সেরকম একটা ভয় তো আছেই।
প্রথম কথা, আমার কাছে কোনও অস্ত্রশস্ত্র নেই। আপনি আমাকে সার্চ করে দেখতে পারেন। দ্বিতীয় কথা, আপনি ইচ্ছে করলে লালবাজারে ফোন করে আমার সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে না জানিয়ে আসিনি। আপনার কোনও ভয় নেই। ডেলিগেটরা কিছুই টের পাবেন না। তবে আমি যে ইন্টারপোলের লোক তা অতনুবাবু জানেন এবং আপনার সেক্রেটারি সোনালি সোমও হয়তো জানেন। আপনি সোনালিদেবীকে একটু অ্যালার্ট করে দিলেই হবে।
আপনি সোনালি সোমের নাম জানলেন কী করে?
সিম্পল হোমওয়ার্ক। এবার বলুন, আপনি রাজি?
মনোজ মুশকিলে পড়ল। দ্বিধা, আশঙ্কা দুটোই হচ্ছে। একটু ভেবে সে বলল, কিন্তু আমার কোম্পানির ব্যাপারে এরা আপনাকেও প্রশ্ন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
সে ক্ষেত্রে জবাব দেবেন মিস সোম। আমার কাজ হবে ওঁদের আপ্যায়নের দিকে নজর রাখা। কাছে কাছে থাকা ছাড়া আমার আর কোনও উদ্দেশ্য নেই।
আপনি লোকটাকে আইডেন্টিফাই করবেন কী করে বুঝতে পারছি না।
ক্রিমিনালদের চোখমুখ অনেক সময়ে বিট্রে করে। কথাবার্তা থেকেও কিছু বেরিয়ে আসতে পারে।
লোকটার নাম জানেন?
আসল নাম রজার ভ্যালন। কিন্তু এদের মধ্যে ও নামে কেউ নেই।
তা হলে?
নামটা বদলে নেওয়া শক্ত কাজ নয়। ক্রিমিন্যালরা এ কাজ প্রায়ই করে থাকে।
এর ক্রাইম কী?
অনেক রকম। ইনি একজন এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট। আপাতত এর বেশি জানার দরকার কী?
ক্রিমিন্যালটির এখানে আসার বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য আছে কি?
আছে। কিন্তু সে কথাও আপাতত থাক।
দাঁড়ান মশাই, লালবাজারে ফোনটা আগে করে নিই।
করুন। এই যে নম্বর…
মনোজ ফোন করল। তারপর বলল, ঠিক আছে। কিন্তু ওয়াচ ইয়োর স্টেপস।
ওসব নিয়ে আপনি ভাববেন না।
মনোজ সোনালিকে ইন্টারকমে ডাকল। সোনালি এলে বলল, ইনিই সেই ইন্টারপোল অপারেটর। বিশেষ কারণে ইনি আজ ডেলিগেটদের সঙ্গে থাকতে চান, অ্যাজ মাই সেক্রেটারি। আপনি সামলে নিতে পারবেন তো?
