ওটা যুক্তি হল না, হল অজুহাত।
নিরুপমবাবু সম্পর্কে কোনও স্ক্যান্ডাল থাকলে তা কলেজে খোঁজ নিলেই তো জানা যাবে। হোয়াই আর ইউ গ্রিলিং মি?
নেহা কীভাবে খুন হয় আপনি জানেন কি?
টিভিতে সেই রাতেই খবরে ওটা দেখানো হয়েছে। পরদিন খবরের কাগজেও ফাস্ট পেজ-এ ছিল। দুপুরবেলা ফ্ল্যাটে ঢুকে কেউ ওকে গলায় ফাঁস জড়িয়ে খুন করে।
পুলিশ আপনার কাছে আসেনি?
এসেছিল। আমি প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। ওঁরা স্টেটমেন্ট লিখে নিয়ে চলে গেছেন।
আপনি সেই রাতে একা এই ফ্ল্যাটে ছিলেন?
হ্যাঁ।
আপনার কি সত্যিই এই ফ্ল্যাটে নেহার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়নি?
না। সবই তো আপনাকে বলেছি। আই অ্যাম এ ভেরি বিজি ওয়ার্কিং গার্ল। ফ্ল্যাটে আর কতক্ষণ থাকি? ফিরতে অনেক সময়ে মধ্যরাত হয়ে যায়।
আপনি কখনও চাকরি করেননি?
না, সেই অর্থে করিনি।
তার মানে?
বীরেন সানার ব্যাবসার ব্যাপারে আমি কিন্তু সাহায্য করি। তার জন্য আমাকে অবশ্য অফিসে যেতে হয় না। ওঁর একটা কম্পিউটার এখানে আছে। অন লাইন কিছু অফিস ওয়ার্ক করে দিই। সেইজন্য একটা অ্যালাউন্স পাই।
সেটা কত?
বারো হাজার টাকা।
খুব কম নয় তো? কীরকম কাজ? বে
শিরভাগই করেসপন্ডেস, সেক্রেটারিয়াল ওয়ার্ক।
সানা কি মাত্র বারো হাজার টাকাই দেয়?
কামনা ফের একটু হাসল, তা তো বলিনি, বারো হাজার টাকা একটা ফিক্সড অ্যালাউন্স। তা ছাড়া হি পেইজ মি।
এই জীবনযাপন করতে আপনার ভাল লাগে?
না। কিন্তু এটা তো জাস্ট একটা স্টেপিং স্টোন। দিস ইজ নট দি এন্ড অফ দি রোড। আমি যেদিন সাকসেস পাব সেদিন আর এসব উচ্ছবৃত্তি করব কেন? বীরেন সানার প্রতি আমার কোনও সেন্টিমেন্টাল অ্যাটাচমেন্ট তো নেই।
সেন্টিমেন্টাল অ্যাটাচমেন্ট তবে কার সঙ্গে আছে?
আমার কাজের সঙ্গে, আমার গানের সঙ্গে।
ব্যস?
হ্যাঁ।
কোনও পুরুষমানুষের সঙ্গে নেই?
প্রেমের কথা বলছেন তো! না, ওসব নেই। কম বয়সেই আমাকে শরীর কাজে লাগাতে হয়েছে। বীরেন সানা প্রথম নয়। আমাদের ব্যান্ডের যিনি টপ ম্যান তাকে খুশি করতে হয়েছিল। যাদের শরীর বিলোতে হয় তাদের প্রেম খুব সহজে আসে না।
এত সব দিয়ে যা পেয়েছেন তা কি আপনাকে খুশি করে?
না। আই হ্যাভ মাইলস টু গো৷ কিন্তু এই যে আপাতত আমি বেশ ভালভাবে বেঁচে আছি, টাকাপয়সার টানাটানি নেই এবং মোটামুটি একটা ব্রাইট ফিউচার দেখতে পাচ্ছি এটাও তো কম নয়।
আপনি কি শিয়োর যে একদিন আপনি খুব বড় পপ গায়িকা হবেন?
আমি তো তাই হতে চাই। না হতে পারলে হয়তো সুইসাইড করব।
আগেই সুইসাইডের কথা ভাবছেন কেন?
