হ্যাঁ, খুব ভাল বই।
শক্ত নয় তো! শক্ত হলে আমি পারব না। জানো তো রাতে শোওয়ার আগে মাত্র কিছুক্ষণ আমি পড়ার সময় পাই।
জানি ম্যাডাম। এটা শক্ত বই নয়। তবে ঘটনাবহুল নয়।
দিয়ো। তুমি যে মহাভারতটা দিয়েছ সেটা কিন্তু খুব কঠিন। আমি অর্ধেক কথাই বুঝতে পারছি না।
ঠিক আছে ম্যাডাম, আপনাকে একটা সহজ অনুবাদ এনে দেব।
অফিসে নিজের চেম্বারে বসে রোজমারি দ্রুত কয়েকটা কাজ সারল। কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে গিয়ে চারদিকে চরকিবাজি করল। সব ঠিক আছে। ছায়ার মতো তার পিছনে সবসময়ে মৈত্রেয়ী আর শুভ। ওরা তাকে খুব পছন্দ করে, এটা টের পায় রোজমারি। সেও এ দুটিকে বেশ ভালবাসে।
মনোজের সঙ্গে টেলিফোনে তার কিছু কথা হল।
মনোজ, আমি তা হলে গ্র্যান্ডে যাচ্ছি।
যাও।
তুমি একা সব দিকে চোখ রাখতে পারবে তো।
পারব। সব ঠিকই আছে।
ডেলিগেটদের লিডার একজন বাতিকগ্রস্ত লোক। খুব খুঁতখুঁতে। শকুনের মতো চোখ। ইনফ্রাস্ট্রাকচার পছন্দ না হলে কন্ট্রাক্ট দেবে না।
জানি। আমরা তো সাধ্যমতো করছি।
রোজমারি তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। হোটেলে রোজমারির কাজ হল স্যুইটটা ঠিকঠাক গোছানো আছে কি না তা দেখা। সে নিজেও খুঁতখুঁতে। লাঞ্চের মেনু এবং ড্রিঙ্কস সে নিজে অনেক ভাবনাচিন্তা করে ঠিক করেছে। ডেলিগেটদের তেল দেওয়া তার উদ্দেশ্য নয়। এমনিতেই তার রুচি একটু নিখুঁত ঘেঁষা। এ দেশের লোকরা বেশির ভাগই একটু অলস এবং অসতর্ক। এদের ওপর নির্ভয়ে ভরসা করা যায় না। তাই রোজমারি সব ব্যাপারেই তদারকিকে গুরুত্ব দেয়।
টেবিলে সাদা টেবিল ক্লথ পাতা। ফুলদানিতে টাটকা ফুল। এবং এখানেও রক্তগোলাপ।
রোজমারি ভ্রু কোঁচকাল, শুভ, মৈত্রেয়ী, দেখতে পাচ্ছ?
মৈত্রেয়ী বলল, কী ম্যাডাম?
এখানেও লাল গোলাপ!
হ্যাঁ। তাই তো!
আমি রজনীগন্ধার কথা বলেছিলাম। একটু খোঁজ নাও তো লাল গোলাপ কেন রেখেছে।
মৈত্রেয়ী গেল এবং একটু বাদেই একজন এসে দুঃখপ্রকাশ করে বলল, ম্যাডাম, আপনার ফ্লোরিস্ট লাল গোলাপই পাঠিয়েছে।
কেন, আমার তো বলা ছিল রজনীগন্ধা। শুভ, খোঁজ নাও।
শুভ টেলিফোন করতে ছুটল এবং ফিরে এসে বলল, ওরা বলছে আপনি নাকি ফোন করে আগের অর্ডার ক্যানসেল করে লাল গোলাপ দিতে বলেছেন!
কখনওই নয়।
রোজমারির ফরসা রং হঠাৎ টকটকে লাল হয়ে গেল। সে বলল, কেউ একজন আমার সঙ্গে আজ রসিকতা করছে। আমি এটা পছন্দ করছি না।
শুভ এবং মৈত্রেয়ী পরস্পরের দিকে চেয়ে খুব গম্ভীর হয়ে গেল। শুভ মৃদু স্বরে বলল, আমি ওদের বলে দিয়েছি রজনীগন্ধা পাঠাতে। এখনই এসে যাবে।
রোজমারি শুভর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, কিন্তু কে এরকম করছে বলতে পারো?
