কী কাজ?
একটা বন্ধ ফ্ল্যাটে ঢুকে একটা জিনিস খুঁজতে হবে।
কী জিনিস?
আদ্রেঁর ডায়েরি।
কোনও ফর্মুলা আছে নাকি?
কী আছে জানি না। তবে ওর পেপার্সে ডায়েরিটার রেফারেন্স আছে বারবার।
কাজটা খুব শক্ত কি?
খুব শক্ত।
তা হলে সোনালিদিকে বলছেন কেন?
গোপীনাথ মাথা নেড়ে বলল, ঠিক কাজ করিনি। আমার মাথাটা ঠিক নেই কিনা।
সোনালি একটু দূরে সোফায় বসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, কী ঠিক করেছ, আমার ছোঁয়া কিছু খাবে না?
সেকী!বলে তাড়াতাড়ি কফির কাপ তুলে নিল গোপীনাথ। তারপর বলল, আমার সবকিছুই ডিসকর্ডে চলছে। সংগতিহীন আচরণ। তবে ইন্সটিংক্ট কাজ করছে। ভাল কাজ করছে।
সোনালি বলল, আমাকে অনভিপ্রেত মনে হলে সেটা বলে দাও। তা হলে আমি আর আসব না।
গোপীনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, অনভিপ্রেত কেন হবে? তা নয়। তবে তোমাকে আমার কাছে আর আসতে হবে না।
শোনো, তুমি আমাকে সহ্য করতে না পারলে আমি আসব না ঠিকই। কিন্তু যদি বিপদের ভয়ে আমাকে তাড়াতে চাও তা হলে আসব।
কেন সোনালি? তুমি কী করবে এসে?
তা জানি না। পরে ভাবব। সুব্রতবাবু, আপনি আমার বাড়িতে খবরটা দিয়ে দেবেন কি যে, আমি এই ভদ্রলোকের ফ্ল্যাটে আছি এবং হয়তো কয়েকদিন থাকব?
ওঃ সোনালিদি, বাঁচালেন।
গোপীনাথ মুখ গোমড়া করে বলল, তুই যে এত ইডিয়ট তা জানতাম না। মাথার গ্রে সেলগুলো তো একদম ইনঅ্যাক্টিভ দেখছি।
শোনো মিস্টার বোস, আমি থাকছি।
সোনালি, প্লিজ!!
একটা কারণেই থাকছি যে, দুটো মাথা সবসময়েই একটা মাথার চেয়ে বেশি কাজের। তোমাকে বাঁচানো দরকার।
গোপীনাথ কফি খেল। তারপর হঠাৎ টোস্টের প্লেটটা টেনে নিয়ে গোগ্রাসে খেতে লাগল। বলল, অনেকক্ষণ খিদে পেয়েছে। খাইনি।
সোনালি সুব্রতর দিকে চেয়ে বলল, আপনাকে একটু সাহায্য করতে বললে করবেন কী?
করব। বলুন।
আমার কিছু জিনিস চাই। একটা চিরকুট দিচ্ছি, আমার মাকে দেবেন। মা সব গুছিয়ে দেবে। সেটা এখানে আমার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
এটা কোনও কাজ হল? চিরকুটটা লিখে ফেলুন। এনে দিচ্ছি।
গোপীনাথ শুধু বলল, অবাধ্য।
কফি খেয়ে সুব্রত চটপট বেরিয়ে গেল। বলে গেল, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আসছি। ততক্ষণ আপনারা সেটলমেন্টে আসুন।
সুব্রত চলে যাওয়ার পর সোনালি বলল, শোনো, আমি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই এখন আর বিশ্বাস করি না। বিয়ে জিনিসটার ওপর কোনও আস্থা নেই আমার। কিন্তু বন্ধুত্ব জিনিসটাকে মানি৷ তুমি আমাদের বিয়েটাকে ভুলে গেলে ভাল হয়। আমি আজ বন্ধুর মতোই এসেছি, নট অ্যাজ অ্যান এক্স-ওয়াইফ।
গোপীনাথ হঠাৎ মুখ তুলে সোনালির চোখে চোখ রেখে বলল, তুমি কখনও আমার বন্ধু ছিলে? আমাদের বন্ধুত্বের রিলেশনটাই বা কবে কীভাবে হল?
