তা হলে আমার কাজে বাধা দিচ্ছ কেন? বাইরে তোমার এজেন্টরাই বা মোতায়েন রয়েছে কেন?
তোমাকে বাড়তি পরিশ্রম থেকে বাঁচাতে।
জো বলল, তার মানে?
গোপীনাথকে মারার দরকার নেই জো। তুমি ফিরে যাও।
জো বিবর্ণ মুখে বলল, দাতা, তুমি কী বলছ জানো? এ কাজটা যদি সমাধা না করতে পারি তা হলে নিউ ইয়র্কে আমার বউ আর দুটো বাচ্চা সাফ হয়ে যাবে। একবার ব্যর্থ হয়েছিলাম বলে আমাকে তারা হুমকি দিয়ে রেখেছে।
সুধাকর একবার আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে বল, জানি।
জানো?
জানি জো।
আমি জানতে চাই তুমি গোপীনাথকে আড়াল করছ কি না। করলে তোমার সঙ্গে অনেকগুলো গ্যাংলিডারের সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। আমি সামান্য একজন আজ্ঞাবহ, ভাড়াটে খুনি মাত্র। কিন্তু তারা তো তা নয়।
শোনো জো, ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
ভাবব না। কিন্তু আমার কী হবে দাতা?
তোমার বউ আর বাচ্চাকে ইতিমধ্যেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তার মানে?
সুধাকর তার পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে জোর হাতে দিয়ে বলল, এই নম্বরে নিউ ইয়র্কে ফোন করলেই তুমি তোমার বউয়ের গলা পাবে। ফোনটা করো।
জো চিন্তিতভাবে ফোনের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর ডায়াল করল। মিনিট চারেক বাদে ফোন রেখে সে সুধাকরের দিকে ফিরে বলল, কাল সন্ধেবেলা কয়েকজন বন্দুকধারী আমার বউ আর বাচ্চাদের তুলে এনেছে। তারা আছে হারলেমের একটা বাড়িতে। তুলে আনবার সময় কয়েকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সামান্য ধস্তাধস্তিও হয়। তবে গুলি চলেনি। এসব কী হচ্ছে দাতা?
অভিনব কিছু নয় জো। তোমার সংগঠনের লোকেরা তোমার বউ আর বাচ্চাদের ওপর নজর রাখছিল। তুমি এই মিশনে ব্যর্থ হলে তারা শোধ নিত। তুমি ভাল লোক নও জো। কিন্তু তোমার ভিতরে কিছু ভাল এলিমেন্ট ছিল। তোমার ওপর আমার বিন্দুমাত্র করুণা থাকত না, যদি না জানতাম যে তুমি পরিস্থিতির চাপে পড়ে এবং নিতান্ত প্রাণের ভয়ে মাফিয়াদের হয়ে কাজ করতে নেমেছ। তোমার সবচেয়ে দুর্বলতা তোমার পরিবার। বউ আর বাচ্চা। তুমি আদ্যন্ত একজন পারিবারিক মানুষ। পরিবার নিয়ে সুখে থাকা ছাড়া তোমার আর কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। এই পরিবারমুখী মনোভাবটা আজকাল হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ গুরা তোমার এই সবচেয়ে দুর্বলতার জায়গাটিকেই আঘাত করেছে। তুমি নিজের পরিবারকে বাঁচাতে যে-কোনও কাজ করতে প্রস্তুত, যদিও তোমার বিবেক তা চায় না। শুধু এই কারণেই তোমার পরিবারকে আমি নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দিয়েছি।
জো হাসল, ধন্যবাদ। কিন্তু এ নিরাপত্তা কতদিন? ওরা একদিন আমার নাগাল পাবেই।
সুধাকর মাথা নেড়ে বলল, বিশ্বের পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যাচ্ছে জো। নিউ ইয়র্কের ব্রংকস এলাকায় গত পরশু থেকে গ্যাংওয়ার শুরু হয়েছে। তোমার অর্গানাইজেশনের দু’জন বস খুন হয়ে গেছে। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফানুমি নামে একটা লোক সংগঠনের হাল ধরেছিল পরশু মধ্যরাতে। ফানুমি গতকাল নিউ ইয়র্ক ছেড়ে কোনওরকমে পালিয়ে যায়। সংগঠন আপাতত তিন টুকরো।
তা হলে আমার কী হবে?
