কেন দেব না?
নেহা দাশগুপ্তের স্বামী শুভ দাশগুপ্ত। আপনি কি তাকে চেনেন?
চিনি।
কীভাবে?
এই ফ্ল্যাট নিয়ে উনি একটা অবজেকশন দিয়েছিলেন। সেটা নিয়ে বেশ একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কীরকম?
অবশ্য উনি একা নন। আরও কয়েকজন রেসিডেন্ট জোট পাকিয়ে কমিটিকে অ্যালার্ট করেন। ওঁদের কমপ্লেন ছিল যে, এই ফ্ল্যাটে অবৈধ কাজটাজ হয়। গানবাজনার ফলে ডিস্টার্বেন্স হয়। কমিটি মিস্টার সানাকে ডেকে পাঠায়। খুব হইচই হয়েছিল।
এটা কতদিন আগেকার ঘটনা?
মাস চার-পাঁচ হবে। সেই মিটিং-এ আমাকেও ডেকে পাঠানো হয়।
আপনি কি সেখানে স্বীকার করেছিলেন যে, আপনার সঙ্গে মিস্টার সানার এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশন আছে।
না। তাতে মিস্টার সানা বিপদে পড়তেন। আমি বলেছিলাম যে আমি এই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকি।
কথাটা সবাই বিশ্বাস করেছিল কি?
না। খুব চেঁচামেচি হয়েছিল। শুভ্র দাশগুপ্ত সবচেয়ে বেশি হোস্টাইল ছিলেন।
ব্যাপারটা মিটল কীভাবে?
মেটেনি তো! বীরেন সানাকে বলা হয়েছে আমাকে সরিয়ে দিতে হবে। উনি রাজি হয়েছেন। কমিটি ছয় মাস সময় দিয়েছে।
শুভ্র দাশগুপ্তকে কি আপনি ওই একবারই দেখেছেন?
না। দু-চারবার দেখা হয়েছে।
কীভাবে?
লিফটে, কিংবা ল্যান্ডিং-এ।
শুধু দেখা?
হ্যাঁ।
কোনও কথা হত না?
ওই হাই বা হ্যালো।
উনি কি আপনার প্রতি আর হোস্টাইল ছিলেন না?
না।
সেটা কীভাবে হল? হাউ ডিড ইউ রিকনসাইল?
আমার ওপর পারসোনাল গ্রাজ তত ছিল না। মিস্টার সানার ওপর হয়তো ছিল। তা ছাড়া আমি চলে যাব বলেই হয়তো ওঁর আর রাগ ছিল না।
লোকটিকে আপনার কেমন লাগে?
কিছু খারাপ তো নয়।
এখন একটা কথা। আপনি এখানে যে জীবনযাপন করেন সেটা আপনার মা বাবা অনুমোদন করেন কি?
আমার মা একসময়ে বারসিঙ্গার ছিলেন। মেয়েদের পবিত্রতা নয়, ক্যারিয়ার এবং আত্মনির্ভরশীলতায় বিশ্বাসী। তাই মা তেমন তপত্তি করেন না। তিনি বলেন, ইফ আই অ্যাটেন সাকসেস তা হলে আর এসব কথা কেউ মনেও রাখবে না। সাকসেস হল আসল কথা, আর তার জন্য সবকিছুই করা যায়।
বাবারও তাই মত?
না। বাবা প্রাচীনপন্থী। তবে পিউরিটান নন। অ্যাপ্রুভ না করলেও কখনও জোর খাটাননি বা চেঁচামেচি করেননি। চুপচাপ থাকেন। আমার বাবা একজন শান্তিপ্রিয় ঠান্ডা মানুষ।
এবার শুভ্র দাশগুপ্তর কথায় আসা যাক। আপনার সঙ্গে তার হাই-হ্যালোর বেশি কোনও সম্পর্ক ছিল না, তাই তো বলছেন?
হ্যাঁ।
শুভ্র দাশগুপ্ত মাঝেমাঝেই বাইরে যেতেন। অফিশিয়াল ট্যুর। মুম্বাই, বাঙ্গালোর, দিল্লি, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, চণ্ডীগড়। আপনিও প্রায় ট্যুরে যান, তাই না?
হ্যাঁ।
এইসব টুরে কখনও কলকাতার বাইরে শুভ্রবাবুর সঙ্গে আপনার দেখা হয়নি?
