আপনি কি ব্যাপারটা বিশ্বাস করেননি?
এখন আর এই প্রশ্ন করে কী লাভ? শি ইজ বিয়ন্ড এভরিথিং।
আর একটা কথা।
বলুন না।
রিগার্ডিং কামনা আহুজা।
হ্যাঁ। কী জানতে চান?
কামনা কি কখনও আপনার সঙ্গে কলকাতার বাইরে দেখা করেছে?
সে কী? কামনা কেন দেখা করবে? মেয়েটার সঙ্গে আমার খুব সামান্যই চেনা। এসব কী বলছেন।
কতগুলো ব্যাপার পরিষ্কার করে নেওয়ার জন্যই প্রশ্ন করতে হয়। আপনি কি জানেন যে কামনা আহুজা আপনার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় একই সময়ে একই কলেজে পড়ত?
না তো। তবে তাতেই বা কী?
এটা খুবই স্বাভাবিক যে তারা পরস্পরের চেনা। অথচ কামনা বলছে সে নেহা মজুমদারকে চিনত না। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
হতেই পারে।
কামনা কি কখনও আপনার ফ্ল্যাটে আসেনি?
আমি তো জানি না। কখনও দেখিনি।
আপনি যখন বাইরে যেতেন অর্থাৎ ট্যুরে তখন নেহা কি এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন?
সবসময়ে নয়। কখনও থাকত, কখনও বাপের বাড়ি যেত। এ বিষয়ে কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না।
আপনার কাজের লোক নেই?
ডোমেস্টিক সারভেন্ট? হ্যাঁ, তা আছে। তবে আমি তাদের চিনি না। হোলটাইম কাউকে রাখা হত না বলেই জানি। এসব নেহার ডিপার্টমেন্ট। যতদূর শুনেছি সকালের দিকে একজন এসে ঘরদোর পরিষ্কার করে দিয়ে যেত।
ব্যস?
হ্যাঁ। আমাদের রান্নাবান্নার ঝামেলা ছিল না। কারণ আমি সকালে একটা সিরিয়াল খেয়ে বেরিয়ে যাই। নেহাও ব্রেকফাস্ট করত না, শুধু ফলের রস খেত। দুপুরে আমি অফিসে লাঞ্চ করতাম। নেহাও বাইরে কোথাও খেয়ে নিত।
রাত্রে?
ডিনার আমরা তো রোজই বাইরে করতাম। কখনও নেহা আর আমি একসঙ্গে। কখনও আলাদা। প্রায়ই কোথাও না কোথাও ডিনারের নেমন্তন্ন থাকতই। আমরা একেবারেই ইন্ডোর পিপল ছিলাম না।
ফ্যামিলি লাইফ ছিল না বলছেন?
অনেকটা তাই। ব্যাপারটা ভাল করে তৈরি হয়নি। হয়তো আরও কিছুদিন পর হত।
এরকম জীবনযাপন করতে কি ভাল লাগে?
তা বলিনি। কিন্তু পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়েও তো নিতে হবে। সকলের লাইফ স্টাইল তো একরকম নয়।
আমি জানতে চাই, আপনি এরকম সিস্টেম পছন্দ করতেন কিনা।
না মিস্টার দাশগুপ্ত। করতাম না।
তবু বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছিলেন?
সে তো অ্যাডজাস্ট করতেই হয়।
নেহার বাপের বাড়ির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীরকম?
খারাপ কিছু নয়। তবে প্রত্যেকেই ব্যস্ত বলে দেখাসাক্ষাৎ ছিল না। মাঝে মাঝে ওঁরা ডিনারে ডাকতেন।
নেহার মৃত্যুর পর সম্পর্কটা কীরকম দাঁড়িয়েছে?
এই তো মাত্র পঁচিশ দিন আগে নেহা মারা গেছে, এর মধ্যে আর সম্পর্কের কী বদল হবে?
আপনি কি জানেন যে, নেহার বাবা ইনভেস্টিগেশনের জন্য প্রাইভেট গোয়েন্দা লাগিয়েছেন?
জানি। দু’জন আমার কাছে এসেছিল।
তারা কী বলছে?
কিছু প্রশ্ন করেছিল। আমি যা জানতাম বলেছি।
এবার নেহা সম্পর্কে কয়েকটা কথা।
বলুন।
নেহা কীরকম টাইপের মেয়ে? সেক্সি, কোন্ড, ক্রুয়েল বা অন্যরকম?