আমরা একসঙ্গে তো কিছুকাল ছিলাম।
ওই পর্যন্তই। একসঙ্গেও কি ছিলাম?
সেটা তোমার দোষ।
কবুল করছি। আমি তোমাকে কম্পানি দিইনি। আমি বর্বরের মতোই ব্যবহার করেছি। তাই আমরা যেমন স্বামী-স্ত্রী হইনি, তেমন বন্ধুও হয়ে উঠিনি। তাই আজ হঠাৎ তোমার এই বন্ধুর মতো আগমনটা অস্বাভাবিক।
সোনালি খোঁচা খেয়ে লাল হল। তীব্র গলায় বলল, তুমি তো সত্যিই বর্বর। কারও বন্ধুত্ব পাওয়ারও যোগ্য নয়।
গোপীনাথ হিমশীতল গলায় বলল, শোনো আমি বর্বর হলেও আমার কতকগুলো নিজস্ব মর্যাল ভ্যালুজ আছে। নিঃসম্পর্কের কোনও মহিলার সঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সোনালি এ কথায় ছিটকে উঠে দাঁড়াল। তীব্রতর গলায় বলল, তোমার মর্যালিটি শুনে আমার হাসি পায়। ইউ ওয়্যার অলওয়েজ এ লায়ার, এ চিট, এ ডিবচ।
ঠান্ডা গলায় গোপীনাথ বলল, হ্যাঁ, ঠিক কথা। আমার ওসব দোষও আছে। যদি জানোই, তা হলে হঠাৎ আজ বন্ধুত্ব পাতাতে এলে কেন?
কেন বলে তোমার মনে হয়?
মে বি ইউ আর আফটার মাই মানি।
উত্তেজিত সোনালি দাতে দাঁত ঘষে বলল, মানি! মানি! লজ্জা করল না বলতে? যখন রোম থেকে সুব্রতকে ফোন করে আমাকে সর্বস্ব দিতে চেয়েছিল তখন কে রিফিউজ করেছিল?
গোপীনাথ তেমনি উত্তেজনাহীন নিষ্ঠুরতায় বলল, মে বি নট মানি, বাট ফর সাম আদার রিজিনস।
হোয়াট আর দোজ রিজিনস?
গোপীনাথ একটা হাই তুলে বলল, সেটা ভাবতে হবে।
তুমি তোমার এত সাহস যে, আমাকে
সোনালি কাঁদত হয়তো। কিন্তু শক্ত হল। তার চোখ থেকে উগ্র ঘৃণা শরাঘাতে জর্জরিত করছিল গোপীনাথকে। সে বলল, তোমার বন্ধুত্বটাকে কেন বিশ্বাস করি না জানো? ওটা অ্যারেঞ্জড বন্ধুত্ব। তোমাকে কেউ শিখিয়ে পড়িয়ে এনেছে।
অলরাইট, আই অ্যাম লিভিং।
গুড নাইট।
সোনালি প্রায় দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল এবং বেরিয়ে গেল। দরজাটা দড়াম করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হাসল গোপীনাথ। কৌশলটা যে এত সহজে কাজ করবে তা প্রত্যাশিত ছিল না। আপাতত দুশ্চিন্তা কমল। সোনালি নিরাপদ।
গোপীনাথ চুপচাপ বসে ট্রে-র সমস্ত খাবারগুলো শান্তভাবে খেয়ে নিল। তার খিদে পেয়েছিল, কিন্তু এতক্ষণ টের পায়নি।
খেয়েদেয়ে ট্রে-টা রান্নাঘরে যখন রাখতে গেল গোপীনাথ তখন ডোরবেল বাজল। গোপীনাথ ধীরেসুস্থে গিয়ে দরজা খুলে দেখল, পুলিশ।
স্যার, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
আপনারা কি পুলিশের লোক? তা হলে আমারই আপনাদের কাছে যাওয়ার কথা।
কেন বলুন তো?
জাস্ট লুক অ্যাট মাই রুম।
পুলিশ অফিসার ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালেন, মাই গড। ঘটনাটা তা হলে এ ফ্ল্যাটেই ঘটেছে?