ইউ সেন লোকটা কে তাও বুঝতে পারছে না গোপীনাথ। সে ফোনটা তুলে নম্বরটা ডায়াল করল। একবার রিং হতে না হতেই কে যেন ফোনটা তুলে নিল। একটা অত্যন্ত ভারী ও গম্ভীর গলা বলল, বলুন।
আপনি কি ইউ সেন?
হ্যাঁ।
পুরো নামটা কী?
উমাপদ সেন।
আমার বিপদ ঘটলে আপনাকে টেলিফোন করার হুকুম হয়েছে।
আপনার কি এখন কোনও বিপদ ঘটেছে?
না। আমি শুধু ব্যাপারটা যাচাই করছিলাম।
ও
আপনি কি সুধাকর দত্তর লোক?
তাও বলতে পারে।
কী করেন?
এই টুকটাক।
তার মানে, বলতে চান না?
লোকটা চুপ করে রইল।
গোপীনাথ বলল, আমার জানা দরকার আমি বিপদে পড়লে আমাকে রক্ষা করার মতো যথেষ্ট দক্ষতা আপনার আছে কি না।
উমাপদ বলল, গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। তবে যোগ্যতা বা দক্ষতার ব্যাপারে চিন্তা করবেন না। আমি প্রফেশনাল।
আপনার প্রফেশনটা কী সেটাই জানতে চাইছি।
ধরুন সিকিউরিটি গার্ড।
আপনি কি ব্ল্যাক ক্যাট বা কম্যান্ডো ট্রেনিং নিয়েছেন?
তার চেয়েও বেশি। ট্রেনিং নিয়ে ভাববেন না।
আপনার সঙ্গে আমার দেখা হওয়া দরকার। যদি আমার ফ্ল্যাটে চলে আসেন তা হলে উই মে হ্যাভ কফি টুগেদার। কথাও হবে।
সেটা খুব ওয়াইজ ডিসিশন হবে না মিস্টার বোস।
কেন?
কারণ ইউ আর আন্ডার অবজার্ভেশন। আমাকে আপনার সঙ্গে দেখা গেলে দি ক্যাট উইল বি আউট অফ দি ব্যাগ। দেখা করার দরকার নেই। আমি আপনাকে চিনি।
কিন্তু আমি আপনাকে চিনি না।
তার দরকার নেই। আমাকে চিনে গেলে আপনার বরং অসুবিধেই হবে।
সুধাকর দত্ত সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন?
কী জানতে চান?
লোকটা আসলে কে?
উনি নিশ্চয়ই আপনাকে বলেছেন।
যা বলেছেন তা থেকে কিছুই বোঝা যায় না।
বুঝবার দরকার নেই। উনি তো আপনাকে সাহায্যই করছেন।
তা করছেন। কিন্তু সেটা তো স্বার্থের খাতিরে শত্রুও করে।
শত্রুতা করার আগেই শত্রু বলে ধরে নিচ্ছেন কেন?
আমাকে তো উনি বিনা স্বার্থে রক্ষা করছেন না।
না। স্বার্থ তো থাকতেই পারে। স্বার্থ ছাড়া দুনিয়ায় কিছুই ঘটে না।
আপনি সুধাকর সম্পর্কে আরও একটু স্পেসিফিক হতে পারেন কি?
আমি সামান্যই জানি ওঁকে।
গোপীনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, না মশাই, আপনার সঙ্গে কথা বলা মানে একটা টেপ রেকর্ডারের সঙ্গে কথা বলা। যা শেখানো হয়েছে তা ছাড়া আর কিছুই বলবেন না তো!
