রোজমারি চেঁচিয়ে উঠল, কী চাও তোমরা?
অচেনা লোকটা রোজমারির দিকে চেয়ে একটু হাসল। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বলল, কাজটা শেষ করতে এসেছি রোজমারি।
তোমাদের হাতে বন্দুক কেন জো? লুলু?
জো নামে লোকটা বলল, এটাই কাজ।
তোমার সঙ্গে লুলু কেন?
লুলু আমার বন্ধু। লুলু তোমারও বন্ধু। লুলুর সঙ্গে তোমার মধুর সম্পর্কের কথা তোমার স্বামী না জানলেও আমি জানি রোজমারি।
বাজে কথা বোলো না জো।
জো হাসল, বাজে কথা আমি বলি না। আমার কাছে তোমাদের ঘনিষ্ঠতার ভিডিয়ো ক্যাসেটও আছে। একবার ভেবেছিলাম, ওটা দিয়ে তোমাকে ব্ল্যাকমেল করি। কিন্তু দুনিয়া এখন অনেক প্রগতিশীল, অনেক পারমিসিভ। আজকাল স্বামীরা স্ত্রীর ছোটখাটো অবৈধ প্রেম ক্ষমা করে দেয়। তোমার স্বামী তো একটি ভেড়া বই কিছু নয়।
তুমি কি এইজন্য আমাদের ফলো করে এসেছ?
দুর বোকা! তোমাদের জন্য এত পরিশ্রম করব কেন? গোপীনাথ কোথায়? ডাকো।
উনি এখন নেই।
জো আর লুলু চমকে উঠে বলল, মানে? কোথায় গেল?
একটু বাইরে গেছে। এখনই এসে পড়বে। কিন্তু তোমরা কি তাকে খুন করবে জো?
জো অবাক হয়ে বলল, আমরা। আমরা কেন খুন করব?
তা হলে?
ওঁকে খুন করবে তুমি এবং তোমার স্বামী।
কী বলছ জো?
জো ঘড়ি দেখে বলল, গোপীনাথ কোথায় গেছে রোজমারি? সত্য বলে।
লুলু ফ্ল্যাটটা খুঁজে এসে বলল, নেই।
তারপর দরজা খুলে বোধহয় চারদিকটা দেখে এসে বলল, বাইরে বেরোতে পারেনি। আমার লোক নজর রাখছে। অন্য কোনও ফ্ল্যাটে যেতে পারে।
জো বিরক্ত হয়ে বলল, তোমার এটা দ্বিতীয় ভুল লুলু।
৩৬.
জো এবং লুলু পরস্পরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। জো-র চোখে আগুন ঝরছে, লুলুর চোখে ভয়। সিঁটিয়ে থাকা স্থবিরের মতো রোজমারি দৃশ্যটা দেখল। মনোজের অবস্থা তার চেয়ে কিছুমাত্র ভাল নয়। তবু সে-ই প্রথম কথা বলল। পরিষ্কার জার্মান ভাষায় বলল, এসব কী হচ্ছে?
জো ক্লাইন তার দু’খানা রক্ত-জল-করা চোখে মনোজের দিকে চেয়ে জার্মান ভাষায় বলল, একটা নাটক। শেষ দৃশ্য। এই দৃশ্যে প্রধান অভিনেতা আর অভিনেত্রী আপনি আর রোজমারি। কখনও খুনটুন করেছেন মিস্টার সেন?
মনোজ কাপছিল। মাথা নেড়ে বলল, না।
আপনি চিরকাল খুব নিরাপদ জীবন যাপন করে এসেছেন, তাই না?
হ্যাঁ।
খুন করাটা কোনও ব্যাপারই নয়। বিশেষ করে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি করতে হয়।
তার মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
বুঝিয়ে দিচ্ছি। গোপীনাথ যেখানেই থাক এ বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি। সে আসবে। আপনাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে। গোপীনাথ বসু ঘরে ঢোকামাত্র দু’জনেই গুলি চালাবেন। আমাদের হাতে যে আগ্নেয়াস্ত্র দেখছেন তা অত্যন্ত শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। চালানো খুব সোজা।
আমরা গোপীনাথকে মারব কেন?
