আমি ঘটনাটা দেখিনি। লোকটার হাতে পিস্তল দেখে ভয়ে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। চোখ খুলে দেখলাম, লোকটা পড়ে আছে।
ঠিক আছে ফ্রাউ। মেনে নিচ্ছি। আপনি কি জানতেন না জো কার বা কাদের হয়ে কাজ করে?
না। সে চাকরি করত জানি! আর কিছু জানি না। তার ওই ঘটনার পরই জো-র সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। একজন অনধিকার প্রবেশকারীকে মেরেছিল বলে জো বিচারে ছাড়া পেয়ে যায় বটে, কিন্তু আমি ওকে অপছন্দ করতে শুরু করি। আমি ভায়োলেন্স পছন্দ করি না।
প্যারিসে একজন পুলিশ অফিসারকে মারার ব্যাপারে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের তালিকায় জো-র নাম আছে।
তা হতে পারে।
ফ্রাউ, জো-কে আপনি ত্যাগ করেছেন বটে, কিন্তু সে হয়তো আপনার জীবনে আবার ফিরে আসবে। তবে অন্য ভূমিকায়।
রোজমারি অবাক হয়ে বলল, কেন?
ধৈর্য ধরুন। জানতে পারবেন।
এবার কি পিছন ফিরে তাকাতে পারি?
না। পিছনে একজন আহত বা নিহত মানুষ পড়ে আছে। পুলিশ আসবে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের খোঁজ করবে। আমি বা আপনি কেউই প্রত্যক্ষদর্শী হতে চাই না, তাই না?
কে কাকে মারল?
সেটা জেনেও আপনার লাভ নেই।
কিন্তু মনে হচ্ছে আপনি জানেন। তাই না?
হ্যাঁ। জানাটা যে কত বড় অভিশাপ তা যদি জানতেন।
আপনি কে বলুন তো! সত্যিই কে?
প্যারিসে আমাকে অনেকে দাতা বলে ডাকে। এস দাতা। সেখানে আমার বেশ খ্যাতি বা অখ্যাতি আছে।
দাতা?
হ্যাঁ। দত্তকে ওরা দাতা করে নিয়েছে।
আদ্রেঁকে কে বিষ দিয়েছে হের দত্ত?
কী করে বলব বলুন তো!
হের দাতা, আমি আপনাকে পছন্দ করতে পারছি না।
০৬-১০. আদ্রেঁ মারা গেল বেলা বারোটায়
আদ্রেঁ মারা গেল বেলা বারোটায়। লাউঞ্জে তার এগারোজন সঙ্গী, মনোজ, রোজমারি, সোনালি, সুব্রত, শুভ, মৈত্রেয়ী এবং কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক সময়োচিত গাম্ভীর্য মুখে মেখে দাঁড়িয়েছিল। ঘটনাটা বড় আকস্মিক এবং সকলেই খানিকটা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে।
ডেলিগেটদের প্রধান একজন বয়স্ক কোলকুঁজো মানুষ। পদবি লোম্যান। চোখদুটি নীল এবং চাউনি তীব্র। মনোজ তার কাছাকাছি গিয়ে মৃদু স্বরে বলল, আদ্রেঁর পরিবারকে খবরটা কীভাবে জানানো যায়?
লোম্যান মাথা নেড়ে বলল, আদ্রেঁর পরিবার কেউ নেই। একা মানুষ। কাউকে কিছু জানানোর নেই।
ও।
আমি একটা কথা জানতে চাই। আদ্রেঁর ডেডবডি আমরা নিয়ে যেতে চাইলে সেটা কত তাড়াতাড়ি সম্ভব?
দেরি হওয়ার তো কথা নয়।
যদি আজই নিয়ে যেতে চাই?
বোধহয় ব্যবস্থা করা যাবে।
লোম্যান একটা নিশ্চিন্তের খাস ছেড়ে বলল, যাক, বাঁচা গেল।
আপনারা কি মায়ানমার যাওয়ার প্রোগ্রাম বাদ দিচ্ছেন?
