স্টেডিয়ামে একটা কাজ পড়েছে রাশেদের, মাঝেমাঝেই আসতে হচ্ছে। একটা যন্ত্র কিনেছিলো, দোকানদার যন্ত্রটির গুণ গাইতে গাইতে রাশেদকে অপরাধী করে তুলেছিলো; রাশেদের মনে হয়েছিলো গুণাধিরাজকে না কেনা বিশ্বাসঘাতকতা হবে, কেননা দোকানদার রাশেদকে দেখেই বিশ্বাস করে ফেলেছিলো রাশেদ যন্ত্রটা কিনবে; কিন্তু কেনার কয়েক দিন পরই সেটি নষ্ট হয়ে যায়। রাশেদের কাজ পড়েছে দোকানে এসে খোঁজ করা ওটি সারাই হয়েছে কিনা। আজও হয় নি, দোকানদার জানিয়েছে। শিগগিরই হবে, এটা এক বড়ো ধরনের আশার কথা। আশাই হতভাগ্যদের, বাঙালির, বাঁচার প্রেরণা। রাশেদ এখন কোথায় যাবে? যাওয়ার জায়গা বেশি নেই দেশে, আর। রাশেদের যাওয়ার জায়গা খুবই কম। আবদেলকে দেখে গেলে কেমন হয়? তার অফিস বেশি দূরে নয়, চৌরাস্তা পেরিয়ে কিছুটা পুবে গিয়ে একটা পাঁচতলায় উঠতে হবে। আবদেল অনেক দিনই বলেছে অফিসে যেতে, আজো যেতে পারে নি রাশেদ, আজ গেলে কেমন হয়? রাশেদের যেতেই ইচ্ছে করছে, যন্ত্রটি গোপনে গোপনে যে-যন্ত্রণা। দিচ্ছে, আবদেলের ওখানে গেলে তার বিষ একটু কমতেও পারে। আবদেলের অফিসে ঢুকে মুগ্ধ হলো রাশেদ, বসার ঘরের কার্পেটে পা রাখতেই তার দ্বিধা হচ্ছিলো, নিজেকে মনে হচ্ছিলো নিজের পূর্বপুরুষ, যে পাটখেত নিড়োতে নিড়োতে সারা গায়ে মাটি মেখে এখানে ঢুকে পড়েছে। তার স্যান্ডলে নিশ্চয়ই মাটি লেগেছে। এ-কার্পেট নিশ্চয়ই। মাটিলাগা স্যাভলেরর জন্যে নয়;-স্বাধীনতা, তুমি বাঙালি মুসলমানকেও কেমন উন্নত ও বিকশিত করো। একটি লোক জানালো, স্যার ভেতরে ব্যস্ত, রাশেদকে একটু বসতে। হবে। এমন অফিস যার, তাকে অবশ্যই ব্যস্ত থাকতে হবে, ভেতরে ব্যস্ত থাকতে হবে বাইরে ব্যস্ত থাকতে হবে। বসে থাকতে চমৎকার লাগছিলো রাশেদের, আবদেল ভেতরে ব্যস্ত থাকুক, তার নিজের কোনো ব্যস্ততা নেই। কিছুক্ষণ পর আবদেলের ঘরের দরোজা ঠেলে একটি তরুণী বেরোলো, সুগন্ধে ভরে উঠলো পৃথিবী, সে প্রজাপতির। মতো উড়ে উড়ে বেরিয়ে গেলো। ওই তরুণীর একজোড়া পা না থেকে একজোড়া পাখনা থাকলেই ভালো হতো। আবদেল কতোক্ষণ ব্যস্ত ছিলো? এমন প্রজাপতি ঘরে ঢুকলে কতোক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়? আবদেল কতোক্ষণ ব্যস্ত থাকতে পারে? লোকটি রাশেদকে ভেতরে যেতে বললো। রাশেদকে দেখে উল্লাসে ফেটে পড়লো আবদেল; এটা তার গুণ, যেনো তারই জন্যে অপেক্ষা করছিলো আবদেল। কফি, সামরিক আইন, দশটা টেলিফোন, বিলেত, অর্ক, বাঙলাদেশ, সমাজতন্ত্র