সোনালি একটু অবাক হল। কিন্তু সেটা প্রকাশ পেল চোখে। গলাটা স্বাভাবিক রেখেই বলল, পারব।
কথাবার্তা–মানে টেকনিক্যাল কোনও প্রসঙ্গ উঠলে আপনি সামলে নেবেন। ইনি শুধু অন্যান্য দিক দেখবেন। এঁর নাম সুধাকর দত্ত।
কেউ কারও দিকে ভাল করে তাকাল না। সোনালি নিজের ঘরে চলে গেল।
সুধাকর দত্ত বলল, আপনার আর কোনও প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
মনোজ একটু চিন্তিতভাবে সুধাকরের দিকে চেয়ে থেকে বলল, প্রশ্ন তো অনেক। একজন ক্রিমিন্যাল আমার কোম্পানিতে আসছে কেন? আমার কারখানা তো তেমন গুরুতর কিছু তৈরি করে না। আমরা এক ধরনের অ্যালয় তৈরি করি যা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পোনেন্টস তৈরির কাজে লাগে। প্রোডাকশন বেশি নয়, কারণ অনেক মেটেরিয়াল পাওয়া যায় না। কিন্তু আমার এখানে গোপনীয় কিছু নেই।
সুধাকর সামান্য একটু ভেবে বলল, লোকটা কেন এ দেশে এসেছে তা আমরা এখনও জানি না। উদ্দেশ্য ধরা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমরাও অন্ধকারে হাতড়ে মরছি। তবে ওয়াচ করতে পারলে হয়তো কিছু জানা যেতে পারে। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
না। টেনশন হচ্ছে। আপনি আমাকে একটু চিন্তায় ফেলেছেন।
টেলিফোন বাজল। মনোজ টেলিফোনটা তুলে নিয়ে বলল, সেন… আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোনটা রেখে বলল, ওঁরা রাইটার্স থেকে রওনা হচ্ছেন। চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বেন। ভাল কথা, ওঁরা কিন্তু গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানাতেও কয়েকটা কারখানা ভিজিট করেছেন।
সেটা আমি জানি। তবে আমরা খবরটা দেরিতে পেয়েছি বলে ওসব জায়গায় ওঁদের ধরতে পারিনি। কলকাতায় ওঁদের শেষ স্টপ ওভারে ধরতে পেরেছি।
ঘড়িটা দেখে নিয়ে মনোজ বলল, আর পনেরো মিনিট পরে আমাদের নীচে যেতে হবে।
সুধাকর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ততক্ষণে আমি আপনার কমপ্লেক্সটা একটু ঘুরে দেখে নিতে চাই। উইথ ইয়োর কাইল্ড পারমিশন।
কোনও বাধা নেই। তবে একা তো পারবেন না। সোনালি বরং আপনাকে নিয়ে যাক।
মনোজ সোনালিকে ডেকে বলল, ওঁকে কারখানাটা চটপট ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিন। হাতে খুব বেশি সময় নেই।
সোনালির ভ্রু সামান্য কুঁচকে ফের সহজ হয়ে গেল। বলল, ঠিক আছে। আসুন মিস্টার দত্ত।
সোনালি মেয়েটাকে মনোজ গত এক বছরেও ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনি। অত্যন্ত কাজের মেয়ে। চটপটে, স্মার্ট। দেখতেও চমৎকার। কিন্তু মেয়েটার মুখে কখনও হাসি দেখা যায় না। এত গম্ভীর এবং এতই সাংঘাতিক ব্যক্তিত্ব যে মনোজ ওর বস হওয়া সত্ত্বেও মনে মনে ওকে সমীহ করতে বাধ্য হয়। সোনালির অ্যাকাডেমিক রেকর্ড খুবই ভাল। ইংরেজিতে এমএ এবং আরও কয়েকটা ট্রেনিং নেওয়া আছে। কম্পিউটার ভাল জানে। খুব গোছানো এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ। গত এক বছরের মধ্যে একদিনও অফিসে দেরি করে আসেনি। কখনও কাজে কোনও ঢিলেমি দেখা যায়নি। ওর শরীর খারাপ হয় না। কোনও বায়না বা দাবিদাওয়া নেই। সোনালির ওপর চোখ বুজে নির্ভর করা যায়। কিন্তু ওর মধ্যে একটু রোবট রোবট ভাবটা খুব বেশি পছন্দ করতে পারে না মনোজ। এই যে একটু ভ্রু কোঁচকাল এতেই মনোজের অস্বস্তি হচ্ছে। রেগে গেল নাকি সোনালি?
ইন্টারকমে অতনুকে ডেকে মনোজ বলল, ওঁরা রাইটার্স থেকে রওনা হয়েছেন। তোমার রিসেপশন কমিটি ঠিক আছে তো?
সব ঠিক আছে স্যার।