ইউ আর রাইট। তবে একটা কথা আছে।
কী কথা?
জীবন অতীব ক্ষণস্থায়ী। কে কবে কীভাবে মারা যাবে তার ঠিক নেই। এই ক্ষণস্থায়ী আয়ুষ্কালের মধ্যে যদি সামান্য কয়েকটি মুহূর্তও আপনি জীবনের কাছে পেয়ে থাকেন, তাই বা কম কী? আমাদের জীবনে কয়েকটাই মাত্র গোন্ডেন মোমেন্টস আসে, বাদবাকি জীবনটা কাটে তার স্মৃতি রোমন্থন করে। তাই না?
তা বটে।
আচ্ছা, আজ অপরাহ্নে আমরা এত হাইলি ফিলজফিক্যাল হয়ে উঠলাম কেন বলুন তো!
তাই দেখছি।
ওটাই হল বয়সের দোষ। আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।
আপনি কি ত্রিশ পেরিয়েছেন?
আমি চল্লিশের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছি। দেখতে আমাকে একটু ছোকরা ছোকরা লাগে বটে, কিন্তু আই অ্যাম কোয়াইট ওল্ড।
ইউ আর নট এ গুড লায়ার।
আচ্ছা মশাই, নিতান্ত দরাদরিই যদি করতে চান, তা হলে না হয় আরও পাঁচ বছর হেঁটে দিচ্ছি। মে বি আই অ্যাম থার্টি ফাইভ।
বত্রিশের বেশি এক দিনও নয়।
সুধাকর একটু হাসল। তারপর বলল, ও কে দেন। লেট ইট বি থার্টি টু। বাট স্টিল আই অ্যাম ওল্ড।
গোপীনাথ স্মিত একটু হেসে বলল, আমার স্ত্রী সম্ভবত চা করছেন। উড ইউ লাইক টু জয়েন দি টি পার্টি?
নেমন্তন্নের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু উপায় নেই। আপনার সঙ্গে আমাকে যত না দেখা যায় ততই ভাল।
কিন্তু ডায়েরিটা। সেটা কবে পাব?
ডায়েরিটা ফটোকপি করা হচ্ছে।
ও। আমার জানার ছিল, ওতে সত্যিই কোনও ভাইটাল ক্লু আছে কি না।
আমি সায়েন্টিস্ট হলে বলতে পারতাম। তবে অনেক হিজিবিজি আছে, আপনি হয়তো বুঝবেন। আমি লাইনটা কেটে দিচ্ছি। কারণ আপনার ফ্ল্যাটে এখনই অতিথি সমাগম হবে।
পুলিশ নাকি? আজ সকালে তো তারা এসে ঘরময় সার্চ করেছে। ফটোও তুলেছে। জেরায় জেরায় জেরবার করেছে আমাদের। বলে গেছে আবার আসবে।
পুলিশের তো আসারই কথা। তবে এখন পুলিশ নয়, আসছেন রোজমারি আর মনোজ। সঙ্গে সুব্রত। একটা কথা বলে রাখি।
কী কথা?
দে আর বিয়িং শ্যাডোড। কেউ ওঁদের এখানে অনুসরণ করছে।
কে ওদের পিছনে আছে?
সুধাকর উদাস গলায় বলল, কেউ হবে। তবে রোজমারি সম্পর্কে আপনি একটু সাবধান থাকবেন।
কী ধরনের সাবধান?
ভদ্রমহিলা নিজে ততটা খারাপ নন। কিন্তু শি কিপস এ ব্যাড কম্প্যানি। এ ভিকটিম অফ সারকামস্ট্যান্সেস। হয়তো ব্ল্যাকমেলেরও শিকার।
আপনি এত জানলেন কী করে?
আই কিপ এ ট্যাগ অন হার।
আমি ওঁদের কী বলব? ওঁরা হয়তো একটা চাকরি অফার করবেন।
তাও জানি।
চাকরিটা আমি নেব বলে ঠিক করেছি।
কেন নেবেন? ওঁ
দের ল্যাবটা আমার কাজে লাগবে।
ল্যাবটা হয়তো আপনার উপযুক্ত হবে না।
তা হলে?
স্কিপ দি অফার।
তা হলে কাজ এগোবে কী করে?
