জাহিরা এল সাত মিনিটের মাথায়। একটু মোটাসোটা আহ্লাদি চেহারা। পরনে সবুজ রঙের শালোয়ার কামিজ, মাথার চুল বব করা, মুখে চোখে একটু উদ্বেগের ছাপ।
প্লিজ, আমি কিন্তু এক্সপোজও হতে চাই না মিস্টার দাশগুপ্ত।
ঠিক আছে। বলুন, আগে একটা কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবেন কি?
না, আমি ওসব খাই না। দেখছেন না ফ্যাট হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে জল আছে।
কাঁধের চামড়ার ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল বের করে জল খেল জাহিরা। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশের বেশি নয়। খুব ফরসা।
শবরের দিকে চেয়ে একটু নার্ভাস হাসি হেসে বলল, পরশু কামনার সঙ্গে দেখা হতেই বলেছিল, আপনি ওকে পুছতাছ করেছেন।
হ্যাঁ।
আপনি ওকে কেন জেরা করেছেন মিস্টার দাশগুপ্ত?
উনি একজন নেবার বলে। ভিকটিমের নেবারদের জেরা করতেই হয়।
দেখুন, কামনা সম্পর্কেই আমি দু-একটা কথা বলতে চাই।
বলুন না।
আমি আর কামনা একই ব্যান্ডে আছি। আমি কম্পোজার।
তা হলে তো কামনাকে ভালই চেনেন?
হ্যাঁ।
কামনার সবই আমি জানি। ও বীরেন সানার সঙ্গে থাকে।
হ্যাঁ।
আপনি হয়তো জানেন না সি ইজ মিলকিং সানা। কামনা ওকে রেগুলার ব্ল্যাকমেল করে।
সেটাই স্বাভাবিক।
আমি অবশ্য একথাটাই বলবার জন্য আসিনি। গত মাসে বাইশ তারিখে আমরা মুম্বাই যাই। আমরা সাধারণত মুম্বাইতে সস্তা হোটেলে উঠি। কারণ আমাদের তেমন পয়সা নেই। আমাদের ব্যান্ড এখনও তেমন দাঁড়ায়নি। কিন্তু আমরা হোটেলে ওঠার পরই কামনা এক আত্মীয়ের বাড়ি থাকবে বলে চলে যায়। কোথায় যায় তা আমরা জানি না। শুধু বলে গিয়েছিল মহালক্ষ্মীতে থাকবে।
তারপর?
অবশ্য প্রোগ্রামে ঠিকঠাকই চলে আসত। আমরা কিছু সন্দেহ করিনি। কিন্তু একদিন আমি ওকে হোটেল তাজ থেকে বেরোতে দেখি।
তাজ?
হ্যাঁ।
সঙ্গে কেউ ছিল?
না। ও বেরিয়ে এসে ট্যাক্সি ধরল দেখলাম।
আর কিছু?
হ্যাঁ। সেটাই ইম্পর্ট্যান্ট। আমরা সাধারণত ট্রেনেই ট্রাভেল করি। কারণ আমাদের পয়সা নেই। ট্রেনে এবং থ্রি টায়ারে। যেদিন আমাদের ফেরার ট্রেন ধরার কথা তার আগের দিন সকালে কামনা আমাদের হোটেলে এসে পিউ নামে একটা মেয়েকে ডেকে নিয়ে গিয়ে একটা প্লেনের টিকিট দিয়ে বলল, পরদিন বিকেলের ফ্লাইটে তার কলকাতায় ফেরার কথা কিন্তু সে কোনও বিশেষ কাজে সেদিনই চলে আসবে। তাই টিকিটটা নিয়ে পিউ যেন প্লেনে চলে যায়। ব্যাপারটা আমরা কেউ জানতাম না।
তা হলে কামনা আগের দিনই চলে এসেছিল?
তাই তো জানি। তবে আমি শিয়োর নই। এই ইনফর্মেশনটা দিয়ে কি আমি কোনও অন্যায় করলাম?
না। আপনাদের ব্যান্ডে অন্যরাও কি এটা জানে?