আমি প্ল্যান্ড লাইফে বিশ্বাস করি। তাই ওটাও ভেবে রেখেছি। কিন্তু তার আগে আমি আমার নিজের ব্যান্ড ক্রিয়েট করছি। আমার দলে কয়েকটা দারুণ ট্যালেন্টেড ছেলেমেয়ে এসে গেছে। ব্যান্ড ক্রিয়েট করার জন্য অনেক টাকার দরকার। সেটাই প্রবলেম। আমি সেইজন্য টাকা জমাচ্ছি।
কত টাকার দরকার?
অনেক। মিউজিক্যাল হ্যান্ডস, ইনস্ট্রমেন্ট, একটা রিহার্সাল রুম এবং যোগাযোগ। ফান্ডা থাকলে ব্যান্ডকে লোকে ডাকবে কেন বলুন। ট্যালেন্টেড আর্টিস্টরা টাকাও তো অনেক চায়।
তা হলে ওটাই আপনার স্বপ্ন?
প্যাশন, ওটাই আমার প্যাশন।
.
এই ফ্ল্যাটে আপনি কতদিন আছেন?
এক বছরের ওপর।
এটা কি আপনার নিজের ফ্ল্যাট?
না। কোম্পানি লিজ।
আপনার বাড়ির লোকজন?
আমার বাবা-মা কানপুরে থাকেন। চার পুরুষের বাস। আমরা কানপুরের বাঙালি।
তা হলে তো আপনার বাংলা ভুলে যাওয়ার কথা।
হ্যাঁ, এখনও বাংলা লিখতে বা ভাল পড়তে পারি না। তবে মা কলকাতার মেয়ে বলে বলতে পারি।
আপনি কলকাতায় কি চাকরি করতেই এসেছেন?
হ্যাঁ। কানপুরে আমাদের মার্বেল পাথরের ব্যাবসা। সেটাও চার পুরুষের ব্যাবসা। বলতে গেলে আমিই প্রথম চাকরি করতে এসেছি।
কেন? ব্যাবসা ভাল লাগে না?
লাগে। হয়তো শেষ অবধি ব্যাবসাতেই ফিরে যাব। এখনও কিছু ভাবিনি।
কয় ভাইবোন?
আমি এক সন্তান। সেইজন্য কানপুরে ফিরে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে।
আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আপনার মা বাবা কেউ আসেননি?
না। মা বাতে পঙ্গু। নড়াচড়াই করতে পারেন না। বাবাও খুব সুস্থ নন, হার্ট পেশেন্ট।
কানপুরে আপনাদের আর কে কে আছে?
অনেকে। চার পুরুষের বসবাস বলে আমাদের সেখানে জ্ঞাতিগুষ্টি অনেক।
একসঙ্গে থাকেন কি?
না। সবাই আলাদা।
নেহা মজুমদারের সঙ্গে আপনার বিয়ে হয় কতদিন আগে?
এক বছর তিন মাস।
লাভ ম্যারেজ?
না। নেগোশিয়েটেড ম্যারেজ।
আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
কানপুরেই। আইআইটি থেকে পাশ করে বেরোনোর পর বাঙ্গালোর, তারপর ক্যালিফোর্নিয়া।
সিলিকন ভ্যালি?
হ্যাঁ।
কলকাতায় আছেন কতদিন?
বছর দেড়েক।
শুনতে পাই কলকাতায় নাকি টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের প্রসপেক্ট খুব খারাপ। এখানে চাকরির স্কোপও কম বলে বদনাম আছে।
আমি গোটা কলকাতার কথা তো জানি না। তবে আমার কোম্পানি তো সল্ট লেকে বিরাট অফিস করেছে। কাজও তো ভালই হয়। তবে কলকাতা বেসড হলেও আমাকে সারা ভারতবর্ষেই ঘুরে বেড়াতে হয়।
নেহা মজুমদারের সঙ্গে আপনার বিয়ে এবং সম্পর্কের কথা কিছু বলুন।
ওদের পদবি মজুমদার হলেও ওরা বদ্যি। আসল পদবি সেন। আমাদের ফ্যামিলিতে ওসব খুব মানা হয়। এখনও আমাদের ক্ল্যানে যত ছেলেমেয়ে আছে তাদের অধিকাংশেরই বিয়ে হয়েছে বাঙালি পরিবারে এবং সবর্ণে। নেহার সঙ্গে আমার বিয়ের সম্বন্ধ এনেছিলেন আমার মামা জগৎ সেন।