গোপীনাথ বলল, আই অ্যাম লিভিং ডেনজারাসলি। শুধু সেই কারণেই আপনাদের লোভনীয় অফার নিতে পারছি না। নিলে আপনাদেরও বিপদ।
রোজমারি বলল, কিন্তু আমরা যদি আপনাকে অন্য কোথাও রাখি, কোনও নিরাপদ জায়গায়?
গোপীনাথ মাথা নেড়ে বলল, নিরাপদ জায়গা বলতে কিছু নেই। এমনকী আপনারা যে এসেছেন, আপনাদের পিছু পিছুও কেউ এসেছে।
রোজমারি অবাক হয়ে বলে, সে কী কথা! আমাদের পিছু কেউ নেয়নি তো।
মনোজ বলে উঠল, অসম্ভব।
কিন্তু সুব্রত হঠাৎ বলল, অসম্ভব না-ও হতে পারে।
মনোজ বলল, কেন বলো তো! তুমি কাউকে দেখেছ?
মনে হচ্ছে, আমরা যখন অফিস থেকে রওনা হই, তখন একটা নীল মারুতি আমাদের পিছনে ছিল।
কী করে বুঝলে?
ওভারহেড মিররে দেখেছি। তখন কিছু মনে হয়নি। নীল মারুতিটাকে নামবার সময়েও দেখেছি যেন। একটু দূরে থেমে গেল।
মনোজ বলল, লেট আস চেক। চলো।
চলুন। বলে সুব্রত আর মনোজ বেরিয়ে গেল।
রোজমারি একটু উৎকণ্ঠার সঙ্গে বলল, কেউ আমাদের পিছু নিয়েছে কি না তা আপনি কী করে জানলেন?
ইনটুইশন।
ইনটুইশন। শুধু ইনটুইশন?
গোপীনাথ হাসল, না। শুধু ইনটুইশন নয়। ইনফর্মারও।
৩৫.
নীল মারুতির অভাব নেই কলকাতায়। বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে মনোজ আর সুব্রত একটু হাঁটতেই একটা নীল মারুতি দেখতে পেল। লক্ষ করল, ভিতরে কেউ নেই।
এটাই কি সুব্রত?
আমি শিয়োর নই। নম্বর প্লেটটা তো দেখে রাখিনি।
তা হলে?
সুব্রত গাড়ির বনেটে হাত রেখে তাপ অনুভব করে ঘাড় নেড়ে বলল, এটা নয় স্যার।
কী করে জানলে?
এটা হলে বনেট গরম থাকত। এটার বনেট ঠান্ডা, তার মানে অনেকক্ষণ পার্ক করা আছে।
কোয়াইট ইন্টেলিজেন্ট ডিডাকশন। চলো, আর একটু এগিয়ে দেখি।
তারা আরও একটু এগোতেই একটা মোড়। ডানধারে আর একটা সরু রাস্তা। সুব্রত থমকে বলল, স্যার!
হ্যাঁ, বলো।
ওই যে।
ডানধারে একটু ভিতরে একটা নীল মারুতি পার্ক করা।
এটাই যে তা কী করে বুঝলে?
বনেটের ওপর বড় করে একটা দুই লেখা আছে, চারধারে একটা সার্কল। সম্ভবত কোনও মোটর র্যালিতে পার্টিসিপেট করেছিল। মনে হচ্ছে ওভারহেড মিররে এটা দেখেছি, কিন্তু মনে পড়ছিল না।
গুড, চলো, লেট আস চেক।
ড্রাইভার তার সিটে বসে আছে, দেখতে পাচ্ছেন? বসে খবরের কাগজ পড়ছে।
মনোজ ভ্রু কুঁচকে বলল, লেট আস টক টু হিম।
কী বলবেন?
জিজ্ঞেস করব কার গাড়ি, এখানে কী করছে।
সুব্রত হাসল, এসব প্রশ্ন করার অধিকার কি আমাদের আছে? হি মে রি-অ্যাক্ট।
মনোজ হঠাৎ যেন সংবিৎ ফিরে পেয়ে বলল, তাই তো। তা হলে কী করা যাবে।
লাইসেন্স নম্বরটা মুখস্থ করে নিয়েছি। গাড়িটা কার তা হয়তো ট্রেস করা যাবে।
কীভাবে?
আমার এক আত্মীয় পুলিশে কাজ করেন। বিগ শট।
তা হলে কি আমরা ফিরে যাব?
