সমীরণ বা পান্টুর কেসগুলো কী?
পাটুর সঙ্গে এক রাত্রি ছিলাম। ফর অ্যাকসেস টু দ্যাট হাউস।
কী চেয়েছিলেন?
শেষবার চেষ্টা করেছিলাম মিতালির কাছ থেকে কিছু সাহায্য পেতে। ও আমাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তখন ঠিক করি, চুরি করব।
চুরির পক্ষে কি পার্টির দিনটাই প্রশস্ত ছিল?
হ্যাঁ। অনেক লোকের ভিড়ে আমি ঢুকে যেতে পারব বলে বিশ্বাস ছিল।
পান্টু যে মিতালির প্রাক্তন প্রেমিক, জানতেন?
জানতাম। বরুণবাবুর কাছে সব শুনেছি।
সমীরণের সঙ্গে কীভাবে এবং কেন জুটে গিয়েছিলেন?
ক্ষণিকা–অর্থাৎ ওর গার্লফ্রেন্ডকে আমি অনেকদিন চিনি। কিছুদিন ওর বাচ্চার বেবি সিটিংও করেছি। ওই সময়ে আমি ওদের বাড়িতে ওর বাচ্চা রাখছিলাম। ক্ষণিকা সমীরণের ওপর রাগ করে চলে আসায় আমি ঠিক করি সমীরণের সঙ্গে থাকব। তাতে খানিকটা ইনফর্মড থাকা যাবে।
এবার আসল কথায় আসুন দোয়েলদেবী।
দোয়েল এই প্রথম একটু হাসল। হাসলে মুখখানা ভারী সুন্দর দেখায়, লক্ষ করল শবর।
পার্টির রাতে আমি দোতলায় উঠি।
কীভাবে?
পিছনের বাগান দিয়ে। খুব সোজা।
বলুন।
দোতলার ঘরে ঢুকে চারদিক খুঁজে হ্যান্ডব্যাগটা পেয়ে যাই।
রাত তখন কটা?
সাড়ে নটা থেকে দশটার মধ্যে।
খুব রিস্ক ছিল না? ছিল।
তারপর?
দশ হাজার ডলার ছিল। টাকাটা আর দুটো গয়না সরিয়ে ফেলি।
কিন্তু–
জানি আপনি কী শুনতে চান। কিন্তু আপনাকে হতাশ হতে হবে। রাত দশটার পর আর আমি ও বাড়িতে ছিলাম না। খুনটা আমি করিনি মিস্টার দাশগুপ্ত।
শবর স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল দোয়েলের দিকে।
দোয়েল চোখ সরাল না, সমানে সমানে তাকিয়ে থেকে বলল, আমি আমার ছেলের স্বার্থে ওই অপরাধটুকু করেছি। চুরি বললে চুরি। আইন আমার পক্ষে নেই। কিন্তু ধর্মত ন্যায্যত আমার এবং আমার ছেলের কিছু পাওনা হয়। দশ হাজার ডলার এমন কিছু বেশিও নয়। বরুণবাবুর স্ত্রী হতে পারলে আমার পাওনা অনেক বেশি হতে পারত। আপনি কি আমাকে অ্যারেস্ট করবেন?
আপনার অ্যালিবাই আছে? খুনের সময়ে রাত একটা থেকে—
দুটোর মধ্যে? ও সময়ে সবাই ঘুমোয়। কে সাক্ষী দেবে বলুন।
আপনি কোথায় ছিলেন?
দোয়েল একটা শ্বাস ফেলে বলল, আপনাকে আবার হার মানতে হবে। কারণ আমার ফুলপ্রুফ অ্যালিবাই আছে।
কীরকম?