প্রভৃতিতে আপ্যায়িত হয়ে রাশেদ। যখন উঠবে, আবদেল তার হাতে বেনসনের একটি প্যাকেট দিয়ে বললো, এটা আপনার জন্যে। আবদেল যেভাবে দেয়, তাতে বিনয়েও না করা যায় না। রাশেদ নেমে রিকশা। নিলো। রিকশাটি যখন বায়তুল মোকাররমের উত্তর দিয়ে চলছে, তখন তার ইচ্ছে হলো একটি সিগারেট খেতে। আবদেলের দেয়া সিগারেট প্যাকেট খুলেই সে চমকে উঠলো, ভেতরে এটি কী? কোনো গোলাপি সাপ? আবদেল প্যাকেটে গোলাপি পাতলা মসৃণ। সাপটি ঢুকিয়ে তার হাতে তুলে দিয়েছে। প্যাকেটটি রাশেদের হাত থেকে পড়ে। যাচ্ছিলো, তাড়াতাড়ি পকেটে রাখলো। আবদেল কী ব্যবহার করে? রাজা? রেক্সঃ আবদেল নিশ্চয়ই ব্যস্ত ছিলো প্রজাপতিটির সাথে; তার উত্তপ্ত ব্যস্ততা সে’ ঢেলে দিয়েছে মসৃণ সাপের খোলশে, আর খোলশটি, যার ভেতরে আবদেলের ব্যস্ততা তরল ঠাণ্ডা হয়ে আছে, তুলে দিয়েছে রাশেদের হাতে। আবদেলের কমোডের ফ্ল্যাশ নিশ্চয়ই কাজ করছে না। নামাজিরা বেরিয়ে আসছে, তারা যদি টের পায় তার পকেটে রয়েছে একটি মসৃণ গোলাপি সাপের খোলশ? খোলশের ভেতরে রয়েছে তরল ঠাণ্ডা ব্যস্ততা? তারা পাথর। ছুঁড়তে শুরু করবে। তাদের পকেটে নাকি সব সময় পাথর থাকে, ঢিল থাকে, সাপের। মাথা ঘষার জন্যে। জলপাইরঙের ট্রাক আসছে কয়েকটি, ট্রাকগুলো কি টের পেয়ে গেছে যে তার পকেটে সাপ রয়েছে? না, টের পায় নি; শাই শাই করে ট্রাকগুলো চলে। গেলো। প্যাকটটি খুঁড়ে ফেলে দেবে রাস্তায় রাস্তায় পড়েই যদি প্যাকেট খুলে যায়, ভেতরের সাপ লাফিয়ে বেরোয়, আর মাথা দোলাতে থাকে, মাথা দোলাতে থাকে, মাথা দোলাতে থাকে লোকজন কি তখন সাপের খেলা দেখবে? ডাস্টবিন দেখা যাচ্ছে একটা, ময়লা উপচে পড়ছে, রিকশা থামিয়ে রাশেদ ডাস্টবিনে ফেলে আসবে সাপের বাক্সটি। সবাই সন্দেহ করবে না? এদেশে ডাস্টবিনে কেউ কিছু ফেলে না, সে যদি রিকশা থেকে। নেমে যত্নের সাথে ডাস্টবিনে প্যাকেটটি ফেলে, তখন রিকশাঅলাও তাকে সন্দেহ করবে, মনে করবে সে কোনো বোমা পুঁতে যাচ্ছে। সেগুনবাগিচাটা নির্জন, সেখানে পথের পাশে প্যাকেটটি ফেলার সুযোগ মিলতেও পারে। রাশেদ রিকসাঅলাকে সেগুনবাগিচায় ঢুকতে বললো; কিন্তু না, দেশের বারো কোটি বাঙালি হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান বোধ হয়। টের পেয়ে গেছে তার পকেটে সাপের বাক্স আছে। সাপের খোলশে রয়েছে তরল : ব্যস্ততা। তারা অনেক দিন সাপের খেলা দেখে নি, আজ খেলা দেখতে