না। পিউ ছাড়া আর কারও জানার কথা নয়। কারণ পিউকে ব্যাপারটা গোপন রাখতে বলা হয়েছিল। পিউ আমাদের হঠাৎ বলল যে আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না। মহালক্ষ্মীতে কামনার আত্মীয়ের বাড়িতে দু’দিন গিয়ে থাকবে। ফলে ওর টিকিট ক্যানসেল করা হয়। পরদিন পিউ মালপত্র নিয়ে চলে যায়। কিন্তু কলকাতায় ফিরে আসার পর আফটার দি মার্ডার পিউয়ের বোধহয় একটু অস্বস্তি হতে থাকে। ও আমাকে ফোন করে ব্যাপারটা জানায়।
আপনাকে কেন?
পিউ আমার খুব বন্ধু।
পিউকে কোথায় পাওয়া যাবে?
সে ভীষণ ভিতু মেয়ে। আমি ওকে বলেছিলাম পুলিশকে জানাতে। শুনে ওর মুখ শুকিয়ে গেল।
আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
নো প্রবলেম। ও বাইরেই পঁড়িয়ে আছে। ওর মোবাইল ফোনের নম্বর দিচ্ছি। ডায়াল করলে চলে আসবে।
শবর ডায়াল করে বলল, কোনও ভয় নেই, চলে আসুন।
খুব শীর্ণ গলায় পিউ বলল, আসব?
হ্যাঁ।
.
আপনার স্টেটমেন্ট আপনি নিজেই সংশোধন করবেন কি কামনাদেবী?
তার মানে?
মানে খুব সহজ ও সরল। আপনি আমার কাছে যা বলেছেন তার সব সত্যি নয়।
আমি তো সত্যিই বলেছি।
শুভ্র দাশগুপ্তের সঙ্গে আপনার কতকালের সম্পর্ক?
কামনা চুপ
আপনি না বললেও আমরা তো জানবই। খামোখা পুলিশের টর্চার সহ্য করবেন কেন? আমাদের মেয়ে পুলিশ যথেষ্ট ট্রেনড।
বেশি দিনের নয়।
কতদিনের?
ছয়-সাত মাস।
আর ইউ ইন লাভ?
হ্যাঁ। শুভ্রকে তো নেহা কিছুই দেয়নি।
আপনি দিয়েছেন?
শুভ্রকে আমি সব দিয়েছি। একটা মেয়ের পক্ষে একজন পুরুষকে যা যা দেওয়া সম্ভব।
শুভ্রবাবু আপনাকে কী দিয়েছেন?
সব।
নেহা কি বাধা দিয়েছিল?
নেহা ওয়াজ আ বিচ।
দোষটা কী?
দোষ? খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। আমি তো খারাপ, বড়লোকের কেপট হয়ে আছি। কিন্তু সেটা পেটের দায়ে, কেরিয়ারের দায়ে। আর নেহা যা করত তা স্বেচ্ছাচার, শুভ্র বাইরে গেলে ও ওর ওই প্রফেসর নিরুপম লাহিড়ী থেকে শুরু করে এক-একদিন এক একজনের সঙ্গে মেলামেশা করত।
কিন্তু শুভ্রবাবু বলেন উনি নাকি সেক্সি ছিলেন না।
শুভ্র ঠিকই বলে, সি ডিজলাইকড শুভ্র। তাই ফ্রিজিডনেসের ভান করত। আপনি নেহাকে খুব সামান্যই চেনেন।
আপনি মুম্বাইতে শুভ্রবাবুর সঙ্গে তাজ-এ ছিলেন?
ছিলাম।
আর কোথাও?
মোট তিনবার আমরা বাইরে থেকেছি। তিন-চারদিন করে।
এই ফ্ল্যাটে?
কখনও সখনও। আই লাভ হিম।
নেহাকে মারতে হল কেন?
নেহাকে আমি মেরেছি কে বলল। কোনও প্রমাণ আছে?
না।
তা হলে বলছেন কেন?
প্রমাণ পাওয়া যাবে। আপনি স্বীকার না করলে আমার পরিশ্রম বাড়বে, এই যা।
পরিশ্রম করুন। বিনা পরিশ্রমে কেস সলভ হবে বলে ভাবছেন কেন?
থ্যাঙ্ক ইউ ফর দি সাজেশন, পরিশ্রম আমি করব সন্দেহ নেই, কিন্তু যতদিন সলভ না হচ্ছে ততদিন যে আপনাকে পুলিশ কাস্টডিতে থাকতে হবে।