হ্যাঁ। আমি ইম্পর্ট্যান্ট সাসপেক্টদের জেরা করার আগে হোমওয়ার্ক সেরে নিই।
সেটা টের পেয়েছি। আমার কোনও লিভ ইন গার্লফ্রেন্ড কখনও ছিল না। আমি কো এডুকেশনে পড়াই বলে কখনও কখনও বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে হয়তো একটু আধটু ইন্টিমেসি হয়েছে। কোনও গুরুতর ব্যাপার নয়।
বিয়ের আগে আপনি এই বাসায় একাই থাকতেন?
হ্যাঁ। ছোট এই বৈঠকখানা আর ভিতরে একটা বেশ বড় শোওয়ার ঘর, একটা কিচেন আর টয়লেট নিয়ে এই ফ্ল্যাটে আমি আছি বছর সাতেক। বইপত্রই আমার সাথি।
কাজের লোক?
আছে। ঠিকে। একজন প্রৌঢ়া। পুরনো লোক। সে-ই রেঁধেবেড়ে ঘরদোর সাফ করে দিয়ে যায়। চাবি তার কাছেই থাকে। খুব বিশ্বাসী।
এখনও আছে?
হ্যাঁ। অনেকটা মা-মাসির মতোই হয়ে গেছে।
বুঝেছি। ব্যাক টু বীথিকাদেবী।
আপনি কি বীথিকাকেও জেরা করেছেন?
না। তবে উনি আমার লিস্টে আছেন। খবর নিয়েছি, উনি দিল্লিতে একটা কনফারেন্সে গান গাইতে গেছেন।
হ্যাঁ। রাহুর ছায়া সরে গেছে। বীথিকা এখন আলো ছড়াচ্ছে।
আপনাদের কোনও সন্তান হয়নি।
না।
কেন?
সন্তানধারণের সময় বীথিকার ছিল না। গান নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
আপনি তার জন্য কোনও জোরাজুরি করেননি?
না। সন্তানের জন্য তাড়া ছিল না। বীথিকার সময় হলে হবে–এরকমই ধরে নিয়েছিলাম।
এবার নেহা সেনের বিষয়ে দু-চারটি কথা।
শবরবাবু, লোকমুখে আপনি কী শুনেছেন জানি না, নেহার সঙ্গে কিন্তু আমার প্রেম ছিল না।
আপনারা একসঙ্গে খাজুরাহোতে একবার, অজন্তা ইলোরায় একবার এবং রাজগিরে আরও একবার এক্সকারশানে গিয়েছিলেন?
ওরকম তো যেতেই হয়। একসঙ্গে বলতে আমি আর নেহাই তো শুধু নয়, আরও একগাদা ছাত্রছাত্রী ছিল। এক্সকারশান মানে স্পট স্টাডি।
আপনাদের সম্পর্কটা ঠিক কীরকম ছিল?
তেমন কিছুই তো ছিল না মিস্টার দাশগুপ্ত। অধ্যাপনার কাজেও আমার প্রায় আট বছর কেটে গেল। হাজার কয়েক ছাত্রী পার করেছি। অধ্যাপকরা ছাত্রীদের সঙ্গে প্রেম শুরু করলে যে কুল পাওয়া যাবে না।
কথাটা খুব ঠিক। তবু এরকম ঘটনা তো ঘটেও যায়।
ঘটে না বলছি না। কিন্তু খুব কম। এতই কম যে ব্যাপারটা চিন্তার বিষয়ই নয়।
নেহার সঙ্গে তা হলে আপনার কিছুই ছিল না।
না। একটু বাস্তব সত্যগুলোকেও দেখুন মিস্টার দাশগুপ্ত। আমি বত্রিশ বছর বয়স্ক একজন মাঝারি মানের অধ্যাপক। ধুতি পাঞ্জাবি পরে ক্লাস নিই। আমার ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। আমার মতো সাদামাটা মানুষের প্রতি নেহার কোনও দুর্বলতা থাকাটাই তো অবাস্তব। আর আমি নিজেও প্র্যাকটিক্যাল মানুষ। অকারণ রোমান্স করতে গিয়ে পা পিছলে পড়বার মতো নির্বোধ নই।
সবই বুঝতে পারছি। কিন্তু খটকাও যে একটা আছে।
কীসের খটকা?