চায়। রাশেদ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রিকশা থেকে নামলো, ভাবলো উদ্যানের কোনো। ঝোঁপের ভেতরে সাপটি ছেড়ে দেবে, সাপটি একেবেঁকে কোনো খোড়লে ঢুকে পড়বে; কিন্তু একটি ঝোঁপের কাছে যেতেই দেখলো এক যুবক খুব ব্যস্ত কাজ করে চলছে এক যুবতীর শুনাঞ্চলে। সে এমনভাবে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে ব্লাউজের ভেতর দিয়ে যে যুবতীটির দম বন্ধ হয়ে আসছে, কিন্তু সে কাজ করে চলছে, কাজই এখন সত্য তার জীবনে; সুন্দর বিকল্প বের করেছে ছেলেটি, সাপের কাজ করে চলছে হাত দিয়ে, ভেতরে ভেতরে সে খুব ব্যস্ত। এ-যুবক কততক্ষণ ধরে এমন ব্যস্ত। ও সাপ দিয়ে ছো দিয়ে খোলশ বদলাতে পারে না? আবদেলের মতো ওর জায়গা নেই। ছেলেটির কাজ শিথিল হয়ে পড়লো, এলিয়ে পড়লো সে। তার ব্যস্ততা শেষ হয়ে গেছে, মেয়েটি একটা বড়ো দম নিলো; এর পর সে এ-কর্মী যুবকের সাথে বেরোনোর সময় ব্লাউজ খুলে। বাসায়ই রেখে আসবে। এখানে রাশেদ সাপটি ছাড়তে পারবে না। রাশেদ আরেকটি ঝোঁপের খোঁজে এগোতে লাগলো। ঝোঁপের ভেতর থেকে একটি লিকলিকে মিশমিশে লোক বেরিয়ে এলো, রাশেদের পাশে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে ক্যালক্যাল করে জিজ্ঞেস করলো ছার, লাগবো? না, তার এখন কিছু লাগবে না; কিন্তু লোকটি ব্যবসা জানে, রাশেদকে দেখেই বুঝে ফেলেছে তার লাগবে। বললো, স্যার, টিভিস্টার, ফিলিমস্টার, পাচাজার ছার। রাশেদের এসব কিছু লাগবে না, তার দরকার একটি নীরব নির্জন ঝোঁপ, যেখানে সে সাপ ছাড়তে পারে। তার পকেটে এমন একটা সাপ, যেটা ফোঁসফাস করে না ঢুশঢাশ মারে না শুধু দুধভাত খায়। রাশেদ কি একটা বেবি নেবে, শহর পেরিয়ে গিয়ে নদীতে ফেলে আসবে সাপটি? কিন্তু সেটি যদি ভাসতে ভাসতে রাশেদের নাম। বলতে বলতে চলে আসে শহরে, গন্ধ শুকতে শুকতে এসে ঢুকতে চায় তাদের জানালা দিয়ে? ডাক দেয় রাশেদের নাম ধরে? রাশেদ উদ্যানে হাঁটতে লাগলো, হাঁটতে হাঁটতে দেখলো কয়েকটি নেতা জটলা পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওরা কি সাপ ব্যবহার করতো? তখনো সাপ বেরোয় নি? তাহলে ওরা কী ব্যবহার করতো? কিছুই ব্যবহার করতো না? এজন্যেই আজো ওদের চেহারার মতো কাউকে কাউকে দেখা যায়? রাশেদের ইচ্ছে হলো বীররা কীভাবে ঘুমোয়, একটু দেখতে; তারা মাটির নিচে ঘুমিয়ে আছে, দেখা যাচ্ছে না, তবে ঘুম হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। আহা, তখন যদি সাপ বের হতো তাহলে