আমার একজন সঙ্গী মারা গেছে।
একটু অবাক হয়ে রোজমারি বলে, তাই বুঝি? কী করে মারা গেল?
খুব ভাল জানি না। তবে যতদূর মনে হচ্ছে তার হন্তা স্বয়ং গোপীনাথ বসু।
জীবনে এমন অবাক কমই হয়েছে রোজমারি। বলল, গোপীনাথ বসু খুন করেছে?
হ্যাঁ, তাও আবার একজন পেশাদার খুনিকে।
কীভাবে?
আমার কথা রেকর্ড করছ না তো!
না না! কী যে বলো।
তা হলে বলতে পারি। ডিউক একজন পেশাদার খুনি। হাই রেটিং। সে পৃথিবীর সব বড় বড় শহরে খুন করে এসেছে। এ ব্যাপারে তার প্রতিভা ছিল প্রবাদের মতো। তার ব্যর্থতার কথা শোনাই যায় না।
রোজমারি আর একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল। গোপীনাথ অন্তত একটা খুনিকে সরিয়েছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
তারপর বলো।
গোপীনাথের ডেরাটা আমরা খুঁজে বের করেছি। দেখলাম গোপীনাথ যেন বিপদকে নেমন্তন্নের চিঠি দিয়ে বসে আছে। তার বাড়ির দু’দিকে রং করার জন্য বাঁশের সিঁড়ি তৈরি হয়েছে। ডিউক বলল, তার নিউ ইয়র্কে ফিরে যাওয়ার তাড়া আছে, গতকাল বিকেলের প্লেন ধরবে। তাই সে দুপুরেই কাজ হাসিল করবে বলে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। গুলিও চালিয়েছিল। আমরা দুরবিন দিয়ে দেখেছি। কিন্তু গোপীনাথ দৌড়ে এসে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
ব্যস?
হ্যাঁ, ব্যস। খুব সাদামাটা ব্যাপার না?
এত প্রতিভাবান খুনিকে এনেও হল না?
না, কিন্তু শোনো রোজমারি গোপীনাথকে মারতে আমরা শুধু আসিনি। আরও লোক এসেছে। কাল মধ্যরাতে তার ওপর আরও একটা অ্যাটাক হয়। এবার সে বেঁচে যায়নি।
সর্বনাশ! কী হয়েছে লোকটার? মারা গেছে?
না। লোকটার বেড়ালের প্রাণ। আহত বটে, তবে বেঁচে আছে।
সত্যি কথা বলো।
সত্যিই বলছি। তুমি কি বিশ্বাস করবে যে, রাতে গুলি খেয়েও লোকটা আজ ভোর পাঁচটায় কাছাকাছি একটা বাড়ির ছাদে গিয়ে উঠেছিল?
কেন?
ওই বাড়ি থেকে তাকে গুলি করা হয়। টেলিস্কোপিক রাইফেলে। ছাদে সম্ভবত একটা বুলেটের খোল ছাড়া কিছু পায়নি সে।
জো, এটা কারা করেছে?
তা জানি না, আমরা বিদেশি। এদেশে এত তাড়াতাড়ি তথ্য সংগ্রহ করা অসম্ভব। আরও কথা আছে।
কী কথা জো?
গোপীনাথ বসুর সঙ্গে একজন মহিলা আছেন। খুব সুন্দরী। সে কে জানো?
না তো!
কে হতে পারে?
কী করে বলব?
আমরা জানতে চাই মহিলাটি কি ওর নিরাপত্তারক্ষী?
এসব আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন জো? আমি তো এখনও গোপীনাথের কলকাতার ঠিকানাটাও জানি না।
ঠিকানা জানলেও লাভ নেই। তুমি গোপীনাথকে বাঁচাতে পারবে না। সে এখন ঘোর বিপদে। কাল মধ্যরাতে যে বা যারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারাও পেশাদার।
জো তোমাকে একটা কথা বলব?