সেই দিন দশ হাজার ডলার পেয়ে আমার খুব আনন্দ হয়েছিল। ফিরে এসে আমি পাশের ফ্ল্যাটের বউদির সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করি। ওরা মাঝে মাঝে আমার ফ্ল্যাটে ভিসিআর-এ ছবি দেখতে আসে। সেই রাতে ওদের পুরো পরিবার আর আমি এই ঘরে বসে রাত এগারোটা থেকে ভোর চারটে অবধি দুটো বাংলা আর একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছি। আপনি খোঁজ করলেই জানতে পারবেন। আরও বলি, পাড়ার আরও দুটো মেয়েও সেই রাতে আমার ঘরে বসে ছবি দেখেছে। কোয়াইট এ ক্রাউড।
শবর মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি।
চুরির জন্য আপনি আমাকে অ্যারেস্ট করতে পারেন, কিন্তু খুনের জন্য নয়। খুনিকে আপনার আরও একটু খুঁজতে হবে।
আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করছি না।
তা হলে?
আমি আপনার সঙ্গে একটা বাণিজ্য করতে চাই। সিম্পল বার্টার।
কী বলুন?
লিভ এ ক্লিন লাইফ। যা করেছেন করেছেন, আর নয়।
দোয়েলের চোখ ভিজে গেল, কে নোংরা জীবন কাটাতে চায় বলুন! যা করেছি ছেলের স্বার্থে, মা হয়ে। ছেলের জন্য মা সব পারে। পারে না বলুন। তবে আর নয়, কথা দিচ্ছি।
এবার আরও একটু কথা আছে। হয়তো আপনিই পারেন ধাঁধাটা কাটাতে।
০৮. সে পালাতে পারবে না
সে পালাতে পারবে না, জানত। তবু দৌড়োচ্ছিল, প্রাণপণে দৌড়োচ্ছিল গলি থেকে গলিতে। আরও গলিতে। এসব অলিগলি তার মুখস্থ, হাতের তেলোর মতো চেনা। কোনদিক দিয়ে বেরোতে হবে, সে জানে। পিছনে এক জোড়া, মাত্র এক জোড়া পা-ই দৌড়ে আসছে। শবর দাশগুপ্ত। লালবাজারের টিকটিকি। ওর কাছে পিস্তল আছে। ইচ্ছে করলেই চার্জ করতে পারে। করছে না। পিস্তল তার কাছেও আছে। ইচ্ছে করলে সেও চার্জ করতে পারে। করছে না। করে লাভ নেই।
তবু সে দৌড়োচ্ছ কেন? পালাচ্ছে? না, সে পালাতে চাইলে পারবে। কিন্তু তা নয়। সে দৌড়োচ্ছে নিজের হাত থেকে, নিজেকে ছাড়াতে। না, ঠিক বোঝা যাবে না। কেউ বুঝবে না। এই অবোধ্য জীবন তার কত কী কেড়ে নিয়েছে। তার কত কী চলে গেছে ভেসে সময়ের জলে।
সামনে ডানহাতে একটা কানা গলি। সে ডানদিকেই ফিরল। দৌড়োতে লাগল। তারপর সোজা গিয়ে ঠেকল দেয়ালটায়। থামল। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। দেয়ালে পিঠ রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। শুনশান গলি৷ দুরে গলির মুখ। সেখানে শবর দাশগুপ্ত এসে দাঁড়াল। না, পিস্তলে হাত দেয়নি। দূর থেকে তাকে দেখল। তারপর ধীর পায়ে হেঁটে আসতে লাগল তার দিকে। দুপুরের রোদ খাড়া হয়ে পড়েছে। শবরকে দেখাচ্ছে। ছোটখাটো, পায়ের নীচে বেঁটে ছায়া।
সেও পিস্তলে হাত দিল না। ফালতু। এখন আর এসব করে লাভ কী!
শবর সামনে এসে দাঁড়াল, পালালে কেন?
পালালে কি ধরতে পারতেন?
খামোখা এতটা দৌড়োনোর মানে হয় না।
হয়। এত সহজে ধরবেন, একটু গা ঘামাবেন না, তা কি হয়?
শবর একটু হাসল, সহজে ধরেছি কে বলল? অনেক চক্কর খেতে হয়েছে।
একটা কাজ করলেন, আপনার মতে ভাল কাজ, পরিশ্রম তো সার্থক।
তুমি তো বেশ কথা বলো!
পিস্তলটা চাইলেন না?
না। তুমি আমাকে গুলি করবে না, জানি।