আজ ওরা শান্তিতে ঘুমোতে পারতো; সাপের অভাবে কতো অশান্তিই না ভোগ করতে হয়েছে ওদের। রাশেদের হাতেই ছিলো প্যাকেটটি, কেউ দেখলে ভাববে সে সিগারেট বের করবে এখনি; সে সিগারেট বের করবে না, তার হাত কাঁপছে, তার হাতে সাপের বাক্স, কেঁপে কেঁপে হাত থেকে খসে পরলো প্যাকেটটি কারুকার্যের ওপর। একটি লোক আসছে দেখে সে প্যাকেটটি তোলার জন্যে হাত বাড়ালো; কিন্তু ভয়। লাগলো তার যে সাপটি ঢাকনা খুলে লাফিয়ে বেরিয়ে তাকে ছোবল দেবে। সে হাত টেনে পকেটে রেখে আস্তে আস্তে নিচে নামলো; কিন্তু দেখতে লাগলো পেছনে। কারুকার্যিত মেঝের ওপর সাপটি লাফিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, এদিকে সেদিকে ফণা দোলাচ্ছে, আর ফণা দোলাচ্ছে।
ঘোলা জল, বিড়ালি, আর গোলাপ-মেয়ে
সব কিছু পচে গেছে;–ওই বাড়িগুলো, বাড়ির ভেতরে মানুষগুলো, মানুষের ভেতরে। মগজ, মাংস, রক্ত, অণ্ড, যোনিগুলো, যদি থাকে তবে আত্মাগুলোও পচে গেছে। জমাট দুর্গন্ধে ঢাকা পড়ছে রাশেদ, তার ত্বকের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে ঢুকছে একেকটি পচাগলা। লাশ, দুর্গন্ধে রক্তের প্রতিটি কণা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে, প্রতিটি রক্তকণা তার ভেতরে বমি করে চলছে, বমিতে তার ভেতরটা বেশ্যাবাড়ির নর্দমার মতো ঘিনঘিনে হয়ে উঠছে। মাথার ওপরের আকাশ আর মেঘ, স্তরে স্তরে বাতাস, দূর থেকে বিচ্ছুরিত রৌদ্র, সমগ্র জলবায়ু পচে তার ওপর ঝরে পড়ছে, পচা বস্তুর অবিরল প্রপাতে রাশেদ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। বড়ো বেশি দুর্গন্ধ পাচ্ছে রাশেদ, হয়তো সে নিজেই পচে গেছে; মাঝেমাঝে। নিজের অজান্তেই ঘ্রাণ নিচ্ছে সে নিজের মুঠোর। কিছু ছুঁতেই তার ইচ্ছে হচ্ছে না, বাগানের ওই গোলাপটি চুলেও তার হাত পঙ্কিল হয়ে উঠবে বলে মনে হয় হচ্ছে, মানুষের কথাই নেই, প্রতিটি মানুষ পঙ্ক্যুপের মতো। একটি সম্পূর্ণ দেশ পচে গেছে, অন্তত এ-শহর পচে গেছে। এ-শহরে কয় লাখ বদমাশ বাস করে? এ-শহরে অধিবাস করে কয় লক্ষ শুয়োরের বাচ্চা? এ-শহরে সঙ্গম করে কয় লাখ কুত্তাকুত্তি? আমিও কি একটা বদমাশ, শুয়োরের বাচ্চা, একটা কুত্তা? রাশেদ সারাটা দেশের দিকে তাকাতে চায়, হাতের তালুর রেখার মতো দেখতে চায় গ্রাম নদী ধানখেত পুকুর শহরগুলো, তার চোখে কোনো দেশ পড়ে না গ্রাম পড়ে না নদী পড়ে না; চোখে দোমড়ানো বুট ভেসে। ওঠে, লাশ ভেসে ওঠে, অসংখ্য পশুর