সে কী গোপীদা?
সময়মতো জানতে পারবি হয়তো। এখন একটা কথা মন দিয়ে শোন।
বলুন গোপীদা।
আমার একটা বিপদ চলছে।
কী বিপদ?
একটা আন্তর্জাতিক ক্রিমিন্যাল গোষ্ঠীকে কেউ আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। এই গোষ্ঠীর নাম ভিকিজ মব।
ও বাবা! এরা তো সাংঘাতিক।
আমার ধারণা আদ্রেঁকে ওরাই মেরেছে।
মেরেছে! ওয়াজ ইট এ মার্ডার?
হ্যাঁ সুব্রত। নিট অ্যান্ড ফুলপ্রুফ।
সর্বনাশ! তা হলে এরা তো আপনাকেও
না সুব্রত। আমাকে এখনই মারবে না। তার কারণ সাক্কি ইনকরপোরেটেডের একটা গুরুতর প্রোজেক্টের আমি কো-অর্ডিনেটের সায়েন্টিস্ট। প্রোগ্রাম চিফও আমি। আমাকে মারলে প্রোজেক্টটা বানচাল হয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু ভিকিজ মব-এর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না। ওরা প্রোজেক্টটার ব্লু প্রিন্ট চায়।
বুঝেছি।
সেইজন্যই ওরা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। প্রয়োজন হলে অবশ্য মারতে দেরি করবে না। তবে ভয় হচ্ছে, অ্যাবডাকশনের।
আপনাকে চুরি করবে?
হ্যাঁ, আমার ফটোগ্রাফিক মেমরির কথা ওরা জানে। যদি আমাকে চুরি করতে পারে তা হলে ওদের খানিকটা সুবিধে হবে।
আপনি পালাচ্ছেন না কেন?
গোপীনাথ হেসে বলল, তোর জানা কোনও নিরাপদ জায়গা আছে নাকি? শোন বোকা ছেলে, দুনিয়ার কোথায় আমি মরতে চাই তা ওরা প্রথমেই জানতে চেয়েছিল। অর্থাৎ বুঝিয়ে দিয়েছিল যে পৃথিবীর সব জায়গায় ওদের কুশলী খুনিরা আছে।
তা হলে কী হবে গোপীদা?
আমার কাছে আদ্রেঁর কিছু কাগজপত্র আছে। আমি সেগুলোর কিছু জেরক্স কপি আজ রাতেই করে রাখছি। কিন্তু আমার অ্যাপার্টমেন্ট নিরাপদ নয়। ওরা ইচ্ছে করলে চুরি করতে পারবে। এখন শোন, আমি কাগজগুলোর কয়েকটা ছবি আমার হ্যাসেলব্লাড ক্যামেরায় তুলে রাখছি। ইন কেস আমার যদি কিছু হয় তা হলে তুই একটা ফোন করে সিসি নামে এক মহিলাকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিবি।
সিসিকে আপনিই কেন জানাচ্ছেন না?
তার কারণ হল, সিসি সদ্য বিয়ে করে নতুন বরের সঙ্গে সমুদ্রযাত্রায় বেরিয়েছে। এক মাসের ছুটি। আরও পঁচিশ দিন তাকে ধরা যাবে না।
হ্যাসেলব্লাড ক্যামেরাটা কোথায় আছে?