অবশ্যই। আদ্রেঁর মৃতদেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে আমার এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।
মনোজ একটু অবাক হয়ে বলে, কেন বলুন তো! আদ্রেঁর তো কেউ নেই বললেন।
লোম্যান তার দিকে মিটমিটে চোখে চেয়ে বলল, কাজ আছে মিস্টার ঘোষ। জরুরি কাজ। আপনি দয়া করে আমাদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। ডেডবডির জন্য ভাল কফিন চাই।
ভাববেন না। সব ব্যবস্থাই হয়ে যাবে।
ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট কি দিয়েছে?
হ্যাঁ। সুব্রতর কাছে আছে।
মনোজ ডেথ সার্টিফিকেটটা নিয়ে লোম্যানকে দিল। লোম্যান সেটা দেখে পকেটে রেখে দিল। বলল, আপনার সঙ্গে ডিলটা এবার হল না। যা হোক, আমাদের দু’জন প্রতিনিধি আগামী মাসেই আসবে। তারা চুক্তি পাকা করে যাবে।
ধন্যবাদ।
রোজমারি মনোজের কাছাকাছি এসে চাপা গলায় বলল, ডেথ সার্টিফিকেটে কী লিখেছে দেখেছ?
হার্ট অ্যাটাক।
হ্যাঁ। কিন্তু ঘটনাটা কি তাই?
মনোজ একটু অবাক হয়ে বলে, অন্যরকম কেন হবে?
রোজমারি একটু চিন্তিত মুখে বলল, কিছু বিষ আছে যা ধরা যায় না। খুব অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হলে হয়তো ধরা পড়বে। সেই ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই।
মনোজ ভীষণ অবাক হয়ে বলে, বিষ! বিষের প্রশ্ন উঠছে কেন? এটা সহজ সরল হার্ট অ্যাটাক। আদ্রেঁর বয়স ষাটের কাছাকাছি।
সেটা হলেই ভাল। কিন্তু আমার কেন যেন ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগছে।
অদ্ভুত কেন?
আঁদ্রে সাক্কি ইনকরপোরেটেডের হয়ে কাজ করে।
তাতে কী?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। মস্ত বিশেষজ্ঞ। মনোজ, ওরা যদি আরে মৃতদেহ দেশে নিয়ে গিয়ে অটোপসি করে এবং ওর শরীরে কোনও বিষ পাওয়া যায় তা হলে কী হবে?
কী যে বলছ পাগলের মতো। এটা সেরকম কোনও ঘটনাই নয়।
তবু আমার ভয় করছে।
মনোজ রোজমারিকে বাঁ হাতে বেষ্টন করে বলল, কেন বলো তো! তোমার মতো সাহসী মেয়ের ভয় পাওয়ার মতো কী হল?
আমাদের বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে না তো?
মনোজ অবাক থেকে আরও অবাক হয়ে বলল, ষড়যন্ত্র! ষড়যন্ত্র করার মতো কী আছে আমাদের? একটা অ্যালয় তৈরি করি, তা সেরকম অ্যালয় আরও কেউ কেউ তৈরি করে। খামোখা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে কেন?
সেটাই তো বুঝতে পারছি না, বুঝতে চাইছি। হঠাৎ এই দত্ত লোকটাই বা কেন প্যারিস থেকে এসে হাজির হল? কেন আদ্রেঁ মারা গেল? কেন আমাকে পাঠানো হল রক্তগোলাপ? প্রশ্ন যে অনেক।
তুমি আমাকে ভাবিয়ে তুলছ। আমি এমনিতেই নার্ভাস লোক, তোমার ওপর নির্ভর করে চলি। তুমি ভয় পেলে আমার আর ভরসা কীসের?
চলো আমরা ঠান্ডা মাথায় ঘটনাগুলো নিয়ে একটু ভাবি।
ঠিক আছে, কিন্তু তার আগে আদ্রেঁর ডেডবডি দেশে পাঠানো এবং ডেলিগেটদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।