না।
গোপীনাথের অ্যাকটিভিটি সম্পর্কে আপনি কতখানি জানেন?
ও একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কনসালট্যান্ট।
হ্যাঁ, সেসব আমরা জানি। উনি উচ্চশিক্ষিত এবং হাইলি সাকসেসফুল।
হ্যাঁ। আমি এটুকুই জানি।
আপনার সঙ্গে আফটার ডিভোর্স গোপীনাথের কোনও সম্পর্ক আছে কি?
সোনালি সামান্য রেগে গিয়ে বলল, না। কেন থাকবে?
আহা, আজকাল তো ডিভোর্সের পরও অনেক এক্স হাজব্যান্ড এবং ওয়াইফ পরস্পরের বন্ধু হিসেবে থাকে।
না। আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।
গোপীনাথ বসু যে এখন বিদেশে চাকরি করে তা কি আপনি জানেন?
সেইরকমই শুনেছিলাম।
কোথায় এবং কোন কোম্পানিতে চাকরি করে তা কি জানেন?
না। জানার কথাও নয়।
ঠিক আছে। এবার চলুন, যাওয়া যাক। আমার বেশ খিদে পেয়েছে।
সোনালি আগে, লোকটা দু’পা পিছনে। তারা এসে অফিসের রিসেপশনে ঢুকল। মনোজ রিসেপশনেই দাঁড়িয়ে ফোন করছিল কাকে যেন। হাতের ইশারায় তাদের অপেক্ষা করতে বলে কথা শেষ করে ফোন রেখে বলল, হ্যাঁ, মিস্টার দত্ত, একটা কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছে।
সুধাকর বলল, ডেলিগেটদের একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে তো! শুনেছি, স্যাড কেস।
সুতরাং আপনার তো এখানে নিশ্চয়ই আর দরকার নেই।
ইউ ওয়ান্ট মি আউট অফ ইয়োর হেয়ার, তাই না? বলে সুধাকর বেশ উঁচু গলায় হাসল।
মনোজ একটু অপ্রতিভ হয়ে হেসে বলল, মানে তা ঠিক নয়। আপনাকে এখন বোধহয় ওঁদের হোটেলেই যেতে হবে। তাই বলছিলাম–
ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। বাই দি বাই, আপনার কমপ্লেক্সটা কিন্তু খুব সুন্দর।
থ্যাঙ্ক ইউ ফর দি কমপ্লিমেন্টস।
সোনালিদেবীও খুব কো-অপারেট করেছেন।
শুনে খুশি হলাম।
সুধাকর সোনালির দিকে চেয়ে একটু হাসল। বলল, বাই। সুধাকর বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর মনোজ সোনালিকে জজ্ঞেস করল, কী চাইছিল লোকটা বলুন তো!
ঠিক জানি না।
বেফাঁস কিছু জিজ্ঞেস করেনি তো?
না।
তা হলে তো ঠিকই আছে। আমি একটু টেনশনে ছিলাম। সোনালি দোতলায় উঠে তার ঘরে ঢুকে চুপ করে কম্পিউটার মনিটরের সামনে বসে রইল। মনোজের টেনশন কমলেও তার কমেনি। তার টেনশন শুরু হল।
প্রথম কথা, ‘সাক্কি ইনকরপোরেটেড’ তাদের মস্ত বড় ক্লায়েন্ট। দ্বিতীয় কথা, তার ভূতপূর্ব স্বামী গোপীনাথ বসু সাক্কির সঙ্গে খুব গম্ভীরভাবে যুক্ত। লোকটা হয়তো সব জানে। কিন্তু সোনালি বুঝতে পারছে না সাক্কি বা উচ্চারণভেদে শচি ইনকরপোরেটেডকে নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে। সাক্কি নানারকম অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ তৈরি করে বলে সে জানে। পৃথিবীর অনেক দেশে তাদের কারখানা আছে।
সোনালি চিন্তা করতে লাগল। গম্ভীরভাবে।
০৪.
