ছবির মতো সুন্দর বাগানে ঘেরা তাদের দোতলা বাড়িটি। কত যে ফুল চারদিকে ফুটে আছে। ধুলো নেই, ময়লা নেই। শুধু সুগন্ধ। এখন গ্রীষ্মকাল। বড় মনোরম আবহাওয়া।
ছোট্ট একটু হর্নের শব্দ করে গাড়ি পার্ক করল গোপীনাথ। তারপর নামল। শ্বেতপাথরের সিঁড়ি বেয়ে যখন দরজায় দাঁড়াল তখন তার মুখে হাসি, বুকটা ভরা। সে কি আজ সুখী? সে কতটা সুখী?
দরজাটা খুলে গেল। একটু আনমনা গোপীনাথ ডোরম্যাটে পা মুছে ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছিল, দরজার আড়াল থেকে একটা ভারী গলা বলে উঠল, হ্যান্ডস আপ।
গোপীনাথের হৃৎপিণ্ড একটা ডিগবাজি খেল। হাত দুটো ওপরে তুলল সে। আন্দাজ করল, লোকটা তার দু’হাত পিছনে দাঁড়ানো। আচমকা গোপীনাথ সটান উবু হয়ে পিছনের দিকে হাত চালিয়ে লোকটার দুটো পা ধরে হ্যাচকা টান মারল। গোটা ব্যাপারটা ঘটে গেল সেকেন্ডের ভগ্নাংশে। দড়াম করে পড়ে গিয়ে লোকটা বাংলায় বলে উঠল, উঃ, এ তো দেখচি গুরুমারা বিদ্যে।
গোপীনাথ তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে সুধাকরকে মেঝে থেকে তুলে বলল, ইস! লাগেনি তো! ছিঃ ছিঃ, কী কাণ্ড বলুন তো।
সুধাকর হেসে বলল, আই অ্যাম প্লিজড। মাথার কাজ করতে করতে যে রিফ্লেক্স কমে যায়নি তা দেখে খুশি হয়েছি।
কখন এলেন?
ঘন্টা দুই। কফিটফি খেয়েছি। সোনালি আমার জন্য ধোকার ডালনা রান্না করছেন। আর দীপ্যমান আমার নাক কামড়ে দিয়েছে।
খুব হাঃ হাঃ করে হাসল গোপীনাথ। তারপর বলল, আজ থেকে যেতে হবে। অনেক কথা আছে।
সুধাকর মাথা নেড়ে বলল, ডিনারের পরই চলে যাব। কাজ আছে।
এত কী কাজ বলুন তো!
সুধাকর হাসল, দুনিয়ার একটা দিক আপনি দেখতে পান। অন্যান্য দিকগুলি আমাদের মতো লোককে দেখতে হয়। সেখানে দুনিয়ার যত কাদা, নোংরা, যত ক্লেদ।
আবার কবে আসবেন?
চলে আসব। দীপ্যমানকে দেখার পর আমার একটা মায়া জন্মেছে। ইউ আর এ হ্যাপি ম্যান।
কথায়, হাসিতে, খাওয়ায়দাওয়ায় সন্ধেটা চমৎকার কেটে গেল তাদের। পুরনো কথা হল অনেক। রাত আটটায় একটা গাড়ি এল। চলে গেল সুধাকর।
ফাঁকা ঘরে সোনালি আর গোপীনাথ। দীপ্যমান ঘুমোচ্ছে।
সোনালি বলল, বেশ লোকটা, না?
হ্যাঁ, বেশ লোক। ও না বাঁচালে কবে আমি খুন হয়ে যেতাম।
একটু শিউরে উঠে সোনালি তাড়াতাড়ি তার পাশে এসে বসল। গোপীনাথ তাকে এক হাতে বেষ্টন করে বলল, হানিমুনে যাবে? আমরা আজ অবধি যাইনি কিন্তু।
যাঃ, বাচ্চা হওয়ার পর কেউ হানিমুনে যায় বুঝি?
যায় না?
না। তখন হানিমুন ঘরেই করতে হয়।
তাই! বলে অপলক চোখে সোনালির দিকে চেয়ে রইল গোপীনাথ।
তাই। বলে চোখ বুজে ফেলল সোনালি। লজ্জায়।