সামান্যই। বিয়ের রাতে পরিচয় হয়েছিল।
কীরকম লেগেছিল?
ভালই তো। চেহারা খুব হ্যান্ডসাম নয়, কিন্তু ঠিক আছে। শুভ্র দাশগুপ্ত খুবই ভাল চাকরি করে বলে শুনেছি। অবিশ্বাস্য নাকি তার বেতন এবং পৈতৃক সম্পত্তিও প্রচুর।
হ্যাঁ, আপনার ইনফর্মেশন নির্ভুল, শুভ দাশগুপ্ত খুবই ব্রাইট ইয়ং ম্যান। ইউ ডোন্ট ফিল জেলাস অ্যাবাউট হিম? ডু ইউ?
নিরুপম করুণ হেসে বলল, আপনারা আমাকে ফাঁসিতে লটকানোর জন্য খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দেখছি। শুভ্র আইটি জিনিয়াস বলে আমার জেলাস হওয়ার কী আছে? আমি তো ও লাইনের লোক নই।
বুঝেছি। কিন্তু সামান্য একটা প্রবলেম আছে।
জানি। নেহার ডায়েরি।
হ্যাঁ।
ডায়েরিতে নেহা কী লিখে রেখেছে তা আমি জানি না। যে কেউ ব্যক্তিগত ডায়েরিতে যা খুশি লিখতে পারে। তার জন্য আমার কী দায় বলুন তো?
সে যে আপনার কথাই লিখেছে।
তাও শুনেছি এবং ভীষণ অবাক হয়েছি। আমি ওর ইতিহাসের অধ্যাপক, এ ছাড়া নেহার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল না।
ছিল নিরুপমবাবু। শেষ যে এক্সকারশনটায় আপনি নেহাকে রাজগিরে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই ট্রিপে নেহার যাওয়ার কথাই নয়। নেহা তখন পাশ করে বেরিয়ে গেছে।
আমি নেহাকে নিয়ে গেছি কে বলল? আর অধ্যাপক তো আমি একাই ছিলাম না, আরও দু’জন ছিল।
সব জানি। নেহার ওই গ্রুপে থাকার কথা নয়, তবু সে গেল কেমন করে এবং কেন?
ইজি। নেহা যেতে চেয়েছিল এবং নিজের সব খরচ নিজেই বিয়ার করেছিল বলে আপত্তি ওঠেনি।
কেন গিয়েছিল?
সিম্পল ইন্টারেস্ট, হয়তো রাজগির ওর প্রিয় জায়গা।
ঠিক আছে। মেনে নিচ্ছি। কিন্তু খিঁচ থেকে যাচ্ছে।
মুশকিলে ফেললেন। যাই হোক, আমি কারণটা জানি না।
কারণটা হয়তো আপনি।
অত সুন্দরী ধনীকন্যাকে যদি আকর্ষণ করে থাকি তা হলে তো সেটা সাংঘাতিক বাহাদুরি। তাই না? অ্যাম আই অ্যাট্রাক্টিভ? ডোন্ট লাই প্লিজ।
.
আপনি কি নেহা দাশগুপ্তকে চিনতেন?
না।
আপনার ঠিক নীচের ফ্ল্যাটে তিনি থাকতেন।
হ্যাঁ, শুনেছি।
কবে শুনেছেন?
উনি মার্ডার হওয়ার পর।
সেদিন আপনি কি এই ফ্ল্যাটে ছিলেন?
না। আমার কাজটা ঘুরে বেড়ানোর। আমি তখন মুম্বাইতে ছিলাম। তবে সেইদিন রাতেই ফিরে আসি।
আপনার কাজটা ঠিক কী ধরনের?
আমি একটা কালচারাল গ্রুপের সঙ্গে আছি।
ব্যান্ড মিউজিক?
হ্যাঁ।
বাংলা ব্যান্ড?
বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ। তা ছাড়া প্রয়োজনে অন্য ভাষাতেও আমরা প্রোগ্রাম করি।
এই ফ্ল্যাটে আপনি কতদিন আছেন?
আট মাসের একটু বেশি।
এই ফ্ল্যাটের মালিকের নাম বীরেন সানা। তার কাছ থেকে কি ফ্ল্যাটটা আপনি ভাড়া নিয়েছেন?
বলতে পারেন। উনি আমাকে এখানে থাকতে দিয়েছেন।
তাতে ওঁর স্বার্থ কী?