বলছি। আমার অ্যাপার্টমেন্টে একটা ডার্করুম আছে। সেখানেই ক্যামেরাটা মাউন্ট করা আছে। আমি ছবি তুলব কিন্তু ফিল্ম ক্যামেরার মধ্যেই থেকে যাবে। বুঝেছিস।
বুঝেছি গোপীদা। কিন্তু আমার যে আপনার জন্য ভয় করছে।
ভয় করে লাভ কী? এখন সিসির ফোন নম্বরটা টুকে নে।
বলুন।
গোপীনাথ ফোন নম্বরটা বলল। তারপর বলল, আজ ছাড়ছি। অনেক রাত হয়েছে। আমি খুব টায়ার্ড। ঘুমোনোর সময় হচ্ছে না।
গুড নাইট গোপীদা।
গোপীনাথ ফোন রেখে তার শোয়ার ঘরের কাবার্ড খুলে একটা শক্তিশালী পিস্তল বের করে আনল। ফ্লিপটা খুলে দেখে নিল, সব গুলি আছে কি না। সব ঠিকই আছে। অনেক দিন আগে কেনা জিনিসটা গোপীনাথের কোনও কাজেই লাগেনি। হয়তো ভবিষ্যতেও লাগবে না। তবু কাছে থাক, একটা ভরসা তো।
ডার্করুমে ঢুকে সে আদ্রেঁর কাগজপত্রগুলো একটা বোর্ডে পিন দিয়ে সাঁটল। তারপর বিশাল হ্যাসেলব্লাড ক্যামেরায় একটার পর একটা ছবি তুলল। তারপর কপি মেশিনে কয়েকটা করে কপি তুলে নিল। স্টাডিতে ঢুকে কাগজপত্রগুলোকে কয়েকটা বইয়ের মধ্যে ভাঁজ করে ঢুকিয়ে দিল। এসব ছেলেমানুষি ছাড়া কিছু নয়। শত্রুপক্ষ যদি পেশাদার অপরাধী হয়ে থাকে তবে সব জায়গাই নিপুণভাবে খুঁজে দেখবে। ভরসা একটাই, আঁদ্রের কাগজপত্র কিছু কিছু জায়গায় কোডেড।
গোপীনাথ তার বড় অ্যাপার্টমেন্টটা ভাল করে ঘুরে দেখল। তার অনুপস্থিতিতে কেউ ঢোকেনি বা জিনিসপত্র ঘটেনি বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
রাত প্রায় একটা বাজে। গোপীনাথ ঘরের আলো নেভাল এবং জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বাইরের দিকে চেয়ে রইল। নিজের জীবনটাকে তার কখনও অভিশপ্ত বলে মনে হয়। সোনালির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। সম্বন্ধ করা বিয়ে। জাত গোত্র সব দেখেশুনেই তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বউ আর কাজ এই দুইয়ের মধ্যে সমতা রক্ষা করা কঠিন থেকে কঠিনতর হতে লাগল। তখন গোপীনাথ সাক্কিতে ছিল না। অন্য কোম্পানিতে। সারা দুনিয়া দৌড়ঝাপ করে বেড়াতে হত। বাড়ি ফেরার ঠিক ছিল না। দিনের পর দিন সারা রাত গবেষণার কাজে কাটাতে হয়েছে ল্যাবরেটরিতে। সোনালি যদি সেই একাকিত্ব সহ্য করতে না পেরে থাকে তবে তাকে দোষ দেওয়া যায় না।
গোপীনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
বিছানার দিকেই যাচ্ছিল গোপীনাথ। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল।
আমি আপনার বন্ধু পল।
গোপীনাথের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। তবু সে গলাটা নিরুদ্বেগ রেখে বলল, হ্যাঁ পল, বলুন।
চোস্ত ফরাসিতে পল বলল, আপনার প্যারিস থেকে রোমে আসার গোটা অ্যাডভেঞ্চারটাই আমরা খুব কৌতূহলের সঙ্গে লক্ষ করেছি মঁসিয়ে বোস।
গোপীনাথ একটু কেঁপে গেল। যা ভয় করেছিল তাই। ওরা সারাক্ষণ তাকে মনিটর করেছে।
মঁসিয়ে পল, আমাকে কাজ করে খেতে হয়। আমাকে নিজের কাজেই আসতে হয়েছে।
অবশ্যই মঁসিয়ে। এমনকী নিজের কাজে আপনাকে চুরি এবং বাটপাড়িও করতে হচ্ছে তাও আমরা জানি।
চুরি! বাটপাড়ি। কী যে বলেন মঁসিয়ে পল।
মঁসিয়ে বোস, আপনি যদি ক্রিমিন্যাল হতেন তা হলে জীবনে উন্নতি করতে পারতেন। আমাদের অভিনন্দন।
অভিনন্দন কেন?
আদ্রেঁর কাগজপত্রগুলো উদ্ধার করে আনার জন্য।