ভাববার কিছু নেই। ওরা ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রী। ওদের ব্যবস্থা করা কঠিন হবে না। একটা এয়ারলাইন্সে জায়গা না হলে অন্য এয়ারলাইন্সে যেতে পারবে।
তা জানি। কিন্তু ব্যবস্থাটা এখনই চালু করা দরকার।
সুব্রত অত্যন্ত দক্ষ এবং চটপটে ছেলে। ছিপছিপে বেতের মতো চেহারা। একসময়ে ভাল টেনিস খেলত। খুব স্মার্ট আর অনেক যোগাযোগ। পিআরও হিসেবে তাকে মোটা মাইনে দেওয়া হয়। তাকে ডেকে পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে দিল মনোজ।
সুব্রত সব শুনল। তারপর বলল, কিছু ভাববেন না স্যার। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
লোম্যান লোকটা খুঁতখুঁতে। একটু দেখো, পরে যেন কথা শুনতে না হয়।
সুব্রত হাসল, না স্যার, কথা শুনতে হবে না।
তা হলে আমরা যাচ্ছি। আমাদের কিছু জরুরি কাজ আছে।
ঠিক আছে স্যার। এদিকটা আমি সামলাচ্ছি।
***
দ্বিতীয় ফোনটাও করেছিল পল।
মঁসিয়ে, খবরের কাগজে টেলিফোন করে আমাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার কোনও দরকার ছিল কি?
খবরের কাগজে ফোন করেছিলাম কে বলল?
আপনার টেলিফোন যে আমরা ট্যাপ করব তা আন্দাজ করা আপনার উচিত ছিল।
আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়লে এ কাজ আপনিও করতেন মসিয়া পল।
ওদের চেয়ে বেশি ইনফর্মেশন আমিই আপনাকে দিতে পারতাম। আমাদের প্যারিস হেড কোয়ার্টার্সের চিফ মঁসিয়ে দাতা এখন প্যারিসের বাইরে। তাকে আপনার প্রয়োজন হলে একটা ফোন নম্বর লিখে নিন। কিন্তু একটা কথা। এই নম্বরটা দয়া করে পুলিশকে দেবেন না। দিলে আপনি বোকা বনবেন। কারণ এটি একটি নিরীহ রেস্তোরাঁর টেলিফোন। পুলিশ এখানে কিছুই খুঁজে পাবে না।
বুঝেছি, নম্বরটা বলুন?
পল বলল, গোপীনাথ টুকে নিল।
এখানে ফোন করে মিশেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন। ওরা বলবে, মিশেল বলে এখানে কেউ নেই। তখন আপনি বলবেন, সে কী, আজ যে মিশেলের সঙ্গে আমার নোতরদাম যাওয়ার কথা।
বুঝেছি। এটাই কোড তো?
হ্যাঁ। তবে মঁসিয়ে দাতাকে অকারণে বিরক্ত না করাই ভাল। আপাতত উনি এখানে নেই। আমি ওঁর হয়ে কাজ চালাচ্ছি।
গোপীনাথ একটা খাস ফেলে বলল, তাই বুঝি? আচ্ছা, শুভরাত্রি।
ফোন রেখে গোপীনাথ দ্রুত ভাবতে লাগল। যা করার এখনই করতে হবে। এখনই তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শত্রুপক্ষ প্রবল এবং সতর্ক।
গোপীনাথ চটপট একটা অ্যাটাচি কেস গুছিয়ে নিল। পোশাক পরল। তারপর মধ্যরাত্রিতেই বেরিয়ে পড়ল পথে। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সন্দেহজনক কিছুই দেখতে পেল না।
খানিক দুরে হেঁটে গিয়ে সে একটা ট্যাক্সি ধরল। হাজির হল একটা দিনরাতের গ্যারেজে। ক্রেডিট কার্ডের জোরে সে একখানা সেকেন্ড হ্যান্ড সিট্রিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। দূর প্রাচ্যের প্লেন তার প্যারিস থেকে আর ধরা হবে না।
গাড়ির টেলিফোন তুলে সে ডায়াল করল তাদের মূল ল্যাবরেটরি লাইপজিগে। সিকিউরিটির প্রধান মালিককে। মালিক একজন আফগান।
মালিক, ল্যাবরেটরির সিকিউরিটি কেমন?