নেহা আপনার প্রেমে নাই পড়তে পারে। কিন্তু আপনার দিক থেকে একতরফা প্রেম হতে তো বাধা নেই।
আপনি কি বলতে চান আমি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বিবাহিতা ছাত্রীকে গলা টিপে মেরেছি? মেরে লাভটা কী হবে বলুন তো? এইজন্যই তো বোধহয় আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন স্বপ্নাকে খুন করার ইচ্ছা আমার হত কিনা। সে না হয় বয়স অল্প ছিল, আবেগ বেশি ছিল বলে এক-আধবার ওরকম ইচ্ছে হয়েও থাকতে পারে। কিন্তু সে বয়সটা তো আমি ছাড়িয়ে এসেছি।
প্রেম কি এত লজিক মেনে হয়?
কম বয়সে লজিক থাকে না, কিন্তু অভিজ্ঞতার পর লজিক আসে। নেহাকে তার বিয়ের পর খুন করাটা কি লজিক্যাল ব্যাপার? নেহা অনেকদিন আগেই আমাকে তার বিয়ের কথা বলেছিল। আমি ওকে অভিনন্দন জানাই। বিয়ের নেমন্তন্নেও আমি গিয়েছিলাম। চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান। নেহার বাবা বোধহয় কোটি টাকার বেশি খরচ করেছিলেন।
তিনি এখন মেয়ের খুনের ব্যাপারে অপরাধীদের ধরার জন্য আরও কোটি টাকা খরচ করতে রাজি। উনি সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য অলরেডি আবেদন করেছেন। মন্ত্রী আমলাদের ধরেছেন। কলকাতার ছয়-সাতজন, প্রাইভেট ডিটেকটিভকেও আসরে নামিয়েছেন।
বাবা হিসেবে করতেই পারেন। বিশেষ করে উনি টাকাওয়ালা বাবা। কিন্তু নেহার মতো একটা ফুটফুটে মেয়েকে খুন করার একটা মোটিভ থাকবে তো। লোকাল থানা থেকে স্পষ্ট করে না হলেও এরকম একটা ইশারা ইঙ্গিত করা হয়েছে। আমি তো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। হ্যাঁ মশাই, আপনারা না গোয়েন্দা পুলিশ? ঘটে কি একটু বুদ্ধি থাকবে না আপনাদের? স্পষ্ট করে বলুন না, নেহাকে আমি খুন করতে যাব কেন?
শবর একটু হেসে বলল, প্রশ্ন তো আমি করব। আপনি নয়।
কিন্তু মশাই তাতে ব্যাপারটা একতরফা হয়ে যাবে না কি?
ঠিক আছে, তা হলে আপনিই বলুন নেহাকে কে খুন করতে পারে।
আমার পক্ষে তা বলা সম্ভব নয়। নেহা কেমন জীবনযাপন করত, ব্যক্তিগত জীবনে ও কীরকম মেয়ে ছিল তা আমার জানা নেই। অনেক বয়ফ্রেন্ড ছিল জানি। অন্য কারণও থাকতে পারে। আমি কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা করিনি। খবরটা পেয়ে খুব শকড হয়েছিলাম।
খবর পেয়ে কি আপনি ওর বাড়িতে গিয়েছিলেন?
না, মার্ডার কেস, নিশ্চয়ই পুলিশ তদন্ত করছে ভেবে যাইনি। তবে ফোন করেছিলাম। খবর পেলাম ওর হাজব্যান্ড এখানে নেই, বাঙ্গালোরে গেছে। তাকে খবর দেওয়া হয়েছে, সেদিনই আসছে। নেহার বাবাও বিদেশে ছিলেন। তারও খবর পেয়ে সেদিনই আসার কথা।
এসব কথা কে বলল ফোনে?
বোধহয় কাজের মেয়েটেয়েই হবে।
নেহার হাজব্যান্ডকে আপনি চেনেন?