তুমি তো একা লড়াই করছ না। তোমাকে অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে। তা
হচ্ছে। কিন্তু তুমি তো সাহায্যকারী নও। বরং বাধা সৃষ্টি করছ।
বিপ্লবীর জুতো যদি কেউ সেলাই করে দেয় তা হলে সেও বিপ্লবে সাহায্যই করে।
তার মানে?
আই ক্যান হেলপ ইন স্মল ওয়েজ।
কীভাবে?
আই ক্যান মেক দি কফি।
মাই গড। ইউ আর ইমপসিবল।
সোনালি রঙ্গরসিকতার মেয়ে নয়। সে সিরিয়াস টাইপের। এরকম কথাবার্তা সে সহ্যও করতে পারে না। তবু এখন সয়ে নিল।
দশ মিনিট বাদে দু’কাপ কফি নিয়ে দুটো যুযুধান বেড়ালের মতো বাইরের ঘরে মুখোমুখি বসল তারা। ঘরে একটা ফুট লাইট জ্বলছে মাত্র। তার আলোর আভায় দু’জনে দু’জনকে আবছা দেখতে পাচ্ছে মাত্র।
গোপীনাথ হঠাৎ নরম গলায় বলল, গো হোম সোনালি। কাল সকালেই লিভ মি অ্যালোন।
যাব কি যাব না সেই সিদ্ধান্ত আমিই নেব। তোমার হুকুমে নয়।
ইউ আর নট বিয়িং অফ এনি হেলপ।
সেটা তোমার
সোনালি কথাটা শেষ করার আগেই ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙার বিকট শব্দের সঙ্গে তীব্র শিস দেওয়ার শব্দ তুলে একটা বুলেট ঘরের ভিতর ছুটে এল।
চেয়ার সমেত উলটে পড়ল গোপীনাথ। কয়েক সেকেন্ডের বিহুলতা থেকে সে চকিত পায়ে উঠে দাঁড়াল।
সোনালি!
সোনালি জায়গায় নেই। কফির কাপটা রয়েছে শুধু।
গোপীনাথের বাঁ দিকটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। না, সম্পূর্ণ বেঁচে যায়নি সে। বাঁ কাধ ফুঁড়ে বুলেটটা গেছে। সামনে থেকে পিছনের দিকে। সামান্য কৌণিক হেরফেরে তার গলার নলি ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে পারত।
আশ্চর্য এই, গোপীনাথের ভয় যেন আরও কমে গেল। মাথা যেন আরও শীতল হয়ে কম্পিউটারের মতো কাজ করতে লাগল। প্রথমেই সে ফুটলাইটটা নিভিয়ে দিল। বাঁ দিকের জামা ক্রমে ভিজে যাচ্ছে আরও। গোপীনাথ বাঁ হাতটা তুলল। তুলতে পারছে এখনও। হাড় ভাঙেনি। ক্ষত শুধু কাঁধের পেশিতেই বলে মনে হচ্ছে।
সোনালি।
অন্ধকারে সোনালি চকিত পায়ে এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল।
কোথায় গিয়েছিলে?
জানালায়। ওই হলুদ বাড়িটার ছাদ থেকে গুলি চালিয়েছে।
দেখেছ?
হ্যাঁ। একটা লোক। তার হাতে রাইফেল। আবছা।
দেখেও জানালায় দাঁড়িয়ে ছিলে?
বাড়িটা চিনে রাখার দরকার ছিল। এখন চুপ করো।
গোপীনাথ একটা শ্বাস ফেলল।
হঠাৎ সোনালি বলল, তোমার কী হয়েছে বলো তো।
নাথিং মাচ।
তার মানে? তোমার জামা…মাই গড! কী হয়েছে? গুলি লেগেছে নাকি?
চেঁচামেচি কোরো না। সামান্য চোট।
সামান্য। সামান্য। ইউ আর ব্লিডিং লাইক হেল। কোথায় লেগেছে?