গোপীনাথকে মারবেন আমি আদেশ করছি বলে। মারতেই হবে, কারণ আপনাদের পিছনে আমরা দুটো পিস্তল আপনাদের দিকে তাক করে অপেক্ষা করব। আপনারা যদি গুলি না চালান সে ক্ষেত্রে কাজটা আমাদেরই করতে হবে। তবে তখন আমরা শুধু গোপীনাথকেই মারব না, আপনাদেরও মারব। বুঝেছেন?
আপনি কে?
আমার নাম জো ক্লাইন। রোজমারির প্রাক্তন স্বামী।
ওঃ হ্যাঁ, আপনার কথা শুনেছি বটে। আপনি মার্কিন সরকারের গুপ্তচর ছিলেন।
ছিলাম। এখন নই।
আপনি এ কাজ কেন করছেন?
স্বার্থে করছি মিস্টার সেন। আমরা সামান্য আজ্ঞাবহ মাত্র। কাজ করে টাকা পাই।
শুধু টাকার জন্য?
জো ক্লাইন মাথা নেড়ে বলল, শুধু টাকা নয় মিস্টার সেন। নিউ ইয়র্কে আমার একটি সরল সোজা বউ আছে। আর আছে ফুটফুটে দুটো বাচ্চা। আমি যাদের আজ্ঞাবহ তাদের হয়ে যদি কাজটা না করি তা হলে তারা প্রথমেই খতম করবে আমার পরিবারটিকে। আমাদের আনুগত্যটাও বাধ্যতামূলক। একরকম পণবন্দি। বুঝেছেন?
মনোজ অবিশ্বাসের গলায় বলল, সত্যি?
এর চেয়ে কঠোর সত্য আর নেই।
খুনটা আমাদের দিয়ে করাতে চান কেন?
কারণ আমরা এখানকার পুলিশি ঝামেলায় জড়াতে চাই না। কোনও চিহ্নও ফেলে যেতে চাই না।
কিন্তু আমরা! আমাদের তো পুলিশে ধরবে!
সেটা আপনাদের শিরঃপীড়ার বিষয়। কিন্তু পুলিশি ঝামেলার চেয়েও আপনার অনেক বেশি দরকার বেঁচে থাকা। তাই নয় কি?
লুলুর সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক?
জো একটু হাসল, পাপীর সঙ্গে পাপীর বন্ধুত্ব একটু তাড়াতাড়ি হয়। মিস্টার সেন, লুলু, আপনি এবং আমি, আমাদের তিনজনের একটা জায়গায় খুব মিল। আমরা তিনজনেই রোজমারির প্রাক্তন বা বর্তমান প্রেমিক।
মনোজ একবার রোজমারির দিকে তাকাল, কিছু বলল না। তবে তার মুখে একটা বিস্বাদের ভাব ফুটে উঠল। একটু বেদনাও।
রোজমারি লুলুর দিকে যে চোখে চেয়ে ছিল তা প্রেমপূর্ণ নয়। ঘেন্নায় ভরা। চাপা গলায় সে শুধু একবার বলল, কুকুর।
লুলুর সুন্দর মুখখানা নির্বিকার রইল। সে শুধু ঠান্ডা গলায় বলল, তোমাকে আমি কুত্তি বলতে পারতাম, কিন্তু বলছি না। তার কারণ এটা ব্যক্তিগত সম্পর্কের জট ছাড়ানোর সময় নয়, রোজমারি। আমাদের হাতে অনেক বেশি জরুরি কাজ আছে।
রোজমারি হঠাৎ বলল, আমরা তোমাদের আজ্ঞাবহ নই। আমরা ভদ্র ও আইন মোতাবেক জীবনযাপন করি। তোমাদের হুকুমে আমরা নিরপরাধ একজন মানুষকে খুন করতে পারব না। আমরা চলে যাচ্ছি। দয়া করে বাধা দিয়ো না। চলো মনোজ।
মনোজের হাত ধরে একটা টান মেরে দাঁড় করিয়ে দিলে রোজমারি।