব জিজ্ঞেস করে সে উত্তর দিতে পারবে না, ঘরটি খুব অপমানিত বোধ করবে, তাকে ঘেন্না করবে, গোপনে গোপনে তার সাথে শক্রতাও করতে পারে। দুটি জানালা আছে ঘরটিতে, রাশেদ চেয়ে দেখলো জানালা দুটি বন্ধ, অনেক দিন সে খোলে নি জানালা দুটি, এই প্রথম তার চোখে পড়লো হলদে রঙ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে জানালার কাঁচ; বেশ হয়েছে, বাইরে গাছগুলো মাঝেমাঝে। যে-ভয়ঙ্কর আগুন জ্বালে, তাতে পুড়ে যেতে পারে রাশেদ, সুবিবেচক কর্তৃপক্ষ তা চায় না, তারা স্থির করেছে এ-ঘরে যে বসবে তাকে কোনো রকম আগুনেই পুড়তে দেয়া। হবে না। রাশেদ নিজেও পুড়তে চায় না। মাথার ওপর দুটি পাখা ঘুরছে দেখে সে অবাক হলো, এতো দিন সে মনে করতো ঘরে আছে একটা পাখা; পাখা দুটির কোনো একটির অস্তিত্বই সে স্বীকার করে নি, সেই অস্বীকৃত পাখাঁটির কথা ভেবে সে দুঃখ পেলো। একটি জীবিত ও একটি মৃত টিউব বাতি আছে ঘরটিতে; জীবিতাটি প্রাণপণে চেষ্টা করছে ঘরটি আলোকিত করে রাখার, যদিও পারছে না, এতোটা কর্তব্যনিষ্ঠা দুর্লভ হয়ে উঠেছে চারপাশে, তার দায়িত্ববোধের জন্যে রাশেদ তাকে ধন্যবাদ জানালো, মৃতটির জন্যে একটু কষ্ট লাগলো, হাসিও পেলো। দরোজার পর্দাটির দিকে তাকিয়ে মনে হলো সে একটি দেয়াল দেখছে, যেনো ওখানে কখনো একটি সবুজ পর্দা ছিলো না, ওখানে বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে আছে একটি শক্ত দেয়াল, তার গায়ে শ্যাওলা ধরেছে। সে শিউরে উঠলো, তার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো; একটু পরে পর্দাটি দুলে উঠলে তার ভয় কাটলো। পরমুহূর্তেই আবার একটি দেয়াল দেখতে পেলো রাশেদ, দেয়ালটি তাকে আটকে ফেলেছে; সে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে দেখলো তার সামনে দেয়াল, পেছনে দেয়াল, ডানে দেয়াল, বায়ে দেয়াল। দেয়াল তাকে ঘিরে ফেলেছে, তার কোনো উদ্ধার নেই। তার মনে পড়লো অনেক বছর ধরে সে চাঁদ দেখে নি, চাঁদ দেখতে। গেলেই চাঁদ ঢেকে দিয়ে একটা দেয়াল ওঠে, চাঁদের আলোর নিচে ঘুমন্ত গাছ দেখে নি, দেখতে গেলেই গাছের চারপাশে দেয়াল ওঠে, কুয়াশার ভেতর জোনাকি দেখে নি, রৌদ্রের আক্রমণে শ্রান্ত মানুষ দেখে নি, অনেক বছর বুকের ভেতরে সে শিশিরপাত বোধ করে নি, শিশির পড়তে থাকলেই সেখানে একটা দেয়াল ওঠে। এমন একটা কারাগার পাওয়া ভাগ্যের কথা এ-দেশে, তার সুখী থাকার কথা এ-কারাগারের ভেতরে, কিন্তু রাশেদের মনে হতে লাগলো সে দম ফেলতে পারছে না। তার মনে পড়লো ভোরের চড়ইটির মধুর মুখ।