প্যারিসের দক্ষিণ শহরতলির একটি অনভিজাত পাড়ায় দোতলার একটি ছোট ফ্ল্যাটে মধ্যরাত্রে টেলিফোন বেজে যাচ্ছিল। একজন ক্লান্ত মানুষ গভীর ঘুম থেকে ধীরে ধীরে জাগ্রত হচ্ছিল। তারপর হঠাৎ উঠে বসে টেলিফোন তুলে নিয়ে চোস্ত ফরাসিতে বলল, আমি বোস বলছি।
সুপ্রভাত মঁসিয়ে বোস।
আপনি কে?
আমার নাম পল বা জন বা লিওনার্দো যা খুশি হতে পারে। আপনি আমাকে পল বলেই ডাকবেন। অবশ্য ডাকবার দরকারও হয়তো আর হবে না।
এসব কীরকম হেঁয়ালি?
মঁসিয়ে বোস, কাল বিকেলে শার্ল দ্য গল এয়ারপোর্ট থেকে পুবদিকে একটি বিমান ছেড়ে যাবে। তাতে আপনার একটি সিট বুক করা আছে। তাই না?
হ্যাঁ। তাতে কী?
মঁসিয়ে বোস, আপনি কি টোকিওতে মরতে চান? নাকি ব্যাঙ্ককে? সিঙ্গাপুর, না মেলবোর্নে? আপনি যে-কোনও জায়গা বেছে নিতে পারেন। কোথায় মরতে আপনি পছন্দ করবেন প্রিয় মঁসিয়ে বোস?
ঘুম-ভাঙা লোকটির বুক কাঁপছিল, ভয়ে নয়, উত্তেজনায়। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে এই রসিকতা তার ভাল লাগছিল না। অবশ্য রসিকতা নাও হতে পারে। উগ্রবাদের এই যুগে কিছুই
অবিশ্বাস্য নয়। সে গলাটা স্বাভাবিক রেখে একটু গম্ভীর হয়ে বলল, একটু বুঝিয়ে বলুন।
আমি শুধু সরল একটা প্রশ্ন করছি। আপনি কোথায় মারা যেতে পছন্দ করবেন?
মারা যেতে আমি পছন্দ করি না।
কিন্তু প্রিয় মঁসিয়ে বোস, আমরা যে আপনার ওপর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছি। মরতে যে আপনাকে হবেই।
তা হলে আমি কোথায় মরতে চাই জিজ্ঞেস করছেন কেন? মরতে যদি হয়ই তা হলে প্যারিসই বা দোষ করল কী? প্যারিসে তো হাজার গন্ডা উগ্রবাদী ঢুকে বসে আছে।
পল একটু হেসে বলল, আপনি রসিক ব্যক্তি। কোনও রসিক ব্যক্তিকে মারা আমি পছন্দ করি না। পৃথিবীতে রসিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যাই হোক, আমরা আপনাকে জানাতে চাইছি, আমাদের সংগঠন পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। আমাদের হাত থেকে আপনার পালানোর কোনও পথ নেই। পৃথিবীর যে-কোনও জায়গাতেই আপনাকে হত্যা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব।
শুনে খুশি হলাম। কিন্তু আমি পালাতে চাইছি, একথা আপনাকে কে বলল?
হয়তো আমাদের শর্ত শুনলে চাইবেন।
নাও চাইতে পারি। আমি মরতে পছন্দ করি না বটে, কিন্তু আমার মৃত্যুভয় নেই।
মঁসিয়ে বোস, আপনি কি নিজেকে খুব সাহসী লোক বলে মনে করেন?
না। বরং আমি বেশ ভিতুই।
তা হলে মরতে ভয় পান না বলছেন কেন?
বলছি, কারণ সত্যিই আমার মৃত্যুভয় নেই।
শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণাকেও কি ভয় পান না?
বোস নামক লোকটি একটু হাসির শব্দ করে বলল, যথেষ্ট নাটক হয়েছে। আপনি আসল কথাটা বলার আগে জমি তৈরি করতে চাইছেন। ওসব আমি জানি। কাজের কথায় আসুন।