না ম্যাডাম। আমাদেরও একটু অবাক লাগছে।
ট্যাগের পিছনে আর আই পি লেখাটাও আমার ভাল লাগছে না।
আপনি কি রজার আইভ্যান পোলক নামে কাউকে মনে করতে পারছেন?
না শুভ, আমার স্মৃতিশক্তি খুবই ভাল। মানুষের নাম আমার মনে থাকে। ওরকম নামের কাউকে আমি চিনি না। নামটা শুনিওনি কখনও।
শুভ বলল, তা হলে ভাবনার কথা।
মৈত্রেয়ী বলল, এটা প্র্যাকটিক্যাল জোক হতে পারে।
রোজমারি বলল, সেটা হতে পারে, কিন্তু রসিকতাটা করবে কে? আমার তেমন বন্ধু বান্ধবী তো এখানে কেউ নেই। শুভ, আমার তেষ্টা পেয়েছে। ফ্রুট ককটেল দিতে বলল তো আমাদের।
যতক্ষণ পানীয় না এল ততক্ষণ রোজমারি চুপ করে সোফায় বসে রইল। তার দু’পাশে দু’জন ছায়াসঙ্গী, শুভ আর মৈত্রেয়ী।
বেয়ারা পানীয় দিয়ে যাওয়ার পর মৈত্রেয়ী বলল, ম্যাডাম, আপনি অত ভাববেন না। ব্যাপারটা হয়তো সিরিয়াস নয়।
রোজমারি গেলাসে চুমুক দিয়ে বলল, কোনও ডিসকর্ড ঘটলে আমি অস্বস্তি বোধ করি। ঘটনাটা স্বাভাবিক নয়।
এগারোটা নাগাদ মনোজের ফোন এল।
রোজি, একটা ঘটনা ঘটেছে।
কী ঘটনা?
ডেলিগেটরা আসতে পারছেন না। ওঁদের একজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওঁরা হোটেলে ফিরে গেছেন।
সে কী?
রাইটার্স থেকে ফেরার পথে ঘটনাটা ঘটেছে। সুব্রত ওঁদের সঙ্গে আছে। সে ফোন করলে ঘটনাটা জানতে পারব।
আর লাঞ্চের কী হবে?
মনে হচ্ছে লাঞ্চ ক্যানসেল করতে হবে।
আমি কি তাজ বেঙ্গলে যাব? বা কাউকে পাঠাব?
দরকার নেই। সুব্রত ফোন করুক, তারপর দেখা যাবে।
আমি ওয়েট করছি।
শোনো, আর-একটা ঘটনা ঘটেছে।
কী ঘটনা?
হঠাৎ ইন্টারপোলের একজন অপারেটর এসে হাজির।
ইন্টারপোল! সে কী?
সে বলছে, ডেলিগেটদের মধ্যে একজন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল আছে। সে তাকে আইডেন্টিফাই করতে চায়। অপারেটরটি বাঙালি। তার নাম সুধাকর দত্ত।
এসব কী হচ্ছে বলো তো! অপারেটরটি কোথায়?
সে কমপ্লেক্স ঘুরে দেখতে গেছে। সঙ্গে সোনালি।
ডেলিগেটদের মধ্যে ক্রিমিন্যাল ঢুকবে কী করে? ওরা তো বেশির ভাগই সরকারি লোক। তিনজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট আছেন, তারা সরকারি লোক না হলেও অনারেবল।
সব বলেছি। সুধাকর দত্ত বলছে, ক্রিমিন্যালটি সাধারণ নয়। সে একজন বিশেষজ্ঞ এবং নিজের নাম ব্যবহার করছে না।
তা হলে আমরা এখন কী করব?
বুঝতে পারছি না। কিন্তু তোমাকে নার্ভাস মনে হচ্ছে কেন? তুমি তো ঠান্ডা মাথার মেয়ে।
মাথা ঠান্ডা রাখতে পারছি না। এ দিকেও কিছু ঘটনা ঘটছে।
কী হল রোজি?
দেখা হলে বলব। আমি নার্ভাস নই, বিরক্ত।
বুঝতে পেরেছি।
সুব্রত ফোন করার পরই আমাকে জানাবে।
ঠিক আছে।