জাস্ট আউট অব ফ্রেন্ডশিপ।
মিস্টার সানা একজন পয়সাওয়ালা লোক। বিরাট ব্যাবসা। তাই না?
হ্যাঁ।
তার সঙ্গে একজন পপ গায়িকার বন্ধুত্ব হল কী করে?
উনি আমাদের একজন প্যাট্রন।
আপনি কি কলকাতার মেয়ে মিস আহুজা?
না। কলকাতায় ছেলেবেলা থেকে আছি।
তার মানে কি কলকাতায় আপনারা সেটল করেছেন?
না। আমার বাবা এখানে চাকরি করতেন। আমরা ভাইবোনেরা এখানেই পড়াশোনা করেছি। এখানেই বড় হয়েছি। তারপর রিটায়ার করে বাবা দেশে ফিরে গেছেন। ভাইবোনরা স্ক্যাটার্ড। কলকাতায় আমার কোনও বাসা এখন আর নেই।
কিছু মনে করবেননা, আপনার রোজগার কেমন?
আই অ্যাম স্টিল স্ট্রাগলিং ফর আ ফুটহোন্ড। ব্যান্ড মিউজিক, পপ গান এখনও এ দেশে খুব পপুলার নয়, বাজারটা আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে।
তা হলে আপনার চলে কীসে?
চলে যায়। গানবাজনা নিয়ে থাকতেই আমি বেশি ভালবাসি।
মিস্টার সানার বয়স পঁয়তাল্লিশ বা ছেচল্লিশ। আপনার কত মিস আহুজা?
চব্বিশ। আর ইউ হিন্টিং সামথিং? হ্যাঁ
। মিস্টার সানার সঙ্গে আপনার কোনও রোমান্টিক?
ওসব বোগাস ব্যাপার। রোমান্টিক সম্পর্ক কিছু নেই। তবে টু বি ফ্র্যাঙ্ক, উই হ্যাভ সেক্সুয়াল রিলেশন।
তাই বলুন।
নইলে এত বড় ফ্ল্যাটটা উনি আমাকে ছেড়েই বা দেবেন কেন এবং আমার খরচপত্রই বা চালাবেন কেন?
উনি তো বিবাহিত?
হ্যাঁ। তিন ছেলেমেয়ের বাবা।
তা হলে এই রিলেশনটার কোনও ভবিষ্যৎ নেই?
না। অ্যাবসোলিউটলি নো।
এত খোলাখুলি বলার জন্য ধন্যবাদ।
লুকোনোর কিছু নেই তো।
ঘটনার দিন আপনি তা হলে মুম্বাইতে ছিলেন?
সেইদিনই আমি বিকেলের ফ্লাইটে ফিরে আসি। ফ্লাইট লেট ছিল। ব্যাগেজ কালেক্ট করে বাড়ি আসতে অনেক রাত হয়ে যায়। প্রায় দশটা। এখানে এসে দেখি চারদিক থমথম করছে।
এই ফ্ল্যাটে আপনি একদম একা থাকেন?
হ্যাঁ, তবে মাঝে মাঝে মিস্টার সানা থাকেন। পার্টি হয়, আমাদের ব্যান্ডের রিহার্সালও হয় মাঝে মাঝে, তবে মোটামুটি একাই থাকি।
কাজের লোক নেই?
না। এই ফ্ল্যাটটা দু’হাজার স্কোয়ার ফুট। এই হলঘরটা ছাড়া বাকিটা ব্যবহার করা হয় না। আর আমি তো রাতটুকুই থাকি। তাই কাজের লোকটোক নেই। একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে মাঝে মাঝে হলঘরটা পরিষ্কার করে নিই, ব্যস।
রান্নাবান্না?
আমি বাইরেই খাই। ফোন করলে হোম সার্ভিস বাড়িতেও খাবার পাঠিয়ে দেয়। নো প্রবলেম। কিন্তু নেহা দাশগুপ্তর মার্ডারের ব্যাপারে আমার তো কিছুই জানা নেই। আমাকে ক্রস করছেন কেন মিস্টার দাশগুপ্ত? আর ইউ রিলেটেড টু হার? আপনিও দাশগুপ্ত, উনিও।
শবর দাশগুপ্ত মৃদু হেসে বলল, না। নেহা দাশগুপ্তর সঙ্গে আমার কোনও আত্মীয়তা ছিল না। আমি গোয়েন্দা পুলিশ, আমাদের সবরকম খোঁজখবর নিতে হয়। এখন একটা প্রশ্নের সোজাসুজি জবাব দেবেন কি?