আপনি আমাকে অ্যারেস্ট করবেন?
অবশ্যই।
শুনুন, নেহার মরা উচিত ছিল, তাই মরেছে, ড্রপ দি কেস।
আমি মনে করি না যে কারও মরা উচিত। আমি আপনার সঙ্গে একমত নই।
আমি ওকে মারিনি।
কে মেরেছে?
আমি জানি না। জানার কথা নয়।
যদি না বলেন তা হলে পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে চার্জ দেবে। শুভ্রবাবুও ফেঁসে যাবেন। দু’জনকেই চালান দেওয়া হবে। বলুন।
কলকাতায় ভরদুপুরে কত ফ্ল্যাটেই তো ডাকাতি হয়, খুন হয়। হয় না?
হা হয়।
এটা তো সেরকম হতে পারে। আপনারা এই অ্যাঙ্গেলটা ভেবেছেন?
লোকাল পুলিশ ভেবেছে, আমাকেও কি তাই ভাবতে বলেন?
হ্যাঁ। কলকাতার পুলিশ তো কত কেসই সলভ করতে পারে না। কত খুনি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
হ্যাঁ, ঠিক কথা। আমি জানতে চাই, আপনিও কি বিশ্বাস করেন যে, নেহাকে ডাকাতের হাতে মরতে হয়েছে।
করি।
তা হলে আমার কিছু করার থাকবে না। আপনাকে চালান দেওয়া ছাড়া।
কেন, আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ কোথায়?
প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হবেন না।
নেহার বাবা আপনাকে অনেক টাকা দিয়েছে, না? নইলে পুলিশ এত অ্যাকটিভ হয় না। আপনারা তো করাপ্টেড। সবাই জানে।
খুব মিথ্যে বলেননি। এই সমাজে সর্বস্তরেই করাপশন। কিন্তু সেটা ভেবে সান্ত্বনা পাবেন না। ব্যাপক করাপশনের মধ্যেও দু’-একজন থাকে যারা ইনকরাপটিবল।
আপনি কি তাদের একজন?
কী মনে হয়?
আপনার মতো লোককে আমি ভালই চিনি। নিজেকে আপনি যত খুশি ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিন না কেন, আপনি যে নেহার খুনিকে ধরার জন্যে জান লড়িয়ে দিচ্ছেন সেটা নিশ্চয়ই বিনা স্বার্থে নয়। শুধু মাইনের টাকায় এত ডেডিকেশন আসে না। মিস্টার পুলিশ, আপনাদের চরিত্র আমার জানা আছে।
জেনেই যখন গেছেন তখন কী আর করা যাবে। আর একথাও ঠিক যে নেহার খুনিকে ধরার জন্য আমি শেষ অবধি যাব।
ঠিক আছে মিস্টার পুলিশ। নেহার খুনিকে কষ্ট করে তবে আপনিই ধরুন। আপনার পরিশ্রম বাঁচাতে তার নাম আমি আপনাকে বলতে যাব না। আর আমি জানিও না, নেহাকে কে খুন করেছে।
আমার পরিশ্রম বাঁচানোর জন্য নয়, আপনাদের হ্যারাসমেন্ট থেকে বাঁচানোর জন্যই নামটা বলে দেওয়া ভাল।
আই অ্যাম স্যরি মিস্টার দাশগুপ্ত। আপনি আমাকে বারবার ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন। আর সেটাই প্রমাণ করে যে আপনি ডিটেকশন করতে জানেন না। গোয়েন্দা পুলিশের কী দুরবস্থা হয়েছে তা আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়। যদি ক্ষমতা থাকে তা হলে নিজেই খুনিকে খুঁজে বের করুন। আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেন?
