হিসেবটা মেটানোর ছিল স্যার। আমার যে জীবনটা মিতালি কেড়ে নিয়েছে তা ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য ছিল মিতালির? ছিল না স্যার। আমি বহু বছর ধরে তার দেশে ফেরার জন্য ওত পেতে অপেক্ষা করেছি।
তুমি হয়তো জানো না, মিতালিও খুব হ্যাপি ছিল না।
মিলি হ্যাপি ছিল কি না তা জেনে আমার কী হবে স্যার? আমার একটা কিডনি নেই। আপনি জানেন না আমার সেক্স আর্জ চলে গেছে। পুরুষের পক্ষে কত যন্ত্রণার ব্যাপার বলুন, বিছানায় মেয়েমানুষ, সে কিছু করতে পারছে না। পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে পুরুষত্বহীনতায়। এই নষ্ট জীবন নিয়ে বেঁচে আছি কি মিতালিকে হ্যাপি দেখতে স্যার? আমি তো মহাপুরুষ নই। আপনাকে রীতা দাসের কথা বলেছি। যদি কখনও তাকে পান জিজ্ঞেস করবেন। সে আপনাকে বলবে কীভাবে সেক্সয়াল আর্জের অভাবে আমি মাথা কুটেছি আর কেঁদেছি।
সে বলেছে।
বলেছে? যাক বাঁচা গেল। আপনি তা হলে আমার জ্বালাটা একটু বুঝবেন। পার্টির দিন যখন ওরা ফুর্তি মারছিল তখন আমি মরুভূমি বুকে নিয়ে দুর থেকে ওদের ঘরে আলোর রোশনাই দেখেছি। মাতালের হল্লা শুনেছি। আপনাকে মিথ্যে কথা বলেছিলাম স্যার। সেই রাতে আমি মাতাল হইনি।
জানি। বলো।
রাত সাড়ে বারোটায় আমি দোতলায় উঠি। পিছন দিক দিয়ে। ঘরে ঢুকি। মিতালি তখন মাতাল। জামাকাপড় খোলার চেষ্টা করছে। দু’বার মেরেছিলাম। একটা আমার জন্য। আর
একটা মিঠু মিত্তিরের জন্য।
শবর হঠাৎ ডান হাতটা বাড়িয়ে বলল, এবার পিস্তলটা আমাকে দাও পান্টু।
পান্টু একটু হাসল, সুইসাইড করব বলে ভয় পাচ্ছেন স্যার? আরে না। এখন সুইসাইড করে লাভ কী বলুন? আপনারও বদনাম হবে। লোকে বলবে শবর দাশগুপ্ত নিজেই পান্টুকে মেরে সুইসাইড কেস সাজিয়েছে। মরে আর কী হবে? মরা লোক কি দোবারা মরে স্যার? তবে জজসাহেবকে বলবেন, ওসব যাবজ্জীবনটিবন আমার ভাল লাগে না। ফালতু চৌদ্দ বছর শুয়ে বসে থাকা। তার চেয়ে ঝটপট ট্রায়ালটা মিটিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন যেন। বলবেন স্যার?
শবর একটু হাসল।
অ্যারেস্ট করবেন না স্যার?
শবর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, পালাতে পারতে। কেন যে পালালে না!
বললাম তো স্যার, কোথায় পালাব? কার কাছ থেকে পালাব? আমার ফিলজফিটা আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার?
পারছি। পান্টু অধিকারী, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।
.
এটাই কি সেই দীর্ঘ চুমু?
না। এটা অন্য। আর একরকম। অনেক বিষণ্ণ, অনেক গভীর।
জানি। আজ তো তুমি আর সেই তুমি নও। আজ তুমি অনেক বিষণ্ণ, কত গম্ভীর।
আজ আমি অনেক গভীরও। তাই না?
আমরা কি সুখী হব, বলো না!
কে জানে! কেউ তা বলতে পারে না।
আমরা কোনওদিন তেমন সুখী হতে পারব না বোধহয়! হ্যাগো, একটা কথা বললে তুমি কি রাগ করবে?
রাগ! ফুলশয্যার রাতে? তাও কি হয়?
শোনো, আমরা কেন সব ওদের দিয়ে দিই না?
মিঠু নিবিড়ভাবে জয়িতার মুখের দিকে চেয়ে রইল। মুখে মিটিমিটি হাসি। মৃদু স্বরে বলল, কাকে দেবে? কী দেবে?
দোয়েল তো আসলে জ্যাঠামশাইয়ের বউই, বলো? প্রীতীশ তো ছেলে। হ্যাগো, কেন ওদেরই সব দিয়ে দিই না আমরা?
জানতাম।
কী জানতে?
তুমি যে এই কথা বলবে।
তুমি বুঝি অন্তর্যামী?
হ্যাঁ। ভালবাসলে মনের কথা টের পাওয়া যায়, জানো না?
আমিও তোমার মনের কথা টের পাই।
কীরকম?
তুমিও চাও। তাই না? তুমিও চাও ওরা সব নিয়ে নিক।
চাই। কিন্তু আস্তে আস্তে। একবারে অত সম্পত্তি হাতে পেলে ওরা দিশাহারা হয়ে যাবে। লোকে ওদের এক্সপ্লয়েট করবে। ছেলেটা আদরে নষ্ট হবে। ধীরে, বন্ধু ধীরে।
আমি বোকা নই তো!
না। তুমি খুব ভাল।
তুমিও। আমরা কি সুখী হব? বলল না!
সুখ চাও? সুখ মানুষকে অলস করে দেয়, ভোঁতা করে দেয়, সুখ থেকে মেদবৃদ্ধি হয়। আমরা সুখ চাইব কেন?
তা হলে?
একটু সুখের সঙ্গে মাঝে মাঝে একটু দুঃখ মিশিয়ে দেওয়া যাবে। ককটেল। ব্যালান্স।
আমি জানি পান্টুর জন্য তোমার মন ভাল নেই। মিতালিদির জন্য তোমার মন ভাল নেই। দোয়েলের জন্য তোমার মন ভাল নেই। আমি কী করে তোমাকে ভোলাব বলো তো! পারব?
না জয়িতা, ভোলানোর দরকার নেই। এ সবই আমাদের চেতনায় নাড়া দেবে। আমাদের তাকাতে শেখাবে নিজেদের দিকে। দুঃখকে কি তুমি ভয় পাও?
তুমি কাছে থাকলে কিছুকেই ভয় পাই না।
ঠোঁটটা বাড়িয়ে দিল জয়িতা।
মিঠু হেসে বলল, দীর্ঘ চুমু? না। পৃথিবীর দীর্ঘ দীর্ঘতম চুমু–