না তো!
একটু ভেবে বলুন।
ভাববার কী আছে বলুন।
মিস কামনা আহুজা, এ প্রশ্নটা শুনে আপনার মুখের ভাব একটু পালটে গেল কিন্তু।
আপনি কী মিন করছেন?
আপনি একজন অত্যন্ত অ্যাট্রাক্টিভ মহিলা। তার ওপর আপনি একজন বাডিং পপ সিঙ্গার, মুক্তমনা, বীরেন সানার সঙ্গে প্রকাশ্যেই অবৈধ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। আপনার লুকোবার কিছু নেই বলছেন। তবু লুকোতে চাইছেন কেন?
আমি কিছু লুকোচ্ছি না।
লুকোচ্ছেন কামনাদেবী।
না। আপনি ভুল সন্দেহ করছেন।
তাই বুঝি?
ওকে। আপনি কলকাতার কোন কলেজে পড়তেন?
আমরা সব ভাইবোনই একই কলেজে পড়েছি।
সেটা কি…কলেজ?
হ্যাঁ।
আপনি কি আর্টসের ছাত্রী?
হ্যাঁ।
গ্র্যাজুয়েট?
হ্যাঁ। পরে আমি মাস্টার্সও করেছি।
নিরুপম লাহিড়ী কি আপনার মাস্টারমশাই?
হা, উনি ইতিহাস পড়াতেন।
আপনি কি জানেন যে নেহা দাশগুপ্তও ওই কলেজের ছাত্রী?
না। নেহা অন্য ব্যাচের হতে পারে।
তখন উনি নেহা মজুমদার ছিলেন।
না, চিনতাম না।
ভাল করে ভেবে বলছেন তো?
ব্যাচটা দেখলেই তো হয়।
ওসব দেখা হয়ে গেছে। আপনি নেহার পরের বছর পাশ করেন। সুতরাং আপনার ওকে চেনা উচিত। বিশেষ করে উনিও গানবাজনার লোক।
আমি কলেজ লাইফ থেকেই প্রোগ্রাম আর ট্যুর নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। কলেজে কামাইও হত খুব, ফলে হয়তো নামটা কানে আসেনি।
রিগার্ডিং নিরুপম লাহিড়ী।
হিস্ট্রি প্রফেসর? তার সম্পর্কে কী বলতে হবে?
লোকটা কেমন?
তা কী করে জানব? আপনাকে তো বললাম আমি খুব নিয়মিত ক্লাস করতাম না।
বলেছেন, অথচ কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, আপনি কলেজের সোশ্যাল ফাংশনে গান গেয়েছেন। ইউনিয়নের অ্যাক্টিভিটিতেও ছিলেন। আপনার হিস্ট্রিতেও অনার্স ছিল, পরে আপনি অনার্স ছেড়ে দিয়ে পাশ কোর্সে পাশ করেন।
হ্যাঁ, এসব ইনফর্মেশন ঠিকই আছে।
নিরুপমবাবু সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না এটা কি হতে পারে?
কী জানব বলুন। ক্লাসে দেখা হত, এইমাত্র। উনি ধুতি-পাঞ্জাবি পরতেন, বেশ ভাল কণ্ঠস্বর, পড়াতেনও খুব ভাল।
ওঁর সম্পর্কে কোনও রটনা বা কানাঘুষো কানে আসেনি?
তেমন কিছু নয়।
উনি কি একটু মেয়ে-ঘেঁষা ছিলেন?
এবার কামনা একটু মৃদু হাসল, বলল, পুরুষেরা বেশিরভাগই তো তাই। আমি ওসব নিয়ে মাথা ঘামাই না।
কিন্তু আমাদের ঘামাতে হচ্ছে। নেহা মজুমদারের সঙ্গে ওঁকে জড়িয়ে একটা রটনা আছে, শুনেছেন কি?
না।
একেবারেই না?
আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না।
কামনাদেবী, আপনি ঠিক মুখ খুলতে চাইছেন না। কেন বলুন তো?
দেখুন, আমি আমার স্ট্রাগল নিয়ে আছি। আমাকে কেরিয়ার তৈরি করতে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। আমার একটা অ্যামবিশন আছে। তার বাইরে আর কিছু নিয়ে আমার মাথা ঘামানোর সময় হয় না।