সব ঠিক আছে।
না, সব ঠিক নেই। সিকিউরিটি বাড়াও। চারদিকে কড়া নজর রাখো। খুব তৎপর থেকো।
ঠিক আছে। কোনও হামলা হবে বস?
হতে পারে।
আমি গা গরম করতে ভালবাসি।
তুমি ভিকিজ মব-এর নাম শুনেছ?
কে শোনেনি? সবাই জানে।
ভিকিজ মব আমাদের পিছনে লেগেছে।
তা হলে দুঃসংবাদ বস। ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন।
আপাতত ঈশ্বরের চেয়ে তোমার ওপরেই আমার নির্ভরতা বেশি, কিন্তু ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওরা এখনই রেড করবে বলে মনে হয় না। তবু সাবধান থাকা ভাল।
গোপীনাথ গাড়ি চালাতে চালাতে গম্ভীরভাবে ভাবতে লাগল। এই যে সে পালাচ্ছে, সে জানে এটা পণ্ডশ্রম। কিছুতেই সে ভিকিজ মবকে এড়াতে পারবে না। তবু অন্তত কিছুক্ষণের জন্য অনুসরণকারীদের ঝেড়ে ফেলা একান্তই দরকার। রোমে তাদের রিসার্চ সেন্টারে আদ্রেঁর কিছু ডকুমেন্ট আছে। সেটা সরিয়ে ফেলা দরকার।
দ্বিতীয় ফোনটা সে করল রোমে।
বিল্লে, কী খবর?
কী খবর চান?
অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি তো!
না। কেন?
ভাল করে মনিটরটা চেক করো। ল্যাবের সব দিক দেখো। কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা দেখলে আমাকে জানাও। আর, আদ্রেঁর ঘরটা ভাল করে দেখো, দরজা ভাঙার বা খোলার কোনও চেষ্টা হয়েছে কি না।
আদ্রেঁর দরজায় ইলেকট্রনিক লক আছে। কোড ছাড়া খুলবে না। তবু দেখছি।
আমি আবার পনেরো মিনিট পরে ফোন করব।
পনেরো মিনিট বাদে ফের ফোন করল গোপীনাথ। বিল্লে বলল, সব ঠিক আছে।
গোপীনাথ একটা উজ্জ্বল এয়ারপোর্ট টার্মিনালে ঢুকে গাড়ি থামাল। শত্রুপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে সে অন্তত একটা কদমও এগোতে পেরেছে কি? মাত্র একটি বা দুটি ঘণ্টা সময় তার দরকার। তাকে ভাবনায় ফেলেছে আদ্রেঁর নিজস্ব অফিসঘরের দরজায় ইলেকট্রনিক লক। দরজাটা খোলা দরকার। আদ্রেঁর রিসার্চ পেপার এবং কম্পিউটরের তথ্য তার ভীষণ প্রয়োজন। ওটা হাতছাড়া হলে তাদের এত পরিশ্রম বৃথা যাবে।
দু’বার প্লেন বদল করে রোমে যখন নামল গোপীনাথ তখন বিকেল। সারাক্ষণই নানা অস্বস্তি ও সন্দেহে কেটেছে তার কেউ অনুসরণ করছে কি না, কেউ লক্ষ করছে কি না সারাক্ষণ কেবল এই চিন্তা।
সবচেয়ে কঠিন কাজ তার রোমেই। প্রথম কথা আদ্রেঁর ঘরের ইলেকট্রনিক লক খোলা। কাজটা অসম্ভব যদি না লকের কোড জানা থাকে। আদ্রেঁ কোডটা কোথাও নোট করে রেখেছে এরকম একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। এবং তা নোট করে রাখার সম্ভাবনা আছে তার ডেবুক এ। ডেবুক যদি আদ্রেঁ সঙ্গে করে নিয়ে না গিয়ে থাকে তা হলে তা আছে। আরে ফ্ল্যাটে আদ্রেঁ একা থাকে, সুতরাং গোপীনাথ বসুকে এখন যে কাজটা করতে হবে তা অতীব আইনবিরুদ্ধ এবং অপরাধমূলক। তাকে তালা ভেঙে ঢুকতে হবে আদ্রেঁর ফ্ল্যাটে, চোরের মতোই।