এরকম কথার থাপ্পড় বহুকাল খায়নি শবর দাশগুপ্ত। সে মনে মনে মেয়েটিকে বাহবা দিল। মুখে একটু গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল, ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি আজ যাচ্ছি। পরে হয়তো আবার আসব।
সেটা আপনার খুশি। মানুষকে অকারণে উৎপাত করার লাইসেন্স তো পুলিশের আছেই।
শবর বেরিয়ে এল, লিফট নিল না। সিঁড়ি বেয়ে একটা ফ্লোর নেমে এসে শুভ দাশগুপ্তর দরজার বেল টিপল, বেল অনেকক্ষণ বেজে গেল। কেউ দরজা খুলল না।
ঘড়িটা দেখল শবর। রাত প্রায় দশটা বাজে। এ সময়ে শুভ্র দাশগুপ্তের ফেরার সম্ভাবনা কম। হয়তো ডিনার আছে। হয়তো আর কিছু।
ভাবতে ভাবতে লিফটের সামনে এসে দাঁড়াল শবর। নেহাকে মারা হয়েছিল গলায় ফাঁস দিয়ে। সিল্কের কর্ড। গলায় সিল্কের ফাঁসও পাওয়া গেছে। ঘরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন ছিল। অর্থাৎ নেহা সহজে মরতে চায়নি। কাজটা মেয়ে বা পুরুষ যে কেউ করে থাকতে পারে। নেহার পিঠে একটা চটিজুতোর ছাপ পাওয়া গেছে। খুনি ফাঁসটা ভাল করে টানার জন্য ওকে উপুড় করে ফেলে পিঠে পা দিয়ে চেপে ধরেছিল। চটির ছাপে কোনও বৈশিষ্ট্য ছিল না। খাঁজহীন ছাপ। কোলাপুরি বা চামড়ার সোলের চটি। পুলিশ কুকুর ঘরের মধ্যে ঘুরে লিফট অবধি যায়। নীচে নেমে ফটক অবধি গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। দারোয়ানরা কোনও হদিশ দিতে পারেনি। কারণ, দশতলা এই বাড়ির প্রথম চারটে তলায় বেশ কয়েকটা অফিস আছে। প্রচুর লোকের যাতায়াত। দারোয়ানরা কার্যত নিষ্কর্মা বসে থাকে। পুলিশ কুকুর একবারও ওপরের তলায় কামনা আহুজার ফ্ল্যাটে যায়নি।
মোটিভ নিয়ে ভেবেছে শবর। নেহাকে খুন করার জোরালো মোটিভ ভেবে পায়নি। তবে হ্যাঁ, নেহা যে জীবন যাপন করত তাতে হিংসা, ব্যর্থ প্রেম, প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ অনেকের অনেকরকম মোটিভ থাকতে পারে। পুলিশের একটা থিয়োরি আছে। কোনও গৃহবধু খুন হলে শতকরা পঁচানব্বই ভাগ ক্ষেত্রে তার স্বামীই অপরাধী। শুভ্রর মোটিভও আছে, কিন্তু ঘটনার সময়ে সে ছিল বাঙ্গালোরে। ভাড়াটে খুনিকে লাগালেও এতদিনে কি একটা গন্ধ অন্তত পাওয়া যেত না? সুতরাং নেহা-হত্যার ধাঁধাটা কাটছে না। শেষ অবধি ব্যর্থ হলে ফের খবরের কাগজে লেখালেখি হবে। যেমনটা রোজই হচ্ছে।
আরও লজ্জায় পড়তে হবে যদি প্রাইভেট গোয়েন্দাদের কেউ রহস্যের সমাধান করে ফেলে, কিংবা সত্যিই যদি সিবিআই নামে। যদিও সেই সম্ভাবনা খুবই কম।
লিফট নামছিল। দরজা খুলে যেতেই ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে শবর দেখল কামনা দাঁড়িয়ে।
এই যে ম্যাডাম। এত রাতে কোথায় চললেন?
যেখানে আমার খুশি।
সে তো বটেই। তা খুশির জায়গা কোথায়?
এটাও কি তদন্তের মধ্যে পড়ে?
অবশ্যই।
তা হলে আমাকে ফলো করতে হয় আপনার।
শবর হাসল, আপনাকে ফলো করা হয় না বলে মনে করেন নাকি?