কথা কম না বললে এই পেশায় টিকে থাকা কঠিন।
আমার ভয় হচ্ছে আমাকে কেন্দ্র করে আরও কিছু খুনখারাপি হবে। আপনি কি জানেন যে, আজ আমার হাতেও…
জানি, জানি। আপনাকে বলতে হবে না। আপনি এখন রেস্ট নিন। গুড নাইট। আর শুনুন ফ্ল্যাটের সব বাতি নিভিয়ে রাখবেন প্লিজ।
এ লোকটাও অভদ্রের মতো কথার মাঝখানে ফোন কেটে দিল।
গোপীনাথ অন্ধকারে বসে তার ঘড়ি দেখল। জ্বলজ্বলে ডায়ালে রাত সাড়ে তিনটে বাজে।
টর্চ নিয়ে সে উঠল। শোয়ার ঘরের দরজা খোলা রেখেই সোনালি ঘুমিয়েছে। এরকমটা হওয়ার কথা নয়। আইনত এবং বিধিমতো তারা এখন সম্পর্কহীন দু’জন যুবক-যুবতী। সোনালির এ কাজটা উচিত হয়নি। আবার হয়তো অন্যদিক দিয়ে দরজা খোলা রাখার দরকার ছিল। বিপদ ঘটলে পরস্পরের কাছে দ্রুত পৌঁছোনোর সুবিধে। দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে দরজার ফ্রেমে দাঁড়িয়ে অনিচ্ছুক হাতে টর্চটা বিছানায় ফেলল সে। কিন্তু বিছানায় সোনালি নেই।
অবাক হয়ে গোপীনাথ টর্চটা এধারে ওধারে ঘুরিয়ে ফেলে দেখল। বাথরুমের দরজা সামান্য ফাঁক এবং ভিতরে অন্ধকার।
অনুচ্চ কণ্ঠে গোপীনাথ ডাকল, সোনালি!
কোনও জবাব নেই।
গোপীনাথের বুকটা বিনা কারণেই ধক করে উঠল। কোথায় গেল সোনালি। সে ঘরটা আর একবার ভাল করে দেখে পাশের শোয়ার ঘরে যাওয়ার দরজাটা খুলে টর্চ ফোকাস করতেই সোনালিকে দেখতে পেল। একটা কালো চাপা প্যান্ট আর কালচে কামিজ পরা সোনালি জানালা দিয়ে একটু ঝুঁকে বাইরে কিছু দেখছে।
সোনালি, কী করছ?
সোনালি শরীরের উর্ধ্বাংশ ভিতরে নিয়ে এসে তার দিকে চেয়ে বলল, ঘুম আসেনি। চারদিকটা দেখছি।
গোপীনাথ উদ্বেগের গলায় বলল, ডু ইউ নো দ্যাট ইউ আর কমপ্লিটলি এক্সপোজড টু আউটার ডেনজারস?
কীভাবে?
আশেপাশে হাইরাইজের অভাব নেই। ইচ্ছে করলেই টেলিস্কোপিক রাইফেলে ছিঁড়ে ফেলতে পারে তোমাকে।
কিছু হবে না। অত চিন্তা কোরো না তো।
এ ঘরে এসো সোনালি। ঘুমোও।
আমার ঘুমের কোটা ফুরিয়েছে। এবার তুমি ঘুমোও।
আর তুমি?
আমি পাহারা দেব। গোপীনাথ হতাশায় মাথা নেড়ে বলে, তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। বড্ড হেডস্ট্রং তো তুমি। বলেছি না, ঠিকমতো না ঘুমোলে তুমি পাহারাটাও ঠিকমতো দিতে পারবে না। অসময়ে ঘুম পেয়ে যাবে। ক্লান্ত লাগবে, দুর্বল লাগবে।
ঘুম না এলে কী করব?
ইউ আর এ প্রবলেম। এমনিতেই আমার সমস্যার অভাব নেই। তার ওপর তুমি!
সোনালি বলল, ফোনে তুমি দু’জনের সঙ্গে কথা বলেছ। একটা কল এসেছিল রোম থেকে। আর একটা কল তুমি করেছ। লোকটা কে?
গোপীনাথ একটু অসন্তোষের গলায় বলল, আড়ি পেতেছিলে নাকি?
আড়ি পাততে হয়নি। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।
ও
কফি খাবে?
খাব। কিন্তু তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।
কষ্টের কী?
বাকি রাতটা কি জেগেই কাটাবে?
আজ রাতে আমার ঘুম আসবে না।
এরকম করলে কাল তুমি বরং বাড়ি ফিরে যাও। তোমার জন্য আমার বাড়তি টেনশন হচ্ছে।
আমি বাড়ি যাব না।
এটা আমার ওপর জুলুম করা হচ্ছে। লেট মি ফাইট মাই ওন ওয়ার।