না স্যার। ড্রাইভারকে একটু ক্রস করা যাক। জবাব না দিলেও ক্ষতি নেই। মতলবটা বোঝা যাবে।
মনোজ একটু দ্বিধা করছিল। কিন্তু সুব্রত বেশ গটগট করে এগিয়ে গেল দেখে সেও এগোল।
ড্রাইভারের জানালায় উঁকি দিয়ে সুব্রত হাসিমুখে বলল, গাড়িটা কি আপনার?
ড্রাইভার বেশ একজন শক্তপোক্ত লোক। চোখের দৃষ্টি কঠিন ও স্থির। মোটা গোঁফ, হাতে লোহার বালা, হাস্যহীন মুখ। বয়স পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ হবে। একটু অবাঙালি টানে বলল, কেন, কী দরকার?
আপনি আমাদের ফলো করে এখানে এসেছেন। কেন তা জানতে পারি?
লোকটা খবরের কাগজটা পাশে রেখে বলল, কে কাকে ফলো করেছে? ঝামেলা পাকাতে চান নাকি?
ঝামেলা আপনিই পাকিয়ে তুলছেন। আপনি কি জানেন যে আপনাকে পুলিশে দেওয়া যায়?
লোকটা ঠান্ডা গলায় বলল, এটা আপনার বাবার রাস্তা? হাল্লা মাচালে বহুৎ ঝঞ্ঝাট হয়ে যাবে। কেটে পড়ুন। ফলোটলো আমি করিনি, আপনাকে চিনিও না। যান, ভাগুন।
মনোজ একটু পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। সে একটু ভাবের জগতের মানুষ। বিজ্ঞান চিন্তা তার বাস্তববোধকে অনেকখানিই খেয়ে ফেলেছে। তবু কর্তব্যবোধবশে সে এবার এগিয়ে এসে বলল, গাড়িটা কার?
লোকটা মনোজের দিকে তাকিয়ে বলল, তা দিয়ে কী দরকার?
বলবেন না?
কেন বলব?
আপনারা তো ক্রিমিন্যাল।
ক্রিমিন্যাল! বলে লোকটা আচমকা দরজাটা খুলে ফেলল এবং দরজার ধাক্কাতেই মনোজকে ছিটকে ফেলে নেমে এল গাড়ি থেকে। নামতেই বোঝা গেল নোকটা প্রায় ছ’ফুট লম্বা, চওড়া কাঁধ এবং মোটা কবজি। বেরিয়ে এসেই মনোজকে একটা লাথি কষিয়েই সুব্রতকে ধরে ফেলল জামার বুকের কাছটায়। তারপর বাঁ হাতে চটাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল, শালা, মামদোবাজির আর জায়গা পাওনি।
মনোজ দরজার ধাক্কা আর লাথি দুটোতেই অকর্মণ্য হয়ে পড়েছিল। জীবনে এরকম মার সে খায়নি। ভোম্বলের মতো পথেই বসে সে হা করে সুব্রতর মার-খাওয়া দেখছিল। লোকটার সঙ্গে গায়ের জোরে সুব্রতর এঁটে ওঠার কথাও নয়। এক-আধবার হাত-পা চালানোর চেষ্টা করে আর একটা চড় খেয়ে সে নেতিয়ে পড়ল।
ভাগ শালা চুহা কোথাকার!
মনোজ উঠে দাঁড়াল। সুব্রত পড়েনি কিন্তু বোমকে গেছে খুব। মনোজ বলল, এনাফ ইজ এনাফ, লেট আস কুইট।
ইয়েস স্যার।
লোকটা জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে ছিল, যেন খেয়ে ফেলবে। এর সঙ্গে আর বেশিক্ষণ সময় কাটানোটা যে উচিত হবে না, সেটা বুঝে দু’জনেই যখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতে যাচ্ছে তখনই একটা নাটকীয় ঘটনা ঘটল।
গলির মুখ থেকে একটা লোক এগিয়ে এল। বেশ লম্বাচওড়া চেহারা। এসে তাদের অগ্রাহ্য করে সোজা এসে ড্রাইভারটাকে চুলের মুঠি ধরে একটা ঝাঁকুনি দিল, তারপর ডানহাতে বিদ্যুচ্চমকের মতো একটা ঘুসি মারল চোয়ালে।