বলো।
তোমরা আর চেষ্টা কোরো না। গোপীনাথকে ছেড়ে দাও।
রোজামারি, মানুষ মেরে কি আমার আনন্দ হয় বলে তোমার ধারণা? তা নয়। আমরা যাদের হয়ে কাজ করি তাদের হুকুম তামিল করা ছাড়া আমাদের অন্য উপায় নেই।
তুমি কি এতটাই খারাপ হয়ে গেছ জো?
কোনটা খারাপ, কোনটা ভাল, সেটাই তো এখন বিতর্কের বিষয়। পুরনো সব ধারণাকে নতুন করে নেড়েচেড়ে দেখা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে সারভাইভ্যালের শর্ত পূরণ করতে গেলে আমাদের পুরনো ধারণা বর্জন করতেই হবে। এটা হল বৌদ্ধিক যুগ, বুদ্ধি যার যত বেশি সে তত ভাল ভাবে বাঁচে। নৈতিকতার কানাকড়ি দাম নেই।
বক্তৃতা দিয়ো না জো। তুমি যা বলছ তা তুমি নিজেও বিশ্বাস করো না।
আগে করতাম না। আজকাল আমার মগজধোলাই হয়ে গেছে। শোনো রোজমারি, আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছের কোনও দাম নেই। যে কাজের ভার আমাদের দেওয়া হয়েছে, তা শেষ করতেই হবে। নইলে বিপদ।
তার মানে তুমি আবার চেষ্টা করবে?
এখনই নয়। কারণ ডিউকের আকস্মিক মৃত্যুতে আমাদের কর্মসূচি ওলটপালট হয়ে গেছে।
কীরকম?
পুলিশ ডিউককে ট্রেস করতে করতে আমাদের খুঁজে বের করবেই। তারপর আমরা পড়ে যাব সাংঘাতিক জটিলতায়। সুতরাং ডিউক মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিকেলেরই একটা ফ্লাইট ধরে কলকাতা থেকে পালিয়েছি।
কোথায় পালালে?
আপাতত আমস্টারডামে।
এত তাড়াতাড়ি?
এসব কাজে সময় একটা মস্ত বড় জিনিস।
রোজমারি গভীর একটা শ্বাস ফেলে বলল, তুমি তা হলে কলকাতায় নেই।
না রোজমারি। খুনটা করার পরই আমাদের বিকেলের ফ্লাইট ধরার কথা ছিল। আমরা সেই ফ্লাইটটাই ধরেছি। তবে আমাকে আবার খুব শিগগিরই দেখতে পাবে কলকাতায়।
তুমি ফিরে আসবে!
আসতেই হবে। তবে অন্য নামে, অন্য পাসপোর্টে। সঙ্গে থাকবে আর একজন খুনি, যদি ততদিনে গোপীনাথ আর কারও হাতে খুন হয়ে যায়।
খুন হলে?
তাও আসব। তোমার কারখানার বিষয়ে আমাদের কৌতূহল তো শেষ হয়নি।
শোনো জো ক্লাইন, তোমাদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের কারখানাটা বিক্রিই করে দিতে হবে। অনেক খদ্দের ঘোরাঘুরি করছে। বেচে দিয়ে আমি আর মনোজ ফের জার্মানিতেই ফিরে যাব।
সেটা বোকার মতো কাজ হবে রোজমারি। তোমার ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যালয় যে একদিন কোটি কোটি ডলার রোজগার করবে এটা তোমার জানা উচিত।
আমার টাকার দরকার নেই। দরকার শান্তিতে বেঁচে থাকার।
তাই কি রোজমারি? তুমি কি শান্তি সত্যিই ভালবাসো?
রোজমারি একটু চুপ করে থেকে বলল, তুমি নিশ্চয়ই আমার অতীত নিয়ে ফের কথা শুরু করবে না।
না। তবে রোজমারি সম্পর্কে আমার একটা পরিষ্কার ধারণা আর হিসেবনিকেশ আছে। সেটা ভুলে যেয়ো না।