মোটেই নয়। এখন তোর প্রবলেমটার কথা বলবি?
বি সিরিয়াস। প্রবলেমটা কিন্তু সত্যিই প্রবলেম। নো হাসিঠাট্টা। প্লীজ!
আচ্ছা, মনে থাকবে।
প্রবলেমটা একটা মেয়েকে নিয়েই। টল, ফেয়ার, ইয়ং অ্যান্ড বিউটিফুল। হাইলি এড়ুকেটেড। বিলেতে লেখাপড়া করেছে। পেল্লায় বড়লোক।
বাড়িয়ে বলছিস না তো! প্রেমে পড়লে কিন্তু লোকের মাত্রাজ্ঞান থাকে না। কাণ্ডজ্ঞানও নয়। আগে বল জাতে কি?
ওঃ, তোকে নিয়ে আর পারি না। আমি প্রেমে পড়িনি।
পড়িসানি? এর পরও যদি প্রেমে না পড়ে থাকিস তাহলে এখুনি সাইকিয়াট্রিস্ট দেখা।
একটু শুনবি চারুদি? একটু পেশেন্স নিয়ে?
বল।
মেয়েটা আদর্শবাদী। একটু নারীমুক্তি ঘেঁষা, অর্থাৎ একটু অ্যাগ্রেসিভ টাইপের।
চারুশীলা ফোঁস করে ওঠে, নারীমুক্তিতে বিশ্বাস করলেই সে অ্যাগ্রেসিভ হয় বুঝি! বেশ কথা তো!
ফের ফোড়ন কাটছিস?
আচ্ছা বল।
পদবী রায়, জাতটাত জানি না।
জানিস না কেন? রায় মে বি এনিথিং।
তা হোক না এনি থিং। আমি তো আর ইন্টারেস্টেড নই।
নোস যদি তবে ফোন করে জ্বালাচ্ছিস কেন?
বলছি। মেয়েটা একটা গায়ের স্কুলের হেডমিস্ট্রেস। চাকরিটা শখের। তবে ওই স্কুলে অডিট করতে গিয়ে আলাপ। এক সঙ্গে ফিরলাম। ওর বাড়িতে কফিও খেয়েছি। দি ম্যাটার শুড এন্ড দেয়ার। কিন্তু মেয়েটা একটু আগে ফোন করে সামনের রবিবার ওর বাড়িতে করেছে। আমি অ্যাকসেপ্ট করেছি।
বেশ তো। তারপর?
তারপরই তো তোকে ফোন করছি। কিছু বুঝতে পারছিস?
এ তো দুইয়ে দুইয়ে চার। সোজা অঙ্ক।
ভ্যাট। এ মেয়ের আমাকে পাত্তা দেওয়ার কথাই নয়।
তবে দিচ্ছে কেন?
সেটাই যদি জানবো। তবে তোকে জিজ্ঞেস করছি কেন? আমি মেয়েদের সাইকোলজি কিছু জানি না। একটু অবাক লাগছে।
আগে জানতে হবে তুই যতটা বলছিস মেয়েটা ততটাই কিনা। তুই তো হাঁদারাম। বয়সটাও ভাল নয়। এ বয়সে যাকে চোখে পড়ে তাকেই উর্বশী বলে মনে হয়।
এ মেয়েটি গ্যারান্টিড সুন্দরী। ঠিকানা দিচ্ছি, দেখে আসিস গিয়ে।
দেখাশোনা তো করতেই হবে বাবা। সেটা না হয়। পরেই হবে। কিন্তু তোর প্রবলেমটা কী?
এটাই তো প্রবলেম। মেয়েটা ডাকছে কেন?
তোকে পছন্দ করছে বলে! বিলেতে কতদিন ছিল?
জিজ্ঞেস করিনি। তবে লেখাপড়া যখন করেছে তখন বেশ কিছুদিন থেকেছে নিশ্চয়ই। সামনের বছর পারমানেন্টলি বিলেতে চলে যাবে।
তুই লন্ডনে কতদিন ছিলি যেন?