চিল্কারে তার কান নষ্ট হয়ে যেতে চায়। আচ্ছা, এ-দেশের উত্তরে কী? দক্ষিণে কী? পশ্চিমে কী? পুবে কী? রাশেদ কিছুই দেখতে পায় না, সে অন্ধ হয়ে গেছে। পঞ্চগড় বগুড়া রংপুর রাজশাহি দিনাজপুর বোয়ালমারি চট্টগ্রাম কুমিল্লা নোয়াখালি ঠাকুরগাঁও মধুপুর মৌলভিবাজার ব্রাহ্মণবাড়িয়া যশোর নড়াইল রামপাল চরফেশন সিলেট কমলগঞ্জ সিরাজদিখান রাড়িখাল শ্রীনগর পাবনা ঈশ্বরদি কুষ্টিয়া জকিগঞ্জ চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর নাচোল পীরগঞ্জ শেরপুর চকোরিয়া মনপুরা টেকনাফ বিলাইছড়ি শ্যামনগর ডুমুরিয়া হেতালবুনিয়া সাঁথিয়া চান্দিনা চাটখিল দাগনভূঁইয়া কচুয়া নড়াইল মধুপুর নাটোর নারায়ণগঞ্জ সাতকানিয়া রামগড় বান্দরবন কেন্দুয়া মিঠাপুকুর জলঢাকা মাইজপাড়া ভাগ্যকূল কান্দিপাড়া দিঘলি কবুতরখোলা তারপাশা দামলা গাদিঘাট শিমুলিয়া সাতঘরিয়া কয়কীর্তন শ্যামসিদ্ধি ভাঙ্গা মাওয়া। দোহার শেলামইত সরসা তালা নরিয়া কোথায়? কতো দূর নষ্ট শহর থেকে? কতো দূর গেলে, কতো হাজার বছর কতো হাজার মাইল হাঁটলে, আমি দূরে যেতে পারবো। দুর্গন্ধের নগর থেকে, গলিত লাশের অভ্যন্তর থেকে? কিন্তু সুস্থ কি আছে মধুপুর, তার উরুতে পাছায় বুকে বগলে কুঁচকিতে কোনো ঘা হয় নি? হাঁটতে হাঁটতে যদি হরিণাকুণ্ড চলে যাই, তাহলে কি সেখানে দেখতে পাবো গাছে পচন ধরে নি, পচন ধরে নি জলে, ঘাসের শেকড়ে, মাছের মুড়োতে, কচুর লতিতে, পুঁইফলে? কলাপাড়া, একটা নাম মনে আসছে, যদিও রাশেদ জানে না এমন কোনো নাম আছে কিনা ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলে, মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখেছে নামটি, কলাপাড়ায় কলাগাছের সারি আছে কিনা জানে না রাশেদ, তার জানতে ইচ্ছে হয় কলাপাড়ায় কলাগাছের সারি থাকলে তার কলার কাঁদিতে কি পচন ধরে নি? না, আমি এসবের মধ্যে নেই, সঙ্গে নেই; ওই টাওয়ারের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, ওই শীতাতপনিয়ন্ত্রণ, টেলিভিশন, সিনেমা, বঙ্গভবন, সচিবালয়, আমদানিরপ্তানি, বুট, ট্যাংক, স্টেনগান, কুচকাওয়াজ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা, দালাল, দেশপ্রেমিক কারো সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করে রাশেদের। আমি তোমাদের মতো বাঙালি নই তোমাদের মতো মুসলমান নই, আমি তোমাদের মতো বাঙালি হ’তে চাই না তোমাদের মতো মুসলমান হতে চাই না।