কাঁধের চামড়া ঘষে চলে গেছে। সিরিয়াস নয়।
সোনালি দৌড়ে শোয়ার ঘরে গিয়ে অ্যান্টিসেপ্টিক ওষুধ আর ব্যান্ডেজ নিয়ে এল। বলল, ড্রেসিং করতে হলে বাতি জ্বালতেই হবে। আমি উন্ডটাও দেখতে চাই।
অবসন্ন গোপীনাথ জামাটা খুলে ফেলে সেটা দিয়েই ক্ষতস্থান চাপা দিয়ে বলল, যা খুশি করো। আজ রাতে আর হামলা হবে বলে মনে হয় না।
বাতি জ্বেলে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সোনালি তার ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধল। বলল, ডিপ হয়ে কেটেছে। ডাক্তার ডাকতেই হবে।
কাল সকালে দেখা যাবে।
চলো, শুয়ে থাকবে।
গোপীনাথ উঠতে যাচ্ছিল। ফোন বেজে উঠতেই ফোনটা ধরল।
ভারী গম্ভীর গলাটা বলল, সরি মিস্টার বোস। এই অ্যাটাকটার জন্য কিছু করার ছিল।
জানি। আমি কিছু মনে করিনি।
আমি কি আসব? আর ইউ ফিট?
গুলিটা কাঁধে লেগে বেরিয়ে গেছে। চিন্তা করবেন না, আমার স্ত্রী আমাকে অ্যাটেন্ড করছেন।
সরি মিস্টার বোস।
ডোন্ট বদার। এরকম তো হতেই পারে।
একটা কথা বলব?
বলুন।
ইউ আর অ্যান এক্সট্রিমলি কারেজিয়াস ম্যান।
গোপীনাথ একটু হাসল। বলল, মরিয়ার সাহস। ওটাও তেমন ইম্পর্ট্যান্ট কিছু নয়।
কাল সকাল আটটায় একজন ডাক্তার আপনাকে দেখতে আসবেন। ডা. বিনয় দাশগুপ্ত। খুব নামকরা ডাক্তার।
এত তাড়াতাড়ি ডাক্তার ঠিক করে ফেললেন?
করাই ছিল। আপনার যে-কোনও ইভেনচুয়ালিটির জন্য। পেন কিলার বা কিছু লাগবে?
না। সহ্য করা যাবে।
বাই দেন।
বাই।
সোনালি তাকে দাঁড় করিয়ে বলল, আমার কাঁধে ভর দেবে?
দরকার নেই। সব ঠিক আছে।
অনেকটা রক্ত গেছে। তোমার দুর্বল লাগার কথা।
লাগছে না। আমার হয়তো বাড়তি রক্ত আছে।
তাকে শোয়ার ঘরে এনে শোয়াল সোনালি। জানালার পরদাগুলো ভাল করে টেনে দিয়ে বলল, কাঁচের জানলা খুব বাজে জিনিস।
হ্যাঁ। ফুটলাইট জ্বালানো আমার উচিত হয়নি। ওই আলোতে আমাদের দেখতে পেয়েছে।
এখন তুমি ঘুমোও দয়া করে।
আর তুমি?
আমাকে নিয়ে ভেবো না।
ভাবতে চাইছে কে? ভাবিয়ে তুলছ বলেই ভাবছি।
শোনো, আমি তোমার স্ত্রী নই।
নও-ই তো। হঠাৎ কথাটা উঠছে কেন?
ফোনে কাকে যেন বললে, আমার স্ত্রী আমাকে অ্যাটেন্ড করছেন। কেন বললে।
আত্মরক্ষার্থে বলা। ঘরে বয়সের একজন স্ত্রীলোক, তার একটা লজিক্যাল কারণ থাকবে ত।
সেইজন্যই বললে?
হ্যাঁ।
সত্যি কথাটাই বললে পারতে। ওরা বোধহয় সবই জানে।
তাও ঠিক।
এবার ঘুমোও। ঘুমের ওষুধ খাবে?
না। আমার ঘুম আসবে এমনিতেই। টেনশন নেই।
তুমি খুব ঠান্ডা রক্তের মানুষ।
কেন বলো তো?
গুলি খেলে, অথচ নির্বিকার।
মে বি আই অ্যাম ইকুয়ালি ডেনজারাস।
৩৩.
সুপ্রভাত রোজমারি।
জো। তোমার কী খবর? কই কারখানা দেখতে এলে না তো।
একটা ছোট্ট বাধা হয়েছে।
রোজমারি একটু নিশ্চিন্ত হল। জো তার দলবল নিয়ে কারখানা দেখতে আসুক এটা সে চাইছে না মনেপ্রাণে। সে একটা খাস মোচন করে বলল, তাই বলল। কীসের বাধা?