কী চাও জো?
চাই, অদূর ভবিষ্যতে আমি গেলে আমাকে সাহায্য কোরো।
তুমি কবে আসবে?
হয়তো পরশু বা তার পরের দিন।
এত তাড়াতাড়ি?
এ কাজে দেরি করা সম্ভব নয়।
ফোন রেখে দিল জো। রোজমারি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে হঠাৎ ফের ফোনটা তুলে নিল।
মনোজ।
বলো
সোনালি কি আজ অফিসে এসেছে?
না। কেন বলো তো!
কোনও খবর দিয়েছে?
হ্যাঁ, ফোন করে জানিয়েছে কী যেন জরুরি কাজ, আসতে পারবে না।
তোমার ঘরে কেউ আছে?
হ্যাঁ।
আধঘণ্টা পর আমি যাচ্ছি তোমার ঘরে। ফ্রি থেকো।
ঠিক আছে।
আধঘণ্টা চুপচাপ বসে রইল রোজমারি। ভাবল আর ভাবল। তারপর উঠে ধীর পায়ে করিডর পেরিয়ে লন এবং লন পেরিয়ে মেন বিল্ডিং-এ ঢুকে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠল। সরাসরি মনোজের ঘরে না গিয়ে সে গিয়ে ঢুকল সোনালির ঘরে।
সাজানো ছোট্ট অফিসঘর। কম্পিউটার থেকে শুরু করে সব কিছুই খুব পরিচ্ছন্ন হাতে গুছিয়ে রাখা। রোজমারি সোনালির টেবিলটা একটু ঘটল।
সোনালির চেয়ারে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল রোজমারি। বাঙালিরা খুব রোম্যান্টিক জাত। এরা সহজে সম্পর্ক কেটে ফেলতে পারে না। মূল্যবোধ বা আবেগ একটু বেশিই বোধহয়। সোনালি না হলে কেনই বা গোপীনাথকে সঙ্গ দিচ্ছে? জো ক্লাইন গোপীনাথের যে সুন্দরী সঙ্গিনীর কথা বলেছিল তা যে সোনালি ছাড়া কেউ নয়, এ ব্যাপারে তার সন্দেহ নেই। ব্যাপারটা তার খারাপ লাগছে না। এরকমও হয় তা হলে। রোজমারি আপন মনেই। একটু হাসল।
তারপর উঠে পাশের দরজা দিয়ে মনোজের ঘরে ঢুকল সে।
মনোজ তার জন্যই অপেক্ষা করছিল। বলল, কী ব্যাপার?
গোপীনাথের ওপর কাল দু-দু’বার হামলা হয়েছে। দু’বারই রাইফেল চালানো হয় তার ঘরে। সে চোট পেয়েছে।
মনোজ অবাক হয়ে বলল, কী করে জানলে?
জানলাম। সূত্র বলা যাবে না।
মাথা নেড়ে মনোজ বলল, গোপীনাথ ইজ এ লস্ট কেস।
হাল ছেড়ে দিচ্ছ কেন? গোপীনাথ ইজ এ গুড সারভাইভার।
মনোজ মাথা নেড়ে বলে, ওটা কোনও ভরসার কথা নয়।
শোনো, আমার খবর আছে, সোনালি এখন গোপীনাথের কাছে রয়েছে।
বটে! বলে মনোজ খুব বিস্ময় প্রকাশ করল।
গোপীনাথকে বাঁচানোর একটা চেষ্টা আমাদের করতেই হবে।
কীভাবে?
তুমি ওর ঠিকানাটা সুব্রতর কাছ থেকে আদায় করো। তারপর চলল, তার সঙ্গে কথা বলি। সবাই মিলে একটা কিছু ঠিক করা যাবে।
কিন্তু তার আগে প্রশ্ন, গোপীনাথ পুলিশের সাহায্য নিচ্ছে না কেন?
বুদ্ধিমান বলেই নিচ্ছে না। পুলিশ তার প্রোটেকশনের কোনও ব্যবস্থা করতে পারবে বলে তোমার মনে হয়? তুমি সুব্রতকে ডাকো।
মনোজ কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে থেকে ফোন তুলে সুব্রতকে ডাকল।
সুব্রতর এসে হাজির হতে পাঁচ মিনিটও লাগল না।
বলুন স্যার।
সুব্রত, বিনা ভূমিকায় বলছি, তুমি কি গোপীনাথের ওপর লেটেস্ট হামলার কথা জানো?
