ভয় পেলেন নাকি?
চেনা গলা। গোপীনাথ হেসে বলল, অনেকদিন বাদে যে?
হ্যাঁ। একটু ঘুরপাক খেতে হচ্ছিল। কী খবর?
ভাল নয়।
জানি। আজ আপনার ওপর একটা অ্যাটেম্পট হয়েছে তো।
হ্যাঁ। জানলেন কী করে?
আমার দুটো অপদার্থ শাকরেদ আপনার ওপর এখনও নজর রাখছে।
হ্যাঁ তারা অপদার্থই বটে। বিপদের সময়ে কাজে লাগে না।
নজর রাখাটাই কাজ। আর রক্ষা করা? সেই নিরাপত্তা কে কাকে দিতে পারে বলুন। তবে ওরা দুরবিন দিয়ে পুরো ঘটনাই দেখেছে।
দেখেছে! কী আশ্চর্য!
পালা করে ওরা আপনার ফ্ল্যাটটা নজরে রাখে।
তারা থাকে কোথায়?
কাছাকাছি একাট হাইরাইজে। সেখানে একটা ফ্ল্যাট নেওয়া হয়েছে।
ও বাবা। বেশ কোমর বেঁধে নেমেছেন দেখছি।
আপনি বেশ কৃতিত্বের সঙ্গেই লোকটাকে এলিমিনেট করেছেন শুনেছি। কংগ্রাচুলেশনস।
লোকটা কে?
তা জানি না। চেহারার বিবরণ থেকে বুঝতে পারছি ও ডিউক।
সে কে?
আপনি চিনবেন না। আন্ডারওয়ার্ল্ডের লোক।
পাজি।
ভয়ংকর। অসম্ভব সাহসীও। আপনি জোর বেঁচে গেছেন।
কিন্তু কতদিন?
যতদিন পারা যায়। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।
অ্যাডভারসারিদের যত দেখছি তত মনে হচ্ছে আমার চান্স কম।
কম হলেও আছে। হাফ চান্স থেকেও কি গোল হয় না?
গোপীনাথ হাসল, বেশ বলেন আপনি। স্ত্রী
কে সঙ্গে রেখে কিন্তু ভাল কাজ করেননি।
গোপীনাথ বিষণ্ণ হয়ে বলে, জানি। কিন্তু শুনল না।
কেন? ইজ শি ইন লাভ উইথ ইউ ফর দি সেকেন্ড টাইম?
না। দেয়ার ওয়াজ নট ইভন এ ফাস্ট টাইম।
তা হলে?
কেউ ওকে বুঝিয়েছে আমার বিপদের দিনে ওর পাশে থাকা উচিত। সর্ট অফ আত্মত্যাগ।
কে বুঝিয়েছে? সুব্রত?
আপনি কি অন্তর্যামী নাকি মশাই?
সর্ট অফ। আজকাল সে-ই অন্তর্যামী যে ওয়েল ইনফর্মড। আমার নেটওয়ার্ক খুব ভাল।
তাই দেখছি। হ্যাঁ, কাণ্ডটা সুব্রতই করেছে।
শুনুন মশাই, আপনি একজনকে এলিমিনেট করেছেন মাত্র। বাট দেয়ার আর মোর পিপল আফটার ইউ।
অনুমান করছি।
ডোন্ট ডাই লাইক এ হিরো। র্যাদার ফাইট লাইক এ কাওয়ার্ড। বাট ডোন্ট ডাই।
বাঁচা-মরা কি আমার হাতে?
খানিকটা। এবং অনেকটা। আপনি বিশ্রাম নিতে পারেন। আমার লোকেরা আজ সারারাত আপনার ফ্ল্যাটের বাইরেটা স্ক্যান করবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই আপনাকে রিং করবে ফোনে।
আর দে রিলায়েবল?
মোর অর লেস।
বাড়ির ভিতরে যদি কেউ ঢুকে থাকে?
ইয়েস দেয়ার ইজ এ পসিবিলিটি। ইউজ দা গান ইফ নিড বি।
আমি জীবনে বন্দুক পিস্তল চালাইনি। ও পারব না।
সব কিছুই একদিন শুরু করতে হয়।
আমি পারব না।
তা হলে জেগে থাকুন। আপনার ওপরতলায় একজন ভদ্রলোক থাকেন। ইউ সেন। চেনেন?
না। কাউকেই চিনি না।
তার ফোন নম্বরটা দিচ্ছি, টুকে নিন।
কেন?
দরজায় কেউ নক করলে আগে তাকে ফোন করবেন।
একে কবে প্ল্যান্ট করলেন এখানে?
