বরং তা হলে সেটাই জানুন।
হ্যাঁ। আসুন, ওখানে একটা চমৎকার পাথরে বাঁধানো বসার জায়গা দেখতে পাচ্ছি। ছায়া আছে। একটু বসি?
একটা ঝুপসি সুন্দর গাছের নিবিড় ছায়ায় গাছটাকে ঘিরে সুন্দর শ্বেতপাথরের স্ল্যাব বসানো। সামনেই একটা ফোয়ারা রয়েছে। একটা ছোট্ট সরু পাথরে বাঁধানো জলপথ চলে গেছে এঁকেবেঁকে। সেই জলধারার ওপর ধনুকের মতো বাঁকা পাথরের সাঁকো। ভারী সুন্দর রুচির পরিচয় দিয়েছেন রোজমারি।
বসবার পর সুধাকর তার কাঁধের ব্যাগটার মুখ খুলে ভিতরে যেন কিছু খুঁজল। তারপর হাতখানা ভিতরে রেখেই বলল, খুবই সাধারণ প্রশ্ন। জবাব দেবেন?
চেষ্টা করতে পারি।
সাক্কি ইনকরপোরেটেড নামে একটা কোম্পানির নাম শুনেছেন?
না।
ভাল করে ভেবে বলুন।
ভাববার কিছু নেই। শুনিনি।
নামটা বিদেশি। উচ্চারণে সবসময়ে ধরা যায় না। আপনারা হয়তো সাক্কিকে শচি বা সাচি বলে উল্লেখ করেন।
সোনালি একটু থমকাল। শচি ইনকরপোরেটেডের সঙ্গে এই কোম্পানির ট্রানজ্যাকশন আছে। কিন্তু লোকটাকে সেকথা কি বলা উচিত হবে? সে একটু ভেবে বলল, রেকর্ড না দেখে বলা যাবে না।
আপনি একটু ফল্টার করলেন। আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে নামটা আপনার অচেনা নয়।
সোনালি মাথা নেড়ে বলল, অনেক কোম্পানির সঙ্গে এঁদের ট্রেড আছে। সব কোম্পানির নাম কি মনে রাখা সম্ভব?
ফর দি টাইম বিয়িং আপনার যুক্তি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু তর্ক বা জেরা করতে আমি এতদূর আসিনি। ধরেই নিচ্ছি সাক্কির সঙ্গে আপনাদের ব্যাবসা আছে।
আপনি অনেক কিছুই ধরে নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের আর সত্যিই সময় নেই। ওঁরা হয়তো এসেই পড়েছেন।
সুধাকর মৃদু একটু হেসে বলল, ওঁরা আসছেন না। এলে সবার আগে আমি টের পাব।
কী করে টের পাবেন?
এ যুগটা উন্নত প্রযুক্তির যুগ। আমার পকেটে এই যে কলমের মতো জিনিসটা দেখছেন এটা আসলে একটা বিপার। ওঁরা এদিকে রওনা হলেই এই বিপার আওয়াজ দেবে। কারণ আমার একজন কলিগ ওঁদের অনুসরণ করছেন।
ও, তা হলে—
চিন্তা করবেন না। উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। এখন ফের আমরা সাক্কির প্রসঙ্গে আসি।
বললাম তো, আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি মনোজবাবুর সঙ্গেই তো কথা বলতে পারেন।
পারি। কিন্তু আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে পারলে আমার অ্যাডভান্টেজ বেশি থাকবে।
অ্যাডভান্টেজ! কীসের অ্যাডভান্টেজ?
আছে একটা কিছু।
দেখুন, আমার আর এসব কথা ভাল লাগছে না।
আমার প্রশ্নগুলো তো একটুও অস্বস্তিকর নয় মিস সোম। তবে বিরক্ত হচ্ছেন কেন?
যা আমি জানি না আপনি তাই নিয়ে কেন বারবার প্রশ্ন করছেন?
শুধু বলুন সাক্কি ইনকরপোরেটেডের ব্যাবসাটা কী?