অন্য উপায় আছে। আপনি কখনও লুলু বলে কারও নাম শুনেছেন?
গোপীনাথ একটু অবাক হয়ে বলল, হ্যাঁ।
নামটা মনে রাখবেন।
কেন বলুন তো!
দরকার আছে। কিন্তু আর নয়। দে আর অলমোস্ট অ্যাট ইয়োর ডোর।
সুধাকর ফোনটা কেটে দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডোরবেল বেজে উঠল। চায়ের ট্রে নিয়ে রান্নাঘর থেকে আসছিল সোনালি। বলল, দাঁড়াও, আমি খুলব। কে না কে, কে জানে বাবা। হঠাৎ তুমি সামনে যেয়ো না।
গোপীনাথ সোনালির ভয় দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল, খুব বীরাঙ্গনা হয়েছ বুঝি। ভয় নেই, রোজমারি আর মনোজ। তোমার বস।
আমার বস কেউ নেই। চাকরিটা আমি ছেড়ে দিয়েছি।
অবাক গোপীনাথ বলল, কবে ছাড়লে?
মনে মনে ছেড়েছি। কনসার্নটা আমার ভাল লাগছে না। ওরা তোমাকে কাজে লাগাতে চায়।
গোপীনাথ মৃদু হেসে বলে, তা হলে এখন তুমি বেকার?
তা আর হলাম কই? একজনের দেখভাল তো করতে হচ্ছে। আপাতত এটাই চাকরি। গোপীনাথ গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। সামনেই সুব্রত। মুখে হাসি, গোপীদা, মনোজবাবু আর রোজমারি এসেছেন দেখা করতে।
পরিচয় আর কুশল বিনিময় করতে করতেই গোপীনাথ দু’জনকে খুঁটিয়ে লক্ষ করছিল। মনোজ, যে খুব ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নয় তা তার মুখের নার্ভাস হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। রোজমারি গড়পরতা জার্মান মেয়েদের মতোই মজবুত গড়নের। মোটামুটি দেখতে ভালই। কিন্তু একটু চাপা উদ্বেগে ভুগছে।
রোজমারি সোনালির হাত ধরে পরিষ্কার বাংলায় বলল, পুনর্মিলন সুখের হোক। আমি ভাবতেই পারিনি কখনও যে, এরকমও হয়। আমি বাঙালি বা ভারতীয় হয়ে জন্মালে বেশ হত।
সোনালি লজ্জায় রাঙা হল।
রোজমারি জার্মান মেয়ে। ভ্যানতারা জানে না। সোজাসুজি গোপীনাথের দিকে চেয়ে বলল, আপনি কি আমাদের অফারটা নিচ্ছেন মিস্টার বোস?
গোপীনাথ মৃদু হেসে বলল, আপনি আমার ঘরখানা ভাল করে লক্ষ করেছেন কি?
না তো! কেন?
ভাল করে দেখুন। মেঝের চলটা উঠে গেছে, দেওয়াল থেকে খসে পড়েছে চাপড়া। কেন জানেন? এ ঘরে অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে ঝাকে ঝাকে গুলি চালানো হয়েছে আমাকে মারার জন্য।
রোজমারি সবই দেখল। তারপর বলল, ঈশ্বর! আপনি কি তখন ঘরে ছিলেন?
গোপীনাথ অম্লানবদনে মিথ্যে কথা বলল, না ম্যাডাম। থাকলে এতক্ষণে আমি মর্গে শুয়ে আছি।
খুব বেঁচে গেছেন আপনি।
গোপীনাথ মাথা নেড়ে বলল, বাঁচিনি। এর পরেও আমার ওপর অ্যাটাক হয়েছে। বাঁ কাধটা জখম। বুঝেছেন?
হ্যাঁ। কিন্তু
শুনুন ম্যাডাম, আমার জীবন এতই অনিশ্চিত যে, আমার কাছাকাছি কারও থাকা উচিত নয়। এই মুহূর্তেই যদি বাইরে থেকে কেউ গুলি চালায়, তা হলে আমাদের যে কারও বিপদ হতে পারে।
মনোজের মুখটা একটু ফ্যাকাশে দেখাল। সে বলল, তা হলে তো