বছর খানেক। একটা শর্ট কোর্স করতে গিয়েছিলাম।
তোর তো সেখানে অনেক বন্ধু আছে!
আছে কয়েকজন।
তাদের কাছে চিঠি লিখে খোঁজ নে।
অতদূর করতে যাবো কেন?
খোঁজ নিয়ে দেখ, ওখানে কোনও অ্যাফেয়ার ছিল কিনা।
সেটা জেনেই বা কী হবে?
যা বলছিস তা যদি সত্যি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে এতদিনে তোর মতো একটা হাবাগঙ্গারাম, অপদাৰ্থ, গুড ফর নাথিংকে উদ্ধার করতে ভগবানই ওকে পাঠিয়েছেন।
তুই একদম বোকা। বলছি তো আমি ইন্টারেস্টেড নই।
ঠিক আছে, রোববার ওর বাড়ি থেকে ঘুরে আয়। একটু বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের বর্ণটা জেনে নিবি। বুঝেছিস বোকাচণ্ডী?
আমি ওসব পারব না। শুধু জানতে চাইছি, এত অল্প পরিচয়ে এতটা এগোনো কি স্বাভাবিক?
প্ৰেম জিনিসটা এরকমই হয়। তোর অভিজ্ঞতা নেই বলে জানিস না।
তুই বলতে চাস মেয়েটা আমার প্রেমে পেড়েছে?
হাবুড়ুবু যাচ্ছে।
অসম্ভব। এ খুব ধারালো মেয়ে।
ধারালো মেয়েরা আজকাল ইচ্ছে করেই ব্যক্তিত্বহীন, ম্যাদাটে মার্কা, জো-হুজুর টাইপের পুরুষদের পছন্দ করছে। তাতে তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বজায় থাকে, যা খুশি করতে পারে, স্বামীকে ইচ্ছেমতো চালাতে পারে।
আমি ম্যাদাটে মার্কা! ব্যক্তিত্বহীন!
তার ওপর পয়সাওলা ঘরের ছেলে, অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশনও ভাল। তোকে তো এ ধরনের মেয়েরা লুফে নেবে।
ক্যাচ উঠলে তো লুফবে! আমি তো ক্যাচ তুলিনি?
তুলেছিস, কিন্তু জানতি পারছিস না।
ইয়ার্কি করিস না চারুদি। তোকে না আগেই বলেছি, বি ভেরি সিরিয়াস!
সরি। ভুলে গিয়েছিলাম। আর ইয়ার্কি করব না। বল।
যা বলার তা বলেছি। এবার ভেবে বল তো ব্যাপারটা কি!
সত্যি বলব?
সত্যি না তো কি বানিয়ে বলবি?
মেয়েটা তোকে একটু বাজিয়ে দেখতে চাইছে। তোর চেহারাটা খ্যাদা বেঁাচার ওপর মন্দ নয়। মুখে একটা বোকাবোকা ভালমানুষী আছে, যা থেকে তোকে অনেস্ট বলে মনে হতে পারে। তবে আমি এটাও বিশ্বাস করছি যে, তুই এখনও ওর প্রেমে পড়িসনি। পড়লে তোর গলা শুনেই আমি বুঝতে পারতাম।
পড়িনি। আর বেশিদূর এগোতেও চাই না। নেমন্তন্নটা কি কাটিয়ে দেবো?
তা কেন? যা না। তবে সব ইনফর্মেশন না নিয়ে কিছু করে বসিস না।
আমি কি সেরকম লোক?
তুই কিরকম লোক? বোকারা কত অকাজ করে ফেলে। মেয়েটার নাম কি?
রশ্মি রায়।
নামটা তো বেশ!
মেয়েটাও বেশ।
তবু তোর পছন্দ নয়?
পছন্দ নয়তো বলিনি! তবে আমি প্রেমে পড়িনি।
চারুশীলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, তোর জন্য এই কারণেই আমার মাঝে মাঝে বড় দুঃখ হয়।