সুধাকর মৃদু হেসে বলল, সেটা চিন্তার বিষয়।
চিন্তাটা কে করবে দাতা? আমি তো চিরকাল রোবটের মতো কাজ করে গেছি। অগ্রপশ্চাৎ ভাবিনি। পশুর জীবন বোধহয় একেই বলে। বাঁচো আর মায়েরা। এ ছাড়া কিছুই শিখিনি। পরিবারটাকে ভালবাসি। কিন্তু তাদের সঙ্গেই বা বছরে কটা দিন কাটাতে পারি?
নতুন একটা জীবন শুরু করো জো।
অসম্ভব! এরা তা করতে দেবে না আমাকে।
পালাও জো। অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাও। চাষবাস করো। ভদ্রজীবনে ফিরে এসো। তোমার বয়স চল্লিশের কোঠায়। এখনও সময় আছে।
লুলু এতক্ষণ একটা প্রস্তরমূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিল। একটাও কথা বলেনি৷ ঝুলন্ত হাতে একটা পিস্তল নিম্নমুখী হয়ে আছে। আচমকাই সে একজন দক্ষ অ্যাক্রোব্যাটের মতো দাঁড়ানোর ওপরেই একটা ডিগবাজি খেয়ে জানালার দিকে সরে গিয়ে সটান মেঝের ওপর শুয়ে পড়ল। জাদুকরের মতো ডান হাতটা ঝটিতি উঠে এল ওপরে। পরপর দুটো গুলি চালাল সে। সোডার বোতলের ছিপি খোলার মতো দুটো শব্দ হল শুধু। যাকে লক্ষ্য করে সে গুলি চালিয়েছিল সে সুধাকর। সোফা সমেত সুধাকর উলটে পড়ে গিয়েছিল মেঝেয়।
খুব ধীরে উঠে দাঁড়াল লুলু। ইংরেজিতে বলল, হি ইজ ফিনিশড।
জো তার দিকে তাকিয়ে বলল, এ কাজ করলে কেন লুলু?
সেন্টিমেন্টাল ব্যাপারটা আমার সহ্য হয় না জো। ও তোমাকে নরম করে ফেলছিল। দাতা আমার বন্ধু ছিল।
লুলু পিস্তলটা জো এর দিকে স্থির রেখে বলল, খুব ধীরে পিস্তলটা মেঝেয় ফেলে দাও জো।
কেন?
তোমার কাজ শেষ হয়েছে। এখন আমার পালা।
জো ঈষৎ লাল হয়ে বলল, তুমি আমাকে হুকুম করছ? ভয় দেখাচ্ছ?
ভয় দেখাচ্ছি না। তোমাকে ফাঁকা ভয় দেখাব তেমন বোকা নই। পিস্তলটা ফেলে দাও জো।
জো পিস্তলটা ফেলে দিয়ে বলল, তুমি আকাট বোকা। দাতাকে মেরে চূড়ান্ত আহাম্মকের মতো কাজ করেছ। বাইরে ওর লোকেরা আছে। তাদের তুমি চেনো না, আমি চিনি। ভিকিজ মব। তাদের হাত থেকে তুমি কীভাবে রেহাই পাবে?
লুলু অনুত্তেজিত গলায় বলল, সুধাকর দত্ত ভিকিজ মবকে অনেকদিন ধরেই টুপি পরিয়ে আসছে। আহাম্মক আমি নয়, তুমি। সুধাকর দত্তর আসল পরিচয় তুমি জানো না। সুধাকর ইন্টারপোলের বিগ বস।
ইন্টারপোল! মাই গড!