একটু অবাক হয়ে কামনা বলল, ফলো করা হয়?
নিশ্চয়ই। আপনি যেখানেই যাবেন আপনার পিছনে আমাদের লোক সবসময়েই ফলো করবে।
সত্যি বলছেন? আপনারা তো ক্রিমিন্যাল।
যা বলেন।
আমি বিশ্বাস করি না।
না করলে করবেন না।
বলুন কাল রাতে আমি কোথায় গিয়েছিলাম?
ইজি, কাল এবং পরশু দু’দিনই আপনি পার্ক স্ট্রিটে বার-এ গিয়েছিলেন। পরশু রাত আটটা থেকে বারোটা। কাল রাত নটা থেকে সাড়ে দশটা। পরশু আপনি শ্যাম্পেন খেয়েছিলেন। কুণাল সরকার আর শ্যামলী বরাটের সঙ্গে। কাল…
মাই গড!
অবাক হওয়ার কিছু নেই। আজও আপনাকে ফলো করা হবে।
ইউ বাস্টার্ড!
বটেই তো। পুলিশ খুব খারাপ প্রজাতি। তবে মানুষের তাকে খুব প্রয়োজনও হয় কখনও সখনও।
ল্যান্ডিং-এ লিফট থামতেই নেমে পড়ল শবর। কামনা নামল না।
নামবেন না?
না। আমি অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাচ্ছি।
সেই ভাল।
থ্যাঙ্ক ইউ ফর দি সাজেশন। গুড নাইট।
.
রাত বারোটা নাগাদ শবরের টেলিফোন বাজল।
বলুন।
আমি কামনা আহুজা বলছি।
বলুন ম্যাডাম।
আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?
না।
অ্যাম আই ডিস্টার্বিং ইউ?
আরে না। বলুন না।
আপনি একবার আমার অ্যাপার্টমেন্টে আসতে পারবেন?
এখন?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে।
আধঘণ্টা বাদে ফের মুখোমুখি কামনা আহুজা আর শবর দাশগুপ্ত।
মনে হচ্ছে আমি অকারণে বড্ড বেশি দায়িত্ব আর ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছি। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। অকারণে কিছু কমপ্লিকেশনে জড়িয়ে পড়ার মানে হয় না। আর আরও একটা সন্দেহ হচ্ছে, একজন আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।
শবর চুপ করে চেয়ে রইল। প্রশ্ন করল না।
মুম্বাই থেকে কলকাতায় আসার প্ল্যান চেঞ্জ করা এবং এবং ঠিক তারিখে কলকাতায় পৌঁছানো এবং নিজের ফ্ল্যাটে ওইদিন দুপুরে অপেক্ষা করে থাকা সবই আমি একজনের নির্দেশে করেছিলাম। কয়েক ঘণ্টা আগেও তাকে আমি গম্ভীরভাবে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু এখন আর করছি না।
শবর চুপ।
তার নাম কি আপনাকে বলতে পারি মিস্টার দাশগুপ্ত?
শবর মৃদু একটু হাসল, আপনি বলতে চাইলে বলবেন, বলেছি তো আপনি স্বীকারোক্তি করলে আমার পরিশ্রম বাঁচবে।
আপনি একজন অদ্ভুত মানুষ। এতদিন এত প্রশ্ন করলেন, অথচ যখন আমি কনফেস করতে চাইছি তখন আপনি নির্বিকার।
তার কারণ, নামটা আমি জানি। আপনাকে এই ঘটনার জন্য প্ল্যান্ট করা হয়েছিল।
সেটা আগে বুঝিনি। শুভ্র মুম্বাইতে তাজ হোটেলে আমাকে আমার মুভমেন্টের প্ল্যানটা বলে। কথা ছিল ওইদিন অর্থাৎ যেদিন মার্ডার হয় সেদিন দুপুরের আগেই সে বাঙ্গালোর থেকে ফিরে আসবে এবং বিকেলের ফ্লাইটে আমরা দুজনে সিঙ্গাপুর যাব। শুভ্র আসেনি। দুপুরে সে আমাকে ফোন করে জানায়, কাজে আটকা পড়েছে। রাতে ফিরবে। সিঙ্গাপুর যাওয়া একদিন পিছিয়ে যাবে। এসব যখন ও বলেছে ঠিক সেই সময়ে বা হয়তো একটু আগে বা পরে নীচের তলায় খুন হয় নেহা।
ছকটা মিলে যাচ্ছে।
আপনার কাছে বলতে বাধা নেই, আমার শুভ্রকে নিয়ে এখন অস্বস্তি হচ্ছে। অ্যাম আই ইন ডেনজার?
শুভ্র কি ফ্ল্যাটে আছে?
না। এখনও ফেরেনি। খুনটার জন্য আমি কি কোনওভাবে দায়ী?
না। খুন করেছে ভাড়াটে খুনি, টাকা খেয়ে, আপনি দায়ী কেন হবেন?
শুভ্রকে কি আপনারা অ্যারেস্ট করবেন? ও কেন আমাকে ফ্রেম করতে চেয়েছিল বলুন তো? আমাকে মার্ডার স্পটে অপেক্ষা করতে বলা এবং সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখানো, এসব কী বলুন তো?
আপনি অ্যারেস্টেড হয়ে গেলে শুভ্রবাবুকে নিয়ে পুলিশ আর মাথা ঘামাবে না।
তা হলে এখন আমি কী করব?
কাল সকালেই বীরেন সানার ফ্ল্যাট ছেড়ে কোনও বান্ধবীর বাড়িতে চলে যান। এ জায়গাটা আপনার পক্ষে নিরাপদ নয়।
আমার এখন শুভ্রকে বড্ড ভয় করছে।
লিভ এ ক্লিন লাইফ ম্যাডাম। ভয় কীসের?
ভরসা দিচ্ছেন?
দিচ্ছি। আপনার প্রোটেকশনের ব্যবস্থা আগে থেকেই করা আছে। গুড নাইট।
গুড নাইট।
শবর দাশগুপ্ত নীচের তলায় নেমে এসে শুভ্র দাশগুপ্তর দরজার বেল টিপল। কেউ দরজা খুলল না।
শবর পকেট থেকে একটা স্কেলিটন চাবি বের করে নিঃশব্দে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। দরজা বন্ধ করে দিয়ে অন্ধকার ঘরে একটা সোফায় বসল চুপ করে। অপেক্ষা করতে লাগল।