কিন্তু কেন?
আপনার সাইকোলজিটা বুঝবার জন্য। স্বপ্নার রিফিউজালের ব্যাপারটা আপনি এখন যেমন ক্যাজুয়ালি বললেন তখনও কি ঠিক এরকম ক্যাজুয়ালি ব্যাপারটা নিয়েছিলেন?
না মশাই, তখন আমার বয়স কম, হৃদয় ভরা আবেগ। তখন তো পাগল হয়ে যেতে বসেছিলাম। মরার কথাও ভেবেছি। মদ খেয়ে দেবদাস হওয়ারও চেষ্টা করেছি। স্বপ্নাকে ছাড়া কী করে বেঁচে থাকব সেটাই তখন প্রশ্ন ছিল।
প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবেননি?
হ্যাঁ, তাও ভেবেছি বইকী।
কীরকম প্রতিশোধ? খুন করাটরা?
হ্যাঁ, সে কথাও এক-আধবার মনে হয়েছিল। কিন্তু বেসিক্যালি আমি একজন ভিতু মানুষ। ওসব চিন্তা করতে পারি না। ওরকম ইচ্ছা হলেও পরে তার জন্যে অনুতাপ হয়।
আপনার কি মনে হয় আপনি খুন করতে অপারগ?
হ্যাঁ, অবশ্যই। একজন ছটফটে জ্যান্ত মানুষকে খুন করার কথা আমার তো কখনও মনে হয়নি। আমি কোনও ভয়ানক দৃশ্য বা ঘটনা সহ্য করতে পারি না। রক্তপাত দেখলে আমি অসুস্থ বোধ করি।
ঠিক এক মাস আগে বালিগঞ্জ প্লেসে নেহা মজুমদার নামে একটি মেয়ে খুন হয়। পত্র পত্রিকায় তার মৃত্যুর খবর ছাপাও হয়েছিল। মাত্র একুশ বছর বয়স, অত্যন্ত সুন্দরী, মোটামুটি বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী, স্মার্ট এবং হবু ফিল্ম স্টার এই মেয়েটির সবে বিয়ে হয়েছিল। হাজব্যান্ড অত্যন্ত প্রসপারাস আইটি ম্যান। বছরে ছয় মাস তাকে বিদেশে থাকতে হয়। বিয়ের পর মাত্র এক বছরের মধ্যেই এই ঘটনা।
সবই জানি। নেহা আমার ছাত্রী ছিল। নেহার মৃত্যুর পর লোকাল পুলিশও আমার কাছে আসে। বোধহয় নেহার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে যে রসালো গল্পটি প্রচলিত আছে তার জন্যই আমাকে জেরা করা হচ্ছে।
রসালো গল্পটা প্রচলিত হল কেন নিরুপমবাবু?
তা কী করে বলব বলুন। লোকে কাদা ভালবাসে। বেশিরভাগ লোকেই তো নিষ্কর্মা, অ্যান্ড আইডল ব্রেন ইজ ডেভিল’স ওয়ার্কশপ।
আপনার ডিভোর্স কতদিন হয়েছে?
ডিভোর্সের রায় এখনও বেরোয়নি। তবে আমার স্ত্রী ডিভোর্স পেয়ে যাবে। মামলা স্ট্রং, আইন তো এখন মেয়েদের পক্ষেই।
মামলায় আপনার উকিল কি আপনি ছিলেন?
না। বরং উলটো। আমার বউ যখন ডিভোর্সের প্রস্তাব দিল তখন আমিই ওকে বলি, কোন কোন পয়েন্টে মামলা করলে ডিভোর্স তাড়াতাড়ি পাবে।
কেন, ডিভোর্সটা কি আপনার কাছেও প্রার্থিত ছিল?