ফ্র্যাঙ্কলি নেহা সম্পর্কে আমি তেমন স্টাডি করার সময় পাইনি। শুধু বলি সি ওয়াজ এ বিট প্যাসিভ ইন সেক্স। মনে হত ব্যাপারটা খুব পছন্দ করে না। মুডি একটু ছিল। ক্রুয়েল কিনা তা বলতে পারব না।
ওর কোন গুণটা আপনাকে অ্যাট্রাক্ট করত?
অ্যাট্রাকশন? বলা মুশকিল। তবে আমি ওকে অপছন্দ করতাম না।
ও আপনাকে?
প্যাশনেট ছিল না, তবে আমাকে ঘেন্নাও করত না।
ঝগড়া হত?
কী নিয়ে?
এনিথিং।
না, ঝগড়াও তেমন হয়নি। মাঝেমধ্যে একটু আধটু অল্টারকেশন, দ্যাট মাচ।
মিস্টার দাশগুপ্ত, আপনি খুব আলগা উত্তর দিচ্ছেন।
তা হবে। কী বললে ভাল হয় তা বুঝতে পারছি না।
নেহার মৃত্যুতে আপনার কতখানি শক হয়েছে?
খুব।
কিন্তু আপনি ভেঙে পড়েননি।
না। লোকে বলে আমি শক্ত ধাতের মানুষ।
আপনার বয়স কত?
উনত্রিশ।
লাস্ট ট্রিপে আপনি মুম্বাইতে কতদিন ছিলেন?
চারদিন, না পাঁচদিন।
পাঁচ দিনই তাজ-এ ছিলেন?
হ্যাঁ।
বাঙ্গালোরে কতদিন?
দু’দিন। তারপরই নেহার খবর পেয়ে চলে আসতে হয়।
গত পঁচিশ দিনে আপনি কোনও ট্যুরে গেছেন কি?
হ্যাঁ। লাস্ট উইকে দিল্লি যেতে হয়েছিল।
কোথায় ছিলেন?
মেরিডিয়েনে।
কতদিন?
সাত দিন।
.
আপনি কে বলছেন?
আমি আমার নামটা বলতে চাইছি না।
কেন বলুন তো?
আপনি যদি কথা দেন আমাকে কোনও রকমের ঝামেলায় জড়াবেন না তা হলে বলতে পারি।
সেরকম কথা কি দেওয়া যায়?
আমি যে ভয় পাচ্ছি।
আপনাকে আমার ফোন নম্বর কে দিয়েছে?
আপনি নেহা মার্ডার কেস ইনভেসটিগেট করছেন জেনে আমি লালবাজারে ফোন করে আপনার লাইন পেলাম।
হ্যাঁ, ঠিক আছে। এই মার্ডার কেসে আপনি কোনও সাহায্য করতে পারেন কি?
তা জানি না। তবে আপনাকে দু-একটা ইনফর্মেশন দিতে পারি। সেগুলো আপনার কাজে লাগতেও পারে। আমি কামনা আহুজাকে চিনি।
কীরকম চেনেন?
ভালই চিনি।
এবার বলুন।
আমি আপনাকে যা বলব তা থেকে আপনি আমার আইডেন্টিটি ধরে ফেলবেন। আমাকে আগে কথা দিন যে, আপনি এই কেসে আমাকে ড্র্যাগ করবেন না।
কিন্তু
কথা না দিলে আমি লাইন কেটে দেব।
কথা দিলে যে কথা রাখব তার কি নিশ্চয়তা আছে?
আমি শুনেছি আপনি এক কথার মানুষ। এ ভেরি টাফ ম্যান, এ ভেরি স্টাবোর্ন ম্যান।
ঠিক আছে। কথা দিচ্ছি।
আমি খুব কাছেই আছি। বিবাদী বাগে। দশ মিনিটের মধ্যেই আমি আপনার দপ্তরে পৌঁছে যাব। আমার নাম জাহিরা। সিকিউরিটিকে বলে রাখবেন একটু।
ওকে।
ফোনটা রেখে শবর দাশগুপ্ত একটা কাগজে জাহিরা কথাটা লিখে রাখল। তারপর সিকিউরিটির লোককে ফোনে নামটা বলে দিল।