বললাম তো জানি না। সোনালি ভীষণ রেগে যাচ্ছিল। হয়তো অভদ্রের মতো উঠে যেত। কিন্তু ঠিক এই সময়ে সুধাকরের বিপার থেকে একটা ক্ষীণ বংশীধ্বনির মতো আওয়াজ হল। সঙ্গে সঙ্গে সুধাকর ব্যাগ থেকে একটা খুদে সেলুলার ফোন বা ওয়াকিটকি গোছের কিছু একটা বের করে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল।
এক মিনিটের মধ্যেই ফিরে এল সুধাকর। ফোনটা যথাস্থানে রেখে একটা নিশ্চিন্তির শ্বাস ছেড়ে বলল, যাক, ওঁরা এখানে আসছেন না।
আসছেন না?
না।
কেন?
সুধাকর একটু হেসে বলল, অজুহাত একটা আছে। ওঁদের একজন একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এনিওয়ে, অল ফর দি গুড। এখন আমরা পুরনো কথায় ফিরে আসতে পারি কি? রিগার্ডিং ইনকরপোরেটেড?।
বললাম তো জানি না।
আপনার জানা নেই, বলছেন? আপনি গত এক বছর ধরে মনোজবাবুর একান্ত সচিব। অনেক ট্রেড সিক্রেট আপনার জানা।
আপনি যা খুশি মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি কিছু কমিট করছি না।
আপনাকে কমিট করতে হবে না। ভিতরকার কথা হয়তো আপনি জানেন না। কিন্তু ট্রেডের ব্যাপারটা তো গোপন থাকতে পারে না আপনার কাছে। বিশেষ করে আপনি কন্ট্রাক্টগুলো হ্যান্ডেল করেন, করেসপন্ডেস করেন।
হ্যাঁ, আমি তো বলেইছি, এঁদের ব্যাবসা বেশ বড়। অনেক কোম্পানি এঁদের অ্যালয় কেনেন। সব কোম্পানিকে মনে রাখা সম্ভব নয়।
ছেড়ে দিন। লেট আস ফরগেট সাক্কি ইনকরপোরেটেড। এখন বরং আপনার কথা বলুন।
সোনালি অবাক হয়ে বলল, আমার কথা! আমার কথা কেন আপনাকে বলতে যাব?
আরে না, তা নয়। আপনার পারসোনাল লাইফ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে চাইছি না। দয়া করে বলবেন কি আপনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল আ্যালয়ে চাকরিটা কী করে পেলেন?
সোনালি একটু অপমান বোধ করে বলল, কেন, তাই বা কেন বলতে যাব আপনাকে?
থ্রু প্রপার চ্যানেল?
তা ছাড়া আর কী হতে পারে?
এনি রেফারেন্স?
এখানে আমার মতো আরও অনেকেই চাকরি করে। আপনি কি সকলকে এরকম প্রশ্ন করতে পারেন?
না। আর কারও সম্পর্কে আমার কৌতূহল নেই। কারণ তারা কেউ গোপীনাথ বসুর এক্স-ওয়াইফ নয়।
সোনালি একটু শিউরে উঠল নামটা শুনে। গোপীনাথ বসু তার প্রাক্তন স্বামী।
আপনি তাকে চেনেন?
মুখোমুখি পরিচয় নেই। তবে জানি। হি ইজ এ স্মার্ট গাই।
ও। কিন্তু আমি তার এক্স-ওয়াইফ বলে কোনও অপরাধ করিনি তো?
আরে না। মাইন্ড করবেন না। গোপীনাথকে বিয়ে বা ডিভোর্স যাই করে থাকুন আমাদের কিছু যায় আসে না। তবে উই আর ইন্টারেস্টেড ইন হিম।
সোনালি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল, ও।
সুধাকর ফের একটু হেসে বলল, আপনার সঙ্গে তার বিয়েটা কতদিন টিকে ছিল বলবেন?
প্রায় দু’বছর।
বনিবনা হল না, না?