ছিল। যে সম্পর্কটা নেই, তাকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে কী লাভ? আমার স্ত্রীর বয়স কম, গানবাজনায় উন্নতি করতে চায়, নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, আমার মতো নীরস লোকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে তার জীবনটা তো নষ্টই হচ্ছিল। আমার বীথিকার জন্যে দুঃখই হয়। আমি ওকে কী দিতে পারতাম বলুন! আমার যথেষ্ট টাকাপয়সা নেই, আমি রূপবান নই, আজকালকার পুরুষদের মতো যথেষ্ট স্মার্ট আর চটপটে নই, আমার ভবিষ্যৎ অনুজ্জ্বল। উপরন্তু আমি গানের সমঝদার নই, আমার স্ত্রীকে মাঝেমধ্যে রান্নাবান্নাও করতে হত। তার এরকম জীবন ভাল লাগার কথা নয়।
বীথিকাদেবী একজন বেশ নামী ভোকালিস্ট। খেয়াল, ঠুংরি আমিও ভাল বুঝি না। কিন্তু যারা বোঝে তারা বলে, মহিলার ভবিষ্যৎ আছে।
হ্যাঁ, আপনি ভুল শোনেননি। ইদানীং বিভিন্ন প্রেস্টিজিয়াস মিউজিক কনফারেন্সে সে পারফর্ম করছিল। বীথিকার উপার্জনও বেশ ভাল।
আপনার সঙ্গে বীথিকাদেবীর তো প্রেম করেই বিয়ে হয়, তাই না?
হ্যাঁ। নইলে বামুন কায়েতের এমনি বিয়ে এখনও এদেশে হয় না। বীথিকা কায়স্থ বলে আমার পরিবারে ওকে ঠিকমতো গ্রহণও করা হয়নি।
সেজন্যই কি আপনি আলাদা বাসা নিয়ে আছেন?
ঠিক তা নয়, আমার মা বাবা চাকদহে থাকেন। পার্টিশনের পর আমার দাদু ওখানেই বাড়ি করেন। সেই বাড়িতে বাবা আর কাকার পরিবার একসঙ্গে থাকে। অবশ্য পৃথগন্ন। হাঁড়ি আলাদা, বাড়িও বিভক্ত। ওখানে জায়গাও হয় না, আর আমার সুবিধেও হয় না। আমি কলকাতায় বহুকাল ধরেই আছি।
বীথিকাদেবীর সঙ্গে আপনার আলাপ-পরিচয় কীভাবে হয়?
সেটাও শোনা দরকার বুঝি?
কোনটা যে কখন দরকার হবে কিছুই বুঝি না।
বীথিকা ট্যালেন্টেড মেয়ে হলেও খুব অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে নয়। ওর বাবা বেঙ্গল গভর্নমেন্টের একজন অফিসার। ল্যান্ড রিফর্ম দপ্তরে। নদিয়ায় আমাদের কিছু চাষের জমি ভেস্ট হয়ে যাওয়ায় বাবার নির্দেশে আমি রাইটার্সে যাতায়াত করেছিলাম কিছুদিন। তখনই ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয়, সেটা একটু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেমে আসে। আমি ব্যাচেলার শুনে উনি ওঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমাকে একদিন খাইয়েছিলেন। ইনসিডেন্টালি ওঁদের দেশ আমাদের ফরিদপুর জেলাতেই। উনি আমার দাদুকে চিনতেনও। যাই হোক, ওঁদের বাড়িতেই বীথিকার সঙ্গে পরিচয়। শুনে হয়তো অবাক হবেন মাত্র ছয় মাসের পরিচয়েই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।
বীথিকাদেবীর বাড়ি থেকে আপত্তি ওঠেনি।
না, ওঁরা খুশিই হয়েছিলেন।
কতদিন আপনাদের বিয়ে হয়েছে?
তিন বছর কয়েক মাস।
নেহার সঙ্গে আপনাকে জড়িয়ে যা রটেছে তা কি বীথিকাদেবী জানেন?
জানে।
ওটা নিয়ে অশান্তি হয়নি?
অশান্তি বিয়ের পর থেকেই চলছিল। স্ক্যান্ডালটা তাতে ইন্ধন দেয়।
আপনার বিয়ের আগে কোনও গার্লফ্রেন্ড ছিল কি?
আপনার সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে আপনি আমার সম্পর্কে খুব ভাল হোমওয়ার্ক করে এসেছেন। কাজেই আপনার কাছে হয়তো কিছু লুকোনোর চেষ্টা বৃথা।