আজই।
এত তাড়াতাড়ি?
ফ্ল্যাটটা খালি ছিল। ইউ সেন করিতকর্মা লোক।
ফোন করলে তিনি কী করবেন?
করবেন কিছু। নম্বরটা নিন।
নিচ্ছি।
ফোন নম্বরটা টুকে নিয়ে গোপীনাথ বলল, ধন্যবাদ।
ধন্যবাদের কিছু নেই। আপনি কারেজিয়াস ম্যান।
এটা কমপ্লিমেন্ট, না ঠাট্টা?
কোনটা মনে হয়?
ঠাট্টা।
শুনুন মশাই, আজ যা কাণ্ড ঘটেছে তাতে আপনার জায়গায় আমি থাকলেও ন্যাজ গুটিয়ে পালাতাম। অত্যধিক সাহস আছে বলেই আপনি এখনও পালাননি।
আমার পালানোর জায়গা নেই।
পালাতে চাইলে জায়গাও হয়ে যেত।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
করুন না।
আপনি আমার শত্রু না বন্ধু?
সুধাকর হেসে উঠল। বলল, কী মনে হয়?
কখনও শত্ৰু, কখনও বন্ধু। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
পারবেন। কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
আপনি ভিকিজ মব-এর একটা শাখার প্রধান, ঠিক তো?
ঠিক।
ভিকিজ মব যে মারাত্মক গুণ্ডার দল তা সবাই জানে।
জানারই কথা।
তা হলে তো আপনি ভাল লোক নন।
সুধাকর আবার হাসল, ভাল বলে দাবি করিনি তো।
আবার আপনি ইন্টারপোলের এজেন্ট বলেও শুনি। কোনটা ঠিক?
হয়তো দুটোই ঠিক। হয়তো দুটোই ভুয়ো। আমাকে নিয়ে ভাবছেন কেন?
আপনি এখন কোথা থেকে কথা বলছেন?
রোম থেকে।
রোম?
হ্যাঁ। রোম এবং আদ্রেঁর ফ্ল্যাট থেকে।
মাই গড! আরে ফ্ল্যাট থেকে?
হ্যাঁ। আদ্রেঁর ব্যক্তিগত ডায়েরিটা খুঁজছি।
সর্বনাশ! সেটা যে আমার ভীষণ দরকার।
জানি। আদ্রেঁর পেপার্সে ডায়েরিটার রেফারে আছে।
সেটা পেয়েছেন?
এখনও নয়। ঝামেলা আছে।
কীসের ঝামেলা?
আদ্রেঁর ফ্ল্যাটে ঠিক এই মুহূর্তে দুটো লাশ পড়ে আছে। সদ্য খুন হওয়া, গা ভাল করে ঠান্ডা হয়নি।
বলেন কী?
এই নিয়ে আদ্রেঁর ফ্ল্যাটে গত দশ দিনে চারটে খুন হল।
কেন এসব হচ্ছে?
লোকে হয়তো ডায়েরিটাকে গুপ্তধনের মর্যাদা দিচ্ছে আর প্রাণ বাজি রেখে সেটা খুঁজতে আসছে।
খুনগুলো করছে কারা?
সিকিউরিটি এজেন্টরা। তারা অবশ্য খুন করছে বাধ্য হয়েই। নইলে তাদেরই খুন হতে হয়।
সিকিউরিটি এজেন্ট? সরকারি কি?
তাও বলতে পারেন।
তারা কি আপনার লোক?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুধাকর বলল, দুঃখের বিষয় তারা আমারই লোক। নিহতরা সকলেই মাফিয়া।
৩২.
সুধাকর দত্ত লোকটা অভদ্রও বটে। জরুরি কথার মাঝখানেই হঠাৎ বলে উঠল, মশাই, আর কথা নয়। দরজায় নক শুনতে পাচ্ছি। গুডবাই।
বলেই ফোনটা কট করে কেটে দিল।
গোপীনাথও ফোনটা রাখল। আদ্রেঁর ডায়েরি বিষয়ে তার আরও খানিকটা জানার ছিল। ঘটনার যা গতি ও প্রকৃতি তাতে ডায়েরিটা এখনই দরকার। সুধাকর যা বলছে তাতে মনে হয়, দুনিয়াসুদ্ধ লোক ডায়েরিটার কথা জানে এবং সবাই প্রাণ বাজি রেখে নেমে পড়েছে সেটা হাতিয়ে নিতে। ডায়েরিটা পাওয়া না গেলে আদ্রেঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করা বোধহয় কঠিন হবে।