সুব্রত গম্ভীর হয়ে বলল, জানি। কাল দুপুরে এবং মধ্যরাতে দু’বার অ্যাটাক হয়েছে।
গোপীনাথ ইজ এ স্টাবোর্ন পার্সন। আমরা তার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।
সুব্রত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ইট ডিপেন্ডস অন হিম। উনি চাইলেই সেটা সম্ভব।
মনোজ ফোনটা দেখিয়ে দিয়ে বলল, টক টু হিম, প্লিজ!
রোজমারি বাধা দিয়ে বলল, না, আমাদের সামনে নয়। আপনি বরং সোনালির ঘরে যান। ওখান থেকে ফোনটা করুন।
সুব্রত গেল। দু’মিনিট বাদে ফিরে এসে বলল, ইটস ও কে স্যার। এখন তিনটে বাজে। আমাদের চারটের মধ্যে পৌঁছুতে হবে।
.
গোপীনাথের ফ্ল্যাটের সব জানালায় মোটা পরদা টানা। ঘরগুলো প্রায় অন্ধকার। ব্যবস্থাটা করেছে সোনালি। পরদাগুলো ছিল একটা ডিভানের খোলের মধ্যে। সেগুলো বের করে পেলমেটের রডে ভরে এত বড় ফ্ল্যাটে সব কটা জানালা ঢাকা দিতে প্রচণ্ড পরিশ্রম গেছে। তার। শুধু তাই নয়, অবাধ্য ও চঞ্চলমতি গোপীনাথকে সামলাতেও হিমশিম খেয়েছে সে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই গোপীনাথ চুপিসারে বেরিয়ে যায়। সোনালি সাড়ে ছ’টায় উঠে তাকে খুঁজে না পেয়ে ভীষণ ঘাবড়ে দারোয়ানের কাছে গিয়ে খোঁজ নেয়। তারা জানায় গোপীনাথ ভোর পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে গেছে। সোনালির তখন রাগে হাত-পা নিশপিশ করছিল লোকটার আক্কেল দেখে। যখন চারদিক থেকে টেলিস্কোপিক রাইফেল আর খুনির চোখ ওকে তাক করছে তখন পাগলটা এমন ন্যালাখ্যাপার মতো বেরিয়ে যায় কোন সাহসে?
যাই হোক, দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে সাড়ে সাতটা নাগাদ গোপীনাথ ফিরল। হাতে বাজারের থলি।
সোনালি রাগে ফেটে পড়ল, কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
শান্ত গলায় গোপীনাথ বলল, ক্যাটারারের রান্না বড্ড একঘেয়ে লাগছে। বড্ড রিচও। ভাবছি আজ থেকে আমরা রান্না করে খাব।
চোখ কপালে তুলে সোনালি বলল, সেইজন্য তুমি বাজারে গিয়েছিলে? কেন, বাজার তো আমিও করতে পারতাম।
গোপীনাথ তখন পকেট থেকে একটা কার্তুজের খোল বের করে হাতের তেলোয় মেলে ধরল সোনালির চোখের সামনে। বলল, এটার জন্যও।
কী ওটা?
কার্তুজের খোল। ওই হলুদ বাড়িটার ছাদে পেলাম।
সোনালি বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল। তারপর বলল, তুমি একা গিয়ে ওবাড়ির ছাদে উঠেছিলে?
গোপীনাথ হেসে বলল, ইজি। ওটা একটা থার্ড গ্রেড ভাড়াটে বাড়ি। উঠে গেলাম, কেউ বাধা দিল না।
ধন্যি তোমাকে।
ঘণ্টাখানেক তাদের কথা বন্ধ ছিল। কথা চালু হল, বেলা ন’টায় দু’কাপ গরম কফি সহযোগে। খুব সতর্কতার সঙ্গে।
ব্যথাটা কেমন আছে?
নেই তেমন।